জেনারেল রাইটিং: বাবা মা সৃষ্টিকর্তার অশেষ নেয়ামত

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago


আসসালামু আলাইকুম




হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম জানিয়ে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে উপস্থিত হলাম। পারিপার্শ্বিক এমন কিছু চিন্তাভাবনা সত্যি মনকে কষ্ট দেয়। বাবা মাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি যখন তারা অসুস্থ থাকে সত্যিই মনটা থাকে খুবই অসহায় হয়ে, এই মুহূর্তে নব আপন সম্প্রদায় যদি উল্টাপাল্টা কিছু বলে তখন কষ্টটা আরেকটু বেশি হয়। তবুও মনের মধ্যে ঈমান যদি মজবুত থাকে, পিতা মাতার প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি যদি থাকে, ইনশাআল্লাহ পিতা-মাতার প্রতি থাকা সেই ভালোবাসা কেউ দূর করতে পারে না। কারণ প্রত্যেকটা সন্তানের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব রয়েছে পিতা-মাতার দেখাশোনা করা এবং তাদের খেদমত করার। মনে রাখতে হবে পিতা-মাতাকে হাসিখুশি রাখতে পারা মানে, মহান সৃষ্টিকর্তাকে খুশি রাখতে পারা।।


img_1711549148571.jpg


ফটোগ্রাফি সমূহ:



একটা মানব শিশুর জন্মের পূর্ব থেকে বাবা-মা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা করতে থাকে এবং অনেক স্বপ্ন দেখে। যখন একটি মানব শিশু ভূমিষ্ঠ হয় তার জন্য পিতা-মাতার আরও দায়িত্ব বেড়ে যায়। কিভাবে তার সন্তান সুস্থ থাকবে ভালো থাকবে সেই জন্য সর্বদা চেষ্টা করে থাকে পিতা-মাতা। মায়ের ভূমিকা তো অপরিসীম। দীর্ঘদিন পেটে তার সন্তান টা বহন করে নিয়ে বেড়ায় কত কষ্টের, কত জ্বালা, শারীরিক অসুস্থতা সহ্য করার কতটা ধৈর্যের ব্যাপার, একমাত্র সেই অসহায় মা ই জানে। আর এভাবেই তিল তিল করে গড়ে তোলে তার কলিজা ছেঁড়া ধন। প্রত্যেকটা বাবা-মা চাই তার সন্তান ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক, সুখে থাকুক, মানুষের মত মানুষ হোক। মেয়ের পিতা-মাতা চাই একটা ভালো পাত্রের হাতে তার সন্তানকে তুলে দিতে। পুত্রের পিতা-মাতা চাই ভালো একটা নববধূ ঘরে আনতে যে নিজের সন্তানের মত হয়ে তাদের দেখাশোনা করবে, সংসারটা গুছিয়ে নিবে। এমনই সুন্দর আশা নিয়ে তারা তাদের সন্তানকে মানুষ করে এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করে ভালো একটি পর্যায়ে তুলে দিতে। তবে এই ক্ষেত্রে যার পিতা-মাতা নেই বা মা আছে বাবা নেই, বাবা আছে মা নেই। সেই সন্তান কিন্তু বোঝে তার গার্জিয়ান হারানোর বেদনা। আবার অনেকের রয়েছে আমার পিতা মাতার মত অসুস্থ পিতা মাতা, সেই অসুস্থ বাবা মাকে সুস্থ রাখার জন্য, দুনিয়ার বুকে সুস্থ অবস্থায় হাসিখুশি দেখার জন্য নিজের সাধ্যমত দেখাশোনার চেষ্টা চালিয়ে যায়। ছুটে যায় ঔষধের নাম গুলো নিয়ে ফার্মেসীর দিকে।


IMG_20240327_174807_947.jpgIMG_20240327_174758_021.jpg
IMG_20240327_174749_007.jpgIMG_20240327_174824_968.jpg



অসুস্থ মায়ের ঔষধ আনতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হতেই অসুস্থ পিতা এসে হাতে তুলে দেয় ঔষধের কাগজ। এই মুহূর্তে যদি পিতা-মাতার সামনে একটু হাসিমুখে বলতে পারা যায় এছাড়া আর কোন কিছু লাগবে? মনে করেন, টাকা নিয়ে চিন্তা করা লাগবে না। অথবা ঔষধের পাশাপাশি তাদের খাওয়ার জন্য কোন কিছু কিনে আনলে সত্যি অনেক সন্তুষ্ট মনে হয়। তাহলে এমন অসহায় পিতা-মাতাকে ভুলে অনেকেই বউকে হাসিখুশি রাখতে দূরে যায় কিভাবে। দূরে থাক না চাকরি অথবা কর্ম করার জন্য, তবে বাবা মাকে ভুলে কি থাকা যায়? কিভাবে থাকতে পারে অনেকেই মাসকে মাস বাবা-মায়ের খোজ না নিয়ে? স্ত্রী শশুরের আত্মীয়-কুল তখন এত আপন হয়ে যে বাবা-মার খোঁজ নেওয়া লাগে না! হ্যাঁ বন্ধুরা আমি যখন আব্বা আম্মার ঔষধ কিনতে পথে বের হয় তখন এই সমস্ত চিন্তা আমাকে কষ্ট প্রদান করে। মিডিয়াতে অনেক লক্ষ্য করে দেখেছি বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। বউয়ের কথায় উঠবস করে বাবা-মাকে দেখে না এমন অনেক কুলাঙ্গার ছেলে। কিভাবে পারে তারা?


IMG_20240327_174723_022.jpg



গতকাল দুপুরে আম্মা যখন নরম সুরে আমাকে বলল আমার ঔষধ ফুরিয়ে গেছে বাপ। তখন থেকে আমি প্রস্তুত কখন আম্মার ওষুধ আনতে যাব। কারণ আমি তো প্রস্তুত হবোই, আমার কাছে টাকা আছে। যখন টাকা থাকে না সে বিষয়ে আলাদা। কিন্তু অনেকের টাকা থেকে কেন বাবা-মাকে দেখতে চায় না। বাবা-মার চেয়ে বউ মিঠা হয়ে যায়! কেমনে কিভাবে হয় ভাই? মিডিয়াতে, সমাজে এমনটা অনেক দেখেছি সেই সমস্ত পিতা-মায়ের সন্তানের কষ্ট না লাগলেও ওই বিষয়টা আমাকে বেশি কষ্ট দেয়। কেন জানেন? কারণ আমি পিতা মাতাকে মনে প্রানে ভালবাসি। ছোটবেলায় আব্বা যখন অসুস্থ থাকতো বারবার কান্না করে বলতো আল্লাহ আমাকে শুধু এইটুকু বাঁচার সুযোগ দাও,আমার সন্তান দুইটাকে মানুষ করে থুয়ে যায়। তাদের লেখাপড়া শিখিয়ে থুয়ে যায়, তারপর আমার মরন দাও নায় তো ওরা এতিম হয়ে যাবে! কি করবে, না করবে, কে উদের দেখবে। এমন আর্তনাদ সকল পিতা মাতার মধ্যে থেকে থাকে। তাহলে সেই পিতা-মাতাকে ছেড়ে কিভাবে থাকা যায় বলুন? সংসার জীবনে নানান কথা আসবে, বউ শাশুড়ির উল্টাপাল্টা বলবে এটা স্বাভাবিক। কারণ তাদের কথা শুনতে গেলে তো হবে না। জন্মদাতা পিতা মাতা, কষ্টকারী পিতা-মাতরা তো তারাই। যারা আজ অসুস্থ, আমাকে যেভাবে লালন-পালন করে মানুষ করেছে, আমাকেও ঠিক সেভাবে তাদের দেখতে হবে। এই মনোবলটাকে বলা হয় "সুপুরুষের চিন্তা" যারা পিতামাতার খোঁজ রাখে না, অসুস্থ হলে ঘুরে তাকায় না, তারা কাপুরুষ, বউ এর গোলাম, মূর্খ, কুশিক্ষিত, কুলাঙ্গার, অধম, নির্বোধ।


IMG_20240327_181752_641.jpgIMG_20240327_181610_701.jpg
IMG_20240327_181815_147.jpgIMG_20240327_181845_130.jpg



কাল সন্ধ্যার সময় যখন ঔষধ নেওয়ার জন্য বাজারের দিকে যাব, আমার অসুস্থ আম্মা কিছুতেই আমাকে বাইরে যেতে দিলেন না। কারন আমাদের বাড়ি থেকে বামুন্দি বাজার ১০ কিলো দূরে। অনেক মাঠ এ রাস্তা পার হতে হয়। কয়েকদিনের মধ্যে এলাকায় ছিনতাই হয়েছে। যদি পথে আমার কোন বিপদ হয়। মায়ের জান তখন কোথায় থাকবে সন্তানের বিপদ শুনলে। মা আমাকে বের হতে দিলেন না কিছুতেই কিন্তু ঔষধ না নিয়ে আসাতে আমার আম্মা রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। যে মা সন্তানের জন্য এত ভাবে! আর সে মাকে কিভাবে ভুলে থাকা যায়। আমার জাগ্রত বিবেক আমাকে তাড়া করে। আজকে আর থেমে থাকলাম না। কখন বিকেল হবে। আম্মা আব্বার জন্য ঔষধ আনতে যাব। আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ অবস্থায় দ্রুত গিয়ে ঔষধ এনে তাদের হাতে পৌঁছে দিতে পেরেছি। আর এভাবেই দীর্ঘদিন দুই ভাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলছে বাবা-মায়ের সুস্থ রাখার জন্য, বাঁচিয়ে রাখার জন্য। আসুন আমরা সকলেই আমাদের অসহায় পিতা মাতার হক আদায় করি,পাশে দাঁড়াই, সন্তুষ্ট রাখি। পিতা-মাতার জন্য খরচ করলে মহান সৃষ্টিকর্তা খুশি হয়ে যায় এবং তার দশ গুণ অর্থ বাড়িয়ে দেয়। মহান সৃষ্টিকর্তা যেন আমাদের সর্বদা তাদের খেদমত করার সেই তৌফিক দান করেন।


IMG_20240327_182317_124.jpg


পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif


পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Coin Marketplace

STEEM 0.27
TRX 0.11
JST 0.031
BTC 67065.15
ETH 3680.80
USDT 1.00
SBD 3.65