নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন

in আমার বাংলা ব্লগlast year
আসসালামু আলাইকুম

IMG_20230604_141417712_BURST0001_COVER.jpg





হ্যালো বন্ধুরা,

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদেরকে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজ আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি নিজের জীবনে প্রথম অভিজ্ঞতা অর্জনের অনুভূতি নিয়ে। যেখানে আপনাদের মাঝে তুলে ধরব শ্বশুরের মুদি দোকানে বসে একটি বাজার সম্পর্কে অনেক ধারণা, মানুষ সম্পর্কে অনেক ধারণা অর্জন করেছি সেই কথা। তাই চলুন আর দেরি না করে মূল পর্বে যায়।


ফটোগ্রাফি সমূহ:



সত্যি কথা বলতে কি আমি আমার জীবনে কখনো দোকান চালানোর অভিজ্ঞতা সম্মুখীন হয়নি। ছোট থেকে দীর্ঘ ২৬ বা ২৭ বছর দোকানের সম্মুখীন দিয়ে চলাচল করেছি কিন্তু খুব কম সংখ্যক সময় দোকানের পাশে অবস্থান করেছি সামান্য কিছু কেনাকাটার উদ্দেশ্যে। তাই একটি দোকানের অভন্তরি বিষয় সম্পর্কে আমার তেমন কোন ধারনাই ছিল না। তবে বিবাহের পর থেকে বেশ মাঝেমধ্যে শ্বশুরের দোকানে হাটের দিন অবস্থান করেছি। আমার শ্বশুরের মুদি দোকানটা হেমায়েতপুর বাজার গাংনী মেহেরপুর। আমার শ্বশুরের একটি মুদি দোকান রয়েছে যেখানে খুচরা পাইকারি বিক্রয় করা হয়। একদিন আমার পরিবার আমাকে বলল আমার আব্বার একটু সমস্যা হচ্ছে তুমি যদি দোকানে যেতে তাহলে আব্বা খুব খুশি হতাম। দোকানে একটি কর্মচারী ছিল ছেলেটা রোজার কারণ অজুহাত দেখে চলে গেছে ইতোপূর্বে সে একাধিকবার এটা সেটা চুরিও করেছিল। হয়তো কিছুটা অনুতপ্ত হয়েছিল এদিকে পাশের দোকানদার অনেক কিছু বলে ভুলিয়ে-ভালিয়ে তাকে হারানোর চেষ্টা করেছিল যেহেতু দোকানের বিষয় পাশাপাশি দোকানদাররা একটু হিংসা গিরি করে যেন বেচাকেনা কম হয়। তাই সবকিছু শোনার পর দেখলাম সত্যি তো দোকানটায় মোটামুটি বেচা কেনা হচ্ছে ভালো একটু যদি আমি বিকাল মুহূর্ত যাওয়া আসা করি হাটের দিন তাহলে হয়তো মানুষটার অনেক উপকার হবে পাশাপাশি আমি নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হব যা আমার ধারনা নেই। দেখলাম ভবিষ্যতে নিজেরও যদি একটি দোকান দেওয়া লাগে বা এই ব্যবসা শুরু করতে হয় তখন তো এই সম্পর্কে ধারনা হুট করে পাব না আগে থেকে ধারণা থাকা জরুরী। আমি যখন দোকানে এসে উপস্থিত হয়েছিলাম আমার শ্বশুর বেশী লজ্জা অনুভব করছিল তারপরে আস্তে আস্তে মানিয়ে নেওয়া হয় একদিন শ্বশুর অসুস্থ কারণে দোকানে আসতে পারেনি ঐদিন সম্পূর্ণটা আমাকে হ্যান্ডেলিং করতে হয়েছিল। একদিকে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে মাল অর্ডার করা ছিল, অর্ডার করার বিষয়গুলো সম্পর্কে এখান থেকে ধারণা পেলাম। শশুর আমাকে বলে দিয়েছিল এই সমস্ত কোম্পানি থেকে মাল আসবে স্লিপ হাতে নেবে মাল নিয়ে নেবে তারপর টাকা পরিশোধ করবে। নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম।

IMG_20230604_141442_986.jpg

IMG_20230604_141446_646.jpg

IMG_20230604_141452_540.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
location



বিয়ের পর লক্ষ্য করছিলাম প্রচণ্ড গরমের দিন যখন কারেন্ট থাকে না আপনারাই তো মধ্যে অবগত আছেন গরমের সময় আমাদের দেশে বেশি লোডশেডিং হয়েছিল। একদিন শ্বশুরকে দেখলাম প্রচন্ড গরমে হাত পাখা ঘুরাচ্ছে। কিন্তু দোকানে টিনের চাল এই প্রচন্ড গরমে হাত পাখায় কি হয়। দেখলাম বেচারা এতটাই কষ্ট করছে আর এভাবেই জীবিকা নির্বাহ। আপনারা অনেকটাই জানেন আমি শোরু প্যানেল নিয়ে যথেষ্ট অবগত। এই মুহূর্তে আমার পরিবারে অনলাইন থেকে ছোট বড় অনেক সৌর প্যানেল কিনে কারেন্টের আলাদা বিকল্প পদ্ধতি করে রেখেছি কারেন্ট চলে গেলে ও কষ্ট করতে হয় না আলো বাতাস এমন কি ওয়াইফাই লাইন। এক কথায় বলতে পারেন কারেন্ট না থাকলেও মোটামুটি শান্তিতে দিন পার করা যাবে। এদিকে আমার শশুর একবার স্টক করেছিলেন তাই আমি আর দেরি না করে আমার পরিবারে এক্সট্রা একটি শোর প্যানেল ছিল সেটা সেখানে দ্রুত দিয়ে আসলাম আর শশুরকে বলেছিলাম সামান্য ছয় থেকে সাত হাজার টাকা খরচ করলে পারে সুন্দর একটা ব্যবস্থা করে দেব কষ্ট করে হাতপাখা ঘোরাতে হবে না আর এ প্রচন্ড গরমে এভাবে কষ্ট করা ঠিক হচ্ছেনা। জানিনা শশুর কি ভাবছিল যেহেতু দোকানে এসে আমারও বসা লাগে তাই উনিও দেরি করলেন না সাথে সাথে একটি ১৪০০ টাকা দিয়ে ফ্যান কিনে দিলাম। এটা ডিসি ১২ ভোল্টের ফ্যান। এরপরে সাড়ে ৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি ১২ ভোল্টের ব্যাটারি। এরপর একদিন সাড়ে সাতশ টাকা দিয়ে একটি ১২ ভোল্টের ইনভার্টার। এভাবে দোকানের মধ্যে সুন্দর একটি ব্যবস্থা করে দিয়েছি ব্যাটারীটা আগে থেকে ইনভার্টার দিয়ে সার্চ করে রাখে দিনের বেলায় কারেন্ট থাক অথবা না থাক সৌর প্যানেল দিয়ে ফ্যানটা চালাতে পারে। রাতে ব্যাটারি দিয়ে ফ্যানটা চালায় আর এভাবেই সুন্দর একটা ব্যবস্থা করে দিলাম তাই উনি আমার প্রতি অনেক খুশি হয়েছিলেন। একদিন তো বলে ফেললেন আব্বা যদি এই ফ্যানের অবস্থান না করে দিত তাহলে আমার কঠিন হয়ে যেত দোকান চালানো।

IMG_20230604_141438_435.jpg

IMG_20230604_141500_770.jpg

IMG_20230604_141405_590.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
location



আম পাকার সময় লক্ষ্য করে দেখেছি বিভিন্ন এলাকা থেকে আম বিক্রয় করতে আসতেন ব্যবসায়িকেরা। দোকানের পাশে জায়গা নেয়া নিয়েও তাদের ভেতর তর্ক হতো যে আগে এসে বসে পড়তো দোকানের সামনে। আসলে এ সমস্ত বিষয়গুলো আমার কোনটাই জানা ছিল না। বাজারে খাজনা প্রদান করতে হয়। আম বিক্রয় করে তারা কিভাবে মানুষকে আকর্ষণ করে ডাকতে থাকে দোকানে বসেই এই সমস্ত বিষয়গুলো দেখেছি এবং ধারণা পেয়েছি। এদের আম বিক্রয় থেকেই বুঝতে পেরেছি মানুষের জীবনটা কতই সংগ্রামী হয়। প্রচন্ড রোদ গরমে যখন নিজের টিকিয়ে রাখা কঠিন তারা জায়গা দখল করে রোদে বসে পড়তো মাথায় জামাটা রেখে একটু সামা করে। মানুষজনকে আকর্ষণ করতো পাকা আম মিষ্টি আম ভালো আম নিয়ে যান কম দাম। যখন বাজারে লোকজন থাকতো না, বাজার বসার আগেই তারা এসে এভাবে উপস্থিত হয়ে যেত একদম বিকাল মুহূর্তে বাজারে লোকজন পুরে যেত আর বেশ ভালোই বেচাকেনা চলতো দেখতাম।

IMG_20230604_183210_903.jpg

IMG_20230604_183219_904.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
location



একদম দোকানের সম্মুখে রাস্তার ওপাশে সারি সারি জামা কাপড় লুঙ্গি গেঞ্জি গামছা বিক্রেতারা উপস্থিত হত। আমি একদিন মনে মনে ভাবলাম যারা মার্কেটে জামা কাপড় বিক্রয় করে তাদের কথা বলার ধরন আর রাস্তায় এই সমস্ত বিক্রেতাদের কথা বলা ধরনটা কেমন হয় একটু দেখব যে তোমার কেটে জামা কাপড় কিনেছি বাইরেও জামা কাপড় কিনেছি কিন্তু কখনো এভাবে পাশাপাশি অবস্থান করে তাদের কথাবার্তা বলাটা লক্ষ্য করিনি। এখানে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি দেখেছি কয়েকজন মানুষ বেশ সুন্দর করে ক্রেতাদের সাথে চিটারি করে বেশি দাম পাওয়ার চেষ্টা করছে আবার কয়েকজন রয়েছে হালকা একটু লাভ হলেই দিয়ে দিচ্ছে। তখনই বুঝতে পারলাম এভাবেই মানুষের ব্যবসা। যে যার মত বাজার খুলে বসে হোক দোকান খুলে বসে ইনকাম করে থাকে। হয় কেউ সাধু মন মানসিকতা নিয়ে আবার অনেকেই অসাধু মন মানসিকতা নিয়ে। ছোট্ট এই বাজারে রয়েছে সকল প্রকার দোকান ইলেকট্রনিক্স এর দোকান মুদিখানার দোকান চায়ের দোকান হোটেল সহ বিভিন্ন ফলের দোকান পাশাপাশি হাটের দিন অনেক শাকসবজি বিক্রেতারা মাছ বিক্রেতারা উপস্থিত হয়। আশেপাশের দশ গ্রামের মানুষ উপস্থিত হয় আর আমাদের শশুরের দোকানটাতেও বেশ ভিড় জমতে থাকে যখন কাস্টমারদের এটা সেটা দিতে যে নিজে হাপিয়ে যেতে হয়। তবে একটা কথা বলতে পারি বেশ কিছুদিন দোকানে বসার পর নতুন নতুন অনেক কিছু ধারণা অর্জন করতে পেরেছি যা দীর্ঘ এই জীবনে অর্জন করি নাই এখানে চিটার বাটপার ভালো-মন্দ সকল মানুষ সম্পর্কে অনেক জ্ঞান অর্জন করেছি। কিভাবে ব্যবসা জগতে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে হয় এই সম্পর্কেও অনেকটা ধারণা এসেছে আমার। দীর্ঘদিনের লেখাপড়া শেষ করেছি কিন্তু এতটা ধারণা অর্জন করেনি ব্যবসার সম্পর্কে।

IMG_20230604_183222_908.jpg
Photography device: Infinix hot 11s
location


পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif


পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Sort:  
 11 months ago 

যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা থাকাটা অত্যন্ত জরুরি যদি অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে সেই কাজে কোন ভাবে সফলতা অর্জন করা সম্ভব হবে না। বিয়ের পরে দোকান চালানোর কাজ করছেন কিছুটা এটাই আপনার অনেক বড় একটা অভিজ্ঞতা হচ্ছে বলে আমার কাছে মনে হয়। ভবিষ্যতে যদি কোন সময় আপনি দোকান দেন তাহলে এই অভিজ্ঞতা খুবই কাজে আসবে।

 11 months ago 

হ্যাঁ, একদম ঠিক বলেছ।

 11 months ago 

ভাইয়া যে কোন বিষয়েই অভিজ্ঞতা থাকা ভালো। আজকে শুশুরের দোকানে গিয়ে ব্যবসা করে নতুন অভিজ্ঞতা হলো। তাছাড়া যে কোন ব্যবসা শিখতে পারলে অনেক কাজে লাগে। ব্যবসা ছোট হোক বা বড় হোক ব্যবসার সাথে কিছু লাগে না। ধন্যবাদ।

 11 months ago 

আপনার সুন্দর মন্তব্য পেয়ে খুশি হলাম

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59378.58
ETH 2646.25
USDT 1.00
SBD 2.46