প্রিয়জনদের থেকে দূরে থাকা অনেক কষ্টসাধ্য একটা বিষয়
আসসালামু আলাইকুম। আমার বাংলা ব্লগ এর সকল বন্ধুরা আশা করছি আল্লাহর অশেষ রহমতে সকলেই বেশ ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের অনেক অনেক দোয়া এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে আমিও বেশ ভালো আছি।
ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আমি আজকে আপনাদের মাঝে একটি বাস্তব জীবনের ব্লগ লেখার চেষ্টা করছি। আমার আজকের ব্লগের বিষয় প্রিয়জনদের থেকে দূরে থাকা অনেক কষ্টসাধ্য। আশা করছি ইতিপূর্বেই আপনারা আপনাদের প্রিয়জন থেকে দূরে আছেন এবং আমার আজকের ব্লগ পড়লে আপনাদের সঙ্গে আমার জীবনের বেশ কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। তাহলে চলুন উপভোগ করে আসি আমার আজকের ব্লগ প্রিয়জনদের থেকে দূরে থাকা অনেক কষ্টসাধ্য বিষয়।
Scr
প্রিয়জন কথাটার শব্দ একদম ছোট হলেও এর মানে অনেক বিশাল। বিশেষ করে আমরা অনেকেই আমাদের জীবিকার তাগিদে প্রিয়জন সেগুলো হতে পারে পিতা-মাতা ভাই বোন দাদা-দাদি অথবা নানা-নানী তাদেরকে দূরে রেখে আমরা জীবিকার তাগিদে শহরে বসবাস করছি অনেকেই।
প্রতিনিয়ত জীবন নামক যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করতে হচ্ছে আমাদেরকে এমনকি শুধুমাত্র বেঁচে থাকার তাগিদে আমাদের এই সংগ্রাম করে যেতে হচ্ছে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত প্রতিটি মুহূর্ত। তবে যতই আমরা জীবিকার তাগিদে প্রিয়জন থেকে দূরে থাকে তারপরে কিন্তু মনের ভেতরে একটা তীব্র আকাঙ্ক্ষা কাজ করে এবং যখন প্রিয়জনদের কথা মনে হয় তখন যেন আর চোখ থেকে পানি ধরে রাখা যায় না।
আমরা অনেকেই হয়তো প্রিয়জনদের ছবি কিংবা ফ্যামিলি ফটোগ্রাফি দেয়ালের এক কর্নারে টানিয়ে রাখি। যখন তাদের কথা মনে পড়ে তখন ফোনের গ্যালারি অথবা দেয়ালের এক কর্নারে তাকিয়ে তাদেরকে মনে করি এবং তাদের কথা স্মরণ করলে মনে বেশ খারাপ লাগে কিংবা মাঝে মাঝে ভালো লাগা কাজ করে।
কিন্তু স্বচক্ষে দেখা এবং সরাসরি ভালোবাসা আর ফটোগ্রাফির মাধ্যমে এবং একটি আলোকরশ্মি কে ভালোবাসা কি এক সমান হতে পারে?? কখনোই না।
আসলে ভাতের খুদা কখনোই মুড়ি দিয়ে পরিপূর্ণতা পায় না এবং কখনোই তা মেটানো সম্ভব হয় না। যতই আমরা আমাদের প্রিয়জনের ছবি মোবাইলের গ্যালারিতে অথবা ঘরের এক কর্নারে টানিয়ে রাখি তবে তারপরেও মাঝে মাঝে যখন তাদের কথা মনে হয় এবং আমাদের চোখ তাদেরকে খুঁজে বেড়ায় তখন মনের ভেতরে যেন একটা ছটফটানি কাজ করে।।
বেশ কয়েকদিন থেকে শুনছি আমার দাদা অসুস্থ। যদিও তার কথা বারে বারে মনে পড়ছে কিন্তু শহরে আছি এবং নিজের জীবিকা তাগিদে প্রতিনিয়ত আমাকে বাধ্যগতভাবে শহরে থাকতে হচ্ছে।
যদিও মাঝে মাঝে ফোন করছি এবং দাদার খোঁজখবর নিচ্ছি। তবে তার পরেও মাঝে মাঝে যখন দাদার ভালোবাসা গুলো মনে পড়ছে চোখ থেকে যেন এমনিতেই পানি গড়িয়ে পড়ছে।
কারণ এই পৃথিবীতে পিতা-মাতার পরেই আমি আমার দাদা এবং দাদিকে অত্যন্ত বেশি ভালোবাসি। ছোটবেলায় যখন আমার বাবা অথবা মা আমাকে বকাবকি করত তখন আমার দাদা অথবা দাদী আমাকে নিয়ে গিয়ে অনেক আদর করত এবং আমি যেন কান্না না করি সে যেন আমাকে আদর করত। বাবা যখন মাঝে মাঝে অতিরিক্ত রাগ দেখাতো আমার প্রতি তখন আমার দাদি বাবাকে অনেক বকাবকি করতো।
তবে এখন আমি বড় হয়েছি। জীবিকার তাগিদে আমি আজ ঢাকা শহরে। এখন আর বাবা কিংবা মা আমাকে বকাবকি করে না। এমন সময় আমি আমার দাদা দাদির আদর থেকে বিরত।
কারণ প্রায় সাত বছর যাবত দাদা এবং দাদিকে ছেড়ে শহরে বসবাস করছি। মাঝে মাঝে যখন তাদের সঙ্গে কথা বলি এবং যখনই শুনি তারা কোন সমস্যায় কিংবা অসুস্থতায় রয়েছে তখন এই বড় ছেলেটার চোখ থেকে পানি এমনিতেই গড়িয়ে পড়ে।
মাঝে মাঝে চিন্তা করি এই ইটের শহর থেকে বাড়িতে চলে যাব। তবে জীবিকার তাগিদে এবং পরিবারের কথা চিন্তা করে সেটিও হয়ে ওঠে না। আসলে প্রত্যেকটি মানুষ একটি পৃথিবী নামক জেলখানার মাঝে কোন না কোন মায়ায় বন্দী হয়ে আছে। চাইলেও সেই মায়া কাটিয়ে উঠতে পারে না কিংবা নিজের সিদ্ধান্ত মত কাজ করতে পারেনা।
যখন শুনি দাদা কিংবা দাদি অসুস্থ তখন মনের ভেতর যেন একটা ভূমিকম্প পুরো শরীরকে কাঁপিয়ে দেয়। তবে তার পরেও কিছু করার নাই।মাঝে মাঝে দূর থেকে দাদা-দাদির খবর নিয়েই এবং বাড়িতে যারা অন্যান্য সদস্য রয়েছে তাদেরকে অনুরোধ করি যেন তারা দাদা এবং দাদিকে সময় মত দেখাশোনা করে এবং তাদের খেয়াল রাখেন।
ছোট থেকেই পিতা-মাতা যদিও আমার সঙ্গে মাঝে মাঝে খারাপ ব্যবহার করত তখন দাদা দাদী আমাকে সাহায্য করতে এবং তারা আমাকে তাদের আদরের অনেক বড় করেছেন। তবে এখন আমার দায়িত্ব হল এই বৃদ্ধ বয়সে তাদের খোঁজখবর নেওয়া এবং তাদের যে কোন প্রয়োজনীয় যেন আমি কাজে লাগতে পারি।
কিন্তু ওই যে একটা কথা আছে, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ যাকে ধন-সম্পদ দেন তাকে মন দেন না, আর যাকে মন দেন তাকে ধন সম্পদ দেন না।
মূলত আমার ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই। যতই চেষ্টা করি যে এই ঢাকা শহর ছেড়ে বাড়িতে গিয়ে তাদের সেবা করবো এবং তাদের খোঁজ খবর রাখবো কিন্তু পরিবার এবং অর্থনৈতিক সংকট যেন আমাদের প্রতিটি মানুষকে আকড়ে ধরে রাখছে। একটি পর একটি প্রয়োজন এবং একটি পর একটি চাহিদা। কোনভাবেই আমরা দুনিয়ার এই চাহিদা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারব না এবং প্রিয় মানুষগুলোকে খবর রাখতে পারব না। তাদের মুখের হাসির কারণ হতে পারব না কিংবা হয়তো কখনোই তাদের আর সেবা করা হয়ে উঠবে না।
যদিও মাঝে মাঝে দেশের বাড়িতে বেড়াতে যাই তখন আর কখনোই ঢাকায় ফিরতে মন চায় না। একদিকে দাদির চোখের অশ্রু অন্যদিকে আমিও চিৎকার করে কান্না শুরু করে দেই মাঝে মাঝে। তবে কি আর করার? পৃথিবীটা বড়ই স্বার্থপর। চাহিদার মাঝখানে আমরা সত্যি বড় অসহায়। হয়তো একদিন সমস্ত চাহিদা পূর্ণতা পাবে কিন্তু তখন আর আমি আমার প্রিয় মানুষগুলোকে এই পৃথিবীতে খুঁজে পাবো না।
তবে এখন একটা চাওয়া একমাত্র ভরসা মহান রব আল্লাহতালা, আল্লাহতালা যেন পৃথিবীর সকল দাদা-দাদীকে সুস্থ রাখেন এবং তাদেরকে খোঁজখবর নেওয়ার সুযোগ করে দেন।
সুস্থ থাকুক পৃথিবীর সকল প্রিয় মানুষগুলো।
https://twitter.com/Akash02671928/status/1753077996771291234?t=No-3y5QDtbda_BBBoe_B1Q&s=19
সুন্দর একটি কথা বলেছেন আপনি। আসলে প্রিয়জনদের ছেড়ে দূরে থাকাটা আমাদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য তারপরও বিশেষ প্রয়োজনে জীবন ধারণের তাগিদে দূরে থাকতে হয় আমাদের। সুন্দর একটি বিষয় কে কেন্দ্র করে আপনি পোস্ট লিখেছেন দেখে বেশ খুশি হলাম আমি। বাস্তবতার বাস্তব বিষয় কিন্তু আপনি লিখেছেন।
সবসময়ই প্রতিটি ব্লগ আমি আমার লাইফস্টাইল এর সঙ্গে সংযুক্ত করে লিখি। যখন আপনারা এর সহমত প্রকাশ করেন সত্যি অনেক বেশি ভালো লাগে। ধন্যবাদ ভাই আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যের জন্য।
ঠিক বলেছেন প্রিয়জন শব্দটা ছোট হলেও এর মানে অনেক বিশাল। আসলে জীবনের তাগিদে আমরা অনেক মানুষ প্রিয়জন মানুষ থেকে দূরে থাকি। আর কাজের কারণে এই প্রিয়জনগুলোর সাথে ঠিকমত দেখা করতে পারি না। আপনার দাদি অসুস্থ তারপরও ব্যস্ততার কারণে যেতে পারতেছে না। হয়তো এই কারণে তার স্মৃতিগুলো আপনার চোখে সব সময় বাঁচতেছে । আর কাজের ব্যস্ততায় মানুষ অনেক সময় অনেক কিছু করতে পারে না। ধন্যবাদ আপনাকে মূল্যবান একটি পোস্ট করার জন্য।
এটি ঠিক প্রিয়জনদের থেকে দূরে থাকা অনেক কষ্টসাধ্য। প্রিয়জন মানুষ যখন দূরে থাকে তখন মন থেকেও নিজের কাছে অনেক খারাপ লাগে। কাজের কারণে হয়তোবা অনেকে অনেক জায়গাতে থাকে। এমন সময় আপন মানুষগুলো যখন অসুস্থ বা বিপদ হয় ঠিকমতো দেখতে যাওয়া হয় না। সময় এবং কাজ এগুলো অনেক সময় নিজের আয়ত্তের বাইরে থাকে। আপনার দাদা অসুস্থ শুনেও যেতে পারতেছেন না। তবে দাদা দাদীর সাথে সবাইর অনেক স্মৃতি জড়িয়ে থাকে। আপনার পোস্টটি খুব সুন্দর করে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।