গ্রামে বাজার করার আনন্দ ও অভিজ্ঞতা
ক্যানভা দিয়ে তৈরি
আসসালামু আলাইকুম। আমার বাংলা ব্লগ ও সকল স্টিমিয়ান বন্ধুদের শুভেচ্ছা। আশা করছি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনারা সকলে বেশ ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের অনেক অনেক দোয়া এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে আমিও বেশ ভালো আছি। আমরা যেন সব সময় সুস্থ সুন্দর এবং ভালো থাকে সে কারণে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি।
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের মাঝে আমি একটি ব্লগ লেখার জন্য উপস্থিত হয়েছি। প্রতিদিনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবং আমি আজকে একটি লাইফ স্টাইল ব্লগ শেয়ার করতে চাই। আমি আজকে আপনাদের মাঝে যে একটি লাইফস্টাইল ব্লগ শেয়ার করব সেই ব্লগের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করেছি, গ্রামে বাজার করার আনন্দ ও অভিজ্ঞতা
। আমি আশা করছি আজকের এই সাধারণ ব্লগ আপনারা বেশ উপভোগ করবেন এবং আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের কাছে এই সাধারণ ব্লগ শেয়ার করতে পেরে আমি অনেক অনেক আনন্দিত। উপভোগ করার জন্য পড়তে থাকুন।
প্রায় সাত বছর যাবত আমি ঢাকা শহরে বসবাস করছি। শহরের পরিবেশ ও পরিস্থিতি আমাকে বেশ আকৃষ্ট করেছে এবং গ্রামে গিয়ে আমার খুব একটা এখন আর মন বসে না। তবে তারপরেও আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশী গ্রামবাসীদের সাথে ঈদের সালাত আদায় করার আনন্দ অত্যন্ত বেশি। তাই আমি যখনই সময় পাই তখনই দেশের বাড়িতে যাই। বিশেষ করে আমি প্রত্যেক ঈদ ও অন্যান্য ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় উৎসবগুলোতে দেশের বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করি এবং আনন্দ করে।
তবে যদিও আমি পরিবারের বড় সন্তান তবে বাজার করা কিংবা নিত্যদিনের কাঁচা বাজার করার অভিজ্ঞতা আমার খুব কম। পরিবারের সকল দায়িত্ব আমার আব্বা পালন করে থাকেন এবং পাশাপাশি আমার বাবাকে আমার মা সাহায্য করে থাকেন।
তবে আমি যখন দেশের বাড়িতে বেড়াতে গেলাম তখন আমার কাঁধে চলে এসেছিল বাজার করার দায়িত্ব। কারণ পরিবারের সবাই যখন ঢাকায় ছিল তখন আমি আমার অসুস্থ দাদাকে দেখতে গিয়েছিলাম। এরপর দাদা যেহেতু অসুস্থ তাই খাবারের জন্য আমাকে বাজারে যেতে হয়েছিল। তবে এটি ছিল গ্রামের একটি লোকাল বাজার এবং ব্যতিক্রমধর্মী বাজার।
আমি একটি বাইসাইকেল নিয়ে বাজারে প্রবেশ করলাম। যেহেতু গ্রামের বাজার তাই সেখানে বড় কোন দোকান ছিল না। গ্রামের কাঁচা রাস্তা এবং রাস্তার পাশে রয়েছে বেশ কিছু দোকান। বিশেষ করে, সবজি থেকে শুরু করে সকল প্রকার মোদি দোকান রয়েছে এই লোকাল গ্রামের বাজারে।
গ্রামের মানুষের সকল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এখানে বিক্রয় ও ক্রয় করা হয়ে থাকে। আমি সাইকেল নিয়ে বাজারে ভেতরে প্রবেশ করলাম এবং তখন প্রচন্ড রোদ ছিল। এবং অনেকদিন পর সাইকেল চালানোর ফলে আমার শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে গিয়েছিল। আমি সাইকেলটি একটি বটগাছের নিচে রেখে বাজারের ব্যাগটা হাতে নিয়ে বাজারের ভেতরে প্রবেশ করলাম।
বাজারের ভেতরে প্রবেশ করার পর আমি দেখেছিলাম একদম টাটকা কিছু লাউ বিক্রি করা হচ্ছিল। তবে এই লালগুলোর দাম ছিল মাত্র ১০ টাকা পিস। এটা সত্যি আশ্চর্য ও হাস্যকর। যেখানে শহরের বাজারগুলোতে একটি লাউ সর্বনিম্ন ৭০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি করা হয় সেখানে গ্রামের লোকাল বাজারে একটি লাউ এর দাম মাত্র ১০ টাকা। তারপরেও এই টাটকা লাউ গুলো দেখে আমার অনেক বেশি ভালো লেগেছিল এবং আমি একটি লাউ ক্রয় করেছিলাম। গ্রামের বাজারে এমন আশ্চর্য দাম আমাকে সত্যিই আনন্দিত ও বিস্মিত করেছিল।
এরপর আমি বাজারের ভেতর দিয়ে হাঁটতে শুরু করেছিলাম। যদিও সামান্য বাজার প্রয়োজন তবে তারপরেও আমি পুরো গ্রামের এই লোকাল বাজার উপভোগ করি। কারণ দীর্ঘদিন পর আমি গ্রামের বাজারে গিয়েছি এবং হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে বাজার করতে বেশ ভালো লাগছিল।
এরপর আমি একটি দোকানে গিয়েছিলাম এবং ঢেঁড়স, আলু, কাঁচা মরিচ পেঁয়াজ রসুন ক্রয় করলাম এবং এরপর সেখানে আমার মোট ২০০ টাকা বিল পরিশোধ করতে হয়েছিল।
এরপর আমাকে একটি মুদি দোকানে যেতে হয়েছিল এবং আমি সেখানে গিয়ে লবণ ও সয়াবিন তেল ক্রয় করেছিলাম। বাজার করার পর আমি বাজারের ব্যাগটা নিয়ে বট গাছের নিচে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম। এমন সময় চোখের সামনে একটি দৃশ্য আমাকে বেশ আনন্দিত করেছিল এবং সত্যিই আমি বেশ কিছুক্ষণ সময় তাদের কার্যকলাপ উপভোগ করেছিলাম।
আমি দেখে আশ্চর্য হয়েছিলাম যে, রাস্তার পাশে একজন নাপিত চুল কাটছিল ও সেভ করছিল। এটি দেখে আমার অনেক বেশি ভালো লাগছিল। একটি আম গাছের নিচে শুধুমাত্র একটি চেয়ার দিয়ে মানুষকে ওখানে চুল কাটানো হচ্ছে। সেভ ও ক্লিন এর সমস্ত কাজ করা হচ্ছে।
গায়ে কোন প্রকার প্রোটেক্টর ছিল না শুধু একটি গামছা ছাড়া। সামনে কোন গ্লাস ছিল না এবং নামিদামি ব্র্যান্ডের শেভিং ক্রিম ছিলনা।
গ্রামের মানুষের এমন সরল দৃশ্য আমাকে আনন্দিত করেছিল। যদিও আমি গ্রামের সন্তান তবে তারপরেও আমি আমার গ্রাম থেকে প্রায় বেশ কয়েক বছর থেকে দূরে আছি।
গ্রামের এই লোকাল বাজারে চমৎকার সেলুন দেখে আমি আনন্দিত হয়েছিলাম। খুব শখ জেগেছিল ওই দোকানে গিয়ে মাথার চুল গুলো একটু ছাটিয়ে নেওয়ার জন্য। তবে সময় ও সন্ধ্যার পূর্ব মুহূর্তে হওয়ার কারণে আমি চমৎকার এই দৃশ্য উপভোগ করি এবং আমি আবারো সাইকেলের কাছে যাওয়ার জন্য হাঁটতে শুরু করলাম।
হঠাৎ করে মনে হয়েছিল আমার দাদি পান ও সুপারি কিনতে বলেছিল, তাই আমি পান ও সুপারির ক্রয় করলাম এবং এরপর আমি ব্যাগটা সাইকেলে রেখে বাজারের ছোট ছোট মুখরোচক খাবারের দোকান গুলো দেখেছিলাম।
আমি দেখেছিলাম একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি পেঁয়াজি তৈরি করছিল। পিঁয়াজি খেতে আমার অনেক বেশি ভালো লাগে তাই আমি ওই বৃদ্ধ ব্যক্তির কাছ থেকে ১০০ গ্রাম পেঁয়াজি ক্রয় করেছিলাম মাত্র ১৫ টাকা দিয়ে। যথারীতি ওই বৃদ্ধের কাছ থেকে পিঁয়াজি খেতে আমার দাঁত ভেঙে গিয়েছিল এমন অবস্থা। অত্যন্ত শক্ত এবং মুচমুচে। খেতে অনেক ভালো লেগেছিল এবং আমি পাশের একটি দোকানে গিয়ে ১০০ গ্রাম বাদাম ক্রয় করেছিলাম ২০ টাকা দিয়ে।
যেহেতু ছোট্ট এই গল্পের মাধ্যমে আমার প্রায় দুই ঘন্টা অতিক্রম হয়েছিল এবং প্রায় সন্ধ্যা লাগার মুহূর্ত। এখন আমাকে বাসায় ফিরে আসতে হবে। এর জন্য আমি বট গাছের নিচে গিয়ে আমার সাইকেলটা সংগ্রহ করলাম এবং সাইকেল চালিয়ে আমি আমার বাড়িতে চলে এসেছিলাম।
আসলে মানুষ যে কোন জিনিস থেকে যদি দূরে থাকে তাহলে বেশ কিছুদিন পর মানুষ সেই মায়া ভুলে যায়। যখন মাঝে মাঝে আমি গ্রামের বাড়িতে যাই দুই একদিন বেশ ভালো লাগেনা। তবে যখন আমি আবারও এক সপ্তাহ থাকি তখন আর আমার শহরে ফিরতে মন চায় না।
কারণ গ্রামের মানুষের চলাফেরা, গ্রামের মানুষের সংস্কৃতি ও চলাফেরার সততা আমাকে মুগ্ধ করে। আমি গ্রামের ছেলে হয়েও শহরে বসবাস করি এবং আমি মাঝে মাঝে যখন আমার গ্রামকে মনে করি গ্রামের স্মৃতি গুলো আমি বেশ মিস করি। তবে প্রয়োজন ও প্রিয়জনের চাহিদা পূরণ করতে অবশ্যই শহর ত্যাগ করতে হবে এটা স্বাভাবিক।
আমি আশাবাদী আমার গ্রামের বাজার করার আনন্দ ও অনুভূতিগুলো আপনাদের বেশ ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে আমার চরম সার্থকতা। মূল্যবান সময় দিয়ে আজকের এই পোস্ট উপভোগ করার জন্য আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ এবং চির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহ হাফেজ ।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
|250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আমি
আমি মোহাম্মদ আকাশ সরদার
। জাতীয়তা বাংলাদেশী। আমি ব্লগিং করতে অনেক বেশি ভালোবাসি। যদিও আর্ট আমার অনেক বেশি পছন্দ তবে আর্টওয়ার্ক কাজের জন্য আমার হাত একদম বাজে। ভ্রমণ এবং ফটোগ্রাফি আমার সব থেকে প্রিয় বিষয়। নতুন নতুন জায়গা ভ্রমণ এবং নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে বেশ ভালো লাগে। অসহায় মানুষদেরকে সাহায্য করতে পারলে মনের ভেতরে আনন্দ আসে। সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে মানুষের সেবা করতে চাই এবং সকলের প্রিয় ব্যক্তি হয়ে এই সমাজে বসবাস করতে চাই।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
https://x.com/steemforfuture/status/1796469565272342847?t=WT6Qqf8WnUfE_kKmNPxDxA&s=19
গ্রাম থেকে বাজার করা সুন্দর মুহূর্ত আজকে আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দেখি অনেক ভালো লাগলো। যেখানে খুঁজে পেলাম অনেক শাকসবজির চিত্র। আসলে সত্যি কথা বলতে কি ভাইয়া নিজের গ্রাম থেকে দূরে থাকাটা বেশ কষ্টদায়ক। আর এই অনুভূতিটা আমিও জানি। তবে যাই হোক বেশ সুন্দর কিছু অনুভূতি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন, অনেক কিছু জানতে পারলাম পোস্ট পড়ে।
গ্রামে বাজার করার অনুভূতি ও আজকের এই ব্লগ উপভোগ করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু। শুভ রাত্রি
আপনি সাত বছর শহরে থাকার কারণে গ্রামে গিয়ে এখন আর মন বসাতে পারেন না। আমি তো একদম ছোটবেলা থেকেই শহরে তবে আমার কাছে গ্রামের পরিবেশ বেশ ভালো লাগে। ঢাকা শহরের জীবনটা বন্দী জীবনের মত। গ্রামে একটু উন্মুক্ত পরিবেশ। যাইহোক আপনি গ্রামের বাজারে বাজার করার মুহূর্ত শেয়ার করেছেন দেখে খুবই ভালো লাগলো। ফটোগ্রাফি গুলো খুব সুন্দর ভাবে ক্যাপচার করেছেন। রাস্তার পাশে বসে এরকম চুল কাটার দৃশ্য আমি আগে কখনো দেখিনি। পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
এটা অবশ্য ঠিক। তবে পরিবেশের সাথে একবার খাপ খাওয়ানোর পরে সেটা পরিবর্তন করা অনেক কঠিন।
আমার বাজারের অনুভূতি আপনার ভালো লেগেছে এটা শুনে আমি বেশ খুশি। ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।