এক বুক কষ্ট নিয়ে ভ্রমণ
আসসালামু আলাইকুম। আমার বাংলা ব্লগ এর সকল বন্ধুদের শুভেচ্ছা। আশা করছি আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনারা সকলে বেশ ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের অনেক অনেক দোয়া এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে আমিও বেশ ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ব্লগ শেয়ার করার জন্য উপস্থিত হয়েছি। সকলেই উপভোগ করুন আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।
ঈদের দ্বিতীয় দিন। ঈদের পূর্ব দিনগুলো বেশ ভালোভাবে অতিক্রম হয়েছিল। পরিবার এবং আত্মীয় স্বজনদের সাথে খুব আনন্দ করে ঈদ উদযাপন করেছিলাম।
কিন্তু ঈদের দ্বিতীয় দিন আমার মনে বেশ অশান্তির সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ দীর্ঘদিন ধরেই যাকে আমি পছন্দ করে আসছিলাম সেই পছন্দের মানুষটি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাবে ।
তাছাড়াও তার সাথে আমার মনের মিল ছিল অনেক বেশি। তবে হুট করে যখন অন্যজনের সাথে তার এনগেজমেন্ট হয়ে গেল এবং ওইদিন আমার মনের অবস্থা একদম খারাপ ছিল। নিজের মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আমি একটি ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম এবং আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম রাজশাহী গিয়ে খালার বাড়িতে বেশ কিছু দিন সময় অতিক্রম করব।
তাই আমি আমার বাড়ি থেকে স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। স্টেশনে পৌঁছানোর পর আমি ট্রেন আসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। সকাল দশটার ট্রেন প্রায় আসতে আসতে ৪০ মিনিট লেট করেছিল এবং আমাদের ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১০:49 মিনিট । ট্রেনের ভিতর দিয়ে যা ছিলাম এবং এমন সময় আমি আমার খালাতো বোনের কাছে ফোন করেছিলাম। আমার খালাতো বোনের কন্টাক্ট নাম্বার বন্ধ থাকার কারণে আমি তার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি এবং তাকে হোয়াটসঅ্যাপে করলে সে কোন রেসপন্স করলো না। তবে আমি তারপরেও আমার ট্রেনে যাত্রা শুরু করলাম।
বেশ অনেকক্ষণ সময় পর আমি রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম।
এরপর চারেদিকে দিকে শত শত মানুষ। শত শত মানুষের মাঝে আমাকে সত্যিই অনেক একা মনে হয়েছিল। কারণ আমার ভালো দিনে অনেক বন্ধু থাকলেও বিপদের সময় আমার পাশে কেউ নাই। মনটা বেশ খারাপ। প্রিয় মানুষটাকে আমি আর কিছুক্ষণ পরেই হারিয়ে ফেলবো এই কথাটি মনে পড়লে চোখ থেকে এমনিতেই পানি পড়ছে।
তবে তারপরেও কিছুই করার ছিল না। আমি স্টেশনে বসে একা একা কান্না করছিলাম। অপরদিকে খালার বাড়িতে যাব আমি তাদের সাথে কোনোভাবেই ফোনে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। কন্টাক্ট নাম্বার বন্ধ রাখা হয়েছিল এবং অপরদিকে whatsapp এ তাদেরকে নক দেওয়ার ফলেও তারা কোন রেসপন্স করেনি। সুতরাং আমি বাধ্য হয়ে রাজশাহী স্টেশনে বেশ কিছুক্ষণ সময় বসে ছিলাম এবং একটি দুঃখময় ও বাস্তব পৃথিবী সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করেছিলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পর আমার আব্বাজান আমাকে ফোন করেছিল। আমি আব্বার ফোন রিসিভ করে বাবার সাথে খুব ভালোভাবে কথা বলেছিলাম। তবে আমার মনের ভেতরে যে এত বড় ঝড় বয়ে যাচ্ছে আমি তা কাউকে কোনোভাবেই বুঝতে দেইনি।
অবশেষে বাবা আমাকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেছিল। যেহেতু এই স্টেশনে আমি একা, এবং আমার সাথে কেউ ছিলনা। তাছাড়াও আমি আমার খালাদের সাথে কন্টাক্ট নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। তাই আমি দেরি না করে স্টেশন মাস্টারের কাছে গিয়ে পরবর্তী ট্রেন কখন আছে সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম।
তবে স্টেশন মাস্টার আমাকে জানিয়ে দিয়েছিল সর্বনিম্ন বিকেল তিনটায় ট্রেন আছে। তাই আমি স্টেশন ট্যাগ করেছিলাম এবং একটি লোকাল বাস দেখে আমি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। এদিকে বাড়িতে বিয়ের বাজনা বাজছিল। মনের ভিতরে অনেক কষ্ট চাপা দিয়ে আমি তারপরেও বাড়িতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম। বাড়িতে ফিরে আসার পর আমি গোসল করলাম এবং আমি একটি নতুন পোশাক পরিধান করে মোবাইল ফোনটা চার্জে লাগিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম। যেন কন্টাক্ট নাম্বারে কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করতে না পারে। অবশেষে রাত এগারোটায় আমি বাসায় ফিরলাম এবং ততক্ষণে প্রিয় মানুষ অন্যের হয়ে গিয়েছে এবং বিয়ের সমস্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে।
আপনাদের মাঝে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আজকের এই পোস্ট লিখলাম। এটি ছিল আমার জীবনের সবথেকে খারাপ একটি মুহূর্ত। তবে তারপরেও সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভরসা। নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেক জীব জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। তাই হয়তো আমার পছন্দের মানুষকে আমি চোখের সামনের দিয়ে অন্যের হতে দেখেছি। আসলে পৃথিবীটা বড়ই কঠোর। দুঃখ ভরা মন নিয়ে আপনাদের মাঝে আমি আমার মন ভালো করার ভ্রমণের গল্প শেয়ার করলাম।। আশা করছি আপনাদের ভালো লেগেছে। মূল্যবান সময় দিয়ে আমার এই ব্লগ উপভোগ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
|250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আমি
আমি মোহাম্মদ আকাশ সরদার
। জাতীয়তা বাংলাদেশী। আমি ব্লগিং করতে অনেক বেশি ভালোবাসি। যদিও আর্ট আমার অনেক বেশি পছন্দ তবে আর্টওয়ার্ক কাজের জন্য আমার হাত একদম বাজে। ভ্রমণ এবং ফটোগ্রাফি আমার সব থেকে প্রিয় বিষয়। নতুন নতুন জায়গা ভ্রমণ এবং নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে বেশ ভালো লাগে। অসহায় মানুষদেরকে সাহায্য করতে পারলে মনের ভেতরে আনন্দ আসে। সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে মানুষের সেবা করতে চাই এবং সকলের প্রিয় ব্যক্তি হয়ে এই সমাজে বসবাস করতে চাই।
https://x.com/steemforfuture/status/1806362939517223403?t=lgqRJCyjQxtDKWmWbNYnaw&s=19