শৈশবের স্মৃতি
Canva
আসসালামু আলাইকুম। আশা করছি আল্লাহর অশেষ রহমতে সকলে ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের অনেক অনেক দোয়া এবং আল্লাহতালার অশেষ রহমতে আমিও ভাল আছি। আমরা সকলেই যেন সবসময় সুস্থ সুন্দর এবং ভালো থাকতে পারি এ কারণে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি। সকলের প্রতি অনেক অনেক প্রীতি শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের ব্লগিং।
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের মাধ্যমে আমি আজকে আমার শৈশবের স্মৃতি নিয়ে কিছু লিখতে চাই। আমি এর পূর্বে আরো বেশ কিছু পোস্ট শৈশবে স্মৃতি নিয়ে করেছি তবে আজকে একটি স্পেশাল ব্লগ তৈরি করতে চাই আমার বাংলা ব্লগ ফাউন্ডার এর জন্য। শ্রদ্ধেয় দাদা প্রত্যেক মানুষের শৈশবের স্মৃতি সম্পর্কে জানতে চেয়ে আমাদেরকে একটি পোস্ট করার জন্য উৎসাহিত করেছিল এবং আমি সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।
সুতরাং আমি আজকে আমার শৈশবের প্রধান প্রধান আনন্দঘন মুহূর্তগুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চাই।
প্রত্যেক মানুষ শিশুকাল থেকে শৈশবে পদার্পণ করার পর বেশ কিছু গল্প রচিত হয়। আর শৈশবের সেই সকল স্মৃতিগুলো মানুষ আজীবন বুকে লালন করে এবং সে সকল স্মৃতিগুলো মানুষ মৃত্যুর পূর্ব দিন পর্যন্ত মনে করতে থাকে এবং আফসোস করতে থাকে। কারণ সময় একবার চলে গেলে আর কখনোই ফিরে আসে না শুধু থেকে যায় স্মৃতিগুলো।
সুতরাং আমার শৈশবের গল্প রয়েছে সে সকল গল্পগুলো সত্যিই অনেক মধুর মনে হয় এই যৌবন বয়সে। তবে আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় ইশ এখনো যদি আবার শৈশবে ফিরে যেতে পারতাম তাহলে কতই না ভালো হতো??
তবে একটি বিশেষ কথা হল মানুষ কখনোই তার পূর্বের দিনে ফিরে যেতে পারে না। তবে তার পূর্বের স্মৃতিগুলোকে অনুসরণ করে মানুষ তার কষ্টগুলোকে ভুলতে পারে এবং বাঁচার প্রতি আরো স্বাদ জাগতে পারে।
সুতরাং আমি আজকে আপনাদের মাঝে আমার শৈশবের বেশ কিছু স্মৃতি শেয়ার করার জন্য উপস্থিত হয়েছি। আশা করছি সকলেই উপভোগ করবেন এবং শৈশবে স্মৃতি বিজড়িত আনন্দঘন মুহূর্তগুলো আপনারাও চাইলে উপভোগ করতে পারেন আমার বাংলা ব্লগ পড়ার মাধ্যমে।
প্রথম সাইকেল চালানোর অনুভূতি
শৈশবের স্মৃতিগুলোর মধ্যে আমার অন্যতম ছিল প্রথম সাইকেল চালানো শেখা। আমাদের একটি সাইকেল ছিল এবং সেই সাইকেলটি অনেক পুরনো।
বিশেষ করে আমাদের এই সাইকেলটি আমার বাবা ঢাকায় যখন আলু সংগ্রহ করার কাজে ব্যবহার করত তখন এই সাইকেল দিয়ে আমার বাবা কাজ করত। অনেক পূর্বের সাইকেল এবং এই সাইকেলে প্রচুর পরিমাণে লোহা ব্যবহার করা হতো এবং এ সাইকেলটি প্রচুর পরিমাণে ভারী ছিল।
তো আমার যখন সাইকেল চালানোর ইচ্ছা হয়েছিল তখন আমি বাবাকে একটি নতুন সাইকেল কিনে দেওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না হওয়ার কারণে আমাকে বাবা সাইকেল কিনে দিতে পারেনি তবে তারপরেও আমি খুব খুশি ছিলাম কারণ আমি তখন সাইকেল চালাতে আগ্রহী।
অবশেষে আমাদের সেই অনেক ওজনের লোহার তৈরি সাইকেল দিয়ে আমি কোনরকম হাতে ধরে ধীরে ধীরে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। অবশেষে এলাকার ছোট এবং বড় সকল আমাকে উৎসাহিত করতে এবং সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি সাইকেল এর বিপরীত পাশে কোনরকম পা রেখে চালানোর চেষ্টা করতাম এবং মাঝে মাঝে পড়ে যেতাম এবং অনেক কষ্ট পেতাম।
পরবর্তীতে প্রতিবেশীরা আমাকে সাইকেলের নিচ থেকে বের করত এবং আমি আবারও সাইকেল চালাতাম।
আমার সাইকেল চালানো অবস্থায় পায়ের বিভিন্ন অংশ এবং হাতের বিভিন্ন অংশ কেটে গিয়েছে এবং আমাকে ব্যান্ডেজ করতে হয়েছে। তবে তারপরে প্রবল ইচ্ছা ছিল আমি সাইকেল চালানো শিখে ছাড়বো এবং অবশেষে আমি প্রায় ছয় মাস পরে সাইকেল চালানো জন্য সক্ষমতা অর্জন করেছিলাম এবং বেশ আনন্দ পেয়েছিলাম।
ধুলাবালি এবং মিষ্টির কার্টুন নিয়ে খেলাধুলা।
শৈশবে এমন কোন ছেলে মেয়ে নেই যে তারা ধুলাবালি নিয়ে খেলা না করে। বিশেষ করে গ্রামের প্রত্যেকটি শিশু জন্মগ্রহণ করার পর 6 থেকে 7 মাস পরে যখন বসা শিখে যায় তখন থেকে তারা ধুলাবালি নিয়ে খেলা শুরু করে।
ধুলাবালির ভেতরে তারা বসে থাকে এবং হাত দিয়ে অনেক ধোলা খায়। বিশেষ করে আমার শৈশবে অনেক এমন স্মৃতি বিজড়িত রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি স্মৃতি হল ধুলাবালি নিয়ে ট্রাক নিয়ে খেলাধুলা করা।
তবে আমার কল্পনার জগতে ছিল ঔষধ এবং অন্যান্য পণ্য বহনকারী কার্টুন। মিষ্টির কার্টুন অথবা ওষুধের কার্টুন দিয়ে তার সামনে ছোট্ট একটি রসি বেঁধে দিতাম এবং এটি ছিল আমার কল্পনার জগতে এবং শৈশবের ট্রাক।
সেই ট্রাক দিয়ে আমি এবং আমার ছোট ছোট বোন এবং ভাই মিলে ধুলাবালি নিয়ে খেলা করতাম। দুপুরে কোন রকম গোসল করে সামান্য কিছু খেয়ে সেই রোদের ভেতরে আবারো ধুলাবালি নিয়ে খেলা করার জন্য অস্থির হয়ে পড়তাম।
বইয়ের পৃষ্ঠা ছিড়ে এরোপ্লেন তৈরি করা
বয়স তখন মাত্র সাড়ে ৬ বছর। কোনরকম স্কুলে গিয়ে ভর্তি হয়েছি ক্লাস ওয়ানে। ক্লাসে ভর্তি হওয়ার পর আমার বাবা আমাকে একটি বাংলা খাতা এবং একটি ৫ টাকা দিয়ে কলম কিনে দিয়েছিল। আমি দশ টাকা দিয়ে স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর আমার স্কুলের প্রথম দিন।
আমি ছোটবেলা থেকে অনেক চঞ্চল ছিলাম এবং আমাদের বাড়ির পাশেই স্কুল। সুতরাং প্রথম দিন স্কুলে যাওয়ার অনুভূতি কেমন ছিল তা আমার সঠিক মনে নেই তবে আমি স্কুলে প্রথম দিন গিয়েই আমার নতুন বইয়ের পৃষ্ঠা ছেড়ে আমি একটি এরোপ্লেন বানিয়েছিলাম।
এত ছোট অবস্থায় এবং আমি স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করেছিলাম এবং কাগজ দিয়ে এরোপ্লেন তৈরি করেছিলাম। বিষয়টি যখন মনে হয় তখন আমার সত্যি অনেক হাসি পায় এবং আমি একা একাই মাঝেমধ্যে হাসতে থাকি।
শৈশবের এই স্মৃতি বিজড়িত দিনটি আমার আজীবন মনে থাকবে এবং আমি আমার নতুন ব ইয়ের পৃষ্ঠা ছেড়ে যখন এরোপ্লেন বানিয়েছিলাম তখন স্যার আমাকে দেখে প্রচণ্ড হেসেছিল এবং সকলে আমাকে দেখে হেসেছিল এবং আমি অনেক অনেক লজ্জা পেয়েছিলাম।
মাঠে ছাগল রাখার অনুভূতি
আমি শৈশব থেকেই পরিবারের কোন কাজ করতে চাইতাম না। কিন্তু আমাদের একটি পোষা প্রাণী ছিল এবং এটি একটি ছাগল।মাঝে মাঝে বাবা ব্যবসার কাজে যখন প্রচন্ড বিজি থাকতো তখন ছাগলের জন্য ঘাস নিয়ে আসার জন্য সময় পেত না। তবে আমার মা যদি আমাকে কখনো ছাগল এর জন্য ঘাস নিয়ে আসতে বলতো আমি কখনোই ছাগলের জন্য ঘাস নিয়ে আসতাম না এবং দৌড়ে পালিয়ে যেতাম।
কিন্তু একটি হাস্যকর বিষয় আমার এখনো বেশ ভালো মনে আছে। অনেক ছোটবেলায় আমার আঙ্কেল এর প্রায় তিনটা ছাগল ছিল এবং আমার চাচী তখন তার বাবার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল এবং কাকা ব্যবসার কাজে ব্যস্ত ছিল।
সুতরাং আমার কাকা আমাকে বলেছিল যে তার ছাগলের জন্য কিছু ঘাস নিয়ে আসার জন্য। তবে প্রথমে রাজি না হলেও আমার টাকা যখন আমাকে দুই টাকা দেওয়ার জন্য বলেছিল তখন আমি খুব শীঘ্রই তাদের ছাগলকে নিয়ে মাঠে নিয়ে গিয়েছিলাম এবং ছাগলগুলোকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য ব্যাকুল হয়েছিলাম।
সত্যি মাত্র দুই টাকার জন্য আমি প্রায় 5 থেকে 6 ঘন্টা আমার কাকার ছাগলগুলোকে মাঠে ঘাস খাওয়ানোর জন্য রাখতাম এবং এর জন্য আমি মাত্র ২ টাকা পেতাম। এটি আমার শৈশবের সবথেকে আনন্দঘন মুহূর্ত ছিল এবং ঘটনাটি মনে পড়লে আমি এখনো একা একাই হেসে উঠি।
ঘুড়ি স্মৃতি
শৈশবে ঘুড়ি ওড়াইনি এমন মানুষ খুব কম খুঁজে পাওয়া যাবে
ঠিক আমার শৈশব ছিল অনেক আনন্দঘন। ছোটবেলায় আমি ঘুরি তৈরি করতাম এবং আমার প্রতিটি ঘুড়ি খুব ভালো মডেল এবং ডিজাইনের ঘড়ি তৈরি করতে পারতাম।
আমি প্রতিদিন স্কুল থেকে বাসায় ফিরে আসার পরে কোনরকম দুপুরের খাবার না খেয়েই রুদ্রের ঘড়ি ওড়ানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়তাম।
তখন প্রচন্ড রোদ এবং কৃষি জমিগুলোতে বিভিন্ন রকমের ফসল চাষাবাদ করা হতো। তবে তার পরেও ঘুড়ি উড়ানোর নেশা আমাকে কখনোই ঘরে থাকতে দিত না।
আমি প্রচন্ড রোদ এবং ফসলি জমি উপেক্ষা করে ঘুড়ি উড়াতে চলে যেতাম। বেশ ভালো লাগতো আবার।
আমি উপরে আমার শৈশবের বেশ কিছু স্মৃতি শেয়ার করেছি। আসলে শৈশবের যে স্মৃতি রয়েছে সেগুলো বলে শেষ করা সম্ভব না। আমার শৈশবে আরো হাজারো হাজারো স্মৃতি রয়েছে যেগুলো মনে হলে আমি সত্যি অনেক অনেক আনন্দ পায় এবং আমার খুব ভালো লাগে।
সুতরাং আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের মাধ্যমে আমি আমার শৈশবের স্মৃতি এবং চমৎকার মুহূর্তগুলো সম্পর্কিত বিষয়গুলো লিখতে পেরে এবং জানাতে পেরে অনেক অনেক আনন্দিত। আশা করছি আপনাদের বেশ ভালো লেগেছে আমার শৈশবের স্মৃতিরা দিনগুলো।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
https://twitter.com/Akash02671928/status/1689890937764483073?t=9hPUbzpuDeWt7PifhxKQaA&s=19
শৈশব মানেই হাসি, মজা আর আনন্দ। শৈশবের স্মৃতিগুলো মুখরিত হয়ে থাকে কিছু মিষ্টি দুষ্টামি ও সুন্দর মুহূর্ত দ্বারা। প্রত্যেকে শৈশবে স্মৃতিই মনের কনে দোলা দিয়ে যায় সারা জীবন। এই স্মৃতি গুলো কখনোই ভুলবার নয়। শৈশবের সাইকেল চালানো স্মৃতি ঘুড়ি উড়াবার স্মৃতি এই স্মৃতিগুলো কমন ব্যাপার। প্রায় সবার জীবনে এগুলো ঘটে থাকে। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর কিছু স্মৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
শৈশবের স্মৃতি মনে হলে সত্যিই অনেক আনন্দ লাগে এবং অন্যরকম একটি ভালো লাগা কাজ করে। তবে কখনোই যে শৈশবে ফিরে যাওয়া সম্ভব না।
অনেক অনেক মিস করি শৈশবের সেই সাইকেল চালানো এবং ঘুড়ি ওড়ানোর দিনগুলো। তাছাড়াও মার্বেল খেলা ছিল আমার শৈশবের স্মৃতিগুলোর মধ্যে সবথেকে অন্যতম ভালোলাগার কিছু স্মৃতি।
আপনাকেও ধন্যবাদ চমৎকার মন্তব্য দিয়ে পাশে থাকার জন্য
শৈশবের স্মৃতি স্মরণ করতে কেনা ভালোবাসে। ঠিক আপনার মত আমিও মাঝেমধ্যে আমার অতীতের ভালোলাগার মুহূর্তগুলো স্মরণ করি এবং আনন্দ পাই। বেশ ভালো লেগেছে অতীতের কিছু বিষয় আমাদের মাঝে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন আর এই তথ্যগুলোর অজানা ছিল। বেশ সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন তাই জানতে পারলাম।
শৈশব সব সময় মধুর হয়। সুতরাং আমি যখন আমার শৈশবগুলো লিখতে শুরু করি তখন যেন মনে হয় আমি পুনরায় আবার আমার শৈশবে ফিরে গিয়েছি। বেশ ভালো লাগে আমার শৈশবের স্মৃতিগুলো মনে হলে।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই আপনাকে আমার ব্লগ পরার জন্য এবং চমৎকার মন্তব্য দিয়ে আমাকে উৎসাহিত করার জন্য।