মনে পড়ে হারিয়ে যাওয়া শৈশবের স্মৃতিগুলো
আসসালামু আলাইকুম। আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের প্রতি শুভেচ্ছা। আশা করছি আপনারা সকলেই ভাল আছেন। আজ আমি আপনাদের মাঝে আমার শৈশবের স্মৃতি নিয়ে একটি ব্লগ লিখার জন্য উপস্থিত হলাম। সকলেই উপভোগ করুন আমি আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।
হারিয়ে যাওয়া শৈশবের প্রতিটি দিন যেন মধুময় এবং আমাদের অন্তরে এখনো দাগ দিয়ে যায়। শৈশবে আমাদের অনেক স্মৃতি রয়েছে এবং সে সকল স্মৃতিগুলোর মধ্যে আমার অন্যতম স্মৃতি ছিল বন্ধুদের সাথে সাইকেলের পুরনো টায়ার নিয়ে খেলার স্মৃতি।
ঘুম থেকে ওঠার পরেই মাঝে মাঝে সাইকেলের টায়ার নিয়ে বের হয়ে যেতাম। বাবা কখন ঘুম থেকে উঠে বাজারে যাবে এবং তখন আমি টায়ার নিয়ে খেলতে যাব সেই চিন্তা সব সময় মাথার মধ্যে থাকতো। বিশেষ করে প্রতিদিন সকালে একটা রুটিন ছিল আর তা ছিল খাবার না খেয়েই বন্ধুদের সাথে খেলতে যাওয়া।
কিসের যেন একটা আনন্দ মনের মাঝে লুকিয়ে থাকতো মনের অজান্তেই তা উপভোগ করতাম। টায়ার খেলতে খেলতে কখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে কিংবা রাত্রি হয়েছে বুঝতে পারতাম না। মাঝে মাঝে সাইকেলের দুইটা টায়ার একত্রে রশি দিয়ে বেঁধে সেটা নিয়ে বন্ধুদের মাঝে প্রতিযোগিতা করতাম এবং অনেক অনেক আনন্দ হতো।
টায়ার পরিচালনা করার জন্য ছিল হাতে একটি বাঁশের কঞ্চি দ্বারা তৈরি লাঠি। চমৎকার এই লাঠিতে মাঝে মাঝে তেল মাখিয়ে লাঠিকে আরো বেশি সুদর্শন করার চেষ্টা করতাম। খেলার মাঠে গিয়ে কার লাঠি কত সুন্দর এবং কার টায়ার কয়টা আছে এ বিষয় নিয়ে মাঝে মাঝেই বন্ধুদের সাথে মারামারি হতো এবং মাঝে মাঝেই এই বিষয় নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক হতো।
তাছাড়াও শৈশবে আরও একটি বিশেষ খেলার মুহূর্ত ছিল আর তা হলো সুপারি গাছের পাতা নিয়ে খেলা। বড় বড় সুপারি গাছ থাকতো এবং একসময় সেই সুপারি গাছের পাতাগুলো পেকে গিয়ে এমনিতেই মাটিতে পড়ে যেত। সুপারি গাছের পাতা অনেক বড় হওয়ার ফলে এবং তার সাথে একটি বিশেষ অংশ থাকে সেটি আমাদের খেলার একমাত্র হাতিয়ার ছিল।
একজন বন্ধু সুপারির ডালের বিশেষ বড় অংশের উপরে বসে থাকতো এবং অপরজন সামনে গিয়ে টান দিত। চমৎকার খেলাধুলা হত এবং আমরা পর্যায়ক্রমে সেই খেলাধুলা উপভোগ করতাম।
মাঝে মাঝে কোন বন্ধু যদি জোরপূর্বক একটু বেশি আনন্দ করার চেষ্টা করত তখন আমরা তাকে জোরে সুপারি গাছের সেই পাতা টান দিয়ে ফেলেতাম এবং বন্ধুরা মিলে হাসাহাসি করতাম।
আবার এখনো বেশ ভালো মনে আছে, দুই বন্ধু মিলে সুপারি গাছের ডাল টান দিত এবং আমি সেই ডালের উপরে বসে থাকতাম। মাঝে মাঝে আমার ছোট চাচাতো বোনকে কোলে নিয়ে আমি তাকেও আমাদের খেলায় অংশগ্রহণ করাতাম এবং এটি বেশ ভালো লাগতো।
তবে আমি ছোটবেলা থেকেই একটু চালাক ছিলাম। যদিও আমাদের এই পর্যায়ক্রমে খেলার সীমানা নির্ধারণ করা ছিল তবে তারপরেও মাঝে মাঝে চালাকি করে বন্ধুদেরকে কিভাবে কম আনন্দ করানো যায় সেই বিষয় নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন থাকতাম। আমি অনেক সময় ইচ্ছা করে আমাদের ছোট ছোট খেলার সাথীদেরকে ফেলে দিতাম এবং তারা আমার প্রতি অনেক অভিমান করত। তবে আমি ভুলভাল বুঝিয়ে আবারও তাদের সাথে খেলতাম এবং শৈশবে অনেক আনন্দ এবং মজার একটা দিন অতিক্রম কর।
তাছাড়াও সাইকেল ও অটো রিক্সার বেয়ারিং নিয়ে আমি অনেক খেলেছি। তিনটি বিয়ারিং দিয়ে বিশেষ একটি গাড়ি তৈরি করেছি এবং এটি আমার বন্ধুরা বেশ উপভোগ করেছিল। বিশেষ করে তিন চাকার ওই বেয়ায়ারিং এর গাড়িতে আমরা দুইজন পর্যন্ত বসতাম এবং আমাদের পেছন থেকে অন্য একজন বন্ধু ঠেলে দিত এবং আমরা বেশ আনন্দ পেতাম।
তাছাড়াও আমি বাঁশের গিট বিয়ে গাড়ি তৈরি করতাম এবং সেই গাড়িটি ছিল অত্যন্ত চমৎকার ও আনন্দদায়ক।
দিন শেষে যখন কোন বড় ভাই কিংবা বাবার সাথে দেখা হতো একটি টাকা দিয়ে ৪টি চকলেট কিনে দিত এবং অনেক খুশি হতাম।
শৈশবের এই স্মৃতিগুলো এখনো আমি বুকে লালন করিনি। এখন আমি বড় বড় যানবাহনে আহরণ করি, তবে সেই পুরনো শৈশবে স্মৃতিগুলো মনে হলে দিনটাকে এখনো অনেক বেশি মিস করি। আগে যেমন বিয়ারিং অথবা সুপারির ডালে যে আনন্দ হতো এখন হয়তো বড় বড় যানবাহন তার কাছে হার মেনে যায়।
এখন কাছে অনেক টাকা রয়েছে। তবে শত শত টাকা থাকলেও আগের মত আর ২৫ পয়সা দামের লজেন্স এর মত আনন্দ হয় না। আসলে শৈশবের দিনগুলো ছিল শুধুমাত্র আনন্দের দিন সেখানে কোন দুঃখ ছিল না কিংবা কষ্ট ছিল না।
কিন্তু যখন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলাম তখন এই সমস্যার সমাধান খুব কঠিন হতে থাকে। শৈশবের দিনগুলো এখনো মাঝে মাঝে বেশ মনে পড়ে। তবে কিছুই করার নাই! শৈশবে যে আর ফিরে যাওয়া সম্ভব না। তবে শৈশবে স্মৃতিগুলো লালন করে আজীবন এই পৃথিবীতে জীবনটাকে উপভোগ করতে পারলেই চরম সার্থকতা পাবে এই মানব জনম।
আমি আশাবাদী আপনাদেরও শৈশবের বেশ ভালো স্মৃতি রয়েছে। আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের মাধ্যমে চাইলে আপনি আপনার শৈশবের স্মৃতিগুলো নিয়ে আমাদেরকে ব্লগ লিখতে পারেন। আমরা আপনার শৈশবের স্মৃতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহ।
মূল্যবান সময় দিয়ে আজকের এই মনে পড়ে হারিয়ে যাওয়া শৈশবের স্মৃতি বিষয়ে ব্লগ উপভোগ করার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
|250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আমি
আমি মোহাম্মদ আকাশ সরদার
। জাতীয়তা বাংলাদেশী। আমি ব্লগিং করতে অনেক বেশি ভালোবাসি। যদিও আর্ট আমার অনেক বেশি পছন্দ তবে আর্টওয়ার্ক কাজের জন্য আমার হাত একদম বাজে। ভ্রমণ এবং ফটোগ্রাফি আমার সব থেকে প্রিয় বিষয়। নতুন নতুন জায়গা ভ্রমণ এবং নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে বেশ ভালো লাগে। অসহায় মানুষদেরকে সাহায্য করতে পারলে মনের ভেতরে আনন্দ আসে। সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে মানুষের সেবা করতে চাই এবং সকলের প্রিয় ব্যক্তি হয়ে এই সমাজে বসবাস করতে চাই।
https://x.com/steemforfuture/status/1800944340166115581?s=19