সিরিজ 1. অষ্টমীর দিন- দুর্গা প্রতিমা দর্শন ও দুর্গা পূজার ফটোগ্রাফি
ভূমিকা
সার্বজনীন পূজা হিসাবে সারা বিশ্বের বুকে বাঙ্গালির বড় উৎসব মুখর পূজা হলো দুর্গা পূজা। যা শারদীয়া উৎসব নামেও পরিচিত। প্রতি বছর বাঙালির মনে আনন্দের বন্যা নিয়ে আসেন দেবী মা দুর্গা। সারা পৃথিবীর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালি জাতি ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে এই উৎসব পালন করে থাকে। সবাই খুব আনন্দের সাথে পূজা দেখে। মূলত হিন্দুরা পূজা টা করে কিন্তু সার্বজনীন পূজা হওয়ার দরুন এই পূজা সকলের পূজা সকলেই আনন্দ ভাগ করে নেয়।পঞ্চমী থেকে দশমী পর্যন্ত আনন্দের সীমা থাকে না।
ভয়াবহ মহামারী করোনা
★এক শতাব্দী পেরিয়ে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করার সাথে সাথে মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে নরকে পরিণত বললে ভুল হবে না। সেই ভয়ানক মহামারি হলো করোনা ভাইরাস। যে ভাইরাস লাখো লাখো মানুষের প্রাণ নেওয়ার সাথে সাথে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বহু মানুষের মধ্যে মহামারীর বীজ প্রবেশ করে মৃত্যু যন্ত্রণা অনুভব করিয়াছে। এখনো করোনার ধাবা সমানে মানুষের মধ্যে প্রবেশ করছে । অসচেতনতার কারণে মহামারী প্রাদুর্ভাব কমছে না। গত বছর করোনার জন্য পূজা তেমন হয় নি। বাঙালি তেমন আনন্দ করতে পারে নি। কিন্তু এই বছর মানুষ আনন্দ করছে। তবে আনন্দের মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে কলকাতায় লাখো লাখো মানুষের ভিড়ে সচেতনতার কথা মানুষ ভুলে গিয়ে মনের আনন্দে ভিড়ে মধ্যে দিয়ে প্রতিমা দেখছে। কিন্তু তাদের মাথায় নেই - ভগবান আমাদের বলে নি অসচেতন ভাবে চলতে ।অসচেতন ভাবে পূজা দেখার ফল হয়তো পূজার পর বোঝা যাবে করোনা বহুগুণ বেড়ে যাবে। কারণ করোনার কোনো জাত পাত নেই। নেই কোনো জাতি ধর্ম বর্ণ।
করোনা বিধি মেনে পূজা দেখা
আমরা করোনা বিধি মেনে পূজা দেখেছি। সবসময় মাস্ক পরে ছিলাম এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেছি মাঝে মাঝে । সবচেয়ে বড় কথা দিনের বেলা পূজা দেখতে গেছি। কম ভিড়ে পূজা দেখে বেশি সচেতন ভাবে চলতে পারি। দিনের বেলা ভিড় না থাকার দরুন সোশ্যাল ডিস্টেন্স বজায় রেখে মন দিয়ে শক্তিগড়ের বড়শুলে পূজা দেখে খুব আনন্দ পেয়েছি।
দেবী মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা
■আমি প্রার্থনা করি মা দুর্গা মায়ের কাছে যে মানুষের জীবন যেনো আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। সকলকে মা যেনো সুস্থ রাখে ,ভালো রাখে। করোনা একদম নির্মূল হয়ে আগামী বিশ্বের সকল মানুষই সুখী সুন্দর ভাবে জীবন উপভোগ করে, এই কামনা করি।আমরা যেনো আগের মত স্বাভাবিক জীবন অতিবাহিত করতে পারি।মা তোমাকে দেখতে যেভাবে ভিড় উবচে পড়ছে ।সকল দর্শনকারীদের ততা আমাদের সকলের তুমি ভালো রেখো।
বর্ধমানের শক্তিগড়
◆বর্ধমান একটা ঐতিহাসিক শহর। তার সাথে সাথেই বর্ধমানের আশেপাশেই ইতিহাসের কমতি নেই। শক্তিগড় একটা বিখ্যাত জায়গা। শক্তিগড়ের "ল্যাংচা "শক্তিগড় কে জনপ্রিয়তা শীর্ষে নিয়ে গেছে।
●আমি অষ্টমীর দিন বাবাকে নিয়ে শক্তিগড়ের বড়সুলে দুর্গা পূজা দেখতে গিয়েছিলাম।
শক্তিগড়ের বড়সুলে যা যা দেখেছিলাম
●পাড়ার কিছু দুর্গা প্রতিমা
●দুটো বড় থিম নিয়ে দুর্গা প্রতিমা
●জমিদার ততা রাজবাড়ির প্রতিমা
■প্রথমে জাতীয় সড়কে বাস থেকে নেমে হেঁটে গিয়ে বাবা আর আমি সামনে যে প্রতিমা পড়লো তাই দেখতে দেখতে হাঁটতে থাকি।
পাড়ার দুইটি পূজা দেখেছিলাম প্রথমেই
বড়সুল ধর্মতলা সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি
"দুইটি থিমের পূজা দেখেছিলাম "
বড়শুল ইয়ং মেনস এসোসিয়েশনের পূজা
1.থিমের নাম : চরৈবেতি
করোনার আদলে চরৈবেতি থিমটি তৈরি করেছে।
■চরৈবেতি হলো উপনিষদের একটা মন্ত্র। যার বাংলা অর্থ হলো জীবনে অবিরত এগিয়ে চলা।করোনা মহামারী মানুষের জীবনকে অনেক দিক থেকে পিছিয়ে দিয়েছে। যার প্রভাবে শিক্ষা, মানব সম্পদ , অর্থনীতি , শিল্প , চাকুরী, স্বাস্থ্য সবকিছু ভেঙে পড়েছে । তার মধ্যে দিয়েও মানুষ এগিয়ে যাবে। কোভিড কে জয় করে মানুষ আগের মত আবার স্বাভাবিক জীবন যাপন করবে। মানুষের মধ্যে কোভিড সম্পর্কে সচেতনতার বার্তা দেয়ার সাথে সাথে ভয়ানক করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা দেখিয়েছে।
■একটা মানুষের মুখ দিয়ে করোনা ঢুকছে । তার পেছনে ডানা রয়েছে। এই ইচ্ছা ডানা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
■একজনের করোনা ভাইরাস দেহে প্রবেশ করার পর তার শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। নিচে চাকা গুলো জীবনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দেয়া হয়েছে।
■পৃথিবী করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে আবার সুস্থতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বড়শুল জাগরণী এর দুর্গাপূজা
2.থিমের নাম : সন্ধান চাই
সন্ধান চাই থিমে একান্নবর্তী পরিবার গুলি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো পরিবার গঠন এবং সেই সাথে মানুষ শুধুই নিজের স্বার্থে প্রচুর টাকা ইনকামের পিছনে ছুটছে।
●মানুষের মধ্যে যেসকল কোয়ালিটি আছে সেই সকল গুন গুলো অনেক লোপ পাচ্ছে। তার কারণ হলো টাকা। টাকার জন্য মানুষ মান সম্মান ইজ্জত বিসর্জন দিয়ে টাকার পিছনে ছুটছে। একা থাকবো, একা খাবো। এই প্রবণতার ফলে একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে টুকরো টুকরো পরিবার গড়ে উঠছে যার ফলে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সম্পর্কের বীজ বপন হচ্ছে না। তারা কাকা জেঠা , দাদু ,দিদিমা এই সমস্ত সম্পর্ক গুলো ভুলতে বসেছে।
★যে সমস্ত খেলাধুলা হারিয়ে যাচ্ছে এবং এই সমস্ত লোকসংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে সেই গুলো "সন্ধান চাই "থিমে দারুন ভাবে ছবির মধ্যে তুলে ধরেছেন।
■একটা ছেলের হাতে লাটিম এবং আর একটা ছেলের কাছে চরকি এবং ঠাকুরমা বাচ্ছা মেয়েকে গল্প করছে
■কিদকিদ খেলছে , চরকি ঘোরানো
■ফিতে কল, পাথর ছুড়ছে
■বেলুন উড়াচ্ছে
■লাটাই দিয়ে ঘুড়ি উড়াচ্ছে এবং চাকা খেলা
■ বায়োস্কোপ দেখা
■বাচ্চাদের খুনসুটি ,পাখিদের পিছনে ছুটছে, ব্যাঙ লাফ
■উল্টো ঝোলা
■মা দুর্গা দর্শন
■ সেলফি
জমিদার বাড়ির দুর্গা পূজা
ঐতিহ্য আর পরম্পরা এখানে আভিজাত্য পরিণত ইতিহাস এখানে কথা বলে। শিব দুর্গার ব্যতিক্রমী প্রতিমায় , এখানে চিরন্তনী সাবেকিয়ানা আজও বজায় রেখেছে। প্রায়ই দুই শত বছর ধরে জমিদার বাড়ি পূজা হয়ে চলেছে পুরানো রীতি নীতি মেনে।
■সর্বপরি শক্তিগড়ের বিখ্যাত ল্যাংচা খেয়ে বাড়ি ফেরা হয়।
উপসংহার
দুর্গা পূজা বাঙালির সবসময়ই আনন্দের পূজা। আমরা করোনা বিধি মেনেই দিনের বেলা পূজা দেখেছি। যেহুতু বড়সুলের জীবনের প্রথমে পূজা দেখতে গেছি ।একদম প্রথম বারের শান্ত সুন্দর পরিবেশে পূজা দেখে আমাদের সত্যিই খুব ভালো লেগেছিলো। সকলকে আবার ও শারদীয়ার শুভেচ্ছা। নবমীতে বর্ধমান শহরে পূজা দেখতে গেছি। পরবর্তী সিরিজে আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো।
সকলে সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন, করোনা বিধি মেনে কম ভিড় যুক্ত প্যান্ডেলে পূজা দেখুন। আনন্দ করুন ।
সকলে শারদীয়ার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা।
ডিভাইস | রেডমি নোট 10 প্র ম্যাক্স |
---|
ফটোগ্রাফার | @simaroy |
---|
10% beneficiary to @shy-fox
রেগার্ডস | @simaroy |
---|
সত্যিই বর্ধমান শক্তিগরের পূজা ও পূজার থিম অনেক সুন্দর ছিল।কিন্তু আমি মিস করেছি।অনেক সুন্দর ব্যাখ্যা।ধন্যবাদ দাদা।
টা ঠিক, বড়শুলের পূজাটা মিস করেছো। পরের বছর দেখো। অনেক শুভেচ্ছা রইলো বোন।
ভাই সেরা একটা পোস্ট ছিল। অনেক পরিশ্রম করেছেন বুঝাই যাচ্ছে। আমার এই বিষয় টা নিয়ে খুব জানার ইচ্ছে ছিল ধন্যবাদ অনেক ইনফরমেশন পেয়েছি আপনার মাধ্যমে ।আবার বলি পোস্ট টা সত্যি খুব পছন্দ হয়েছে ভাই।
হা ঠিক বলেছেন। প্রচুর সময় লেগে গেছে। আপনাদের সুন্দর মন্তব্য ও উৎসাহে পরিশ্রমের সার্থকতা ।খুব খুশি হয়েছি আপনার মন্তব্য। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো ।
এই থিমের ছবিগুলো আমি জাস্ট অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।এতটা সুন্দর আর এই সময়ের জন্য একদম মিল। সত্যিই অদ্ভুত সুন্দর ছবি গুলো।
ঠিক বলেছেন আপু। আমিও দেখে খুশি হয়েছিলাম। করোনা নিয়ে থিম করা পুজাটা দেখে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপু।
হ্যা একদম ইউনিক।
ওয়াও এতো সুন্দর করে ফটোগ্রাফি করেছেন দাদা খুব ভালো লাগছে বাংলাদেশে এমন মন্ডব দেখা যায়না। আর এতো সুন্দর করে ব্যাখ্যা করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপু সুন্দর মন্তব্যর জন্য।
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাইয়া
আসলে সবথেকে ভালো লাগলো আপনি পোষ্টের মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করেছেন এবং আসলে আমরা ভুলে যাই যে এরকম একটা পরিস্থিতি হওয়ার পর অনেক মানুষ। পা ফেলার জায়গা নাই তাও মানুষ যাচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এতে বরং আরো করোনা বাড়ার সম্ভাবনা বেশি এবং আপনার ফটোগ্রাফি গুলো ছিল অপরূপ সৌন্দর্য। অনেক সুন্দরভাবে বর্ণনা দিয়েছেন। অনেক ভালো লাগলো।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।
বাহ অসাধারণ দাদা। সবগুলো পূজোর থিম ই খুব সুন্দর লাগছে। তবে করোনা মহামারীর থিমটা সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে আমার কাছে। বর্তমান পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে থিমটা খুব ভালো তৈরি করেছে। খুব ভালো পোস্ট দাদা।।
আপনার মন্তব্য অনেক খুশি হলাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
দাদা শুরুতেই আপনাকে শারদীয়া শুভেচ্ছা। ছবিগুলো অসাধারন হয়েছে দাদা। খুব সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছেন আপনি। আপনার জন্য শুভেচ্ছা দাদা।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া। আপনাকেও শারদীয়ার শুভেচ্ছা ।
ভাই আমার কাছে মনে হয়েছে আপনার 100% সেরা পোষ্টঃ। খুবই সুন্দর ভাবে খুব ধৈর্য সহকারে পোস্টটি আপনি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে করণা মহামারীর থিমটি। আপনি বিশদভাবে আলোচনা করেছেন প্রতিটি ফটোগ্রাফির সাথে সাথে। শুভকামনা রইল দাদা আপনার জন্য।
আপনার সুন্দর মন্তব্য অনেক উৎসাহ পেলাম ও খুশি হয়েছি। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া। শারদীয়ার শুভেচ্ছা রইলো।
আপনার পোস্টটা এই কনটেস্টে অন্যদের তুলনায় সবচেয়ে সেরা মনে হইছে আমার কাছে।এতো রকমের যে থিম হতে পারে তা ই কোনোদিন ভাবিনি আমি। একদম বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম আমি।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া। অনেক উৎসাহ পেলাম।
অসাধারণ একটি পোস্ট। কত কিছু মেল বন্ধন ।প্রতিটি পুজো মণ্ডপের পরিশ্রম চোখ টানছে । খুবই সুন্দর। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর পোস্ট করার জন্য। ভালো থাকুন।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।