বর্তমান / বিলুপ্ত প্রায় স্থানীয় লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্য-"আঞ্চলিক খাবার মজাদার ভুদো"- 10%benefiaciary to @shy-fox

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

CollageMaker_20210913_093200395.jpg

নমস্কার

বন্ধুরা,আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন ।আজ আমি "আমার বাংলা ব্লগে" @moh.arif ভাইয়ার আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি।প্রতিযোগিতার বিষয় হলো-"বর্তমান/ বিলুপ্ত প্রায় স্থানীয় লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্য "।সুন্দর প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য ভাইয়াকে মন থেকে ধন্যবাদ জানাই।

আমার অঞ্চলের বর্তমান/বিলুপ্ত প্রায় স্থানীয় লোকসংস্কৃতির খাবার "ভুদো" সম্পর্কে কিছু তথ্য:

IMG_20210808_105105.jpg

বাঙালিদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে লোকসংস্কৃতি।বাঙালির খাবার থেকে শুরু করে সকল কাজ কর্মেই তার ছোয়া পাওয়া যায়।বাঙালি মানেই ভোজনপ্রিয় ও ভোজনরসিক।"বারো মাসে তেরো পার্বন"কথাটি প্রাচীন কাল থেকে প্রচলিত।অর্থাৎ সবসময় বাঙালির ঘরে পূজা, উৎসব লেগেই থাকে।সেটা নবান্ন উৎসব ও হতে পারে।কিন্তু আমি আজ নবান্ন উৎসব নিয়ে আলোচনা করবো না বরং আমাদের অঞ্চলের বহু বছর আগে থেকে চলে আসছে বংশপরম্পরায় এমনি একটি "ঐতিহ্যবাহী খাবার ভুদো" সম্পর্কে আলোচনা করবো এবং প্রস্তুতি দেখাবো ।
এটি মূলত চাষীরা বর্ষাকালে ধান রোপণের মাঝামাঝি সময়ে কিংবা ধান চাষের পর খাবারটি প্রস্তুত করেন এবং বেশ কিছুদিন রেখে ও খেয়ে থাকেন খাবারটি।অর্থাৎ এই ঐতিহ্যবাহী খাবারটি বাড়ির সেদ্ধ চাউল দিয়ে ভাদ্র মাসে তৈরি করা হয়।পূর্বে আরেকটি প্রথা ছিল যে,যেসমস্ত চাষী মাঠে জমি চাষের জন্য নতুন গরু হাল টানাতে নামাবেন তারা এই ঐতিহ্যবাহী খাবারটি তৈরি করে গরুর মুখে দিয়ে চাষের কাজে লাগাবেন।এছাড়া বিভিন্ন গ্রামের লোকজনকেও বিতরণ করা হয় খাবারটি।এটি আমাদের অঞ্চলের প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই পালন করা হতো বংশপরম্পরায়।তবে এখন আর প্রত্যেক ঘরে ঘরে দেখা যায় না,কালের বিবর্তনে এখন এটি বিলুপ্ত প্রায়।কিন্তু আমরা এটি নিয়ম অনুসারে বছরের একটি বার ভাদ্র মাসে তৈরি করে থাকি।তো চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক---

IMG_20210913_094927.jpg

উপকরণসমূহ:

1.সেদ্ধ চাউল - 600 গ্রাম
2.আখের দানাগুড় - 500 গ্রাম
3.সামান্য পরিমাণ লবণ
4.জল -1 কাপ
5.নারিকেল পাতার খুঁচি কাঠি

প্রস্তুত প্রনালী:

ধাপঃ 1

IMG_20210913_093827.jpg

IMG_20210913_093854.jpg

◆প্রথমে আমি বাড়ির 600 গ্রাম সেদ্ধ চাউল নিলাম।তারপর পরিমাণ মতো জল দিয়ে চাউল ভিজিয়ে রাখলাম 10 মিনিট মতো।

ধাপঃ 2

IMG_20210913_093921.jpg

◆10 মিনিট পর ভিজানো চাউল 2-3 বার পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে নেব ভালোভাবে।তারপর জল ঝরিয়ে নেব।

ধাপঃ 3

IMG_20210913_094005.jpg

IMG_20210913_094035.jpg

◆এরপর সামান্য পরিমাণ লবণ নিয়ে চাউলের সঙ্গে মিশিয়ে নেব।এবার চুলায় একটি পরিষ্কার শুকনো কড়া বসিয়ে দেব।কড়া মিডিয়াম আঁচে গরম হলে অল্প অল্প চাউল কড়ার ভিতর দিয়ে ভেঁজে নেব নারিকেল পাতার তৈরি খুঁচি কাঠি দিয়ে নেড়েচেড়ে।

ধাপঃ 4

IMG_20210913_094108.jpg

◆চাউলগুলি পটপট আওয়াজে ফুটে গেলে অনবরত নেড়েচেড়ে নামিয়ে নিতে হবে পাত্রে।এভাবে আমি সব চাউল ভেঁজে নেব।

ধাপঃ 5

IMG_20210913_094143.jpg

IMG_20210913_094209.jpg

◆এবার ভাঁজা চাউলগুলি গরম গরম শিল-নোড়ার সাহায্যে হাতে বেঁটে গুঁড়ো করে নেব মিহি করে।

ধাপঃ 6

IMG_20210913_094231.jpg

◆তো আমার সব ভেঁজে নেওয়া চাউল গুঁড়ো করে নেওয়া হয়ে গেছে।আপনারা চাইলে মিক্সার মেশিনে ও গুঁড়ো করে নিতে পারেন।

ধাপঃ 7

IMG_20210913_094310.jpg

IMG_20210913_094332.jpg

◆আবার পুনরায় চুলায় মিডিয়াম আঁচে কড়া বসিয়ে দেব।এবার কড়াতে আখের দানাগুড় দিয়ে দেব এবং সামান্য পরিমাণ জল দিয়ে অনবরত খুন্তি দিয়ে নেড়ে ফুটিয়ে নেব।দানাগুর শক্ত হলেই জল ব্যবহার করতে হবে।

ধাপঃ 8

IMG_20210913_094357.jpg

IMG_20210913_094525.jpg

◆এরপর গুড় ফুটে উঠলে তার মধ্যে ভাঁজা চাউলের গুঁড়ো দিয়ে দেব এবং খুন্তির সাহায্যে অনবরত নেড়ে গুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে নেব।

ধাপঃ 9

IMG_20210913_094420.jpg

◆ভালোভাবে চাউলের গুঁড়োর সঙ্গে গুড় মিশে গেলে গরম গরম নামিয়ে নেব চুলা থেকে।

ধাপঃ 10

IMG_20210913_094612.jpg

IMG_20210913_094652.jpg

◆এবার একটি পাত্রে জল নিয়ে জলে এক এক বার হাত ভিজিয়ে নিয়ে ওই প্রচন্ড গরম অবস্থায় অল্প অল্প চাউলের গুঁড়ো নিয়ে হাত দিয়ে মুঠি করে চেপে নেব।

ধাপঃ 11

IMG_20210913_094713.jpg

IMG_20210913_094809.jpg

◆এভাবে সব চাউলের গুঁড়ো অল্প অল্প নিয়ে হাতের সাহায্যে চেপে ভুদো তৈরি করে নেব।তো তৈরি হয়ে গেল "আমার অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবার ভুদো"।যা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।

ধাপঃ 12

IMG_20210913_094859.jpg

IMG_20210913_094927.jpg

◆এবার এগুলো একটি কাঁচের পাত্রে রেখে দেব বেশ কয়েকদিন ধরে খাওয়ার জন্য।এটি স্বাভাবিক অবস্থায় 10-15 দিন পর্যন্ত রাখা যায়।এছাড়া ফ্রিজে অনেকদিন পর্যন্ত রেখে খাওয়া যায়।

IMG_20210913_094955.jpg

আমার পরিবারের অভিজ্ঞতা:

এই খাবার রেখে দিলে প্রচন্ড শক্ত হয়ে যায় ।সেটি নির্ভর করে গুড়ের ভালো ও মন্দের উপর।কারণ গুড় যত ভালো হবে ভুদো ততই শক্ত হবে।সবথেকে মজার বিষয় হলো ---এতটাই শক্ত হবে খাবারটি যে দাঁত ভেঙে ও যেতে পারে, অর্থাৎ দাঁতের সাহায্যে ভেঙে খাওয়া সম্ভব না হতেও পারে।একবছর এইরকমই হয়েছিল আমাদের ক্ষেত্রে।শেষ পর্যন্ত আমরা এটি সুপারি কাটার জাতা ব্যবহার করে কেটে কুঁচি করে খেয়েছিলাম।এটি খুবই স্বাদের একটি খাবার।চাইলে আপনারা ও চেষ্টা করতে পারেন।
আশা করি আমার অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবারটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

IMG_20210913_094839.jpg
ছবির লোকেশন

ধন্যবাদ সকলকে।

@simaroy এর আসল পরিচয়

@simaroy এর স্টিমিট কমিউনিটিতে স্টিমিট নাম প্রথমে আমার মায়ের নাম অনুসারে আমি আমার ইউজার নাম দেয়। সেই জন্য আমার স্টিমিট একোউন্ট নাম @simaroy

IMG-20210723-WA0001.jpg

ছবির লোকেশন

ডিভাইসরেডমি নোট 10 প্র ম্যাক্স ,Mi A1
লোকেশনখাড়গ্রাম
ফটোগ্রাফার@simaroy , @green015
রেসিপি ম্যাকার@simaroy
ক্যাটাগরিরেসিপি

■আমার পরিচয়■

নাম -সিদ্ধার্থ রায়
পেশা -পড়াশুনা ( বর্তমানে যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে MA পাঠ্যরত ছাত্র)
গ্রাম -খাড়গ্রাম পালসিট
থানা -মেমারী
জেলা -বর্ধমান
রাজ্য- পশ্চিম বঙ্গ
দেশ -ইন্ডিয়া
নাগরিক - ভারতীয়

রেগার্ডস@simaroy
Sort:  
 3 years ago 

ওয়াও ভাই, ভুদো দেখতে অনেক সুন্দর হয়েছে। আমাদের এই দিকে এটার একটা নাম আছে, তবে সেটা এখন মনে করতে পারছি না। এটি আগে আমাদের এই দিকে প্রচুর পাওয়া যেতো। বাসায় বাসায় সবাই বানাতো।
কিন্তু এখন আর ততটা পাওয়া যায় না এটা।

 3 years ago 

হা ভাই। এখনো আস্তে আস্তে বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে। আগের মত খাবার দেখা যাচ্ছে না। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপনার সুন্দর গঠনমূলক মন্তব্যর জন্য।শুভেচ্ছা নিবেন ভাইয়া

 3 years ago 

বাহ্। ছোটবেলায় ভুদো আমি খেতাম। একটি দোকানে সবসময় গিয়ে খেতাম। এখন আসলেই তা আর পাওয়া যায় না। খুব সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে

 3 years ago 

ভাইয়া আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা নিবেন।

ভাই এটা কি রেসিপি শেয়ার করেছেন আপনার তো জরিমানা করা উচিত😄।এত সুস্বাদু রেসিপি তৈরি করার আগে থানা থেকে পারমিশন নেওয়া উচিত ছিল।😁
অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন ভাই।এটা খুবই সুস্বাদু খাবার।আমি এটা খুবই পছন্দ করি।

শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।

 3 years ago 

ভাইয়া তা যা বলেছেন। আপনার মজার মন্তব্য আমি ভীষণ খুশি হয়েছি। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া। শুভেচ্ছা নিবেন

উফ ফুদো দেখতে এতোটাই স্বুসাধু মনে হচ্ছে, যেন আমার সামনে খাবার জন্য দেওয়া হইছে। খাবার গুলোর প্রশংসা করা চলে। সেই সাথে উপস্থাপনা খুবই সুন্দর হয়েছে।

 3 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া। অনেক অনেক শুভেচ্ছা নিবেন।

ভাইয়া আপনার বানানো ভুদো-সত্যিই অনেক ভালো হয়েছে। সত্যি ভাইয়া এটা আর দেখা যায় না। এটা হারিয়ে গেছে আমাদের মাঝে থেকে। তবে ভাইয়া আমরা এটাকে নাড়ু বলে থাকি। খেতে অনেক টেস্টটি হয়ে থাকে।শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

 3 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। ঠিক বলেছেন এখন হারিয়ে গেছে ।দেখা যায় না বললেও চলে। শুভেচ্ছা নিবেন ভাইয়া।

 3 years ago 

আপনি যে আঞ্চলিক মজাদার খাবার ভুদো তৈরি করেছেন তা দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে। তবে এই খাবারটি আমাদের এলাকায় চালের নাড়ু বলে পরিচিত এবং এটি খেতে খুবই সুস্বাদু। খাবারটি আগেই বেশি পাওয়া যেত বর্তমান বিলুপ্তপ্রায়। শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।

 3 years ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যর জন্য। শুভেচ্ছা নিবেন।

 3 years ago 

ভাইয়া এই খাবারটা আমার যে কতটা পছন্দ তা আপনাকে বলে বোঝাতেই পারবোনা।অনেক বেশি মজা লাগে আমার তবে আম্মু বানালে খেতে ইচ্ছে করেনা কারণ শহরের বাসায় বসে বানালে সেসবে গ্রামের একটা ফিল আসেনা তাই আমার নানু প্রায় পাঠায় এগুলো আমার জন্য, খুব পছন্দ করি আমি। তাই আজকে আপনার পোস্ট দেখেই মনটা ভালো হয়ে গেলো কারণ দেখেই মনে হচ্ছে খুব বেশি সুস্বাদু হবে।

 3 years ago 

হা আপু আমারও আপনার মত খুব পছন্দের খাবার এটি। আপনার মন্তব্য খুব খুশি হয়েছি। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। শুভেচ্ছা নিবেন ও শুভ কামনা রইলো।

 3 years ago 

আমার খুব পছন্দের একটা খাবার কিন্তু এখন বানানো হয় না। আপনার রেসিপি টি শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া 😇। শুভ কামনা রইলো প্রতিযোগিতার জন্য।

 3 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপু। আপনার সুন্দর মন্তব্য খুব খুশি হয়েছি। শুভেচ্ছা নিবেন।

 3 years ago 

ভাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আপনি খুবই সুন্দর ভাবে মজাদার ভুদো রেসিপির আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 3 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া। অনেক শুভেচ্ছা নিবেন।

 3 years ago 

নামটা তো বেশ, ভুদো। আমি প্রথম জানলাম এর কথা। ভুদো কোন অঞ্চলে পাওয়া যায়? বর্ধমান?

 3 years ago (edited)

না না দাদা। 24 পরগনাতে। দক্ষিণের মানুষ কেনো বর্ধমানে জেলাতে হবে। এখানে আসলাম দুই দিন হল। বছর দেড় হলো। তুমি খেয়েছো কখনো ভুদো। একদিন খেয়ে দেখো ভীষন মজার খাবার। অনেক ধন্যবাদ দাদা।

 3 years ago 

তাহলে তো তোমার বর্তমান জেলার লোকসংস্কৃতির অঙ্গ নয়। আমি এটা কখনো খাইনি। প্রথমবার দেখলাম। নতুন জিনিস জানা গেলো

 3 years ago 

একবার খেয়ে দেখো। ভালো লাগবে। আমি ছোট বেলা থেকে বেড়ে ওঠা জায়গায়।পূর্ব পুরুষ রা থেকে এই খাবার চলে আসছে। কিন্তু আজ বিলুপ্তির পথে প্রায়। আগে সব বাড়িতে দেখতাম। এখন কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 60104.15
ETH 3299.21
USDT 1.00
SBD 2.37