"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ১৪ || গ্রীস্মকালীন ফলের গল্প →লিচু চুরি ←[10% লাজুক খ্যাঁকের জন্য]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

unripe-g4ec5d0d07_1920.jpgলিংক
🔻 আজ ৩০ মার্চ, ২০২২
বুধবার

PicsArt_03-30-03.47.53.png

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে সব সময় অসাধারণ সব কনটেস্টের আয়োজন করা হয়। এই কনটেস্টটি বেশি মজার ছিলো। এজন্য প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই @hafizullah ভাই কে এতো সুন্দর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য। এই প্রতিযোগিতা এমন একটি বিষয় নিয়ে যার সাথে কম বেশি আমরা সবাই পরিচিত। ফল চুরি করে খায় নাই এমন মানুষ খুব কমই আছে। আমি কিন্তু সেই কম মানুষের দলে না। তাই ভাবলাম আমার গল্পটা শেয়ার করেই ফেলি।

ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এর মধ্যে বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য এই দুই মাস হচ্ছে গ্রীষ্মকাল। ফলের দিক বিবেচনা করলে এই দুই মাস হচ্ছে পাকা ফলের মাস। কারণ সব মজাদার ফল এই সময়ই পাওয়া যায়। এজন্য জৈষ্ঠ্য মাসকে মধু মাসও বলা হয়ে থাকে ফল পাকার সময়ের জন্য। আমি যে ফলের গল্প শেয়ার করবো তা হচ্ছে লিচু চুরির ঘটনা। আশা করি সবার ভালো লাগবে আমার গল্পটি।

PicsArt_03-30-11.58.08.png

আমার গল্পটা ২০১৩ সালের দিকে তখন আমি হাই স্কুলে পড়ি। আসলে ছোট থেকেই মোটা মোটি দুষ্টু ছিলাম। স্কুলে দুষ্টুর দিক থেকে সবার বস ছিলাম আমি। যাইহোক, গল্পটা আমাদের স্কুলের না আমাদের এলাকাতেই। আমাদের এলাকাতে হিন্দু মুসলিম সবাই মিলে মিশেই থাকি। তাদের কোনো বিয়ের অনুষ্ঠন হলে আমাদের দাওয়াত দেয়। আমরাও আমাদের কোনো অনুষ্ঠান হলেই তাদের দাওয়াত দেই। আমার অনেক কাছে এক হিন্দু ভাইয়ের বিয়ে ছিলো। আমাকে অনেক আদর করতো। আমাকে আগেই বলা ছিলো আমিও চাইলে আমার কিছু বন্ধুকে তার বিয়েতে দাওয়াত দিতে পারবো৷ তাই আমি আমার কয়েকজন স্কুলের বন্ধুকে আমাদের বাসায় দাওয়াত দেই। এক সাথে মজা করা যাবে এই জন্য। হিন্দুদের বিয়েতে অনেক মজা হয়। আর প্রিয় খাসির মাংসতো আছেই। যাইহোক, আমার বন্ধুরা বিয়ের দিন বিকেলে আমাদের বাসায় আসে। আর সেই হিন্দু বড় ভাইয়ের বাসা আমাদের বাসার পাশেই।

lychee-g943206fff_1920.jpg
লিংক
আমার তিন বন্ধু নাহিদ, শিফাত ও ইমন আসে। স্কুল লাইফের আমার অনেক কাছের বন্ধু তারা। আসলে আমার মতো তারাও অনেক দুষ্টু। আমাকে বাসায় এসেই বলতেছে তদের বাসায় আসার সময় রাস্তায় পাশে বড় লিচু গাছ দেখলাম একদম পেঁকে আছে। আমি বল্লাম আমাদের আলমগীর চাচার গাছ তার বাসার পিছনে আরো লিচুগাছ আছে খাবি নাকি? হাহাহা তারা তিনজনই এক কথায় রাজি৷ বলে আজ রাতেই তাহলে অপারেশন করবো। আমি বল্লাম ঠিক আছে তাহলে বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার পর দেখা যাবে। আলমগীর চাচা একাই থাকা মুন্না ভাই (তার ছেলে) সে বাইরের দেশে থাকে
বাসায় আর কেউ নাই। আসলে আমি নিজে রাতে অপারেশন করতে চাইছি কিন্তু একা যেতে ভয় লাগে। বন্ধুদের পেয়ে আমার সাহসও বেড়ে গেলো। রাতে দিলিপ ভাই (হিন্দু ভাই) এর বাসায় দাওয়াত খাইতে খাইতে ১২ টা বেজে গেলো। আমাদের বাসার সামনেই আমাদের পুকুর পাড়। ৪ বন্ধু মিলে সেই পুকুর পাড়ে বসে আড্ডা দেওয়া শুরু করলাম। রাত ভারি না হলে লিচু গাছের কাছে যাওয়া যাবে না। এভাবে বসে থাকতে থাকতে রাত যখন ১ টা বেজে গেলো তখন আমরা বের হলাম লিচু গাছের উদ্দেশ্যে। বাড়ির সামনের গাছে না গিয়ে পিছনের গাছ সিলেক্ট করলাম।

lychee-gdb46c92f5_1920.jpg
লিংক
লিচু গাছ অনেক হেলানো সহজেই যে কেউ গাছে উঠতে পারবে। ইমন গাছে উঠতে পারতো না, তাই সে নিচে দাঁড়ায়। আমি নাহিদ আর শিফাত গাছে উঠি। আমি আমার প্যান্টের পকেট ভর্তি করতে থাকি। এদিকে শিফাত দেখি কয়েকটা ডাল ভাঙছে। আসলে বাড়ির পেছনে টিনের বাক্স লাগানো ছিলো যাতে কোনো পাখি লিচু না খেতে পারে। অন্ধকারে না দেখে ডাল টান দেওয়ার সময় সেই টিনের সাথে টান লেগে সাউন্ড হয় অনেক জোরে আর ঘর থেকে আলমগীর চাচা কয় কেরা রে? সাথে সাথে ভয় পেয়ে তাড়াহুড়া করে নামতে শুরু করি। নিচে সবার জুতা রাখা ছিলো জুতা না নিয়ে দৌড় দেই। ইমন জুতা না নিয়ে আমাদের আগেই দৌড়ে আমাদের পুকুর পাড়ের ঝোপের পাশে লুকাইছে।

এসে দেখি ইমনের শার্টে মাটি লেগে আছে দৌড়ে আসার সময় অন্ধকারে হুচোড় খেয়ে পড়ে গেছিলো। যাইহোক আমি যে লিচুগুলো প্যান্টের ভেতর রাখছিলকম সেগুলো নিয়ে আসছিলাম তবে যে ডাল ভাঙা হইছিলো সেগুলো রেখেই আসতে হইছে। আর আমাদের তিন জনের জুতা গাছের পাশেই পেয়ে যায় আলমগীর চাচা। আসলে জুতা ছাড়া আমি শিফাত নাহিদ তিন জনেরই পোবলেম হতো। তাই আমি আম্মুকে কাহিনী খুলে বলি। যাতে নাহিদ আর শিফাতের জুতা এনে দেয়। আর আব্বুকে যাতে না বলে এই জন্য রিকুয়েষ্ট করি। আম্মু প্রথমে বকা দেয় তার পর বলে যা ওদের রোমে নিয়ে গিয়ে শুয়ে পর। পরের দিন সকালে আম্মু গিয়ে নাহিদ শিফাত আর আমার জুতা নিয়ে আসে। তবে ৪০০ টাকাও দিয়ে ছিলো লিচুর জন্য আলমগীর চাচাকে। অনেক দিন আলমগীর চাচার সামনে যাইতে লজ্জ্বা লাগছে।

lychee-g78fc6db7e_1920.jpg
লিংক
এই স্মৃতিটা আমি কখনোই ভুলতে পারবো না। কিছুদিন আগেও শিফাত এই কথা তুলছিলো। যেমন মজা ছিলো তেমনি ভয়ও পেয়েছিলাম। আব্বুকে আম্মু পরে এই কাহিনি বলছে নাকি জানি না। তবে আমি আব্বুকে বলি নাই। তাকে অনেক ভয় পাই। এই ছিলো আমার লিচু চুরির মজার ঘটনা। আশা করি সবার ভালো লেগেছে।

PicsArt_03-30-11.59.12.png

আগের দিনগুলো অনেক মজার ছিলো। আমরা যখন ছোট ছিলাম এই রকম মজার মধ্যে দিন কাটাইছি। যে লিচু গাছের কথা লিখলাম সেই গাছ এখন নেই। কেটে ফেলছে। আসলে আগের মতো বড় গাছ গুলো এখন খুব একটা দেখা যায় না। এখন যে গাছে লিচু/আম/পেয়ারা যাই ধরে ছোট গাছেই ধরে। মানে এখন কলম দেওয়া গাছ বেশি। তবে বর্তমান সময়ের ছেলেদের এমন কোনো স্টোরি ভবিষ্যতে থাকবে না। কারণ এখন সবাই মোবাইলের উপর নির্ভরশীল। সারা দিন ফোনে পাবজি/ফ্রি ফায়ার এগুলো খেলেই সময় পায় না। ফলচুরি করার মজা কেমনে বুঝবে তারা।
বি-দ্রঃ হাফিজ ভাইয়ের কনটেস্টের মাধ্যমে আমাদের সবার চুরির ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলো। হাহাহাহা 😁

PicsArt_12-20-07.35.30.png

Screenshot_20211204-232402_Facebook-01.jpeg

"বর্তমানে আমি গ্রাফিক্স ডিজাইন এর উপর আছি। গ্রাফিক্সের কাজ করতে অনেক ভালো লাগে"।


"আমি সাইদুল ইসলাম কাকন। আমি বর্তমানে অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। আমি ভ্রমন প্রিয় মানুষ। ছবি আঁকতে অনেক ভালোবাসি। এছাড়াও রান্না করতে পছন্দ করি। আমি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তবু্ও চেষ্টা করি গরীবদের সাহায্য করতে। "
png steemit.png

Sort:  

প্রাঞ্জল ভাষায় জীবন কাহিনীর কিছু অংশ সুন্দর করে, করে, ফুটিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করলেন।জয়ের মালাটা আপনার হোক।এই কামনায়।

 2 years ago 

আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ প্রিয় নজরুল ভাই।

 2 years ago 

রাতের বেলা লিচু খাওয়ার অপারেশন গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো ।সেই সাথে লোহমর্ষক কাহিনী গল্প। আপনার বন্ধুদের নিয়ে লিচু অভিযান। এত সুন্দর একটি গল্প খুব নিখুঁতভাবে আপনি কি আমাদের কথা তুলে ধরেছেন। আপনার স্কুল জীবনের গল্প করে খুব ভালো লাগলো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আমার গল্প পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।

 2 years ago 

হাজার কোটি টাকা দিলেও ছোট বেলার সোনালী দিনগুলো আর ফিরে আসবে না ভাই। অসাধারন ছিল আপনার গল্প লিচু চুরি করে খাওয়ার। যে কোনো ফলের প্রতী কৈশোরের আকর্ষণ টা একটু বেশি থাকে। আমাদের সাথে এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য আপনার প্রতি রইল আন্তরিক অভিনন্দন।

 2 years ago 

একদম মনের কথা বলেছেন ভাই। অনেক মিস করি সেই হারানো দিনগুলো। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আপনার গল্প টি পড়ে লিচু চোর কবিতা টি মনে পরে গেল। হ্যা আগে তেলের টিন বেধে রাখতো আর দড়ি দিয়ে টান দিলে টিনে শব্দ হতো । তাতে করে বাদুর আর আসতো না। দারুন ছিল গল্পটি। ধন্যবাদ।

 2 years ago 

জ্বি ভাই, বিশেষ করে তেলের টিন গুলো ব্যবহার করা হতো। এখন খুব একটা দেখা যায় না এগুলো।

 2 years ago 

পাওয়ার আফ বলতে শক্তি বৃদ্ধি বোঝাই, যে যত পাওয়ার আফ করবে তার তথ্য শক্তি বৃদ্ধি হবে এবং ইচ্ছে মতো কাজ করতে পারবে। আপনি পাওয়ার আফ করেছেন জেনে খুব খুশি হলাম, চেষ্টা করবেন নিয়মিত পাওয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

@sumon09 আপনি মনে হয় ভুল জায়গায় ভুল কমেন্ট করেছেন। এটা পাওয়ার আপের এর পোস্ট নয়। মন্তব্যটা ঠিক করে নেন।

 2 years ago 

কমেন্টের নেশায় ভাই আমার পাগল হয়ে গেছে। ভাই কমেন্ট ঠিক করে দেন। না হলে সবাই এসে আপনাকে কিছু কিছু কথা বলবে। 😁😁

 2 years ago 

ভাইয়া আপনার লিচু চুরির গল্পটি আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। আপনারা তিন বন্ধু মিলে লিচু চুরি করতে গিয়ে আলমগীর চাচার লিচু গাছের নিচে জুতা রেখেই চলে এসেছেন, বিষয়টি চিন্তা করতেই আমার অনেক হাসি পেয়েছে। যাইহোক ভাইয়া পরে আপনার আম্মু লিচু চুরির ঘটনাটিকে সামাল দিতে পেরেছে ৪০০ টাকার বিনিমযয়ে এজন্য তাকে অবশ্যই ধন্যবাদ দেওয়া উচিত ছিল। লিচু চুরির গল্পটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আপনি যে আমার পুরো গল্প পড়েছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ভালো লাগলো আপনার কমেন্ট পড়ে। ভালোবাসা অবিরাম প্রিয় ভাই।

 2 years ago 

ভয়ের মাঝেই লুকিয়ে থাকে আসল মজা, তবে হ্যা, চুরি করার মাঝে যেমন ভয় থাকে ঠিক তেমনি ভয়ও থাকে। ধন্যবাদ আপনার গল্প শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago (edited)

আমার পোস্ট ভিজিট করে সুন্দর কমেন্ট করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদভাই। 💞💞💞💞💞

 2 years ago 

ভাই এ লিচু চুরির গল্প শুনে বেশ ভালো লাগলো। আমি হিন্দুদের বিয়ে কখনো দেখিনি। আপনার খাসির মাংসের কথা শুনে অনেক ভালো লাগলো। তার সাথে গাছের তলা থেকে জুতা রেখে পালানোর কথাটা শুনে অনেক আনন্দ পেলাম। এত সুন্দর কথা লিখেছেন কি বলবো। প্রতিযোগিতার জন্য শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

আপনি আমার গল্প পড়েছেন জেনে অনেক ভালো লাগলো আপু। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।

 2 years ago 

ভাইয়া,খুব ভালো লাগলো আপনার গল্পটা পড়ে। আসলে ছেলেদের ছোটবেলাটা খুব বেশিই মজার ছিল যা সবার গল্প পড়ে বুঝলাম।আর আমরা তো যা পারতাম নিজেদের বাড়িতেই মজা করতাম।খুব ভালো লাগলো আপনার গল্প পড়ে। এই সুন্দর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দারুণ কিছু গল্প পড়তে পারতেছি।

 2 years ago 

আমি ও ছোট বেলার সেই স্মৃতি গুলো মনে করি আর ভাবী আবার যদি এমন সময় ফিরে আসতো অনেক ভালো হতো।

 2 years ago 

চুরি করেও লাভ হলোনা ভাই। শেষে কিন্তু মূল্য চোকাতেই হলো। ভালো লাগলো আপনার গল্পটি পড়ে। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য।

 2 years ago 

অনেক ধন্যবাদ ভাই - কম কথায় অসাধারণ কমেন্ট করার জন্য। শুভ কামনা আপনার জন্য। 💜💜💜

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 58728.31
ETH 3185.59
USDT 1.00
SBD 2.43