আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে আমার কাজ করার অনুভূতি | ১০℅ লাঁজুক খ্যাঁকের জন্য।

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। অনেক দিন থেকেই ভাবছিলাম আমার বাংলা কমিউনিটির সম্পর্কে একট পোস্ট ক্রিয়েট করবো তবে সময়ই হচ্ছিলো না। আসলে আমি যখন দেখি @alsarzilsiam ভাই কমিউনিটিতে কাজ করার অনুভূতি নিয়ে একটি কনটেস্টের আয়োজন করেছে সত্যি অনেক খুশি হই। আসলে এই কনটেস্টের মাধ্যমে যেমন নিজের অনুভুতিগুলো শেয়ার করতে পারবো একই সাথে অন্যের অনুভূতিগুলোও জানার সুযোগ হবে। যাইহোক, আমার বাংলা কমিউনিটিতে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা জানানোর আগে প্রথমেই ধন্যবাদ দিতে চাই আমাদের সবার প্রিয় @rme দাদাকে। যার অসামান্য অবদানের ফলে নিজের মার্তভাষায় এই স্টিমিট প্লাটফর্মে ব্লগিং করতে পারতেছি। তবে বাংলা ভাষাকে এই ইটারন্যাশনাল প্লাটফর্মে স্থায়ীরূপ দিতে দাদার অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এজন্য আমারা বংলা ব্লগবাসী দাদার কাছে কৃতজ্ঞ।

আমার বাংলা ব্লগে প্রবেশের গল্প

আমি প্রথম স্টিমিট প্লাটফর্মে আসি আমার বন্ধু @shemul21 এর মাধ্যমে। তবে তখন আমি এই প্লাটফর্মের দেখা পাইনি। তখন যে কমিউনিটিতে কাজ করতাম সেখানে ইংরেজিতে পোস্ট করতে হতো। সত্যি বলতে বাংলা ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ আর ইংরেজি ভাষায় মনের ভাব প্রকাশের মধ্যে বহুত পার্থক্য। অনেক কিছুই বুঝতাম না। এভাবে ৩ মাস চলার পর আমার ভাই অসুস্থ হয়ে যায়, আমি স্টিমিট ছেড়ে দেই কারণ আমাকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিলো প্রায় ২ মাস। এর পর আমার বন্ধু আমাকে আমার বাংলা ব্লগ সম্পর্কে জানায়, বাংলা কমিউনিটির কথা শুনে বেশ ভালো লাগে। আমি জয়েন করি আমার বাংলা ব্লগে।

আমার পরিচিতি মূলক পোস্ট করি, ১৭-১১-২০২১
তখন এখানে ঢুকতে হলে কমিউনিটিরাখা কারো রেফারেন্স নিয়ে ঢুকতে হতো। যেহেতু আমার কেউ ছিলো না এই কমিউনিটিতে তাই আমি আমার বন্ধু শিমুলের রেফারেন্স নিয়েই পোস্ট করি। আমার সর্বোপ্রথম কথা হয় সিয়াম ভাইয়ের সাথে আমার ডিসকর্ড আইডি লিংক আপ করতে সে আমাকে হেল্প করেছিলো। আর যেহেতু আমি এই কমিউনিটিতে কাজ করে না এমন লোকের মাধ্যমে কমিউনিটিতে প্রবেশ করি তাই আমাকে ভয়েস ভেরিফিকেশনের সময় অনেক প্রশ্ন করা হয়। আর প্রশ্ন করেছিলেন আমাদের সবার প্রিয় @shuvo35 ভাই। তবে শেষ পর্যন্ত আমি কমিউনিটিতে পোস্ট করার অনুমতি পেয়ে যাই।

এবিবি স্কুল

আমার বাংলা ব্লগ শুধু মাত্র ইনকামের জন্য না। এখানে একজন ভালো মানের ব্লাগার তৈরি করা হয়। আর একজন ভালো মানের ব্লগার হতে হলে অবশ্যই ব্লগিং সম্পর্কে আমাদের ভালোভাবে জানতে হবে। আমাদের কমিউনিটির ফাউন্ডার আমাদের সবার প্রিয় @rme দাদা সেই ব্যবস্থা আমাদের করে দিয়েছেন। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি স্টিমিট প্লাটফর্মে এমন দ্বিতীয় কোনো কমিউনিটি নেই যেখানে এভাবে হাতে কলমে শেখানো হয়। একটা কথা শেয়ার করি, আমি যখন স্টিমিটে প্রথম ঢুকি তখন নিউ কামারস নামে কমিউনিটিতে এচিভমেন্ট পোস্ট করতাম ভোটও দিতো। আমি সেখান থেকে প্রো নিউকামার হই রেটিং ৩ নিয়ে মানে ফুল মার্কস নিয়ে সেখান থেকে গ্রেজুয়েট হই। তবে আমি সেখান থেকে কিছু মার্কডাউন ছাড়া আর কিছুই শিখতে পারি নাই। কারণ সেখানে সেই রকম ভাবে বুঝানো হতো না। আমরা জাস্ট ভোটের আশায় পোস্ট করেছি। তবে এই কমিউনিটিতে আসার পর আমি অনেক কিছুই শিখতে পারছি। এজন্য অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে চাই সে সব সম্মানিত এডমিন ও মডারেটরদের, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমার বাংলা ব্লগ কোয়ালিটিফুল কনটেন্ট এর কারখানা হয়েছে।

প্রথম শাইফক্সের ভোট এত অনুভূতি

আমার এখনো মনে আছে আমি তখন লেভেল-১ ট্যাগ পেয়েছি। কি পোস্ট করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তো হঠাত ই মনে হলো আমার ভাইয়ের সাথে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক অনুভূতি কথা জানিয়ে একটা পোস্ট লিখি। তো যে কথা সেই কাজ, আমি পোস্ট লিখলাম যা যা ঘটেছিলো। তবে তখনো আমি ভালো মার্কডাউন পারতাম না। কেবল আমি লেভেল-১ তো যাইহোক, সেই পোস্টে অনেকেই সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করে এর মধ্যে আমাদের সবার প্রিয় @rupok ভাইও কমেন্ট করে। সত্যি বলতে একজন মডারেটর আমার পোস্টে কমেন্ট করেছে এটা দেখে অনেক খুশি হই।

এর পর আবারো খুশি হই সকালে ঘুম থেকে উঠে। সকালে উঠে দেখি আমার পোস্টে ১৫ ডলারের ভোট। আমি সত্যি এতো অবাক হই যে বলে বুঝানোর মতো না। এটাই আমার শাইফক্সের প্রথম ভোট। তখন বুঝলাম নতুন পুরাতন কিছু না। ভালো পোস্ট করলে শাইফক্সের ভোট পাওয়া সম্ভব।

ভেরিভাইড মেম্বার হওয়ার অনুভুতি

যখন শুনলাম ভেরিভাইড মেম্বার হলে শাইফক্সের ভোট পাওয়া যায়, তখন থেকে এক দিনও লেভেলের ক্লাশ মিস দেই নাই। প্রতিটা ক্লাশের পরীক্ষায় সফল ভাবে উত্তীর্ণ হয়ে শেষ পর্যন্ত ভেরিফাইড ট্যাগ পাই। তবে ফেরিফাইড হওয়ার জন্য আমি আমার এক কানিজের বিয়েতে এটেন্ড করি নাই। আসলে সেদিনই আমার লেভেল ৫ এর ভাইবা ছিলো। আমি যেহেতু প্রথম ব্যাচের স্টুডেন্ট ছিলাম তাই অনেক টেনশনে ছিলাম কি না কি প্রশ্ন করা হবে। তাই বাসায় বলি আমি অসুস্থ যেতে পারবো না তোমরা যাও। হাহাহা, যাইহোক, কোনো প্রশ্ন তেমন কঠিন ছিলো না সহজ ভাবেই পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যাই। খুবই ভালো লাগতেছিল। এর পর হ্যাংআউটে আমাদের ভেরিফাইড নামের লিস্ট প্রকাশ করা হয়। আমরা ১৭ জন মেম্বার ভেরিভাইড হইছিলাম প্রথম ব্যাচে।

সুপার এক্টিভ লিস্ট

আমি এমন একজন ইউজার যে কিনা ভেরিভাইড হওয়ার পর মোট ৩ বার বাদ পড়েছিলাম সুপার এক্টিভ লিস্ট থেকে। এর পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় নাই। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমি প্রায় সময় টায়ার ১ এ থাকি। একটা জিনিস আমি এখান থেকে খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছি, এখানে আমাকে কেউ চিনে না। আমার চেহারা দেখে কেউ আমাকে সুপার এক্টিভ লিস্টে রাখে না। এখানে যেইটা দেখা হয় সেইটা হচ্ছে কোয়ালিটিফুল কাজ ও কমিউনিটির প্রতি ভালোবাসা। একজন নতুন ইউজার যদি কঠোর পরিশ্রম করে সে অবশ্যই নিজেকে সুপার এক্টিভ লিস্ট তালিকায় নিয়ে যেতে পারবে বলে আমি মনে করি। আমি সুপার এক্টিভ লিস্টে বারবার থাকার কারণ একমাত্র আমার পরিশ্রম। এমনও হইছে সারা রাত ঘুমাই নাই। আবার দিনের বেলাতেও ঘুমাতে পারি নাই। শুধু মাত্র পোস্ট কমেন্ট করছি। ডিসকর্ডে থাকছি। অন্যান্য কমিউনিটির মতো এই কমিউনিটিতে স্বজন প্রীতি নেই। এখনে আপনার কাজই আপনার বড় পরিচয়।

মানুষ মানুষের জন্য abb-charity

আমার বাংলা ব্লগ শুধু একটা প্লাটফর্ম না একটা পরিবার। আমরা যেমন পরিবারের কেউ কোনো বিপদে পড়লে তার তার সাহায্যে এগিয়ে আসি। তেমনি এখানে আমাদের প্রিয় দাদা, আমাদের বিপদ আপদের দিকটা চিন্তা করে একটা ফান্ড খুলে রাখছে। এর মাধ্যমে আমাদের কেউ কোনো বিপদে পড়লে সহযোগিতা পাবে। দাদার এই কাজকে হাজারবার স্যালুট জানাই। আমি এই কমিউনিটিতে আসার পরও আমি দেখেছি হেল্প করতে। আমাদের পরিবারের কর্তা আমাদের সবার প্রিয় @rme দাদা, আমাদের জন্য সকল সুযোগ সুবিধারই ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আসলে তার অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবেনা।

বিনোদনের ব্যবস্থা

আমার বাংলা ব্লগে কাজ করতে কেউ বিরক্ত ফিল করে না। কারণ এখানে কাজের সাথে সাথে বিনোদনের ব্যবস্থা আছে ডিস্ককর্ড সার্ভারে। সাপ্তাহিক হ্যাংআউট মানেই চরম বিনোদন। এই হ্যাংআউট এর মাধ্যমে আমরা আমাদের নিজেদের রিফ্রেশ করি পরবর্তী সপ্তাহে কাজে মনোযোগী হতে। আমাদের ডিসকর্ড সার্ভারে লোকজনের যে পরিমাণ এক্টিভিটি অন্য কোনো ডিসকর্ড সার্ভারে আমি দেখি নাই। প্রতিটি বৃহস্পতিবার আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যত কাজই থাকুকনা কেন আমি হ্যাংআউটে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি।

আমার ব্যক্তিগত অভিমত

আমার বাংলা কমিউনিটিতে কাজ করতে গিয়ে আমার অনেকের সাথেই ভালো পরিচয় হয়েছে। রিয়েল লাইফে আমার আমার বন্ধুর সংখ্যা কম হলেও স্টিমিট প্লাটফর্মে অনেক ভালো সহযোগী/বন্ধু পেয়েছি। আমার বাংলা ব্লগ একজন নতুন ইউজারকে যে ভাবে তিলে তিলে গড়ে তুলে সত্যি এটা প্রশংসনীয়। আর বিশেষ করে আমার বাংলা কমিউনিটির প্রতিটি এডমিন মডারেটরকে আমার খুব ভালো লাগে। সবাই অনেক আন্তরিক, যেখানে অন্যান্য কমিউনিটিতে এডমিনদের সাথে কথা বলার তেমন কোনো সুযোগই থাকে না, সেখানে এই কমিউনিটিতে আমরা সরাসরি এডমিনদের সাথে কথা বলতে পারি। আর সব চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমরা চাইলে কমিউনিটির ফাউন্ডার আমাদের প্রিয় @rme দাদার সাথেও সরাসরি কথা বলতে পারি। এখনেই বুঝা যায় আমাদের দাদা কতটা আন্তরিক প্রতিটি ইউজারের সাথে।
সর্বোপরি আমি গর্বিত কারণ আমি আমার বাংলা ব্লগ এর মতো সুন্দর একটা পরিবার পেয়েছি। যতো দিন স্টিমিট প্লাটফর্মে থাকবো এই কমিউনিটিকেই আঁকড়ে ধরে থাকবো ইনশাআল্লাহ। কাজ করে যাবো আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে।

পরিশেষে বলবো, লেগে থাকুন, কাজ করে যান। সফলতা আজ হোক কাল হোক আসবেই। সবার জন্য শুভকামনা রইলো।

"আমি সাইদুল ইসলাম কাকন। আমি বর্তমানে অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। আমি ভ্রমন প্রিয় মানুষ। ছবি আঁকতে অনেক ভালোবাসি। এছাড়াও রান্না করতে পছন্দ করি। আমি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তবু্ও চেষ্টা করি গরীবদের সাহায্য করতে। "