ঘুরে এলাম প্রায় ৭০০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক মসজিদে || ১০℅ লাজুক খ্যাঁকের জন্য।

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লহর রহমতে ভালো আছি। হুটহাট গত ২৫/০১/২০২২ গ্রামের বাড়িতে আসছি। মূলত আমার চাচাতো বোনের বিয়ের কথা চলছে তাই আর কি তারাহুড়া করে আসা। আমার গ্রামের বাড়ি ঢাকা বিভাগের টাংগাইল জেলার ধনবাড়ি উপজেলায়।

আমি গ্রামে আসার পর চিন্তা করলাম আমাদের উপজেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ কিছু জায়গা নিয়ে ব্লগ করলে খারাপ হয় না। তো আজকে আমি আপনাদের প্রায় ৭০০ বছরের পুরোনো এক মসজিদ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেবো। সকাল সকাল তাই বাইক নিয়ে বের হলাম মসজিদের উদ্দেশ্যে। এই ঐতিহাসিক মসজিদটি আমার বাসা থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে।

এই মসজিদের নাম ধনবাড়ি নওয়াব শাহী জামে মসজিদ। এটি ঢাকা থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরে টাংগাইল জেলার ধনবাড়ি উপজেলায় নওয়াব রয়েল রির্সোট এর পাশেই অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের প্রথম রয়েল রির্সোট নামে পরিচিত। আমি পরের ব্লগে ধনবাড়ি নওয়াব রয়েল রিসোর্ট সম্পর্কে আলোচনা করবো। আজ আমি শুধু মসজিদ সম্পর্কে আলোচনা করবো।

এটি হচ্ছে নওয়াব শাহী জামে মসজিদের প্রধান প্রবেশ গেট। ধনবাড়ি বাস স্টেন্ড থেকে ৫-৭ মিনিটের রাস্তা। যাইহোক, প্রবেশের পরই চোখে পড়বে অসম্ভব সুন্দর এই ঐতিহাসিক এই মসজিদটি। যার কারুকাজ আপনার অবশ্যই ভালো লাগবে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, এই মসজিদটি ১৬ শতাব্দীতে তুরকী বংসের ইস্পিঞ্জার খাঁ ও মনোয়ার খাঁ এই দুই ভাই এই মসজিদের প্রথম খণ্ড নির্মান করেন।এবং সম্রাট আকবরের সময় এই দুই ভাই ধনবাড়ির অত্যাচারী জমিদারকে পরাজিত করে, এই এলাকার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং মসজিদটি পুরোপুরি নির্মাণ করেন। এর পর আমাদের ধনবাড়ির গর্ব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রথম প্রতিষ্ঠাতা, অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলিম মন্ত্রী খান বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ১২৩ বছর পূর্বে মসজিদটি পূণরায় সম্প্রসারণ করে মসজিদটির আধুনিক রূপ দেন।

অসম্ভব সুন্দর এই ঐতিহাসিক এই মসজিদটি। কড়ি পাথরে মোজাইক করা প্রচীণ স্থাপত্যের নিদর্শন এই মসজিদটি দেখলে যেকারো চোখ জুড়িয়ে যাবে। নওয়াব আলী চৌধুরী বিভিন্ন দেশের কড়ি পাথরের মিশ্রণে এটি মোজাইক করিয়েছেন।

এই মসজিদে চার দিকে চারটি প্রবেশ পথ, নয়টি জানালা এবং ছোট বড় মিলিয়ে ৩৪ টি গুম্বজ রয়েছে। এই মসজিদের ভেতরে যে নকশা গুলো রয়েছে এগুলো বহুত পুরনো আমলের৷ দেখলেই সেটা বুঝা যায়। মসজিদের ভেতরে অনেক পুরনো ঝার এবং রঙিন পাতিল আছে। এগুলো আগের দিনে নরিকেল তেল ব্যবহার করে বাতি জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা হতো!

এই মসজিদে একসাথে বহু মুসুল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। শুক্রবার এখানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নামাজ আদায় করতে আসে বহু পর্যটক। এছাড়াও বাকি দিনগুলোতে লোকজন আসে তবে শুক্রবার বেশি।

মসজিদের সামনেই রয়েছে এক বিশাল আকারের দিঘি। এখানে কখনো পানি শুকায় না। সারা বছর পর্যাপ্ত পরিমানে পানি থাকে। দিঘিতে নামার জন্য সান পাতানো ঘাট রয়েছে। এখনে সাধারণ ওজু ও গোসল করা হয়।

এখানে যে ছবিটি দেখতে পাচ্ছেন এটা হচ্ছে খান বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর কবর। এই মসজিদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে প্রায় ৯৩ বছর ধরে নামাজের সময় ব্যতিত এক মিনিটের জন্য কুরআন তিলাওয়াত বন্ধ হয় নাই এখানে। এটা ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। কুরআন তিলাওয়াতের জন্য সার্বক্ষণিক এখানে লোক নিয়োজিত আছে।

মসজিদের পেছনে দিকে রয়েছে কবরস্থান। এখানে নওয়াব আলী চৌধুরীর পরিবারের সবার কবর রয়েছে। এছাড়াও এখানে নওয়াবের ব্যবহার করা হাতি ও ঘোড়ার কবরও লক্ষ্যনীয়। কবরস্থানটি সবুজে সবুজে ঘেরা।

ঘুরাঘুরি শেষ করে সিড়িতে বসে একটা সেলফি তুলে নিলাম। আসলে এই মসজিদটি আমার অনেক প্রিয়। আমি এই মসজিদকে কেন্দ্র করে যতগুলো ভালো নিয়ত করছি, আমার নিয়ত পূরণ হইছে। আমি এখানে আসলেই দানবাক্সে কিছু না কিছু দান করে আসি। যাই হোক এই ছিলো আমার মসজিদে ঘুরাঘুরি।

ও ভালো কথা এখানে বাইক, গাড়ি পার্ক করার ভালো জায়গা আছে। আপনারা যদি কেউ বেড়াতে আসেন কোনো প্রবলেম হবে না। ঘণ্টা খানেক ঘুরাঘুরির পর আমি আমার বাইক নিয়ে বাসায় ফিরে আসি। আসলে আমার স্কুলও ছিলো এই মসজিদের পাশেই তাই এখানে নামাজও পড়িছি অনেক। দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তেও এখনে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসে।