রমনা পার্কে কাটানো সুন্দর মুহুর্ত || ১০% লাজুক খ্যাঁকের জন্য।

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি।আজকে এক ফ্রেন্ডকে নিয়ে রমনা পার্কে গিয়েছিলাম। আসলে ঢাকায় খোলা মেলা জায়গার খুবই অভাব। তবে রমনা পার্কে গেলে মনেই হয় না যে ঢাকার ভেতর আছি। ভেতরটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। আসলে অনেক দিন আগে যাওয়া হয়েছিলো রমনা পার্কে তখন কাজ চলছিল। এখনো কাজ পুরোপুরি শেষ হয় নাই তবে। মোটামুটি ভালোই মানুষের আনাগোনা দেখলাম।

গিয়েছিলাম ফার্মগেট একজনকে রিসিভ করতে সেখান থেকে শাহবাগ নেমে পড়ি। আসলে যে বাস দিয়ে আমাদের গেন্ডারিয়াতে আসবো সেই বাস আজকে বন্ধ। তাই ভাবলাম রমনার ভেতর গিয়ে একটু বসি। তার পর রিক্সা নিয়ে বাসায় যাবো। তাই সেই ফ্রেন্ডকে নিয়ে রমনার ভেতর ঢুকি। প্রথমে তেমন মানুষ ছিলো না তবে কিছুক্ষনপরই মানুষ ঢুকতে শুরু করলো। রমনার পরিবেশ আমার অনেক ভালো লাগে। বিশেষ করে এখানে ঢুকতে কোনো টিকিট লাগে না। ফ্রিতে আপনি সারা দিন কাটিয়ে দিয়ে পারবেন।

তবে এখনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নতুন আগতদের কিছুটা বিপত্তিকর অবস্থা ঘটে। একটা ঘটনা শেয়ার করি, এটা তাও ২ বছর আগের কথা। তখন রমনা আমার কাছে ধরতে গেলে নতুন। আসলে একা কোথাও যেতে তেমন ভালো লাগে না। তাই রমনা অপরিচিত ছিলো। একদিন আমার ক্লাশমেট এক বান্ধুবী কে নিয়ে রমনাতে গিয়েছিলাম। তখন তো নতুন তেমন কিছু বুঝি না ঐখানকার ভাবভঙ্গি। ভেতরে যাওয়ার কিছুক্ষন পর একটা মাঝ বয়সী লোক আসে এসে বলে স্যার, কি খাবেন? ফুসকা, আইস্ক্রিম, চকলেট, বার্গার, ইত্যাদি। তো আসলে নতুন গেছি টিকিট ও লাগে না সাথে আবার বান্ধুবী কেমনে বলি কিছু খাবো না। তাই বলছি দুইটা আইস্কীম দেন। সে বলে মামা কিছু চকলেটও দিলাম। আমি আর না করি নাই। কিছুক্ষন পর আমাদের জন্য আইস্ক্রিম নিয়ে আসে, সাথে চকলেট। তো আমি বিল দিতে নিবো এর মধ্যে সে বলে বিল নিতে লোক আসবে আপনি খেতে থাকুন।

এর পর খাওয়া শেষ প্রায় এর মধ্যে এক লোক আসলো একটা কাগজ হাতে নিয়ে, এসে বলে আপনার বিল ৫৮০ টাকা। আসলে আমি শুনছি ১৮০ টাকা। তো আমি ৫০০ টাকা নোট দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি ৮০ টাকা ফেরত দেবে এই জন্য। এখন সে বলতেছে আরো ৮০ টাকা দেন স্যার। আমিতো মনে হয় আকাশ থেকে পড়লাম। ২ টা করে সাফারি চকলেট দিছে আর ২ টা চকলেট কাপ আইস্ক্রিম। কেমনে ৫৮০ টাকা হয়। আমি তো পুরোই বেক্কল হয়ে গেলাম। যেখানে সর্বোচ্ছ দাম নিলে ২৫০ টাকা পর্যন্ত নিতে পারে সেখানে ৫৮০ টাকা দাবি করে। আমি কি করবো বুঝতেছিলাম না। সাথে একটা মেয়ে টাকা নিয়ে ঝামেলা করলে কি ভাব্বে। তাও ঐ লোককে বল্লাম আপনি কি আমাদের সাথে মজা করতেছেন? এখানে কি দিয়েছেন যে এতো টাকা বিল আসছে! সে বলে তাদের এখানে এমনই দাম আমি নিরুপায় হয়ে কিছু না বলে টাকা দিয়ে দিলাম কারণ আমি দাম শুনে অর্ডার করি নাই। এটা ছিলো আমার ভুল। এই ছিলো ২ বছর আগে ঘটা ঘটনা।

এই গল্পটি এই জন্য শেয়ার করলাম এখানে অনেকেই আসে ভালো সময় কাটাতে তবে এদের খপ্পরে যারা পরে তাদের মন খারাপ হতে বাধ্য। আজকেও একজনের সাথে এমন ঘটনা আমাদের সামনেই ঘটছে। তাই আমার কাহিনীটাও মনে পড়লো। তাই যারা আসবেন অবশ্যই খাবারের দাম জেনে অর্ডার করবেন।

রমনাতে আসলে আরো কিছু বিষয় চোখে পড়ে সেইটা হচ্ছে ক্যামেরা ম্যান। কতবার যে তারা আসবে আর বলবে ভাইয়া ছবি উঠবেন? হাহাহা এগুলো আমার কাছে কমন হয়ে গেছে। তবে একবার এক ভাইয়ের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছিলাম ভালোই ফটোগ্রাফি করে। তবে অনেক আনপ্রফেশনাল ক্যামেরা ম্যান ঘুরাঘুরি করে প্রতি পিচ ছবি ১০ টাকা করে। কোনো বোকা লোক পেলে এক রকম ছবিই অনেকগুলো করে তুলে দিবে। তার পর ছবি হিসাব করে টাকা।

আর একটা বিষয় হচ্ছে গোলাপ ফুল, আপনি যদি কোনো মেয়ে নিয়ে রমনাতে যান আপনাকে অবশ্যই ২-৩ জনের কাছ থেকে ফুল কিনতে হবে। তবে আমার এই ফুল বিক্রি করা লোকের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। কারণ তারা ভিক্ষা না করে একটা কাজ করে খাচ্ছে। তাই আমি যখনি যাই তাদের কাছ থেকে ফুল কিনি। ফুল কিনলে তারা অনেক খুশি হয়। আসলে এই ফুল বিক্রেতাদের প্রায় সবাই ছোট শিশু। দেখলেই মায়া লাগে। তবে অনেকেই আছে যারা ৫-১০ টাকার জন্য তাদের সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করে। এটা খুবই দুঃখজনক। তারা যে কাজটা করে তাদের জীবিকার তাগিদেই করে। তাই আমি মনে করি তাদের সাথে কখনোই খারাপ ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে কিছু মাঝ বয়সী ফুল বিক্রেতা অনেক সময় বেশি টাকার আবদার করে, তবে তাদের সংখ্যা খুবই কম।

তবে যাইহোক এখন রমনার গাছগুলোর পাতা ঝড়ে যাচ্ছে। কিছু দিন পর আবার সবুজে সবুজে ভরে উঠবে। তবে এখন যে সবুজ নেই তা না তবে কিছুটা কম। বাদামী কালার ঝড়া পাতাগুলো ভালোই লাগে দেখতে। পাতা ঝড়া গাছগুলো দেখতে সুন্দর বনের গাছের মতো লাগে। বৃষ্টি শুরু হলেই আবার নতুন পাতায় সবুজে ভরে উঠবে রমনা পার্ক।

রমনা পার্কের ভেতেরর লেকের সৌন্দর্য আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও এখনো কাজ শেষ হয় নাই। তবে লেকের পাশের কাজ শেষ হলে এই পাশে সব সময় মানুষ থাকবে। আখন ভেতরে ঢুকা যাচ্ছে না। বেড়া দিয়ে রাখছে না হলে কিছু ছবি উঠাইতাম। আসলে আমি পুরো পার্কের ছবি তুলি নাই। যেখানে বসছিলাম সেখানেই কিছু ফটোগ্রাফি করেছি। আসলে রমনা পার্কের ভেতর অনেক জায়গা।

লেকে একটা নৌকা বাঁধা ছিলো তবে এটা দর্শনার্থীদের জন্য না। কিছুটা ভাঙ্গা, যদিও উঠার ইচ্ছে হইছিলো কিন্তু মনে হলো৷ প্রোবলেম হতে পারে তাই আর উঠি নাই। যাইহোক, ভালো একটা সময় কাটিয়েছি অনেক দিন পর। আমার ফ্রেন্ডের ছবি শেয়ার করলাম না। কারণ সে তার ছবি শেয়ার করতে নিষেধ করছে। আমার পোস্ট পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো সবার জন্য।