অমর একুশে বইমেলা ২০২২|| ১০% লাজুক খ্যাঁকের জন্য।

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি। হটাৎ করেই একুশে বই মেলায় গিয়েছিলাম। আসলে কোনো প্লানিং ছিলো না। কারণ আমি একা কোথাও তেমন ঘুরতে যাই না। গিয়ে ছিলাম এক বড় ভাইয়ের বাসায় ধানমন্ডিতে তবে সেখান থেকে আসার পথে শাহবাগ দেখি বই মেলার জন্য রাস্তায় অনেক জ্যাম তাই ভাবলাম এদিকে আসছি তাহলে বই মেলায় ঘুরে যাই।আসলে এর আগের বছর করোনার জন্য বই মেলাতে যাই নাই। এইবারও যাওয়া হতো না যদি জ্যাম না থাকতো।

যাইহোক, আমি শাহবাগ নেমে তার পর হেঁটেই বই মেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। শাহবাগ মোড় থেকে যেতে ৫-৭ মিনিটের মতো লাগে। হাঁটার রাস্তায় অনেক ভিড়। সবাই বই মেলাতেই ঢুকছে। আমার কাছে মাস্ক ছিলো না তাই একটা মাস্ক কিনে নিলাম কারণ মাস্ক ছাড়া ঢুকতে দিচ্ছে না। তো ভিতরে গেলাম গেটের সামনে নানা রকম দোকানপাট। বেলুনগুলো অনেক ভালো লাগলো। এছাড়াও দেখলাম চর্কির ব্যবস্থা করা হইছে। এগুলোতে আমার উঠতে ভালোই লাগে। উঠার ইচ্ছা ছিলো তবে একা একা গেছি এই জন্য আর উঠলাম না।

এর পর মেইন গেইট দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। আমি গেছি তখন বিকাল টাইম। আসলে বইমেলায় বিকালের পর থেকেই বেশি ভিড় পড়ে। আর বেশি ভিড় হয় কোনো সেলিব্রিটি যখন বইমেলাতে আসে। তবে আজ কোনো সেলিব্রিটি আসে নাই তাই কোনো ভিড়ের কবলে পড়ি নাই। বইমেলাতে মানুষ দেখলাম অনেক। তবে মানুষের ভিড় বেশি দেখলাম লেকের পাশে। সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে।

কিছু বইয়ের দোকান পরিদর্শন করলাম অনেক সুন্দর ডেকারেশন করা হয়েছে। একটা বিষয় খেয়াল করলাম যে দোকানের ডেকারেশন যতো ভালো সেখানে মানুষের ভিড়ও বেশি। আসলে সুন্দর জিনিসের প্রতি সাবারই একটা আলাদা আকর্ষন কাজ করে।

আমি মনে করি ৬০% লোক ছবি তুলার জন্য বই মেলাতে যায়। ছবি তুলবে আর ফেসবুকে আপলোড দিবে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ছবি তুলার ধুম পড়ে। দোকানের লাইটিং গুলো অনেক সুন্দর লাগে। তবে আমার ভালোই লাগে এখানের পরিবেশ অনেক সুন্দর। ভালো একটা সময় কাটানোর মতো জায়গা। তবে একা যাওয়াতে কেমন জানি একটু মন খারাপ লাগছিলো। তবে সুন্দর পরিবেশের জন্য ভালোই লাগছিলো।

যাইহোক কিছু দোকানে দেখলাম ইংরেজি বই বিক্রি হচ্ছে। আসলে এখানে প্রায় সব ধরনের বই পাওয়া যায়। যদি কারো কোনো বই দরকার থেকে এখান থেকে সংগ্রহ করা যাবে। আসলে বই পড়তে অনেক ভালো লাগে তবে একাডেমিক বই পড়লে ঘুম চলে আসে। কিন্তু উপন্যাস পড়তে ভালো লাগে। হয়তো আমার মতো এমন অনেকেই আছেন যাদের উপন্যাস পড়তে ভালো লাগে। ইংরেজি বইগুলোর মধ্যে কামাল হোসাইন এর বাংলাদেশ বইটা আমার কিছুটা পড়া হইছে এটা আমার বাসায় আছে। তবে ইংরেজি বই পড়ার চেয়ে বাংলা বই পড়তেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করি।

বঙ্গবন্ধু গ্যালারী তে গিয়ে দেখলাম অনেক সুন্দর সুন্দর বই। অনেক বই পড়া হইছে আবার অনেক বই পড়া হয় নাই। আমি কিছুটা অন্যরকম ভাবে বই পড়ি। পিডিএফ ডাউনলোড করে পিছিতে বই পড়ি। তবে সত্যি বলতে স্টিমিটে ঢুকার পর থেকে পি ডি এফ বইগুলো আর পড়া হয় না। কারণ আমার বাংলা ব্লগে অনেক সুন্দর সুন্দর লেখক আছে। তাদের লেখা পড়েই সময় কাটাই।

একটা বিষয় খেয়াল করলাম দোকানে যারা বই বিক্রি করছে তাদের প্রায় সবাই স্টুডেন্ট। আসলে বই মেলার সময় এটা স্টুডেন্টদের জন্য ভালো একটা সু্যোগ থাকে। ২০১৭ সালে আমি ৩ দিন ছিলাম আমার এক পরিচিত বড় ভাইয়ের দোকানে। ভালোই লাগে তবে, যখন বেশি কাস্টমারের চাপ পড়ে তখন একটু কষ্ট হয়। তবে আমি মনে করি,এক মাসের জন্য স্টুডেন্টদের জন্য ভালো একটা আর্নিং এর সুযোগ থাকে। এর আগের বই মেলাতেও আমার পরিচিত বন্ধুরা সেলস ম্যান এর কাজ করছে। তবে প্রায় দোকানেই মেয়েদের সংখ্যা একটু বেশি রাখা হয়েছে। বই মেলাতে মূলত যে সব রাইটারের ভক্ত সংখ্যা বেশি তাদের বই বেশি সেল হয়। কারণ সবাই একটা হলেও বই কিনে।

আমি কিছু লেখকের বই বেশি পছন্দ করি, এর মধ্যে হুমায়ুন আহমেদ অন্যতম। হুমায়ুন আহমেদ ছিলেন শব্দের জাদুকর। তার উপন্যাসের চরিত্র গুলা যেন মানুষের ভিতরে ঢুকে যায়। হুমায়ুন আহমেদ পড়ে সাধারনত পাঠকেরা সেই চরিত্র থেকে সহজে বের হতে পারে না। হুমায়ুন আহমেদের হিমু চরিত্রটি যেন বাঙালির স্বপ্নের একটি চরিত্র। হিমু সিরিজ পড়ে কত তরুণ তরুণী যে তাদের আচার আচরন পরিবর্তন করে ফেলেছে তার হিসেব নেই। এছাড়া হুমায়ুন আহমেদের সৃষ্টি মিসির আলী চরিত্রটি আমাদের সকলের কাছে অনেক জনপ্রিয়। তিনি গল্পে যেভাবে জটিল সমস্যা গুলো সমাধান করে থাকেন তা দেখে স্বভাবতই পাঠকেরা অবাক হয়ে যান। মিসির আলী চরিত্রটির মাধ্যমে হুমায়ুন আহমেদ খুব সূক্ষ্মভাবে অনেক অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করেছেন খুব সহজ ভাবে। তার লেখা পড়ার পর সেই গল্পের ঘোর অনেক সময় পর্যন্ত মস্তিষ্কে থেকে যায় এটাই তার বিশেষত্ব। তার উল্লেখযোগ্য লেখা গুলোর মধ্যে বহুব্রীহি, শঙখনীল কারাগার, নন্দিত নরকে, কোথাও কেউ নেই, হিমু সমগ্র, মিসির আলী, দেয়াল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

বইমেলা ঘুরাঘুরি করে ভালোই লাগল। বই ক্রেতাদের মধ্যে দেখলাম বেশিরভাগ কাপোল আর স্টুডেন্ট। আসলে এখানে বিকেল বেলা খুব সুন্দর একটা মুহুর্ত উপভোগ করা যায়। যে কয়টা কাপোল দেখলাম তাদের সাবার হাতের দুই একটা করে বই আছেই। সত্যি বলতে আমি কোনো বই কিনি নাই। কারণ আমি আবার যাবো বই মেলাতে। বন্ধুদের সাথে তখন কিনবো। আজকে জাস্ট এমনি ঘুরাঘুরি করার জন্যই মূলত আসছিলাম। যাইহোক, একা একা কোথাও ভালো লাগে না। বইমেলাতে আসছি একটা সেল্ফি না তুললে কি হবে!

ক্ষুধা লেগে গেছিলো খাবারের ব্যবস্থাও ছিলো তবে আমার খোলা পরিবেশের খাবারগুলো তেমন পছন্দ হলো না। তাই ভাবলাম বাসায় গিয়েই খাওয়া দাওয়া করবো। তাই মাগরিবের আযানের আগেই বই মেলা থেকে বের হলাম। বের হয়ে দেখলাম রাস্তায় মোটামোটি ভিড় পড়ে গেছে। আবার শাহবাগ এসে বাসে উঠে সোজা বাসায় চলে আসলাম। জ্যামের কারণে বাসায় আসতে আসতে ৮ টা বেজে যায়।

যাইহোক এই ছিলো আমার আমার বই মেলায় কাটানো মুহুর্ত। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

জায়গার লোকেশন ↓লিংক ও ডিভাইস
_{Device : Samsung Galaxy a52}

_{What's 3 Word Location}

"বর্তমানে আমি গ্রাফিক্স ডিজাইন এর উপর আছি। গ্রাফিক্সের কাজ করতে অনেক ভালো লাগে"।

"আমি সাইদুল ইসলাম কাকন। আমি বর্তমানে অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। আমি ভ্রমন প্রিয় মানুষ। ছবি আঁকতে অনেক ভালোবাসি। এছাড়াও রান্না করতে পছন্দ করি। আমি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তবু্ও চেষ্টা করি গরীবদের সাহায্য করতে। "