আমার জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি || আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা-২০

আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। এই বারের কনটেস্ট "শেয়ার করো তোমার প্রথম প্রেমের অনুভূতি" এই কনটেস্টটি আমার পারসোনালি অনেক ভালো লেগেছে। এজন্য প্রথমেই আমি ধন্যবাদ দিতে চাই আমাদের সবার প্রিয় @rme দাদাকে এতো সুন্দর একটি কনটেস্টের আয়োজন করার জন্য। এই কনটেস্টের মাধ্যমে আমরা অনেকের প্রথম প্রেমের কাহিনী সম্পর্কে জানতে পারবো। আমাদের সবার জীবনের এই রকম কিছু লুকায়িত অনুভূতি আছে। ভালোলাগা ভালোবাসা সবার জীবনেই আছে। এই গল্পগুলো প্রকাশিত হবে এই কনটেস্টের মাধ্যমে। আমার লাইফেও এমন একটা স্টোরি আছে যা আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আশা করি সবাই পুরো লেখা পড়বেন।

source

প্রেম

প্রথমেই বলবো "প্রেম আছে বলেই, পৃথিবী এতো সুন্দর"। প্রেম কখন কার লাইফে আসবে বলা যায় না। একজন মানুষের লাইফে যেকোনো মুহুর্তে প্রেম আসতে পারে। মানুষের বয়স বাড়লে যে প্রেম আসবে তা না। প্রেম কোনো বয়স ধর্ম বর্ণ মানে না। কখন কার প্রতি ভালোলাগা ভালোবাসার সৃষ্টি হবে তা আমরা কেউ বলতে পারবো না। প্রেম ভালোবাসা সৃষ্টিকর্তার এক বিশেষ উপহার। প্রেম ভালোবাসা তাই একটা পবিত্র জিনিস। যদিও কিছু মানুষ এই পবিত্র জিনিসটাকে অপবিত্র করার চেষ্টা করে। আগের ভালোবাসাগুলো খাঁটি ছিলো আর এখনকার যুগের ভালোবাসাগুলো দুই দিনের প্রেম ভালোবাসা। আজ আছে কাল নেই। তবে আমার প্রথম প্রেম ছিলো একদম খাঁটি ভালোবাসা। প্রেম মানব জীবনের এক বিশেষ উপহার।

আমার প্রথম প্রেমের অনুভূতি

এটি ২০০৮ সালের ঘটনা। তখন আমি ক্লাশ ৫ এ পড়ি। সেদিন ছিলো আমাদের স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্টান। দর্শক গ্যালারিতে হলুদ ড্রেস পড়া একটা মেয়েকে দেখি। সত্যি বলতে প্রথম দেখাতেই মেয়েটিকে আমার অনেক ভালো লাগে। সাংস্কৃতিক অনুষ্টানে গান, নাচ, নাটক ছিলো তবে সারাক্ষন আমার নজর ছিলো সেই হলুদ ড্রেস পড়া মেয়েটির দিকে। যখন পুরস্কার বিতরণী পর্ব শুরু হয় তখন আমি রেডি হই পুরষ্কার নেওয়ার জন্য। আমি মোরগ যুদ্ধ খেলায় প্রথম হয়েছিলাম। যাইহোক, আমি যখন পুরস্কার নেওয়ার জন্য যাই তার পর আর মেয়েটিকে দেখি নাই। মানে সে চলে গেছিলো। তখন কিছুটা খারাপ লাগে। আসলে পুরস্কার বিতরণী শুরু হলে অনেকেই চলে যায়। তাই সেও হয়তো চলে গিয়েছিলো। তবে যাইহোক এর পর দুই দিন স্কুল বন্ধ থাকে। তার পর আমাদের স্কুল খোলা হয়। আমাদের ক্লাশে সেই মেয়েটিকে দেখতে পাই। তখন জানতে পারি সে আমাদের ক্লাশে নতুন ভর্তি হয়েছে। নাম "অনুরাধা সরকার"। আমি তো মুসলিম কিন্তু সে ছিলো হিন্দু। তবে যাইহোক, আমি অনেক খুশি হই এটা জেনে যে তাকে এখন থেকে প্রতিদিন ক্লাশে দেখতে পারবো।

source
আমি ক্লাশে ভালো স্টুডেন্ট এর দিক থেকে টপ টেন এর মধ্যেই ছিলাম। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো শিমুল। কিছু দিন পরই শিমুল আমাকে জানায় সে অনুরাধাকে পছন্দ করে। সত্যি বলতে অনু আমাদের ক্লাশে সব চেয়ে সুন্দরী মেয়ে ছিলো। আর অনেকটা চঞ্চল স্বভাবের যে কারো ভালো লাগার মতোই। আমি শিমুলের কাছে এটা শুনে মনে মনে কিছুটা কষ্ট পাই। তবে একটা কথা হচ্ছে আমি মেয়েদের সাথে কথা বলতে অনেকটাই লজ্জ্বা পেতাম। শিমুল আবার অনুর সাথে ভালোই কথা বার্তা বলতো। তবে প্রেম নিয়ে কিছু না জাস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে। শিমুলের সাথে সাথে থাকতাম সেই সুবাদে আমিও টুকটাক কথা বলতাম এভাবেই অনুর সাথে আমার মোটামুটি ভালো বন্ধুত্ব হয়।

এভাবেই আমাদের প্রায় ৩-৪ মাস কেটে যায়। এর পর আমাদের ক্লাশ ৫ এর ব্যাচ এর জন্য রাতের কোচিং শুরু হয়। রাতের কোচিং যখন করতাম অনেক মজা হতো কারণ মেয়েদের সংখ্যা ছিলো কম দুই ব্রেঞ্চে মেয়েরা বসতো তার পর শুরু হতো ছেলেদের ব্রেঞ্চ। মানে আমি আর শিমুল সব সময় অনুর পেছনের ব্রেঞ্চেই বসতাম। এভাবে সব সময় অনুর সাথে ফ্রেন্ডলি কথা হতো। এদিকে শিমুল আমাকে অনুর কাছে শিমুলের ভালোবাসার কথা বলতে বলে। কিন্তু আমি তখন অনুর প্রেমে পড়ে গেছি পুরোপুরি। ক্লাশে আমি অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতাম না। শুধু একমাত্র অনুর সাথেই কথা বলতাম। একদিন রাতের কোচিং এ আমাদের যে স্যারের ক্লাশ ছিলো তার যে কোনো প্রোবলেম এর কারণে বাসায় যেতে হয়। আমরা সবাই যার যার মতো গল্প করছিলাম। এর মধ্যে আমি অনুর সাথে গল্প করতে করতেই অনুকে বলি " তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?" এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে অনু আমাকে প্রশ্ন করে আমি কাউকে পছন্দ করি কিনা। আমি মোটামুটি বুঝতাম অনু আমাকে কিছুটা হলেও পছন্দ করে। তাই আমি বলি আমাদের ক্লাশে কাউকে পছন্দ করি। এই কথা শুনে অনু আমাকে আরো বেশি করে জিজ্ঞেস করতে থাকে কে সে আমাকে বল প্লিজ।

source

আমাদের ক্লাশে অনু আর শীলা দুই জন মেয়ে হিন্দু ছিলো। অনুকে ক্লো দেওয়ার জন্য এক পর্যায়ে বলি, আমি যাকে পছন্দ করি সে হিন্দু। আমার কথা শুনে অনু সিউর হয় আমি অনু আর শীলার মধ্যেই কাউকে ভালোবাসি। তবে আমি সরাসরি অনুর কথা বলি নাই। এভাবেই চলছিল আমাদের কথা বার্তা। তবে শিমুলও অনুর সাথে ফ্রেন্ডলি কথা বলতো আর ওর ভালোবাসা বুঝানোর চেষ্টা করতো তবে অনু খুব একটা পাত্তা দিতো না। আমাদের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরিক্ষার পরপর একদিন ক্লাশ শেষে অনুরাধা আমাকে একটা ছোট কাগজের টুকরায় লিখে দেয় "Do you love me?"
এই লেখাটা পেয়ে আমি যে কি খুশি হয়েছিলাম তা লিখে বুঝানোর মতো না। এটা ছিলো অনুর লেখা প্রথম চিঠি। এক কথায় প্রেম পত্র। আমি এই লেখার বিপরীতে তার পরের দিন অনেক সুন্দর করে ভালোবাসার কথা লিখে অনুকে একটা চিঠি দেই। হাহাহা চিঠি বলতে ডায়রির পাতা ছিড়ে। এইতো শুরু হলো আমাদের প্রেম। তবে আমার প্রেমের কথা আমি শিমুলকে না জানিয়ে চালিয়ে যাই। এটা আমার অপরাধ ছিলো কারণ শিমুল ও অনুকে অনেক ভালোবাসতো। যাইহোক, আমাদের দুইদিন পর পর চিঠির আদান প্রদান হতো। আমি অনুর প্রতিটি চিঠি যত্ন করে রেখে দিতাম। কিন্ত অনু চিঠি পড়ে ছিড়ে ফেলে দিতো। তখন তো আমি ছোট মানুষ আর বড়দের সবার কাছেই তখন ফোন ছিলো না। তাই চিঠিতেই কাজ চালিয়ে নিতাম।

এর পর দেখতে দেখতে অনুর জন্মদিন চলে আসে। আমি বেশি কিছু কিনে দিতে পারি নাই। কারণ তখন এতো কিছু বুঝতাম না গিফট দিতে হবে। আর আম্মু টাকা দিতো মাত্র ১০ টাকা তাও টিফিন খাওয়ার জন্য দুপুরে। অনুর জন্মদিনে দশটা লাভ ক্যান্ডি কিনে দেই। প্রতি পিচের দাম ছিলো দুই টাকা করে।সাথে দেই আমার নিজের গাছের একটা লাল গোলাপ। গোলাপ আর চকলেট পেয়ে অনুরাধা অনেক খুশি হয়েছিলো।

source
এভাবে চলতে থাকে আমাদের প্রেম। আমরা খুবই সতর্কতার সাথে কথা বলতাম যাতে কেউ বুঝতে না পারে। আমি সকালে স্কুলে গিয়ে রাত ১০ টায় বাড়ি ফেরতাম কারণ স্কুল আমার বাড়ি থেকে মোটামুটি দূরে ছিলো। দুপুরের খাবার বাইরে খাওয়া হতো। তাই অনুরাধাও রাতের কোচিং এর জন্য তারাতারি স্কুলে আসতো তখন এক সাথে বসে থাকতাম। আবার আমাদের যখন রাতের কোচিং হতো মাঝে মাঝেই লোডশেডিং হতো যেহেতু আমি অনুর পাশেই বসতাম লোডশেডিং হলেই আমি অনুর হাত ধরে বসে থাকতাম কয়েক সেকেন্ডের জন্য অনুর পিঠে মাথা রাখতাম। এই অনুভূতিগুলো লিখে প্রকাশ করার মতো না।

তবে শিমুল আমার বিষয়টা আস্তে আস্তে বুঝতে পারে৷ আমি অনুর সাথে প্রেম করি। তাই হেড স্যারের কাছে আমার আর অনুর নামে বিচার দেয়। যেহেতু সামনে সমাপণী পরীক্ষা ছিলো তাই স্যার আমাকে অফিসে ডেকে নিয়ে ভালো ভাবে প্রেম ভালোবাসা নিয়ে কিছু জ্ঞান দেয়। তবে আমাকে মারে নাই এই প্রেম নিয়ে কারণ এগুলো নিয়ে ঝামেলা করলে অনুর বাবার কানে খবর চলে যাবে তাহলে স্কুলের বদনাম হবে। তাই হয়তো আমাকে না মেরে বুঝিয়ে এর পর ছেড়ে দেয়। তবে বিষয়টা আমাদের ক্লাশের সবার মধ্যে জানা জানি হয়। এর পর থেকে অনুর পাশে আর বসতাম না কথাও কম বলতাম তবে আমাদের যোগাযোগ ছিলো। কিছু দিন পর আমাদের সমাপণী পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা দেই রেজাল্ট ও ভালোই হয় দু জনেরই।

ভাগ্যক্রমে দুই জন এক সাথেই ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই। তখনও আমাদের সম্পর্ক ভালোই ছিলো কিন্ত যখন নতুন স্কুলে ক্লাশে আমাদের বিষয়টা জানা জানি হয়, তখন অনু আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। আমিও কথা বলতাম না। তবে ক্লাশে কেউ না থাকলে তাকিয়ে থাকতাম। এভাবেই আমারা এক সাথে মধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করি। তবে যখন কলেজে ভর্তি হই তখন আর এক সাথে থাকতে পারি নাই। কারণ অনুরাধাকে তার বাবা ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দেয়। তবে ইন্ডিয়া যাওয়ার আগে আমার সাথে অনুর ১০ মিনিট ফোনে কথা হয়। কার কাছ থেকে নাম্বার পেয়েছিলো জানি না। তবে আমি অনুর কথা শুনেই চিনতে পেরেছিলাম অনেক ভালোবাসতাম তো তাই আত্মার টান ছিলো। আমি অনেক খুশি ছিলাম অনুর কল পেয়ে এটাই লাস্ট কথা ছিলো।

তবে কিছু দিন আগে অনুর ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাই ফেসবুকে। তবে আমি আর ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করি নাই। কারণ আমি এখন রিলেশনশীপ এ আছি। আমি চাইনা আমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে অনুকে নিয়ে বাড়তি কোনো ঝামেলা হোক কারণ সে অনুর ব্যাপারে ভালো ভাবেই জানে। তবে যতদিন বেঁচে থাকবো প্রথম প্রেম অনুর সাথে সেই সুন্দর মুহুর্তগুলো আমি কখনোই ভুলতে পারবো না। আমার যেমন প্রথম প্রেম ছিলো অনুরাধা, তেমনি আমিও তার প্রথম প্রেম ছিলাম।

source

কিছু কথা

ভালোবাসা যে কোনো নিয়ম মেনে হয় না তার প্রমাণ আমি নিজে। কারণ আমার প্রথম প্রেম আমার নিজের ধর্মের ছিলো না। আর আমার বয়স তেমন বেশি ছিলো না। ৫ম শ্রেণীতে পড়া ছেলে-মেয়ের বয়সই আর কত। এখনে বয়সও কোনো ব্যাপার না। তবে ভালোবাসার বিষয়টা ভালোভাবে বুঝতাম অনু একদিন স্কুলে না আসলে আমার সেদিন অনেক কষ্টে কাটতো। ভালোবাসা বিষয়টা পুরোটাই মনের উপর নির্ভর করে। সত্যি বলতে যে যাই বলুক প্রথম প্রেম ভুলা কিছুই না! এটা ভুল। আমি মনে করি আসলেই প্রথম প্রেমের অনুভূতি ভুলা কখনোই সম্ভব নয় যদি রিয়েল লাভ হয়ে থাকে। আমি এখন আমার বর্তমান গার্লফ্রেন্ড নিয়ে অনেক ভালো আছি। তবে অনুরাধা যদি বাংলাদেশে আসে তবে হয়তো আমার গার্লফ্রেন্ড সহ তার সাথে দেখা করবো।

এই ছিলো আমার প্রথম প্রেমের অনুভূতি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগছে। ধন্যবাদ মূল্যবান সময় নষ্ট করে আমার পোস্ট পড়ার জন্য।

"আমি সাইদুল ইসলাম কাকন। আমি বর্তমানে অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। আমি ভ্রমন প্রিয় মানুষ। ছবি আঁকতে অনেক ভালোবাসি। এছাড়াও রান্না করতে পছন্দ করি। আমি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তবু্ও চেষ্টা করি গরীবদের সাহায্য করতে। "