আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা - ১৯ || বৃষ্টির দিনের মজার অনুভূতি।

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সাবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।আমার বাংলা ব্লগ কতৃক আয়োজিত এই বারের কনটেস্ট শেয়ার করো বৃষ্টি নিয়ে তোমার মজার কোনো অনুভূতি। এই প্রতিযোগিতার বিষয়টি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। খুবই ইন্টারেস্টিং একটি কনটেস্ট। এজন্য প্রথমেই ধন্যবাদ দিতে চাই, আমাদের সকলের প্রিয় এডমিন @shuvo35 ভাইকে এতো সুন্দর একটি কনটেস্টের ঘোষণা দেওয়ার জন্য। আমি আজকে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটা স্পেশাল ছোট গল্প শেয়ার করবো যা বৃষ্টির সাথে রিলেটেড আশা করি সবার ভালো লাগবে।

শৈশবে বৃষ্টির দিনগুলি

গ্রীষ্মের পরবর্তী সময়টা হচ্ছে বর্ষাকাল। আর বৃষ্টির দিন বলতে আমরা মূলত বর্ষাকালকে বুঝি। এ সময় আকাশ সব সময় কালো মেঘে ঢেঁকে থাকে। কখন বৃষ্টি শুরু হবে বলা মুশকিল মুহুর্তের মধ্যে শুরু হয় বৃষ্টি, আবার থেমে যায়। বাংলা মাস আষাঢ় ও শ্রাবণ নিয়েই গঠিত এই বর্ষাকাল।

যখন ছোট ছিলাম এই সময়টা অনেক ভালো লাগতো। কারণ এই সময়ে স্কুলে যাওয়ার সময় বৃষ্টি নামলে স্কুলে যেতে হতো না। আর এ জন্য একটা করে দরখাস্ত লিখে নিয়ে যেতাম স্কুলে, বৃষ্টির কারণে স্কুলে আসতে পারি নাই। হাহাহা অনেক মজার সময় ছিলো। বৃষ্টির সময় নানা প্রকার খেলার আয়োজন করা হতো, আপনারা হয়তো অনেকেই চুর পুলিশ খেলেছেন এটা আমার বৃষ্টির দিনের প্রিয় খেলা ছিলো। এছাড়াও ষোল গুটি, পাশা, লুডু এগুলো খেলা হতো।

pixabay

আর বিশেষ করে বৃষ্টির সময় আমাদের এলাকার বিলে পানিতে ভরে যেতো। আমরা কলা গাছের ভেলা তৈরি করতাম, সেই ভেলা দিয়ে ঘুরতে যেতাম বিকেল বেলা। আর একটি বিশেষ আকর্ষন ছিলো সেটা হচ্ছে ফুটবল খেলা। ভাই ব্রাদার্স মিলে ফুটবল খেলতাম। বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলার মজাই আলাদা। কারণ ফুটবল মানেই উত্তেজনার খেলা শরীর গরম হয়ে যায়। অন্য দিকে বৃষ্টির ফোটা সেই গরম ঠাণ্ডা করে দেয়। তবে এই বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলার জন্য আম্মুর কাছে অনেক মার খেতাম। স্মৃতিগুলো এখনো খুব মনে পড়ে যায় বর্ষাকাল আসলেই। তবে চাইলেই তো আর সেই দূরন্ত শৈশবে ফিরে যেতে পারি না। এগুলো ছিলো আমার গ্রামে কাটানো কিছু মুহুর্ত। তো চলেন এখন মূল ঘটনায় ফেরা যাক।

বৃষ্টি নিয়ে আমার মজার অনুভূতি

আমি আমাদের এলাকা থেকেই ইন্টারমিডিয়েট শেষ করি। এর পর ভার্সিটি লাইফ শুরু হয় ঢাকাতে। ভার্সিটি লাইফে হাত খরচের জন্য একটা বেস্ট ওয়ে হচ্ছে টিউশনি করা। তবে প্রথম দিকে তেমন কোনো স্টুডেন্টই খুঁজে পাচ্ছিলাম না পড়ানোর জন্য। এর পর এক বড় ভাইয়ের সহায়তায় একটা টিউশনি পাই, ছেলে ক্লাশ ওয়ান এ পড়ে। নাম দেব স্টুডেন্ট খুব একটা ভালো না। যেহেতু আর কোনো অপশন নেই তাই রাজি হয়ে যাই।

আমার ঘটনাটি আমার এই টিউশনিকে ঘিরেই। যাইহোক, তখন ছিলো বর্ষাকাল। টিউশনিতে যাবো আকাশ একদমই পরিষ্কার ছিলো তাই বাসা থেকে ছাতা ছাড়াই বের হই। আমার বাসা থেকে স্টুডেন্ট এর বাসার দূরত্ব প্রায় ৩০ মিনিট। তাই হেঁটেই যাওয়া হতো। বাসার কাছাকাছি যাওয়ার পর পরই ঘটে বিপত্তিকর ঘটনা শুরু হয়ে বাতাস আর বৃষ্টি এক সাথেই। কোনো মতে কাছের একটা বাস্ট স্টপের ছাউনিতে দাঁড়াই। আমি দাঁড়াতেই একটা মেয়ে নামে বাস থেকে আর তার ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে আসে যাত্রি ছাউনিতে। সত্যি বলতে মেয়েটির দিকে তাকিয়েই কেমন যানি মনে হলো আমার পরিচিত। যাইহোক, সেখানে বাসার জায়গা ছিলো না বৃষ্টির জন্য বেশ ভালো মানুষই সেখানে ভিড় জমিয়েছে। মেয়েটি এদিক ওদিক তাকিয়ে রিকশা খুঁজতেছিলো। তবে বাতাস আর বৃষ্টির কারণে রাস্তায় কোনো রিকশা ছিলো না।

Pixabay
আমি খুব একটা মেয়েদের সাথে কথা বলি না। আন ইজি লাগে, তার পর তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো খুব। নিজের মনে সাহজ জুগিয়ে তাকে বলেই ফেললাম, আপু কোথায় যাবেন? সে খুব সুন্দর ভাবেই উত্তর দিলো এই তো সামনেই কাঁঠেরপুল, কলেজ পাড়া। আমি যাকে প্রাইভেট পড়াই তার বাসাও কাঁঠেরপুল কলেজ পাড়া, তাই আমি নিজে থেকেই বল্লাম আমিও সেখানেই যাবো। সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো আপনার বাসাও কি কলেজপাড়া? আমি বললাম না স্টুডেন্ট পড়াই সেখানে। এটা শুনে সে বললো খুব ভালো তো স্টুডেন্ট কোন ক্লাশে পড়ে? ক্লাশ ওয়ান বললে কেমন শোনা যায়! তাই একটু ভাব নেওয়ার জন্য বললাম, ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে। এর পর মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কিসে পড়ে, সে উত্তরে বললো ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। এর মধ্যে একটা রিকশা চলে আসে। মেয়েটি রিকশা করে চলে যায়।

Pixabay
আমি প্রায় আরো ২০ মিনিট সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার পর বৃষ্টি থামে। এর পর যথা নিয়মে স্টুডেন্ট এর বাসায় যাই। তখনই ঘটে সেই মজার ঘটনা, দরজায় নক করার পর সেই মেয়েটি দরজা খুলে দেয়। আমি তো অবাক হয়ে যাই। মেয়েটির চোখের দিকে তাকাতেই সে চলে গেলো মুচকি হেসে। তবে আমি অনেকটা লজ্জ্বাবোধ করি। একটু আগে তাকেই মিথ্যা বলছি ইন্টারের স্টুডেন্ট পড়াই। হাহাহা, যাইহোক ভেতরে যাই এবং সোজা স্টুডেন্ট এর রোমে ঢুকি। এবং আমার স্টুডেন্ট দেবকে জিজ্ঞেস করি এই মেয়ে তোমার কি হয়। সে বলে তার দিদি। হোস্টেল থেকে আজকেই বাসায় আসছে। এবং কাকতালীয় ভাবে সেই মেয়েটির নাম বৃষ্টি পরে জানতে পারি দেবের কাছ থেকে। সে দিন সত্যি অনেক লজ্জ্বার মুখে পড়ছিলাম মিথ্যা বলার কারণে। আর প্রথম দেখাতে পরিচিত মনে হওয়ার কারণ হচ্ছে দেবের আম্মু, দেব ও তার দিদি বৃষ্টির ফেইস দেখতে অনেকটাই মিল ছিলো। এর পর প্রায় প্রায় দেখা হতো তবে আমি কোনো কথা বলতাম না। তবে এই ঘটনা আমার সারা জীবণ মনে থাকবে।

যাইহোক, এই এই ছিলো আমার বৃষ্টি নিয়ে মজার অনুভূতি। আমি যখন এই কনটেস্টটি দেখি তখনই চিন্তা করি এই অনুভূতিটাই আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। এই ঘটনাটি অনেকটা নাটক সিনেমার মতো লাগে তবে এটা আমার বাস্তব জীবনের ঘটনা। এই ঘটনা আমি আমার এক বেস্ট ফ্রেন্ডের কাছ শেয়ার করছিলাম। আজ আপনাদের সবার সাথে শেয়ার করলাম। আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে।

যাইহোক সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আজকের মতো এখনেই শেষ করছি।

"আমি সাইদুল ইসলাম কাকন। আমি বর্তমানে অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। আমি ভ্রমন প্রিয় মানুষ। ছবি আঁকতে অনেক ভালোবাসি। এছাড়াও রান্না করতে পছন্দ করি। আমি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তবু্ও চেষ্টা করি গরীবদের সাহায্য করতে। "