জীবনের গল্প|| একটি ভুল সিদ্ধান্ত ||১০% লাজুক খ্যাঁকের জন্য

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।
আজকে আমি আমার বন্ধুকে নিয়ে একটা গল্প শেয়ার করবো। আশা করি সবার ভালো লাগবে। তো চলেন শুরু করা যাক,

Souce
আমার বন্ধুর নাম জনি। জনি আমার বাল্যবন্ধু না।তার সাথে আমার বন্ধুত্ব হয় অনার্স প্রথম বর্ষে। স্কুল জীবনে অনেক বন্ধু থাকলেও ভার্সিটি লাইফে জনি আমার একমাত্র বন্ধু যার কাছে আমি আমার মনের সব কথা শেয়ার করি। সেই ভার্সিটি লাইফের প্রথম দিন অরিয়েন্টেশন ক্লাশে সে আমার সাথে বসে ছিলো। সেইদিন মোবাইল নাম্বার আদান-প্রদান এবং আমাদের বন্ধুত্ব।

_{মাঝখানের জন আমার বন্ধু জনি}
আস্তে আস্তে জনি আমার কাছে তার জীবনের কিছু কথা শেয়ার করে, যেমনঃ সে ঢাকা তার মামার বাসায় থেকে পড়াশোনা করে। তার মামার একটি পেইন্টিং এর দোকান আছে। সেখানে সে বসে হালকা পাতলা গ্রাফিকস এর কাজ করে। তার মামা তার হাত খরচের টাকা দেয়। এই আর কি। জনিরা এক ভাই এক বোন। আমি যখন জানতে চাই তার বাবা কি করেন! সে আমাকে জানায় তার বাবা মারা গেছে। আসলে তার বাবা মারা যাওয়ার কথা শুনে খুব খারাপ লেগেছিলো। তো জনির সাথে কিছুদিনের মধ্যেই অনেক ভালো সম্পর্ক হয় আমার। আমিও তখন গ্রাফিকস এর টুকটাক কাজ করতাম। সব কিছু মিলিয়ে অনেক মিল ছিলো আমাদের দুই জনের।

অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে এসে জনির একটা প্রাইভেট কম্পানিতে চাকরি হয়। চাকরিটা তার মামার রেফারেন্সেই হয়। ভালো চাকরি গ্রাফিকস এর কাজ বেতন ২৫+। তো তার চাকরির কথা শুনে আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম। জনি আমাকে টুকটাক অনেক হেল্প করেছে। আমি গ্রাফিক্স এর অনেক কাজে তার হেল্প নিয়েছি।

Source

অনার্স তৃতীয় বর্ষের প্রথম দিকে জনির চাকরির প্রমোশন হয়। এই উপলক্ষে আমাকে তার মামার বাসায় দাওয়াত দেয়। তার মামার বাসা মতিঝিল,ফকিরাপুল। তো আমি তার বাসায় যাই যদিও বাসায় জনি ছাড়া আর কেউ ছিলো না। বাইরে থেকে বিরিয়ানির নিয়ে রেডি করে রাখছিলো আমার জন্য। যাইহোক, খাওয়া দাওয়ার পর জনি বলে আজ তোকে কিছু কথা বলবো যা আগে কারো সাথে শেয়ার করি নাই, জনি আমাকে জানায় তার বাবা বেঁচে আছে! কিন্তু বেঁচে থেকেও আবার নেই। তার বাবার সাথে তার মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। আর একটা কথা বলে যেইটা শুনে একটু অবাক হই। সে আমাকে জানায় সে একজনের সাথে রিলেশনে আছে। আমি শুনে পুরো অবাক! আমি আমার সব কথা জনির সাথে শেয়ার করছি সে আমাকে তার রিলেশনের কথা জানায় নি। যাইহোক, কথাটা বলেই আমাকে অনেক সরি বলে। জনি তার কাকাতো বোনের সাথে রিলেশনে জড়িয়েছে।

Source
তার কথা শুনে খুব অবাক হই, যে ছেলে মেয়েদের সাথে ঠিক মতো কথাই বলতে পারেনা। সে আবার তার কাকারো বোনের সাথে প্রেম করে ফেললো। প্রেম করছে এটা বড় কথা না। এই সম্পর্ক তার মা কোনোদিনই মেনে নেবে না। তেমনি জনির মামাও কিছুতেই এই সম্পর্ক মেনে নেবে না। জনি আমাকে বলে এখন কি করা যায়। আমি খুব সুন্দর ভাবে বলে দিলাম, তোর মাকে তোর বাবা ছেড়ে দিছে তোর মামা তোকে বড় করছে, এখন যদি তুই এই ভুল করিস তাহলে তো মা এবং মামা দুই জনেই কষ্ট পাবে। প্রেম কত দূর? জনি আমাকে জানায় অনেক দিন অর পর ফেসবুকে কথা হয়। আমি জনিকে বুঝিয়ে বল্লাম তাহলে সেই মেয়েকে বুঝিয়ে বলে ঝামেলা থেকে বের হয়ে আয়। তো সেই দিন জনি নিজেও বলেছিলো ঠিকই বলছিস, আসলেই এটা মেনে নেওয়ার মতো না।তাহলে মায়া না বাড়িয়ে এখনি সব শেষ করে দেই।

তারপর রিগুলার আমাদের কথা হতো বাইরে গেলে দেখাও হতো। আমি আর সেই মেয়ের কথা জানতে চাই নাই। আজকে জনি আমাকে ফোন করে বলতেছে বন্ধু আমি তো অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলছি! আমি বল্লাম কি ভুল করলি আবার? সে আমাকে বলে সে নাকি বিয়ে করে ফেলছে। আমি পুরো অবাক! বিয়ে করে ফেলছে তার সেই কাকাতো বোনকে। আমি কিছু দিন আগে গ্রামে ছিলাম তাই ভালোই কিছুদিন জনির সাথে তেমন কথা হয় নাই। আমি বল্লাম বিয়ে করলি আমাকে জানাবি না? পরে বলে তারা নাকি পালিয়ে বিয়ে করে ফেলছে। বিয়ে করছে এক মাস হয়ে গেছে। এখন জানাজানি হইছে, জনির মামা জনিকে বাসা থেকে বের করে দিছে। যে চাকরিতে রেফার করেছিলো সেই চাকরিও চলে গেছে। বাসায় জনির মা সব সময় কান্নাকাটি করে। এই সব বলতে বলতেই জনি কান্না করে দিলো। সে এখন অনেক নিরুপায় হয়ে পড়ছে। আসলে আমি তার কথা শুনে নিজেও কিছুটা ভেঙে পড়েছি।

Source
আমি জনির কাছে ৩৫ হাজার টাকা পাই। এই টাকা আমার কাছ থেকে ধার নিয়ে সে ইভেলীতে বাইক অর্ড়ার করছিলো কিন্তু এখন পর্যন্ত সে বাইক পায় নাই। আর কখনো পাবেও না। আমকে বলছিলো এই মাসে আমাকে টাকা শোধ করে দেবে কিন্তু এই অবস্থায় তার চাকরি চলে গেছে। আমি নিজেও অনেক চিন্তিত সব কথা শুনে এই টাকা ধার দেওয়ার কথা আমার পরিবারের কেউ জানে না। টাকা ধার আগেও দিছি আমাকে সব সময় টাকা ফেরত দিয়ে দিতো সময় মতো। এমনি কি আমি নিজেও জনির কাছ থেকে ধার পেয়েছি।

খুব খারাপ লাগতেছিলো তাই ভাবলাম গল্পটা আমাদের সাথে শেয়ার করি। আমার টাকা নিয়ে যদিও চিন্তা হচ্ছে কষ্ট করে ইনকাম করা টাকা। তার চেয়েও বেশি কষ্ট হচ্ছে জনির বিয়ের কথা শুনে। জনির মাথার উপর ছায়া হয়ে ছিলো তার মামা এখন তার মাথায় সেই ছায়া নেই। ঐ দিকে তার মা সারা দিন কান্নাকাটি করে, তার ছেলে এমন একটা কাজ করবে তারা চিন্তাও করে নাই।

[নোটঃ] আসলে কোনো কাজ করার আগে সেই কাজ সম্পর্কে একশো বার ভেবে কাজ করা উচিত। আমার বন্ধু পালিয়ে বিয়ে করে ১০০℅ ভুল কাজ করেছে। এই বিয়ের মাধ্যমে তার এক দিকে তার ক্যারিয়ার ধ্বংস হলো।অন্য দিকে পরিবার কষ্ট পেলো। কিছুদিন পর দেখা যাবে নতুন বৌয়ের সাথে সারা দিন ঝগড়া হচ্ছে। কারণ তার বৌয়ের সব খরচ এখন জনিকেই চালাতে হবে। আমাকে হয়তো আমার পাওনা টাকা দিয়ে দিবে কোনো এক সময় কিন্তু জনির এই এলোমেলো জীবণ কেমনে ঠিক করবে এটাই দেখার বিষয়। তাই বলি, ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না।

সবাই ভালো থাকবেন, আর একটা কথা সবার মনে রাখ উচিত হুটহাট করে নেওয়া সিদ্ধান্ত কখনোই সঠিক হয় না তাতে ভুল থাকে।

"আমি সাইদুল ইসলাম কাকন। আমি বর্তমানে অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। আমি ভ্রমন প্রিয় মানুষ। ছবি আঁকতে অনেক ভালোবাসি। এছাড়াও রান্না করতে পছন্দ করি। আমি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তবু্ও চেষ্টা করি গরীবদের সাহায্য করতে। "