অভিশাপ|ষষ্ঠ পর্ব
গতপর্বে
সবাই আবার শোকে কাতর হয়ে পড়ে। তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তারা আর গ্রামে থাকবেন না।এই গ্রামই তাদের জন্য অভিশাপ।রবির বাবা আগে থেকেই শহরে ছিলেন,এবার তিনি একটি বাড়ি ভাড়া করে সবাইকে নিয়ে শহরে চলে আসলেন। রবির জন্ম বেড়ে ওঠা শহরেও।যদিও তারা আগে অন্য শহরে ছিল,কিন্তু একটি ঘটনার পর তারা আবার শহর পাল্টাতে বাধ্য হয়।
বর্তমান পর্বে
প্রথমেই শুনে নেই কেন রবিদের শহর পাল্টাতে হল,
রবির দাদু মৃত্যুর পর তারা রবির বাবা সম্পূর্ণ পরিবার কে শহরে নিয়ে আসেন। সেখানে তিনি একটি চাকুরি করতেন।জমিদারির সম্পদের প্রতি তার কোন মোহ ছিল না।ফলে দিন ভালই কাটতে লাগল।
কিন্তু বিপত্তি বাধল কয়েকবছর পর। রবিদের বাড়িতে কিছু সংস্কার কাজ চলছিল।একদিন হঠাৎ একটি লোক হাজির হয়। লোকটির পড়নের পোশাক ছেড়া খোড়া,দাড়ি গোফের জঙ্গল মুখে।রবির বাবাকে দেখে একটি হাসি দিয়ে বলল,"বাবু মনে আছে সেই পুরোনো কথা?" এই বলে সে সাথে সাথে মিলিয়ে যায়।
এই মিলিয়ে যাওয়া দেখেই তার মাথা খারাপ হয়ে যায়।তিনি শুধু ভাবতে থাকেন একটি জ্বলজ্যান্ত মানুষ অদৃশ্য হয়ে গেল? তা কিভাবে সম্ভব। এরপর থেকে তিনি সব জিনিস কে ভারি জিনিস দিয়ে চাপা দিয়ে রাখতে লাগলেন পাছে আবার অদৃশ্য হয়ে যায়।এভাবে দিন দিন তার সমস্যা বাড়তে লাগল।অনেক ডাক্তার বৈদ্য দেখানো হল,কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না।
একদিন রবির দাদুর মত তিনিও হারিয়ে গেলেন।অনেক খোজাখুজির পরেও তাকে আর খুজে পাওয়া গেল না।তারপর আগের মতই ঠিক তিনদিন পর তাকে খুজে পাওয়া গেল শহরের পাশের এক মরা নদীতে।এরপর রবিদের বংশের একমাত্র প্রদীপ হিসেবে টিকে রইল রবি। রবি ছাড়া তাদের পরিবার পুরুষশূণ্য হয়ে গেল।
রবিকে বাচানোর জন্য এই শহরের সব কিছু বেচে দিয়ে অন্য শহরে চলে যায় রবির পরিবার।আর তখনই রবির সাথে দেখা হয় আমার মানে রুদ্রর।আর কিভাবে আমাদের বন্ধুত্ব হয় তা তো আগেই বলেছি।
এই এত ইতিহাস বলার পরেও আমি বুঝতে পারলাম না রবির বিপদটা আসলে কি? কেন সে এত ভয় পেয়েছে।তাই তাকে জিজ্ঞেস করলাম,"ভাই এখন আসল কথা বল তো, কি হয়েছে তোর? কেন তুই এত ভয় পাচ্ছিস?
তখন রবি আবার বলা শুরু করল,
চার-পাচদিন আগে আমি অফিস থেকে তারাতারি ফিরেছি, সন্ধ্যার দিকে। বাসায় ঢোকার আগে দেখি একজন ভিখারি মত লোক দাঁড়িয়ে আছে।আমি কিছুটা বিরক্ত হলাম।এই ভর সন্ধ্যায় আবার কে ভিক্ষা করতে আসে? এদের কি সময়ের জ্ঞান নেই? জানে না যে বেলা শেষে ভিক্ষা দিলে অমঙ্গল হয়? যাই হোক পকেটে খুচরো আছে কিনা দেখছিলাম।সেই সময় ভিখারি মত লোকটি এগিয়ে আসল।
বলল,"বাবু মনে আছে তো সেই চিতার ঘটনা?"
আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি।ভেবেছিলাম কোন পাগল হবে হয়ত।তাই তার কথায় গা করিনি। কিন্তু পরের দিন অফিস থেকে ফেরার পথে আবার সেই ভিখারি আর সেই একই কথা।এবার কিন্তু কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলাম।তখন মা কে বললাম সব ঘটনা।মা তো শুনেই কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন।আমি তো অবাক এতে কান্নাকাটির কি আছে?
মাকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কাদছ কেন? উনি কিছুতেই বলবেন না।তারপর অনেক জোড়াজুড়ির পর উনি এই ইতিহাস আমাকে জানালেন।এটা শোনার পর থেকেই আমার এই অবস্থা।এখন সব সময় ভয়ে থাকি।নাওয়া খাওয়া সন উঠে গেছে।এখন কি উপায় করি বল?
আমি বললাম উপায় একটা আছে তবে........
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।