ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতি||এবিবি কনটেস্ট-২৪
"বন্ধু" ২টা অক্ষরের একটি শব্দ।কিন্তু এই ১টা শব্দের পিছে লুকিয়ে আছে অসম্ভব ক্ষমতা,অসম্ভব দায়িত্ব বোধ।কথায় আছে একজন বন্ধু একটি ভাল বইয়ের সমান,কিন্তু একজন ভাল বন্ধু পুরো একটি লাইব্রেরীর সমান।এদিক থেকে আমি লাকি,আমার চারটে লাইব্রেরী আছে।
যদিও কনটেস্ট ফেলে আসা বন্ধুত্বের স্মৃতি নিয়ে।কিন্তু এখানে একটু সমস্যা, আমার ফেলে আসা কোন বন্ধু নেই।সময়ের যাত্রা পথে যাদের পাশে পেয়েছি,কাউকে ফেলে আসি নি।সবাই এখনো পাশাপাশি চলছি।ফেলে আসা বন্ধুত্বের গল্প তো শোনাতে পারব না।তবে বন্ধুত্বের ফেলে আসা অতীতের দিন গুলোর গল্প শোনাতে পারি।
গল্পের প্রধান চরিত্র ৫জন।আমি(বৃত্ত,)তানভীর,নাফিজ,শিমুল,নাহিদ।তানভীর এর সাথে আমার কিভাবে পরিচয় তা আপনারা জানেন।এখন বাকি দের ব্যাপারে একটু বলি।নাফিজ এর সাথে পরিচয় টা হয় অদ্ভুত ভাবে।যখন সিক্সে ভর্তি হলাম,নতুন স্কুল,নতুন ক্লাস,নতুন ছেলেপেলে।শুধু আমি আর তানভীর পরিচিত।বাকিরা সবাই নতুন।দুষ্টামি আর পড়াশোনা একটু পারতাম দেখে আস্তে আস্তে টিচার দেয় প্রিয় হতে শুরু করলাম আমি আর তানভীর।এই সুবাদে ক্লাসের সবাই মিল দিতে লাগল।
একদিন ক্লাস টিচার ঘোষনা করলেন নতুন ক্লাস ক্যাপ্টেন প্রয়োজন দুইজন।তানভীর বলল তুই দাড়া।সবাই তো এখন আমাদের কথা শোনে। তুই জিতে যাবি।আমিও বোকা ছিলাম রাজি হয়ে গেলাম।আমার সাথে আরো ৩জন দাড়ালো।কিন্তু ক্লাসের ১০৩জনের মাঝে ৭০ ভোট পেলাম আমি আর বাকি ৩০ভোট পেল রৌদ্র নামের একটি ছেলে।বাকি ২জন নিজের ভোট পেল।আমি ফার্স্ট ক্যাপ্টেন, রৌদ্র দ্বিতীয় ক্যাপ্টেন।এভাবে চলতে চলতেই রৌদ্রের সাথে মিল বাড়তে থাকল।ওর মনমানষিকতা আমাদের মতই ছিল।তাই খুব তাড়াতাড়ি আমরা ২জন থেকে ৩জন হয়ে গেলাম।ও বলে দিতে হবে না হয়ত এই রৌদ্রই নাফিজ।আমাদের ৫জনের দলের লিডার এখনও।ওর কথাতে চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারি।আর এই ক্লাসেই পরিচয় শিমুল আর নাহিদ এর সাথে।
আমাদের বন্ধুত্বের শুরু ২০১১ সালে।এখনো চলছে।এর মাঝে বিপদের আগুনে পুড়ে খাটি হয়েছে বন্ধুত্ব।একসাথে শত উত্থান পতন দেখেছি,কত বিপদ অবহেলায় পার করেছি শুধু এই বন্ধুদের জোড়ে।হাজার হাজার সুখের স্মৃতি রয়েছে।এমনো হয়েছে,একমাথা ডিপ্রেশন নিয়ে ওদের মাঝে বসেছি,দুই মিনিট পরে ভুলে গেছি আমি ডিপ্রেশনে ছিলাম।সমস্যার কথা কেউ কাউকে বলতে হয়নি,মুখ দেখেই বুঝেছি।
প্রতিটা পুজায় একসাথে প্রতিমা দেখতে বেড়িয়েছি।প্রতিটি ঈদে নামাজের পর একসাথে সেমাই খেয়েছি।যে যেখানেই থাকি বিকালের মাঝে একজায়গায় হয়েছি।হঠাৎ ট্যুরে বেডিয়ে গেছি।একজনের কাছে টাকা নেই? তাতে কি? বাকি ৪জনের কাছে তো আছে।বন্ধুর প্রয়োজনে কোন কাজ করতে দ্বিতীয়বার ভাবি নি।
একবারের একটা স্মৃতি শেয়ার করি।
মাধ্যমিক শেষ।তানভীরের নতুন প্রেম হয়েছে।একদিন ঝিলপাড়ে বসে আড্ডা দিচ্ছি।হঠাৎ ৭-৮জন ছেলে এসে ঘিরে ধরল।তাদের প্রথম কথা"তানভীর কে?"।আমরা বুঝতে পারলাম ঘটনা কি।নাফিজ বলল আমি তানভীর,কি হয়েছে বলো?কিন্তু ওরা বলল, না তুই তানভীর না।এরপর শিমুল বলল আমি তানভীর।তখন ওকে বলল আচ্ছা তোর ফোন বের কর।তারপর ওর ফোন নিয়ে,তানভির এর নাম্বারে কল দিল অন্য ফোন থেকে।তখন তানভীর এর ফোন বেজে উঠল,তখন তারা আসল তানভীর কে খুজে পায় এবং মারতে শুরু করে।আমরা ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে পড়ি।এরপর সেন্স আসার সাথে সাথেই আমি আর নাফিজ ওদের অ্যাটাক করি এবং শিমুল আর নাহিদ কে বলি যেকোন মূল্যে তানভীর কে নিয়ে দৌড় দিতে।আর যেন ওরা পিছে না তাকায়।একপর্যায়ে ওরা পালিয়ে যেতে পারে আর এদিকে আমি আর নাফিজ ওদের আটকাতে থাকি এবং একপর্যায়ে আমার আর নাফিজের হাতে চাকু দ্বারা আঘাত করে।এবং তারা চলে যায়।সেদিন মার খেয়েছি প্রচুর।কিন্তু ব্যাথা কেন যানি তখন লাগে নি,হয়ত বন্ধুকে বাচানোর চিন্তা মাথায় ছিল।।
এরপর একবার আমার ফর্মফিলাপের জন্য টাকা দরকার,কোথাও টাকা ম্যানেজ হচ্ছিল না।অথচ লাস্ট ডেট আর একদিন পরেই।নাফিজ কে বললাম ভাই কিভাবে কি করব কিছুই তো মাথায় ঢুকতেছে না।তখন নাফিজ আমাকে বকা শুরু করল।বলল তোর টাকা দরকার তুই আমাকে বলিস নি কেন? এরপর আর টাকা নিয়ে ভাবতে হয়নি।হয়ত সেবার ও না থাকলে আমার ফর্মফিলাপ টাই হতো না।
আমাদের মাঝে নাফিজ সর্বপ্রথম চাকুরি পায়। সামরিক বিভাগে চাকুরি।কিন্তু একজন সৈনিক এর প্রধান যে গুণ টা থাকা প্রয়োজন ওর সেটাই ছিল না।ও কারো আদেশ মানতে পারত না অর্থাৎ স্বাধীনচেতা ছিল।ও তো কিছুতেই চাকুরি তে যাবে না,পরে অনেক বুঝিয়ে পাঠালাম। এরপর ব্যাসিক ট্রেনিং শেষ করে যখন ডিউটি জয়েন করল তখন ওর কথা ভাই এখানে থাকলে আমি মারা যাব।রাতের পর রাত ওকে শান্তনা দিয়েছি।ভাই একটু কষ্ট কর,এইত কিছুদিন পর ভাল সময় আসবে, তখন তুই অর্ডার দিবি।আজ আসলেই ভাই অফিসার।
আমরা কেউ কখনো কাউকে বলি নাই,ভাই তোকে ভালবাসি।কিন্তু তাও জানি যে আরেকজন আমার জন্য জীবন দেওয়ার আগে ২বার ভেবে দেখবে না।
এখন আর আমাদের ঠেকতে হয়না।কারন আমি জানি আমার পাশে আমার বন্ধুরা আছে।ঝড়ের মুখে দাড়াতেও কেই ভয় পাইনা কারন জানি পেছনে থেকে টেনে ধরে রাখার মত ৪জন আছে।
এখন নাফিজ বড় সামরিক অফিসার,তানভীর ভবিষ্যত ডাক্তার,নাহিদ শিমুল ইঞ্জিনিয়ার।একটু হয়ত যোগাযোগ কমে গেছে।কিন্তু আবার সবাই একজায়গায় হলে মনে হয়, আরে এইত গতকাল বিকালেই তো এই নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম।কারো মাঝে একটু দুরত্ব আসে নি,কেউ একফোটা বদলায় নি।
ভগবানের কাছে বারবার প্রার্থনা করি আমাদের এই বন্ধুত্বে যেন কারো নজর না লাগে। সারাজীবন যে এভাবেই পার করে দিতে পারি আমরা।আমি জানিনা কতটা আমি প্রকাশ করতে পেরেছি।কনটেস্টের উপযোগী ও হয়ত নয় এ লেখা।কিন্তু আমার জীবনের কিছু বিশেষ মানুষের কথা আপনাদের জানাতে পারলাম।এটাতেই আমি খুশি।দোয়া করবেন আমার আর আমার বন্ধুদের জন্য।
আপনার বন্ধুরা আপনার কাছে এখনো আছে জেনে আমার তো ভীষণ ভালো লাগলো। সত্যি বলতে বন্ধু যখন হারিয়ে যায় তখন অনেক কষ্ট লাগে। কিন্তু যখন বন্ধু পাশে থাকে তখন তারা ডাল হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকে। একে অপরের বিপদে এগিয়ে যায় । আপনাদের ৫ বন্ধুর বন্ধুত্ব যেন সারা বছর এরকম থাকে আমি সেই দোয়া করি।
অনেক ধন্যবাদ ভাই।সুন্দর মন্তব্য করেছেন।
আপনার লেখা পুরো গল্পটা বেশ মনোযোগ সহকারে পড়লাম। একটু আলাদা করে লেখার চেষ্টা করেছেন আপনি। বিশেষ করে তানভীরের প্রেমের কাহিনী এবং আপনাদের সবার মার খাওয়া। বন্ধুত্বের খাতিরে আপনারা ছুরির আঘাত খেতেও দ্বিধাবোধ করেননি। টিকে থাকুক আপনাদের এই সুন্দর বন্ধুত্বের অটুট বন্ধন সারাজীবন।
অনেক ধন্যবাদ দাদা। ভগবান যেন আপনার প্রার্থনা গ্রহণ করে৷