আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

in আমার বাংলা ব্লগlast year
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগবাসী।আশা করি সবাই ভাল আছেন।আজ আমাদের জন্য একটি শোকের দিন।আজকের এই দিনে ভাষার জন্য প্রাণ দেয় বাংলামায়ের দামাল ছেলেরা।

20230221_232730.jpg
সোর্স

ব্লগের শুরুতেই শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সকল ভাষা শহীদ দের।ঈশ্বর যেন তাদের আত্মার শান্তি দেন এই কামনা করি।আজকের এই ব্লগ তাদের জন্য উৎসর্গ করলাম।

মাতৃভাষা বলতে বোঝায় একটি জাতির মানুষ ছোট থেকে যে ভাষা শিখে বড় হয়,যে ভাষায় ভালভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে,যে ভাষায় কথা বলে তৃপ্তি পায় সেই ভাষা কে।মাতৃভাষা শুধু মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যমই নয়,এটি একটি জাতির অস্তিত্বের অন্যতম ভিত্তি। আর এই ভিত্তিতে আঘাত আসলে তা মোকাবিলা না করলে জাতির অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাবে।

ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট

আমরা সবাই জানি ভাষা আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল ১৯৫২ সালে।কিন্তু ভাষা আন্দোলনের শুরুটা কিন্তু এখানে ছিল না।ভাষা আন্দোলনের শুরু হয় ১৯৪৮সালে।তার আগে আপনারা সবাই জানেন ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা ভারতীয় উপমহাদেশ ত্যাগ করার আগে, দ্বিজাতিতত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি আলাদা রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে যায়।

আমরা সবাই জানি বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ ছিল।পাকিস্তানের অংশ হলেও বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের অন্য অংশের দুরত্ব ছিল হাজার কিলোমিটারের ও বেশি।দুই দেশের সংস্কৃতি ও ভাষার মাঝে ছিল বিস্তর ফারাক।পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা একচেটিয়া ভাবে বাংলা হলেও পশ্চিম পাকিস্তানের কোন একচেটিয়া ভাষা ছিল না।সেখানে উর্দু,হিন্দি,বালুচ, পশতু সহ কয়েকটি ভাষা প্রচলিত ছিল।

পাকিস্তান স্বাধীন হবার প্রায় বছর খানেক পর অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বাংলাদেশে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র সভায় ঘোষণা দেন,"উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।"সভায় উপস্থিত ছাত্ররা সাথে সাথেই তার কথার তীব্র প্রতিবাদ করেন।

কিন্তু আলীজিন্নাহ তার বক্তব্য থেকে সরে আসলেন না।এর ফলে আস্তে আস্তে বাঙ্গালীদের মনে ক্ষোভ জমা হতে থাকে।কারন তৎকালীন পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখের ভাষা ছিল বাংলা।আর সেই বাংলাকে বাদ দিয়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা হচ্ছে উর্দুকে এটা বাংগালী কোন ভাবেই মানতে পারেনি।

তখন আস্তে আস্তে বাঙ্গালী নাগরিকরা বুঝতে ধর্মের নামে পাকিস্তান তাদের সংস্কৃতি ধ্বংসের পরিকল্পনা করছে।তাই আস্তে আস্তে সমগ্র বাংগালী জাতি একত্রিত হতে শুরু করে তাদের দাবি আদায়ের জন্য।সময়ের সাথে আন্দোলন আরো জোরদার হতে থাকে।এই আন্দোলন ১৯৫২ সালে আরো বেশি গতিশীল হয়।ছাত্ররা ২১ফেব্রুয়ারী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে।কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী এই আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে।

কিন্তু এতে আমাদের ছাত্র-সমাজ দমে যায়নি।তারা ১৪৪ধারা ভাঙ্গার পরিকল্পনা করে। দলে দলে মিছিল বের করে।আর পাকিস্তানী পুলিশ বাহিনী এই মিছিলে গুলি চালায়।শহীদ হন রফিক,জব্বার সালাম,বরকত।এতে আন্দোলন আরো গতিশীল হয়।সমগ্র বাঙ্গালী জাতি ভাষার দাবিতে একজোট হয়ে ওঠে।

আর সমগ্রবাঙ্গালী জাতির আন্দোলনে টিকতে না পেরে ১৯৫৪সালে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়।স্বার্থক হয় বাংলামাতার বীর সন্তানদের রক্তদান।

বর্তমান প্রেক্ষাপট

আমাদের এই কষ্টার্জিত বাংলাভাষা কিন্তু বর্তমানে মোটেই ভাল নেই।আধুনিকতার নামে বাংলাভাষার সাথে বিভিন্ন জগাখিচুড়ি শব্দের মিশ্রণে ভাষাকে বিকৃত করে ফেলেছে।যে উর্দু হরফে বাংলা লেখার প্রতিবাদে আমাদের ভাইয়েরা জীবন দিল সেই বাংলা এখন লেখা হচ্ছে ইংরেজী হরফে।

আমাদের কর্তব্য

যে ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে আমাদের দেশের সূর্যসন্তানরা প্রাণ দিয়েছে সেই ভাষা কে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। আমাদের এই ভাষাকে রক্ষা করতে হবে বিকৃতি থেকে।তবে এই যুগেও আমাদের rme দাদাকে ধন্যবাদ দিতেই হবে।তিনি আমাদের এই কমিউনিটির মাধ্যমে বাংলাভাষা কে পুরো বিশ্বের বুকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।তার এই মহৎকাজের জন্য তাকেও জানাই অনেক শ্রদ্ধা।এই বলে আজকের ব্লগ এখানেই শেষ করছি।

ভাষা শহীদদের প্রতি পুনরায় শ্রদ্ধা জানিয়ে আজকের পর্ব শেষ করছি।আশা করি পোস্টটি ভাল লাগবে।ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
SET @rme as your proxy
witness_vote.png

banner-NEW.png
break2.jpg
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
break2.jpg

Sort:  

আমি শুধু চিন্তা করছি এত সুন্দর করে গুছিয়ে লিখলেন কি করে। আমি হলে এর অর্ধেকও গুছিয়ে লিখতে পারতাম না। আপনার পুরো পোস্টটাই খুব মনোযোগ সহকারে পড়েছি। সত্যিই খুব ভালো লাগলো। আর আমাদের দাদার অবদান সত্যিই অনেক। বাংলা ভাষাকে রক্ষা করার জন্য দাদার এই প্রচেষ্টাকে অবশ্যই সন্মান জানাতে হয়।

 last year 

সব আপনাদের আশীর্বাদ,উৎসাহ,আর সদুপদেশ।ধন্যবাদ দাদা এমন উৎসাহমূলক মন্তব্যের জন্য।

 last year 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমরা তাদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি। যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে তাদের ঋণ কখনোই শোধ করতে পারব না অনেক ভালো লিখেছেন ।এই বিষয়ে অনেকবার পড়েছি। আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো।

 last year 

ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। আপনি ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট খুব গুছিয়ে এবং সহজভাবে উপস্থাপন করেছেন।১৯৫২ সালের এই দিনে সালাম রফিক জব্বার বরকত রা তাদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের প্রাণের বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে দিয়ে গিয়েছেন। আপনার সাথে আমি একমত একজন বাংলা ভাষাকে বিভিন্নভাবে বিকৃত করা হচ্ছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 last year 

ধন্যবাদ ভাইয়া গঠণমূলক মন্তব্য করার জন্য।

 last year 

ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট গুলো আপনি আমাদের মাঝে দারুণভাবে শেয়ার করলেন ভাইয়া। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়া এবং নিজের ভাষাকে মাতৃভাষা করার লক্ষ্যেই মূলত এই দিনটিতে মিছিল করা হয়েছিল। সেই লাখো শহীদদের প্রতি আমরা জানাই সালাম।

 last year 

ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 last year 

ভাষা শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তাঁদের অবদানের কথা ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে।তাঁদের অবদানের কথা আমরা গভীরভাবে স্মরন করি। আপনি খুব সুন্দরভাবে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন, খুব ভাল লাগলো ভাইয়া। শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

 last year 

আপনাকেও ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 58919.17
ETH 2647.00
USDT 1.00
SBD 2.43