বিদেশী ভূতের গল্প
দুনিয়ার বুকে আমার টাকা পয়সা বুদ্ধিসুদ্ধির অনেক অভাব থাকলেও বন্ধুর কোন অভাব নাই৷ খুব কম সময়ে বন্ধু বানানোর এক অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে আমার। যাই হোক যার কাছে থেকে ঘটনাটি শুনেছি সে আমার ক্লাস মেট।পুরো হাইস্কুল জীবন একসাথেই কেটেছে।আমার বন্ধুর নাম সুফিয়ান। আমরা যখন হাইস্কুল শেষ করে কলেজে ভর্তি হলাম তখন সুফিয়ান পরিবারের হাল ধরতে পাড়ি জমায় মধ্যপ্রাচ্যে।
গত মাসে সে সৌদি থেকে ফেরৎ এসেছে।এসেই আমাকে ফোন দিয়েছিল,কিন্তু পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারনে দেখা করা সম্ভব হয়নি। ৪তারিখ পরীক্ষা শেষ হবার পরেই ওর সাথে দেখা করলাম। অনেক ভাল লাগল পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে।আর বোঝেনই তো পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা হলে কত গল্প চলে আসে,মনে হয় যেন কথার ঝুড়ি খুলে যায়।
আমরা বিকেলে আড্ডা শুরু করি এরপর কখন যে সন্ধ্যা হয়ে যায় তা খেয়াল করি নি।আসলে আমরা সবাই প্রায় থেকে সৌদির জীবন যাপন এর ধরন, সৌদির মানুষজন কিভাবে চলাফেরা করে, তারপর সৌদির জীবন কেমন এগুলো নিয়ে আলোচনা চলছিল।এসব থেকে চলে আসে গরম,তার থেকে আসে লোডশেডিং আর লোডশেডিং থেকে চলে আসে ভূতের গল্প।
আমাদের এক বন্ধু জিজ্ঞেস করে কিরে আমাদের দেশে যেমন ভূত দেখা যায় সৌদি তেও এমন ভূত আছে নাকি? তখন সুফিয়ান বলে ওদেশে আরো বেশি।মরুভূমির মাঝে যে কত কিছু আছে কল্পনাই করতে পারবি না। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম তুই কিছু দেখেছিস?
তখন ও বলল অহরহ দেখেছি৷ তবে একদম যেয়েই এমন এক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলাম সেটা ভুলতে পারিনি। তখন আমরা সবাই বললাম তাইলে বল সেই ঘটনা টা। তখন সুফিয়ান বলতে শুরু করল। আমি সৌদি গেছিলাম একটি কন্সট্রাকশন কোম্পানির সিকিউরিটি গার্ড হয়ে। আমাদের বাংলাদেশ থেকেই হালকা ট্রেনিং দিয়ে পাঠানো হয়েছিল সরকারি ভাবে।সেখানেই আমাদের কোম্পানির আরো কয়েকজন ভাইয়ের সাথে।
আমরা যাওয়ার সময় সবাই একসাথেই গেলাম। যাওয়ার পর কোম্পানি থেকেই আমাদের থাকার কোয়ার্টার দেওয়া হল।তারপর আমাদের জানানো হল,আমাদের আবার ট্রেনিং দেওয়া হবে আবার সেই সাথে কয়েকটা টেস্ট নেওয়া হবে। সেই টেস্টে পাশ না করা পর্যন্ত আমাদের কোন সাইটের ডিউটি দেওয়া হবে না। আর কয়েকটা ব্যাচের ট্রেনিং চলতেছে তাই আমাদের ট্রেনিং হতে দেরি হবে। আমাদের যে সুপারভাইজার বলল তোমরা এই কয়দিন রেস্ট নাও আর আশেপাশে ঘুরে দেখো। ট্রেনিং এর সময় হলে আমরা তোমাদের জানিয়ে দেব।
এরপর আমরা অলসের মত দিন কাটাতে লাগলাম,কোম্পানির খাওয়ায়,থাকার জায়গা নিয়ে চিন্তা নাই।তাই খাইদাই আর সেই সহকর্মী ভাইদের সাথে ঘুরে বেড়াই।এরমাঝে একদিন একজন লোক আমাদের কোয়ার্টারে এসে আমাদের জিজ্ঞেস করল আমরা কেউ একটা চাকুরি চাই কিনা।তখন আমরা বললাম আমরা অলরেডি একটা তে জয়েন হয়ে আছি,শুধু ট্রেনিং এর অপেক্ষায়।তখন উনি বললেন আমি জানি,তোমাদের সুপার ভাইজার এর সাথে আমার কথা হয়েছে।তোমরা বসেই আছো তাই অফার করছি।
কাজ কিছুই না শুধু একটা কন্সট্রাকশন সাইট পাহাড়া দিতে হবে রাতের বেলা।সাইট টা একটু ভেতরের দিকে তাই সেখানে চোর ডাকাতের উৎপাত নেই।শুধু ফর্মালিটির জন্য গার্ড রাখা। ভাল বেতন পাবে। ভেবে দেখো।আমি বললাম,আমাদের সুপার ভাইজার রাজি হবে? উনি বললেন, উনিই তোমাদের সাজেস্ট করেছে।তখন আমি আর আমাদের দলের দুইজন ভাই রাজি হয়ে গেলাম।
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।