কেন বই পড়বেন?||গল্পের বইয়ের পক্ষনিয়ে আমার ওকালতি
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগ বাসী।আশা করি সবাই ভাল আছেন।
দীর্ঘ দাবদাহের পর আজ,আকাশ থেকে শ্রাবনের আশীর্বাদ বর্ষণ হচ্ছে। চারদিকে মেঘের ঘনঘটা। ঠান্ডা পরিবেশ।এমন পরিবেশে মন চায় কারো সাথে খুনশুটি তে মেতে থাকতে।মন চায় কেউ নিজ হাতে খিচুরি আর ডিম ভেজে এনে বলুক "খেতে এসো।"এমন দিন শুধু বিবাহিত দের আর প্রেমিক দের।
আমি বিবাহিত নই,তারউপর অত্যন্ত বেরসিক হওয়ায় প্রেমের ধারে কাছেও ঘেষতে পারি নি।তো এমন দিনে আমার মত মানুষ হয় লেখক হয়ে বই লেখে,না হয় অন্যের লেখা বই পড়ে। লেখক হওয়ার মত জ্ঞান পেটে না থাকায় আমি অন্যের লেখাই পড়ি,এবং মাঝে মাঝেই ভাবুক হয়ে পড়ি সেই রবীন্দ্রনাথের চিন্তাশীল নরহরির মত।
আজ বই পড়তে পড়তে হঠাৎ কৈশোর কালের কথা মনে পড়ে গেল।বই পড়ার নেশা আমার ছোট থেকেই।আমার মামার পরিবার রিতীমত শৌখিন পরিবার।বিশেষ করে আমার মেজ মামা যাকে আমরা বলি "পিন্টু মামা"আবার এসব বিষয়ে বেশ উৎসাহ যোগাতেন সবাইকে।তিনি আমার মাসিমা কে অনেক বই এনে দিতেন।আর আমার কাজ ছিল মামার বাড়ি গিয়েই মাসির সেই বই গুলো পড়া এবং যেগুলো পড়া হয়নি সেগুলো বগলদাবা করে বাড়িতে নিয়ে আসা। এই নিয়ে মাসি এখনো আমাকে বেশ ক্ষ্যাপায়।তো যাই হোক আমার বই পড়ার শুরু এই থেকে।আমার ছোট বেলার হিরো কিন্ত টারজান নয়,আমার ছোট বেলার হিরো ছিল রবিনসন ক্রুসো।
সব সময় মনে হত, চলে যাই না কোন দূরদ্বীপে।একা থাকব, নরখেকো দের সাথে যুদ্ধ করব।শিকার করব।তারপরেই মনে হতো ধুর এখনো তো আমাকে ভাত টাও মা খাইয়ে দেয়।
যাই হোক এই আমি ছোট থেকে খুব ভাল ছাত্র ছিলাম না।কোনমতে ক্লাস পার হত।আপনি যদি আমার মত ছাত্র হতেন, তারউপর যদি আপনার গল্পের বই পড়ার নেশা থাকে তাহলে কি কি কথা শুনতে হবে ভাবতে পারছেন? সব থেকে বেশি যে কথা শুনতাম তা হল"এগুলো বই পড়ে কি হবে,তার থেকে পড়ার বই পড়।কাজে লাগবে।"
আমি তাদের দোষ দেইনা।তারা আমার শুভাকাঙ্ক্ষী এবং আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত তাই তারা আমাকে সদুপদেশ দিয়েছেন।কিন্তু এই যে গল্পের বই পড়ে কি হবে কথা টা আমি কখনোই মানতে পারি নি।
আমাদের মধ্যবিত্ত বাংগালীরা একটি কাজ কে প্রথমেই লাভ ক্ষতির পাল্লায় তুলে দেই। তার থেকে প্রত্যক্ষ লাভ না আসলেই সে কাজ হয়ে যায় ভীষন পাপ কাজ।সে কাজ না করাই বাঞ্চনীয়। বলি কেন হ্যা? প্রত্যক্ষ লাভ না থাকলেও নির্মল বিনোদন আছে তার কি কোন মূল্য নেই? এই পৃথিবীর বাইরেও যে রঙিন একটি কল্পনার দুনিয়া আছে তার সৌন্দর্যের কি কোন মূল্য নেই? বইয়ের গল্প গুলো যখন কল্পনায় চলচ্চিত্রের মত ভাসতে থাকে,তখন আমার কল্পনা শক্তির যে প্রভূত উন্নয়ন হয় সেটার কি কোন দাম নেই?
দাম কি শুধু ঐ গৎবাধা বিদ্যার? এই বই পড়ার সুফল টা আমি হাতে হাতে পেলাম যখন আস্তে আস্তে আমার পড়ার প্রতিও মনোযোগ আসতে শুরু করে।আমার কিন্তু আর পড়ার বইয়েও একঘেয়েমি আসে না। সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতিতে আমার কখনোই সমস্যা হয়নি।কারন ততদিনে আমার কল্পনার জগৎ অনেকটাই বড়।বিজ্ঞানের থিউরি গুলো বুঝতে আমার কিন্তু সমস্যা হয় না।কারন সেই কল্পনার চোখেই দেখতে পারি ইলেকট্রনের নাচানাচি,আহ্নিক গতি বার্ষিক গতি।
তাহলে কি গল্পের বই পড়া বৃথা গিয়েছে? আমাদের বাস্তব জীবনের সমস্যা গুলো কিন্তু গৎবাধা না।অনেক নতুন নতুন সমস্যা আমাদের সামনে হাজির হয়।এই সমস্যা গুলোর সমাধান কিন্তু ঐ পাঠ্যবইয়ের গৎবাধা সমাধান দিয়ে করা সম্ভব না।নতুন সমস্যার জন্য দরকার নতুন সমাধানের যার জন্য প্রয়োজন, কল্পনাশক্তি।কবি নজরুল দশম শ্রেণি পাশ কিন্তু আজ তার কবিতা গান এর উপর গবেষণা করে অনেকেই পিএইচডি পাচ্ছে।অনেক মোটিভেশনাল স্পিকার আপনাকে এই গল্প শুনাবে কিন্তু আপনাকে যে গল্প শুনাবে না তা হল নজরুল হাজার হাজার বই পড়তেন।
বই আত্মার খোরাক।ভাল বই জীবনকে সুন্দর করে।মনকে করে উদার।এক একটি বই, আমাদের জ্ঞানের ভান্ডার কে সমৃদ্ধ করে।যেগুলো হয়ত পরীক্ষায় কাজে লাগবে না।কিন্তু বাস্তব জীবনে সেগুলোর অপরিসীম গুরুত্ব।তার থেকে বড় কথা চিত্তবিনোদন।আজকের এই উঠতি দ্রবমূল্যের বাজারে,চারদিকে যখন অশান্তি আর অশান্তি তারমধ্যে এই যে চিত্তবিনোদন তারই বা মূল্য কম কি? আর কথায় আছে "একটি ভাল বই,একজন ভাল বন্ধুর সমান।যে কখনো ঝগড়া করে না।"
আমার এসব কচকচানি তাদের উদ্দেশ্যে যারা বই পড়া কে মূল্যহীন বলে।তাদের উদ্দেশ্যে বলব,কষ্ট করে হলেও একটা বই শেষ করুন।তবে শুধু আমি বলছি বলে পড়লে হবে না।হারিয়ে যেতে হবে বইয়ের ভেতর,বইয়ের লেখা গুলোকে কল্পনার চোখে ফুটিয়ে তুলতে হবে চলচ্চিত্রের মত।তাইলেই বুঝতে পারবেন কেন বই পড়া মূল্যহীন নয়।
এখন বলতে পারেন শুধু একডেমিক বই পড়েও তো কত কত ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হয়।হ্যা আপনি ঠিক এবং আপনার সাথে আমি তর্কে যাব না৷ আপনার জীবন টা হল গাধার জীবন।আপনার জীবনের লক্ষ্য শুধু খাওয়া আর টাকা ইনকাম। এই গন্ডির বাইরে আপনার জন্য সম্ভব না।
যদি এক নতুন দুনিয়ার খোজ পেতে চান তবে বই পড়ুন।অন্যকে বই পড়তে উৎসাহিত করুন।বই উপহার দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।