ওটা কে?||বাস্তব ভূতের গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

pexels-lennart-wittstock-316681.jpg
সোর্স

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগবাসী।সবাইকে অগ্রীম ভাতৃদ্বিতীয়ার শুভেচ্ছে।আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব বাস্তব একটি ভূতের গল্প।এটা কিন্তু আমার সাথে ঘটা সত্য ঘটনা।

ভূত তো আমরা অনেক দেখি। কিন্তু ভূতটা আসল না নকল সেটা কয়জন বুঝতে পারি।আর নকল হলেও সেটা প্রকাশ করি না। কারন তাতে নিজের বোকামো প্রকাশ পাবে।আর কেউ চায়না নিজের বোকামো প্রকাশ করতে।আর যদি আসল হয় তবে তো সবাইকেই বলে বলে তাদের কানের পোকা বের করে দেই।

যাই হোক চলুন শুরু করা যাক আমার গল্প

আমি বর্তমানে শহরে থাকলেও সারাজীবন কিন্তু আমি শহরেরই বাসিন্দা না।আমি আমার শৈশব গ্রামে কাটিয়েছি।আর এই ঘটনা ২০০৪ সালের দিকে।তখন গ্রামে কোন বিদ্যুৎ ছিল না।বাচ্চারাও সারাদিন ফোনের মাঝে ঢুকে থাকত না।আমাদের বিকেল কাটত ধুলার মাঝে।

যাই হোক ধান ভানতে শিবের গীত হয়ে যাচ্ছে। আবার গল্পে ফিরে আসি।সেদিন ছিল আমাবস্যা। যে সে আমাবস্যা না,বুড়ো আমাবস্যা(গ্রামে এটাই বলত)। যেটা আরকি কালী পূজার আমাবস্যা।আমাদের গ্রামের কালীপুজা হয় বিস্তৃত ফসলের মাঠের মাঝখানে।আর আপনারা তো জানেনই কালীপুজা হয় গভীর রাতে।

সেই দিন গুলো ছিল সত্যিকারের সুখের দিন। সন্ধ্যা নামতে নামতেই ভূতগুড়া খেয়ে বেরিয়ে পড়া।ঝাড়বাতি ও বুড়িমার পটকা ফুটানো। বাড়ির বাইরে প্রদীপ লাগানো।তারপর রাত একটু গভীর হলে পুজা দেখতে বেড়িয়ে পড়া।তারপর পুজা শেষে প্রসাদ খেয়ে বাড়ি ফিরে আসা।এবং আসার সময় যার যার বাড়ির বাইরে যত প্রদীপ পাওয়া যায় সব বগল দাবা করে নিয়ে আসা।এর পরের দিন প্রতিযোগীতা করা কে কয়টি প্রদীপ বগলদাবা করতে পারল।যে বেশি পারল সে অবশ্যই ফার্স্ট।

যাই হোক আমি ভাল ছেলে, কখনো ফার্স্ট ছাড়া দ্বিতীয় হইনি।যাই হোক আবার বেলাইনে চলে যাচ্ছি।তো সেদিনও ছিল এরকম আমাবস্যার রাত।যেহেতু গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না তাই ঘুটঘুটে অন্ধকার।আমি আর তিন-চার জন ছেলে মিলে গিয়েছি পুজো দেখতে।সেদিন পুজো শেষ হয়ে প্রসাদ খেতে খেতে রাত প্রায় দুটো।

এরপর জমির আইল ধরে ধরে ফিরে আসছিলাম গল্প করতে করতে।কিন্তু বিপত্তি বাধল বাড়ি থেকে একটু দুরের রাস্তায়।এই রাস্তা ধরে ৫মিনিট হাটলেই বাড়ি। কিন্তু সেখানে দেখি লম্বামত কে যেন ২পাশে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর ঘনঘন মাথা নাড়াচ্ছে।আমরা তো দেখে ভয়ে কাঠ।একে তো শুনেছি আমাবস্যার রাতে সব ভূতেরা পৃথিবীতে নেমে আসে।তারপর সবাইকে ভয় দেখায়,কাউকে বাগে পেলে ঘাড় টাও নাকি মটকে দেয়।

আর ভয়ের সময় আরো বেশি করে ভয়ানক কথা গুলো মনে পড়ে।ফলে সামনের দৃশ্য দেখে ভয়ে হাত পা পেটের মধ্যে ঢোকার জোগাড়।এখন বাড়ি যেতে গেলে দ্বিতীয় কোন রাস্তা নেই।এই রাস্তা দিয়েই যেতে হবে,আবার সামনের ঐ বিভীষিকার সামনে দাড়ানোর মত সাহস নেই।হ্যা ভীতু বলতে পারেন।কিন্তু মনে রাখবেন তখন আমরা সবাই ছিলাম ছোট বাচ্চা।

তো এভাবে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম, না সামনে যেতে পারছি না পেছনে।এসময় বাধন নামে আমার এক সঙ্গী একটি ঢিল ছুড়ে দেয় সেই অজানা জিনিসটার দিকে।এতে তার মাথা দোলানো আরো বাড়তে থাকে।আমরা তো ভয়ে কাঠ। দু একজন তো কান্না শুরু করে দিয়েছিল।

এরপর ভাগ্য আমাদের সহায় হল।পাশের বাড়ির এক কাকা পুজো দেখে ফিরে আসছিলেন।আমাদের কান্নার শব্দে উনি প্রায় দৌড়ে এলেন।এসে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে।তখন আমরা সব খুলে বলি।তারপর উনি সেদিকে টর্চ মারতে দেখা যায় সেখানে বাশঝাড় আর কলাগাছ ছাড়া কিছুই নেই।যাই হোক কাকা আমাদের অভয় দিয়ে নিজের সাথে করে বাড়ি পৌছে দিলেন।বাসায় বকা দেবে তাই কাউকে কিছু বললাম না।

কি ভাবছেন গল্প এখানেই শেষ? না আর একটু পরিশষ্ট আছে।আমি পরের দিন আবার জায়গাটিতে গেলাম।গিয়ে ভাল করে চারপাশ দেখতে লাগলাম।তখন বুঝতে পারলাম আমরা কাল যা দেখে ভয় পেয়েছি তা কলাগাছ ছাড়া কিছুই নয়।কলাগাছের দুপাশের পাতাকে ভেবেছিলাম হাত,আর মাঝখানের লম্বা কচিপাতা কে ভেবেছিলাম মাথা। বোঝার পর তো হাসতে হাসতে আমার অবস্থা খারাপ। যদিও কাউকে কখনো বলি নি। এই প্রথম আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।আপনারা আবার কাউকে বলবেন না যেন।তাইলে কিন্তু আমার মান সম্মান থাকবে না।

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
SET @rme as your proxy
witness_vote.png

Sort:  
 2 years ago 

শুরু থেকে আমি ভয়ে ভয়ে পড়ছিলাম কিন্তু শেষে গিয়ে শুনলাম কলাগাছ দেখে ভয় পেয়েছেন। ভাল হাসিয়েছেন ভাইয়া। তবে এটা ঠিক এরকম সিচুয়েশনে বেশ ভয়ই লাগে। আমি এখনো বাড়ি গেলে রাতের বেলা বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় মনে হয় পিছন থেকে কেউ আমাকে ধরতে আসছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

এগুলো আসলে আমাদের সেই আদিম সংস্কার।অন্ধকার কে ভয় পাওয়ার জন্যই এগুলো হয়। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

শেষটা পড়ে হাসি পেলো বটে। কিন্তু ওরম সিচুয়েশনে থাকলে যে কেউ ভয়ে কাঠ হয়ে যেতোই। আর যদিও সেটা কলা গাছ ছিলো, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে কিন্তু সত্যিই কলা গাছ থাকে না। কি থাকে অনেক সময়ই বোঝা যায় না।স্পুকি অ্যাক্টিভিটি অনেকের সাথেই হয়। তাই দিন ক্ষণ বিশেষে বুঝেই চলা উচিৎ। অনেকে বিশ্বাস করে না। তবে যারা অনুভব করেছে তারাই এর তীব্রতা বোঝে।

 2 years ago 

হ্যা দিদি। বিষয়টি বোঝার জন্য ধন্যবাদ৷ মন্তব্যটি অনেক সুন্দর ছিল।

 2 years ago 

বগলদাবা মানি কি?আপনি তো সবকিছুতেই ফার্স্ট।
যাই হোক গল্প পড়ে আমি হাঁসতে হাঁসতে শেষ।শেষঅব্দি কলা গাছ😜😜।সেই দিন ঘাড়টা মটকে গেলে কি হত,তাই ভাবছি।মনে হয় কলা গাছের মত বেশি বেশি ঘাড় নারাতে পারতেন।হা হা

 2 years ago 

বগলদাবা মানে অন্যের জিনিস নিজের মনে করে নিয়ে নেওয়া।ঘার মটকে গেলে আমিও আপনার দলের সদস্য হয়ে যেতাম।হাহাহাহাহহাহা।গল্পটা পড়ে মজা পেয়েছেন তাই আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

আসার সময় যার যার বাড়ির বাইরে যত প্রদীপ পাওয়া যায় সব বগল দাবা করে নিয়ে আসা।এর পরের দিন প্রতিযোগীতা করা কে কয়টি প্রদীপ বগলদাবা করতে পারল।যে বেশি পারল সে অবশ্যই ফার্স্ট।

ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল রে ভাই।🥺 আমিও এই কাজ করতাম ছোটবেলায়।

আমি পরের দিন আবার জায়গাটিতে গেলাম।গিয়ে ভাল করে চারপাশ দেখতে লাগলাম।তখন বুঝতে পারলাম আমরা কাল যা দেখে ভয় পেয়েছি তা কলাগাছ ছাড়া কিছুই নয়।কলাগাছের দুপাশের পাতাকে ভেবেছিলাম হাত,আর মাঝখানের লম্বা কচিপাতা কে ভেবেছিলাম মাথা। বোঝার পর তো হাসতে হাসতে আমার অবস্থা খারাপ।

বিশ্বাস করেন প্রথম দিক থেকেই আপনি গল্পে যে ফানি পরিবেশ তৈরি করেছিলেন, তাতে বুঝতেই পেরেছিলাম শেষে গিয়ে এরকম কিছু একটা হবে। এটা কি আদৌ ভূতের গল্প। হা হা হা...🤣 তবে খুব মজা পেয়েছি।

 2 years ago 

হাহাহা।পাঠক মজা পেলেই তো আমার গল্প লেখা সার্থক।অনেক উৎসাহ দিলেন দাদা৷ ধন্যবার উৎসাহিত করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 68381.81
ETH 2449.96
USDT 1.00
SBD 2.63