ব্ল্যাক ক্রশ ||বুক রিভিউ
ওমর খৈয়ামের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে
রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে,প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হবে
কিন্তু বই,সে তো অনন্ত যৌবনা।যদি তেমন বই হয়।
মানুষের কাছে পেট পুজা টাই বড় কথা।কজন আছে যারা গাটের কড়ি খরচ করে পড়ার বই ছাড়া অন্য বই কিনে পড়ে?বই কেনা মানুষের কাছে বিলাসিতা।তবে সবাই কিন্তু তা নয়।আমার মত পাগল কিছু মানুষ আছে,যাদের ভাতের মত বইটাও প্রয়োজন।একটা বই কেনার জন্য ২বেলা মিল অফ করতেও আপত্তি নেই। আমার কাছে সব থেকে বেস্ট উপহার মনে হয় বইকে।
বই যেন একটি নদী,যেখানে জ্ঞানের শত শত ধারা প্রবাহিত হয়।কজন পারে সেই জ্ঞানের দিব্য জলে অবগাহন করতে।যাই হোক অনেকেই পাগল ভাবতে পারেন। কিন্তু বইয়ের দুনিয়ায় ডুব দেওয়ার যে শান্তি তা প্রিয়ার স্পর্শেও নেই।
তো চলুন শুরু করা যাক আজকের বইয়ের রিভিউ
সংক্ষিপ্ত বিবরণঃ
বইয়ের নাম | ব্ল্যাক ক্রশ |
---|---|
লেখক | ক্রেগ আইলস |
অনুবাদ | ইমতিয়াজ আজাদ |
জনরা | মিলিটারি থ্রিলার |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | ৫৪৩ |
ব্যক্তিগত রেটিং | ৪.৫/৫ |
সংক্ষিপ্ত প্লটঃ(হালকা স্পয়লার)
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যায় ম্যাককনেল এর দাদা(দাদু)।তিনি ছিলেন শহরের নামকরা একজন সার্জন।তার হাত ধরে নতুন জীবন পেয়েছেন অনেক মানুষ।তাই তার শেষকৃত্যে অনেক মানুষের ভির হয়। এরপর সবাই একে একে যখন চলে যেতে থাকে তখন সেখানে আসেন একজন রাবাই(ইহুদীদের ধর্মীয় গুরু)।তিনি জানান তার দাদুকে নিয়ে তার সাথে কিছু কথা আছে।
শেষ কৃত্য শেষ করে ম্যাককনেল রাবাই কে নিয়ে।সেখানে রাবাই তাকে বলে আমি তোমার দাদুর সম্পর্কে কিছু কথা বলব যা উনার সম্পর্কে তোমার দৃষ্টি ভঙ্গি পালটে দেবে।তুমি কি জানতে ইচ্ছুক।যদি হও তাইলে বলব? নইলে এই ইতিহাস অজানাই থেকে যাবে।
ম্যাককনের রাজি হয় শুনতে।তখন রাবাই বলা শুরু করেন ম্যাককনেল এর দাদার দুঃসাহসিক এক ইতিহাস।তবে তার আগে রাবাই ম্যাককনেল কে দিয়ে তার দাদার সিন্ধুক খোলেন।সেখানে পাওয়া যায় একটি ভিক্টোরিয়া ক্রশ যা ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ সামরিক পদক।
এখান থেকেই শুরু হয় আসল ঘটনা।আর এর ইতিহাস লুকিয়ে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন শেষ পর্যায়ে। জার্মানির হার প্রায় নিশ্চিত।কিন্তু হিটলার তখন মরিয়া।সে সর্বশেষ একটি চেষ্টা চালাতে চায়।এজন্য তার হাতে আছে মারাত্মক বিষাক্ত এক নার্ভ গ্যাস। যার নাম "সোমান"।এটি প্রচন্ড বিষাক্ত আর বাতাসে ভেসে থাকতে পারে সপ্তাহের পর সপ্তাহ।
খালি চোখে বোঝা যায় না এর অস্তিত্ব।আবার এই গ্যাস এত মারাত্মক যে তা ফুসফুসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই,শুধুমাত্র খোলা চামড়ার সংস্পর্শে আসলেই যে কেউ মুহুর্তেই ঢলে পড়বে মৃত্যুর কোলে।ফলে মিত্রবাহিনী পড়ে যায় দারুন দুশ্চিন্তায়।কারন কিছুদিন পর তারা জার্মানিতে তীব্র আঘাত হানবে।আর এই গ্যাস তাদের হাতে থাকলে তাদের কাজ হবে শুধু আক্রান্ত এলাকায় এই গ্যাস ছড়িয়ে দেওয়া।
তাই মিত্রবাহিনী ঠিক করে যে করেই হোক জার্মানী কে বোঝাতে হবে যে মিত্রবাহিনীর হাতেও এই গ্যাস আছে।তাইলে জার্মান বাহিনী ভয়ে আর এই গ্যাস ব্যবহার করবে না।আর এই ভয় দেখানোর জন্য কাউকে যেতে হবে জার্মান বাহিনীর এক কনসেনট্রেশান ক্যাম্পে।যেখানে জার্মান বাহিনী বন্দী ইহুদীদের উপর এই গ্যাসের পরীক্ষা চালাচ্ছে।
এটা একটা সুইসাইড মিশন।
আর এই মিশন বাস্তবায়নের জন্য পাঠানো হয় ম্যাককনেল এর দাদা মার্ক ও জোনাস স্টার্ন নামক এক সৈনিক কে।তারা কি পারবে নৃশংস জার্মান এস এস বাহিনীর চোখ ফাকি দিয়ে এই মিশন পুরণ করতে?
ব্যক্তিগত মতামতঃ
কিছু কিছু বই থাকে যারা গল্পই বলে না,টেনে নিয়ে যায় নিজের মাঝে।মনে হতে থাকে যেন চোখের সামনে ঘটে যাচ্ছে একের পর এক ঘটনা।আপনিও সেখানে উপস্থিত।এই বইটিও সেই ধরনের বই।আপনিও অদৃশ্য তৃতীয় কমান্ডো হিসেবে মার্ক ও জোনাস এর সঙ্গী হয়ে যাবেন।মনের চোখে দেখতে পাবেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা।অবশ্যই সাজেস্ট করব বইটি পড়ার।
হ্যাপি রিডিং🧐
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
একদম ঠিকই বলেছেন ভাইয়া, আপনি যেভাবে লিখেছেন সেভাবে পড়েই যেন মনে হচ্ছে আমি চোখের সামনেই দেখছি। অর্থাৎ আমিও যেন ওখানেই উপস্থিত। এরকম বইগুলো পড়তে আমার কাছেও খুব ভালো লাগে। আপনার রিভিউ পোস্টের কারণে হয়তোবা এতটুকু জানতে পারলাম। বেশ ভালো লাগলো পড়ে।
ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
ব্ল্যাক ক্রশ বুক রিভিউ বেশ দুর্দান্ত হয়েছে ভাই। খুব সুন্দর করে আপনি বুক রিভিউ করেছেন। আপনার পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো । তবে ব্ল্যাক ক্রশ বইটি আমার পড়া হয় নি । আপনার পোস্ট দেখে পড়তে অনেক ইচ্ছে জাগলো। যুদ্ধের অনেক বর্ণনা এর মধ্যে রয়েছে । ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার বই রিভিউ দেওয়ার জন্য।
আপনাকেও ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
কথা রেখেছেন,একটা রিভিউ দিলেন আজ।
যদিও থ্রিলার বই খুব একটা পড়িনা,আসলে পড়িই না।বোর্ড বইয়ের বাইরে বই পড়লে হয়তোবা লাইফ হ্যাকস বা ক্যারিয়ার বিল্ডিং এর বইগুলোই পড়া হয় আমার বেশি।
রিভিউটা পড়ে ভালো লাগলো,নতুন দুইটা নাম জানতে পারলাম।
বাকি বইগুলার রিভিউ এর অপেক্ষায় থাকলাম।
কখনো সুযোগ পেলে পড়ে দেখতে পারো। ভাল লাগবে আশা করি। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
এত বড় একটা দামী কথা কোথায় খুঁজে পেলেন। যাইহোক বই সম্পর্কে আপনার অভিমত বা চিন্তাধারা বেশ ভালো। আর আপনার বইয়ের রিভিউটা পড়ার চেষ্টা করেছি। আমার কাছে তো বেশ ইন্টারেষ্টিং লাগলো।
ওটা আমার চিন্তাধারা।আমি এভাবেই কল্পনা করি। অনেক ভাল লাগল আপনার মন্তব্য টি। ধন্যবাদ দাদা সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
অও,দারুণ কিছু কথা বলেছেন দাদা।এইজন্যই বইকে প্রকৃত বন্ধু বলা হয় কিন্তু ক'জন সেই বন্ধুত্বের পুরোপুরি মর্যাদা দেয় এ বিষয়ে সন্দেহ আছে।যাইহোক আমার ও বিভিন্ন ধরনের গল্পের বই খুব পড়তে ভালো লাগে।আপনার বইয়ের গল্পটি রহস্যে ভরা ।আসলে মিশনটি কি পূরণ করতে পেরেছিল?ধন্যবাদ দাদা।
ডিস্কর্ডে আস্ক করিয়েন।এখানে বলে ফেললে বাকি সবার জন্য স্পয়লার হয়ে যাবে।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।