ছবির পেছনের গল্প
আমাদের কমিউনিটি দারুন একটি কমিউনিটি। এখানে অনেক ক্রিয়েটিভ মানুষরা রয়েছেন। প্রায় সবাই একাধিক ক্ষেত্রে দক্ষ। তবে প্রায় সবাই একটি বিষয়ে দক্ষ, এটি হলো ফটোগ্রাফি।সবাই দারুন দারুন ফটোগ্রাফ নিয়মিত শেয়ার করেন। দেখে মন ভরে যায়,চোখ জুড়িয়ে যায়৷ এগুলো থেকে উৎসাহিত হয়ে আমিও চেষ্টা করি ফটোগ্রাফির। তবে খুব একটা ভাল হয়না।
আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল পাখির ছবি কাছে থেকে ক্যাপচার করার। ওয়াল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার দের মত। তবে এই পথে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল।প্রথমত আমি ফটোগ্রাফি করি মুঠোফোনের ক্যামেরায়। আমার ডিভাইস প্রায় চার বছরের পুরোনো। ফলে ক্যামেরা এত হাইএন্ড নয়৷ ফলে ছবি ভাল আসে না।
আবার পুরোনো প্রসেসর ভালভাবে প্রসেস করতে পারে না। আর অধিকাংশ সময় আমি যা চাই তার বিপরীতে কাজ করে। আপনি হয়ত ভাবছেন এ ফোনের বর্ণনা দিচ্ছে নাকি বউয়ের? না বউয়ের না আমি ফোনের কথাই বলছি।যাই হোক ইচ্ছা যখন আছে তখন পূরণ করার চেষ্টা অবশ্যই করি। তবে গত দিনটি বিশেষ।
গতদিন সকালে আমি হাটতে বেরিয়েছি। সকাল সকাল হাটা আমার বেশ পুরোনো অভ্যাস।এতে যেমন শরীর ভাল থাকে।তেমনি ফটোগ্রাফির ম্যাটেরিয়াল পাওয়া যায়। তো হাটতে বেড়িয়ে ব্রিজের উপর বসে রেস্ট নিচ্ছিলাম, তখনই দেখলাম একজোড়া শালিক পাখি ব্রিজের রেলিং এ বসল।
তখনই আমার মাথায় আসল এদের ফটোগ্রাফি করি তো দেখি। যেই ভাবা সেই কাজ। তবে ক্যামেরা জুম করলে ছবিতে প্রচুর নয়েজ আসতেছিল।আর আমি গেছিলাম অনেক সকালে ফলে ঠিকমত আলো ফোটে নি তখনো। এটাও সমস্যা করছিল। তখন ভাবলাম আমিই এগিয়ে যাব পাখির দিকে। পাখির দিকে ফোন রেখেই খুব আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে থাকলাম।পাখিরাও কৌতুহল নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।
যাই হোক আমি যতই আস্তে এগিয়ে যাই না কেন,পাখিদের নিজস্ব একটি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আছে।তারা বুঝতে পারছিল আমি এগিয়ে যাচ্ছি। ফলে তারা বার বার উড়ে যাচ্ছিল,কিন্তু আবার সেখানে এসেই বসছিল।আমি আবারো খুব ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম। ৩০মিনিট এ আমি মাত্র ৩পা এগিয়েছি। যখন পাখিরা বুঝত আমি এগিয়ে যাচ্ছি, তখনই অন্য দিকে তাকিয়ে থেকেছি।কিন্তু ফোনের ক্যামেরা সরাই নি।যাতে তারা বুঝতে পারে ক্যামেরা তাদের ক্ষতি করবে না৷
এভাবে আস্তে আস্তে তারা আমাকে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেল।ফলে তারা আর উড়ে গেল না। এই ফাকে দুই তিনটি ছবি তুললাম।এর মাঝেই একটি পাখি খাবারের খোজে উড়ে যায়৷ তবে আরেকটি পাক্কা মডেলের মত বসে পোজ দিচ্ছিল। ফলে বেশ কিছুটা কাছে গিয়ে ছবি তুলতে পেরেছি। জানিনা ছবিগুলা কেমন হয়েছে,বিচারের ভার আপনাদেরই দিলাম।এগুলা আমার একঘন্টা চেষ্টার ফল।আমার মনের ইচ্ছা কিছুটা পূর্ণ হয়েছে৷ এভাবে চেষ্টা করতে করতেই একদিন সফল হব।
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
টুইটার লিংক
সত্যি ভাই পাখিটা একেবারে মডেলের মতোই বসে আছে হা হা। পুরাতন মোবাইল এবং বউয়ের তুলনা টা বেশ লেগেছে আমার কাছে। বেশ কিছুক্ষণ হেসেছি আমি ওটা পড়ার পড়ে। আপনার স্ট্রাগেল টা পাখিগুলো ব্যর্থ হতে দেয়নি কী বলেন।
সকালবেলা হাঁটতে বের হলে এরকম অনেক পাখির দৃশ্যই ফোন ক্যামেরায় ক্যাপচার করা যায় তবে মজার বিষয় হচ্ছে পাখিগুলোর ছবি তোলার ক্ষেত্রে তারা একটু ভয় পায়নি। যদি পাখি গুলো ভয় পেতে তাহলে আপনি কাছে যাওয়ার আগেই উড়ে যেত। যাই হোক আপনার ইচ্ছেটা তো পূরণ হয়েছে।
সকালবেলা শালিক পাখির ফটোগ্রাফি করতে গিয়ে আপনি যে অনেক কষ্ট করেছেন, সেটা বুঝতে পারছি ভাই। সত্যি বলতে মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে জুম করে কোন ফটোগ্রাফি করলে খুব বেশি একটা ভালো হয় না। তবে এখানে আপনার চেষ্টা সার্থক হয়েছে এটুকু বলতে পারি। এক ঘন্টা চেষ্টা করে আপনি যে আপনার মনের ইচ্ছা কিছুটা পূরণ করতে পেরেছেন, এটা জেনে ভালো লাগলো।