সমাজ সেবা
একটি দেশের তরুন প্রজন্ম যদি শক্তিশালী হয়,তবে দেশ শক্তিশালী হয়ে উঠবে।এই তরুণ প্রজন্ম পারে না এমন কোন কাজ নেই। আগে একসময় দেখতাম রক্ত পাওয়া যেত না। কতজন যে রক্তের অভাবে মারা যেত,অপারেশন পিছিয়ে যেত।কিন্তু এখন খুব সহজেই রক্ত ম্যানেজ হয়ে যায়। যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর উন্নতি এর পেছনে ব্যপক ভূমিকা পালন করছে।
এখন আসল কথায় আসি। আমার প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা উপলক্ষ্যে ট্রায়াল ক্লাস চলছিল। সে বেশ বোরিং আর ভয়ানক বিষয়। অন্যরা করছিল আমি বসে বসে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম কখন বাড়ি যাব।তখন হঠাৎ ফোনে কল আসল। আননোন নাম্বার তাই ধরলাম না,কিন্তু ওপর পাশের লোকটাও যেন নাছোড় বান্দা। অগত্যা স্যারের অনুমতি নিয়ে বাইরে এসে কল ধরলাম।
ফোন রিসিভ করতেই শুনি একটি মেয়ের গলা।আমি তো ততক্ষণে স্বপ্নের দেশে।এতদিনে বুঝি বিড়ালের কপালে শিকে ছিড়ল।কিন্তু অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকিয়ে যায়।বুঝতে পারলাম এ আমার বান্ধবী তাসনিয়া। মেজাজ খিচড়ে গেল,মুখ ব্যাজার করে জিজ্ঞেস করলাম আরে এতবার কল দিচ্ছিস কেন? তখন বলল ইমারজেন্সী রক্ত লাগবে। ওর দাদী নাকি পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙ্গে গেছে, সেই জন্য অপারেশন করতে হবে আর এজন্য রক্তের প্রয়োজন।
খুব মারাত্মক খবর, আমি ওর থেকে যাবতীয় তথ্য নিলাম। ভাল খবর হল রোগী বগুড়ার শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হসপিটালে আছে আর আমিও বগুড়া।যাই হোক তখন আবার ল্যাবে গিয়ে সবাইকে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম কার রক্তের গ্রুপ A+ দুই একজন পেলাম।কিন্তু তারা পরীক্ষার আগের রক্ত দিতে ইচ্ছুক নয়।
তারপরেও আশা ছাড়লাম না, তারপর এক বন্ধু রাজি হল। এরপর স্যারকে সব বুঝিয়ে বলে ছুটি নিয়ে আমি আর সেই বন্ধু বেড়িয়ে আসলাম।আমাদের কলেজ থেকে সেই হাসপাতাল বেশি দূরে নয়। অটো নিয়ে সেখানে চলে গেলাম।তবে এই হসপিটাল এত বড় যে এর আগা মাথা কিছুই বুঝি না।এরপর তাসনিয়ার চাচাতো ভাইয়ের নাম্বারে কল দিয়ে তাকে গেটের সামনে আসতে বললাম।
সে আসলে তাকে সাথে নিয়ে সরাসরি রক্ত যেখানে নেবে সে জায়গায় চলে আসলাম কারন কিছু পেপার ওয়ার্ক করতে হয়।এরপর রক্ত দেওয়ার লাইনে সিরিয়াল দেওয়া হল। খুব শীঘ্রই আমাদের সিরিয়াল চলে আসল।সুই যে নার্স ফোটালো সে বেশ দক্ষ। ফলে বন্ধু কোন ব্যাথা পেল না। ওর রক্তের প্রেশার বেশ ভাল ৫মিনিটেই ব্যাগ ভরে গেল। তারপর নার্স সুই খুলে নিয়ে ব্যাগটা ব্লাড ব্যাংকে নিয়ে গিয়ে রাখল।আর আমাদের একটা কাউন্টার দেখিয়ে দিয়ে বলল ওখানে গেলে বিস্কুট আর গ্লুকোজ দেবে৷
কিন্তু নিতে গিয়ে শুনলাম স্টক শেষ। এর মাঝেই তাসনিয়ার ভাই খাবার পানি ও বিস্কুট নিয়ে চলে আসল।বন্ধুকে বললাম বিশ্রাম নিতে। এরপর তাকে পানি খেতে দিলাম আর সেই সাথে বিস্কুট। এরপর খাওয়াদাওয়া শেষ হলে বন্ধুকে নিয়ে চলে আসলাম।আসার সময় বন্ধুকে গাড়ি ভাড়া দেওয়া হল,আমাকেও অনেক জোর করেছিল বটে কিন্তু আমি নিইনি।শেষে বন্ধুকে সিএনজি তে তুলে দিয়ে আমিও বাসায় চলে আসলাম।
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
প্রথমে তো মেয়ে মানুষের গলা শুনে খুশি হয়েছিলেন মনে হয়🤭। তবে যাই হোক বান্ধবীর বিপদে পাশে দাঁড়াতে পেরেছেন দেখে সত্যিই ভালো লাগলো। আসলে আপনার মত বন্ধু থাকলে বিপদের সময় অনেক উপকার হয়। আশা করছি আপনার এই পোস্ট পড়ে সবাই অনুপ্রেরণা পাবে এবং বিপদের সময় মানুষকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে।
ব্যাপক খুশি হয়েছিলাম আপু। ধন্যবাদ আপু গঠণমুলক মন্তব্য করার জন্য।
কারো বিপদে এগিয়ে যেতে পারলে নিজের কাছেও খুব ভালো লাগে। আপনি আপনার বান্ধবীর দাদীর বিপদের সময় এগিয়ে গিয়েছেন জেনে ভালো লাগলো। আসলে আপনার মত বন্ধু থাকলে বিপদের সময় অনেক উপকারে আসে। এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আসলেই ভাইয়া৷ বিপদে পাশে দাড়ানোর মাঝে আলাদা একটি ভাল লাগা কাজ করে। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
ভাইয়া মানুষ মানুষের জন্য কিন্তু এখন বিপরীত হয়ে গিয়েছে। অনেক মানুষ আছে পশুর চাইতে খারাপ হয়ে গিয়েছে মানুষের বিপদ দেখলে তারা হাসি ঠাট্টায়ে উড়িয়ে দেয়। এগিয়ে আসা তো দূরে থাক। কিন্তু আপনার পোস্ট পড়ে আমি সত্যি অনেক খুশি হয়েছি মানুষ এমনই হওয়া উচিত। সে হোক না কেন বান্ধবী বা অপরিচিত কেউ। আমরা তো সবাই মানুষ মানুষের বিপদে পড়লে এগিয়ে আসা মানুষের দায়িত্ব আমি মনে করি। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ভাইয়া। শুভকামনা রইল এবং আপনার জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া কামনা করি যেন আপনি সারা জীবন মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন।
হ্যা খারাপ মানুষও যে নেই এমন না। ধন্যবাদ। সৃষ্টিকর্তা যেন আপনার দোয়া কবুল করেন।
তরুণ প্রজন্ম অনেক সচেতন আগে মানুষ রক্ত দিতে ভয় পেত কিন্তু রক্ত দিলে নিজের জন্যই অনেক উপকার সেটা এখন সবাই কম বেশি জানে। এখন একটু খোঁজ করলেই রক্ত পাওয়া যায়। যাই হোক আপনার অনেকবার ফোন দেওয়ায় বান্ধবীর কন্ঠ শুনে মন খারাপ হয়েছে এটা মজা পেয়েছি। যেকোনো মানুষের অসুস্থতার বিষয় সহায়তা করা সবারই উচিত।
হ্যা এখন মানুষ সচেতন হচ্ছে৷ রক্তদানের উপকারিতা বুঝতে পারছে।
রক্ত দেওয়া বা ম্যানেজ করার বিষয়টা বেশ দারুণ ভাই। আমি নিজেও নিয়মিত রক্ত দেই। ভালো লাগে। কাউকে রক্ত দিতে পারার আনন্দটা অনেক। ভাই আপনি আপনার বন্ধুকে নিয়ে এসেছেন রক্ত দিতে এটা ভালো ছিলো খুব। এভাবেই আমাদের মানবতার সেবায় এগিয়ে আসা উচিৎ।
আপনার ভাল কাজের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনাদের মত সাহসী মানুষদের জন্যই এখন রক্ত ম্যানেজ করা এত সহজ।