টিভি দেখার সেকাল একাল

in আমার বাংলা ব্লগlast year
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগবাসী। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি৷ আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব ছোট বেলায় আমাদের মুভি দেখার অনুভূতি।


সোর্স

আজ আমাদের সবার হাতে হাতে ফোন, যখন ইচ্ছা তখন যে কোন মুভি, সিরিজ দেখতে পারি।মোবাইল ফোনই বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু এতে ফল হয়েছে উলটো টা। এখন আর সেই মজা নেই মুভি সিনেমা দেখে। আগে যে মজা টা পেতাম বাংলা সিনেমার ঢিসুম-ঢাসুম দেখে,এখন কোটি কোটি টাকা ভিএফএক্স এর পিছনে ব্যায় করে বানানো মুভি দেখে সেই মজা পাওয়া যাবে না।

বর্তমান প্রজন্ম যারা জন্মের পর থেকেই মোবাইল ফোন হাতে পেয়েছে তারা আমার সাথে একমত হবে না। না হওয়াটাই স্বাভাবিক। অর্থনীতীর ভাষাতেই তো আছে,"সাপ্লাই যত বেশি,ডিমান্ড তত কম।"এখন সাপ্লাই অনেক, ফলে পুরো এক সপ্তাহ অপেক্ষা করে একটা মুভি দেখার আনন্দ তারা বুঝবে না।

আমাদের ছোট বেলায় বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল টেলিভিশন। এখন মত জিরো ফিগার টেলিভিশন না,পেটমোটা ঢাউস আকারের এক একটা টেলিভিশন। তাও সেটা কালার নয়,সাদা কালো।রিমোট ছিল না,নব ঘুরিয়ে সাউন্ড কম-বেশি আর চ্যানেল পাল্টাতে হত। তখন সর্বত্র এমন বিদ্যুৎ এর সাপ্লাই ছিল না।

টিভি চালাতে হত ব্যাটারি দিয়ে। খুব সাবধানে ব্যবহার করলেও সেই ব্যাটারি বেশিদিন চলত না।ব্যাটারির চার্জ শেষ হলে আরেক বিপদ, সেই ঢাউস আকারের ব্যাটারি নিয়ে আবার যেতে হবে শহরে।আর তার থেকেও বড় কথা এই সাদা-কালো টেলিভিশন ও কিন্তু সবার বাড়ি বাড়ি ছিল না।পুরো গ্রামের দুই একটি বাড়িতে থাকত এই টেলিভিশন।আর যাদের বাড়িতে থাকত তাদের মেজাজটাই হত আলাদা।ছোটরা তো বন্ধুবান্ধবদের সাথে রিতীমতো প্রতিযোগীতা করত।

যাই হোক এতক্ষণ যে গুলো বললাম সেগুলো তো কিছুই না,এই যে এত কষ্ট করে টেলিভিশন দেখবেন কষ্ট এখানেও শেষ হয়নি।টেলিভেশন চ্যানেল কিন্তু ছিল একটা। শুধুমাত্র বিটিভি ছাড়া অন্য কোন চ্যানেল দেখা যেত না।তাও সে চ্যানেল ধরা লাগত অ্যান্টেনা দিয়ে। আর সেই অ্যান্টেনা এক মহা ফিচেল জিনিস,এই অ্যান্টেনা কে রাখতে হবে একটা নির্দিষ্ট অ্যাঙ্গেলে, সেই অ্যাঙ্গেল থেকে একটু এদিক সেদিক হলেই টিভিতে ঝিরঝির করত।আর এই ঘটনা ঘটত ঠিক মুভির মোক্ষম সময়ে।

তখন একজন কে আবার ওঠা লাগত টিনের চালের উপর উঠে আবার অ্যান্টেনাকে আবার নির্দিষ্ট অ্যাঙ্গেলে রাখতে হত। কিন্ত সেই মোক্ষম সময় বা ক্লাইম্যাক্স পার না হওয়া পর্যন্ত টিভি কিছুতেই ঠিক হবে না।কিন্তু তারপরেও কারো উৎসাহের কমতি নেই।তারা ক্রমাগত বকাবকি করত অ্যান্টেনা যে ঠিক করছে তাকে।আর সিনেমার কথা কি আর বলব।এখন আমরা সিনেমার ফাকে ফাকে বিজ্ঞাপন দেখি। তখন বিজ্ঞাপনের ফাকে ফাকে সিনেমা দেখতাম আমরা। দুই ঘন্টার সিনেমা গিয়ে দাড়াতো চার ঘন্টায়। তারপরেই জনগন মনে মনে শাপ-শাপান্ত কর‍তে করতে বসে থাকত টেলিভিশন এর সামনে।এভাবেই চলত আমাদের ছোট বেলার সিনেমা দেখা।

আজকের স্মৃতিচারণ এপর্যন্তই।ভবিষ্যতে এমন আরো স্মৃতিচারণ নিয়ে হাজির হব।টেলিভিশন নিয়ে আপনাদের স্মৃতিও কমেন্টে লিখতে পারেন।ধন্যবাদ পোস্ট টি পড়ার জন্য।ভুল ত্রুটি মার্জনীয়

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
SET @rme as your proxy
witness_vote.png

banner-NEW.png
break2.jpg
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
break2.jpg

Sort:  
 last year 

ভাইয়া টিভি দেখার সেকাল আর একাল পরে স্মৃতিতে হারিয়ে গিয়েছিলাম।আপনি যা যা লিখে স্মৃতিচারণ করলেন।এই ঘটনাগুলো আমাদের ও হয়েছে।একটু বাতাস হলেই এ্যান্টেনা ঠিক করতে একজনকে উপরে যেতে হতো। আর এতো এতো বিজ্ঞাপন দিতো ২ ঘন্টার মুভি ঠিকই ৪ ঘন্টা লেগে যেতো। আর আজকাল টিভি চ্যানেলের ও অভাব নেই।আর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ও অভাব নেই।খুব ভালো লাগলো অনুভূতি গুলো পড়ে। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে শেয়ার করার জন্য।

আপনার পোস্ট পড়ছিলাম আর ছোটবেলার টিভি দেখার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। আমি নিজেও কিন্তু টিনের চালের উপর উঠে অনেক বার এন্টিনা ঠিক করেছি। আমাদের বাড়িতে একটা সাদাকালো টিভি ছিল, সেটাও ব্যাটারীতে চলত। যখন আমাদের বাড়িতে কারেন্ট ছিল না। ওই সময় আসলে চ্যানেল অনেক কম ছিল। আপনাদের ওখানে একটা চ্যানেল ছিল কিন্তু আমাদের এখানে আরো কয়েকটা চ্যানেল ছিল। তবে সেই পুরনো দিনের মজা এখন আর সত্যিই নেই।

 last year 

আহারে শৈশব, আহারে জীবন।
কোথায় যেন সব হারিয়ে গেল।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 58551.09
ETH 2617.32
USDT 1.00
SBD 2.44