কাশফুল দেখা||মজার অভিজ্ঞতা

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো আমার বাংলা ব্লগ বাসী।আসা করি সবাই ভাল আছেন।আমিও ভাল আছি।চলুন আজ আপনাদের সাথে মজার একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।

IMG_20221014_173951.jpg

আপনারা জানেন এখন চলছে শরৎকাল।শরৎকালের যে কয়টি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।,যেমনঃমেঘমুক্ত নীল আকাশ,দুর্গাপুজা,কাশফুল,সাদা মেঘের ভেলা।এই সব গুলো বৈশিষ্ট্যের মাঝে দুর্গাপুজা হয়ে যাওয়ার পর সব থেকে ট্রেন্ডে আছে কাশফুল

টাইম লাইনে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুকলেই দেখি চারদিকে কাশফুলে ভরে গেছে।মনে মনে ভাবছিলাম আমিই মনে হয় একমাত্র পাবলিক যে কাশবনে যাই নি।সেই সাথে মাথায় এলো আরে,এখন যদি সবাই আমাকে অসামাজিক বলে সমাজ থেকে বের করে দেয় তাইলে তো বিপদ।ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলাম।

IMG_20221014_173423.jpg

মানুষ সামাজিক জীব।সমাজে থাকার জন্য সমাজ তো মানা লাগবে।তাই ভাবলাম সমাজচ্যুত হবার থেকে যাই ঘুরেই আসি।খারাপ তো আর লাগবে না।সাতপাচ ভেবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম যাবই।আর একবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলে,আমি নিজেও নিজেকে ফেরাতে পারি না।

বিকাল নাগাদ সেজেগুজে ফুলবাবু না হোক অন্তত মানুষ এর বেশ নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।কিন্তু বেড়োনোর পর ২টি জিনিস মাথায় আসল,১.আমি কাশবনের লোকেশন জানিনা, ২.একা একা গেলে মজা নাই।তাই ফোন দিলাম বান্ধবীর কাছে(বন্ধুরা সবাই ঢাকায়)।প্রথমেই কুশল বিনিময় করলাম।তারপর বললাম তোরা তো ঘর থেকেই বের হোস না,এভাবে সারাদিন ঘরে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবি।চল তোদের ঘুরিয়ে নিয়ে আসি কাশবন থেকে।রিক্সা ভাড়া তোদের আর বাদবাকি সব আমার।কিন্তু ওপাশ থেকে প্রচুর ভাল কথা ভেসে আসতে লাগল।আশ্চর্য রেগে গেল কেন?

IMG_20221014_174359.jpg

যাই হোক ওরা যাবে না বুঝলাম। তারপর অনেক কষ্টে লোকেশন নিয়ে রওনা দিলাম।জায়গায়াটার নাম কাইয়াগঞ্জ বাঙালি নদীর পাড়ে।আমার বাসা থেকে বেসি দূরে না।বন্ধু থাকলে অনায়াসে হেটেই যাওয়া যেত। কিন্তু আজ কেন যেন বেশ নবাবি মুডে ছিলাম।রিক্সা নিয়ে চলে গেলাম নদীর পাড়ে। কিন্তু লোকেশন অর্ধেক শুনেছি।কারন কাশফুল নদীর ওপারে।

যাই হোক নদী পাড় হতে হবে।গেলাম খেয়া ঘাটে।কিন্তু খেয়ার অবস্থা দেখে আমার গলা শুকিয়ে যাওয়ার জোগাড়। ধারন ক্ষমতার প্রায় দ্বিগুন নিয়ে খেয়া যাতায়াত করছে।নৌকার টালমাটাল অবস্থা দেখে হিসাবে বসলাম।কোনটা বেশি জরুরী? কাশফুল নাকি পৈতৃক প্রাণ।অংকে অনেক বার ফেল করেছি,কিন্তু তারপরেও এবার ডিশিসন নিতে ভুল করলাম না।পৈতৃক প্রাণ জয়লাভ করল।তাই কাশফুল দেখা ইস্তফা দিলাম।

IMG_20221014_174004.jpg

কিন্তু আমি একবার ডিশিসন নিলে তো নিজেই নিজেকে ফেরাতে পারি না।আর আজকের ডিশিসন ছিল কাশফুল দেখা।বেশ বড় ধাধায় পড়ে গেলাম।তখন মাথায় আসল,আমার তো কাশফুল দেখা দিয়ে কথা।ওপারে গিয়েই দেখতে হবে তার কি মানে? এপারেও থাকার কথা।ব্যাস,আর কি লাগে।খুজতে লাগলাম।কথায় আছে না,"যে খায় চিনি,তাকে যোগায় চিন্তামনি।" তাই ভগবানের ইচ্ছায় একটু পর পেয়েও গেলাম।

খেয়া ঘাট থেকে একটু দুরেই।তবে এখানে কাশফুলের পরিমাণ কম।কম হোক আর বেশি হোক,কাশফুল তো কাশফুলই।গুটিগুটি পায়ে রওনা দিলাম।এবং একটু পর পৌছে গেলাম।তবে ওপারের কাশবন দেখে বরাবরই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলছিলাম।তারপর এপারের কাশবনে মনযোগ দিলাম।কয়েকটি ছবি তুললাম।তারপর নদীর পাড়ে বসলাম প্রকৃতি কে উপভোগ করতে।
IMG_20221014_173924.jpg
(এটা আমি,কাশবনের ভূত নয়)

সত্যি বলতে কি,বেশ ভালই লাগছিল।নদীর মৃদু হাওয়া,আপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছিল।ওসময় টুকু দুনিয়ার সব চিন্তা-ভাবনা, মোহ মায়ার অনেক উপরে চলে গেছিলাম।সে এক স্বর্গীয় অনুভূতি।এরপর আস্তে আস্তে সন্ধ্যা নেমে আসল।আমিও বাড়ির ছেলে বাড়িতে ফিরে এলুম সুন্দর একটি বিকেলের স্মৃতি নিয়ে।

সুন্দর জিনিস মাত্রই সবার সাথে ভাগ করে নিতে হয়,তাই চলে আসলাম মুহুর্ত গুলো আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে।

ফটোগ্রাফারবৃত্ত
ডিভাইসPoco x2
লোকেশনবাঙালী নদী,কাইয়াগঞ্জ

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
SET @rme as your proxy
witness_vote.png

Sort:  
 2 years ago 

আপনি একমাত্র পাবলিক না কাশবনে আমিও যাইনি। আমিও আছি আপনার সাথে তবে আমি দূর থেকে দেখেছি কাছে যেয়ে দেখিনি। আপনি ফুলবাবু সেজে বান্ধবীদেরকে ফোন দিলেন কিন্তু আপনার বান্ধবীরা আপনার কষ্টটা বুঝলো না। শেষমেষ একাই যেতে হল আপনাকে কাশবন দেখতে। ঠিকই বলেছেন খেয়া ঘাটের নৌকার যে অবস্থা হয় তাতে নৌকায় উঠতে ভয়ই লাগে। শেষমেষ আপনি নৌকার না উঠে আশেপাশে খোঁজা শুরু করেছেন এবং পেয়েও গেছেন। দুর থেকে কাশবন ঘনই দেখা যায় কাছে গেলে ফুলগুলো কমই থাকে। ভালো লাগলো তারপরও আপনার পোস্টটি পড়ে শেষমেষ তো সামাজিক হলেন।

 2 years ago 

হ্যা অবশেষে আমি সামাজিক।এখন আর সমাজচ্যুত হবার ভয় নেই। ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।

 2 years ago 

ভাই আপনার লেখাটা পড়ে সত্যি ভীষণ ভালো লাগলো। এখন শরৎকাল। সত্যিই চারদিকে কাশ ফুলের মেলা বয়ে গেছে। সবার হাতে দেখছি কাশফুল। আপনার মত আমিও আছি যে এখনো কাশবনে যাইনি। কিন্তু সমাজ থেকে কিন্তু বের করে দেয়নি। আপনার লেখাটি পড়ে সত্যি ভীষণ মজা পেয়েছি। যদিও আপনার বন্ধুরা কেউ যেতে রাজি হয়নি তারপরও আপনি একা একাই গেলেন। তবে আপনি ঠিকই বলেছেন এখনকার খেয়ারঘাটের নৌকাগুলো এতটাই লোকজনে বোঝাই করা থাকে যে দাঁড়াবার জায়গা থাকে না। আপনি ওপারে না যেয়ে ভালো করেছেন ,এপারেই কাশবন দেখেছেন। ঘন না হলেও কাশবন তো। তবুও ভালো ছিল পৈত্রিক প্রাণটা তো বেঁচে গেল। বেশ মজা লাগলো পোস্টটি পড়ে। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

অনেক সুন্দর মন্তব্য করেছেন আপু।অনেক ভাল লাগল আপনার মন্তব্যটি।ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

আগে জীবন পরে অন্যকিছু।বেচে থাকলে জীবনে আরো বহুত কাশফুল দেখতে পারবেন হাহা।তবে কাশফুল গুলো অনেকটাই ঝরে পড়ার উপক্রম।তবে আপনার হাসৌজ্জ্বল চেহরা ভালই লাগছে এমন সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে।🖤

 2 years ago 

সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

এই কাশফুলের ট্রেন্ড টা শুরু হয়েছে গত দুইবছর। তবে সত্যি বলতে দাদা আমি কিন্তু এখন পযর্ন্ত এই ট্রেন্ডে গা ভাসাইনি। আমি অবশ‍্য যতটা পারি এইসব ট্রেন্ড এড়িয়ে চলি তাতে কেউ আমাকে অসামাজিক বললেও আমার কিছু যায় আসে না। আমারও অবাক লাগল আপনার বান্ধবী ঐরকম করলো কেন। মনে হয় রিক্সা ভাড়া দেওয়া লাগবে শুনে ক্ষেপে গেছে হি হি।।

 2 years ago 

মনে হয় ভাড়া দেওয়ার জন্যই।আমি গেলাম কনটেন্ট এর খোজে।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

কাশফুল দেখব দেখব করে এবারও কাশফুল দেখা হলনা। এদিকে শরত প্রায় চলে গেল। কি আর করা আপনার ছবি দেখেই মন ভরে নেই। আপনার কাশফুল দেখার অভিজ্ঞতা পড়েছি, খুব মজা পেলাম। কাশফুল দেখতেই হবে, না দেখলে সমাজ রক্ষা হবে না এটা আমি মানেতে পারছি না। এটা আমরা একটি ট্রেন্ড বানিয়ে নিয়েছি। বান্ধবীদের রিকশা ভাড়া দিতে বলেই ত ভেজাল করে ফেললেন। তারা কোন খরচের মধ্যে নেই। যদি বলতেন তোকে নিয়ে উবার দিয়ে যাব কাশফুল দেখব তারপর বাফেটে গিয়ে পেট ভরে খেয়ে বাহিরে কোথাও থেকে আইস্ক্রিম খেয়ে আবার উবারে করে বাসায় পৌঁছে দিব তাহলে একটি না ৫ টি বান্ধবী রাজি হয়ে যেত। কাইয়াগঞ্জ বাঙালি নদীর পাড়ে ভাল সময় কাটিয়েছেন। তবে নদীর ওপারে যেতে পারলে অনেক কাশফুল দেখতে পারতেন, কারন ওখানে ঘন কাশবন দেখা যাচ্ছে। যাই হোক নিয়তি সবসময় সাপোর্ট করে না। আপনি কিছুটা হলেও কাশফুলের ছোয়া পেয়েছেন দেখে ভাল লাগলো। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

হ্যা ভাই আসলেই এটি এখন ট্রেন্ড হয়ে গেছে।তবে এখন আমরা ব্লগার এগুলোই তো আমাদের কনটেন্ট।তাই আমি গিয়েছিলাম।বান্ধবী রেগে গিয়েছিল মূলত এর আগে ও একদিন যেতে বলেছিল সেদিন যাইনি তাই।আজ বলল বিষয়টা। ধন্যবাদ ভাই আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

আহারে কাশফুল। কাশফুলের জন্য এত কষ্ট। আর আপনার বান্ধবীরা এমন কেন করল বুঝতে পারলাম না। যাই হোক শেষ পযর্ন্ত যে আপনি কাশফুল দেখেতে পেরেছেন এটাই বড় কথা। আপনার ব্লগ পড়ে আমারো একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। পরে কোন একদিন শেয়ার করব আপনার সাথে। শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

ওকে ভাইয়া আপনার ঘটনা জানার অপেক্ষায় রইলাম।শুভ কামনা রইল আপনার জন্যও।

 2 years ago 

ভালই লাগলো ভাইয়া আপনার কাশফুলের গল্পটি পড়ে। তবে এও ভেবে অবাক হচ্ছি যে, আপনি এ যুগের ছেলে হয়েও আজবদী কাশফুলের বাগার কাছ থেকে দেখেন নাই। তবে জায়গা না চিনে বান্ধবীদের ফোন করার বিষয়টি ও কিন্তু আমার কাছে অনেক মজা লেগেছে।

 2 years ago 

আপনারা মজা পেলেই সেটা আমার সার্থকতা।আপু কাশফুল দেখেছি।কিন্তু ট্রেন্ড ফলো করে যাওয়া হয়নি।সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

ভাইয়া আপনার কাশফুলের গল্পটি পড়ে ভালোই লাগলো। সবাই কাশবনে ঘুরতে যায়,আমি আজও যেতে পারলাম না। ধন্যবাদ ভাইয়া শেয়ার করার জন্য। অনেক অভিনন্দন আপনাকে।

 2 years ago 

আপনাকেও ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

আর একবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলে,আমি নিজেও নিজেকে ফেরাতে পারি না।

ডায়লগ টা কেমন চেনা চেনা লাগছে।🤔

চল তোদের ঘুরিয়ে নিয়ে আসি কাশবন থেকে।রিক্সা ভাড়া তোদের আর বাদবাকি সব আমার।কিন্তু ওপাশ থেকে প্রচুর ভাল কথা ভেসে আসতে লাগল।আশ্চর্য রেগে গেল কেন?

বান্ধবীদের নিয়ে কাশ বনে কে যায় ভাই। আপনার ধান্দাটা কি। হা হা হা 🤣🤣🤣

তবে শেষ পর্যন্ত ভালই করেছেন বাবার দেওয়া পৈত্রিক প্রাণটাই জয়লাভ করেছে। সত্যি কথা বলতে এই পোস্ট টা পড়ে আমি অনেক বেশি হেসেছি এবং অনেক মজা পেয়েছি।

ওই একটুখানি কষ্ট লাগলো আর কি, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হল আপনাকে।

 2 years ago 

ডায়লগ টা আমাদের সাল্লু ভাইয়ের।ধান্দা রিক্সাভাড়া টা আদায় করা দাদা,এর বেশি কিছু না।এরকম সুন্দর মন্তব্য অনক উৎসাহিত করে।ধন্যবাদ দাদা।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 60752.38
ETH 2453.49
USDT 1.00
SBD 2.63