অন্ধ স্নেহ

in আমার বাংলা ব্লগ11 months ago
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগবাসী। আশা করি সবাই ভাল আছেন।আমিও ভাল আছি।আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করে নিব সমাজের একটি বিষয় নিয়ে আমার কিছু ভাবনা

pexels-torang-pardosi-18141074.jpg
সোর্স

আগেকার সিলেবাসে নন্দলাল নামে একটি কবিতা ছিল।কবিতার মূল থিমটা হল, নন্দলাল নামের একটি লোক প্রতিজ্ঞা করেছিল সে দেশের ও দশের জন্য চিরদিন বেচে থাকবে।তাই সে রাস্তায় বের হত না,কারন যে কোন সময় গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটে তার জীবন যেতে পারে,রেলে উঠত না,নৌকায় চড়ত না।সে শুধু বাড়িতে শুয়ে বসে থাকত।সমাজের কোন কাজেও তার কোন অবদান ছিল না।তাই তার বেচে থাকা বা মরে যাওয়া তে সমাজে কোন প্রভাব ফেলে না।

এখন কেন এই প্রসঙ্গ টানলাম? বলছি। আমি মানুষটা নন্দলালের সম্পূর্ণ বিপরীত প্রকৃতির। ছোট থেকেই আমাকে কখনো শিকলবদ্ধ করে রাখা হয়নি। এখনকার বাবা মা যেমন ভয় করে, একটু ভিজলেই সর্দি হবে,বিকেলে খেলাধুলা করলে জীবন যুদ্ধে পিছিয়ে যাবে,আমার পরিবার এমন ছিল না। মা মাঝে মাঝে বকা দিলেও বাবা বলত ওকে কি নন্দলাল বানাবে? বড় হয়ে তো ওর বাস্তবতার সাথে বোঝাপড়া করতেই হবে,এখন থেকেই না হয় শিখুক অল্প অল্প।

এই যে ছোট থেকেই স্বাধীনভাবে বড় হওয়া, এটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ সেটা অনেক বাবা মা বোঝে না।একটি উদাহরণ দেই,আমার একটি কাকাতো ভাই আছে।আমার কাকা টিচার, তাই সন্তানের প্রতি তার ছোট থেকেই বিশাল এক্সপেকটেশন। ভাই যেদিন জন্ম নেয় সেদিনই কাকা ঠিক করেছিল সন্তানকে ডাক্তার বানাবেন। ফলাফল ভাইকে ছোট থেকেই সারাদিন ঘরবন্দী থাকা লাগে,সারাদিন পড়াশোনা।আমরা যখন পুজায় বা বিয়ে তে ঘোরাঘুরি করি মজা করি তখন ভাই আমার পড়ার টেবিলে।

ফলাফল ভাইজান দিন দিন রোবটে পরিণত হয়ে গেছে,এখন মারাত্মক লেভেলের অসামাজিক সে।না জানে কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়,না জানে কোন কাজ কিভাবে করতে হয়।তবে সে পড়াশুনায় অনেক ভাল।তবে বাস্তব জীবনে সে পদে পদে বাধা পায়। কারন বাস্তব জীবনের সে কিছুও জানে না। ২দিন আগে ওর মা অসুস্থ হয়ে পড়ে,কাকাও বাড়িতে ছিলনা।ও যে ওর মা কে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে বা ওর বাবাকে ফোন দেবে এতটুকু পর্যন্ত করতে পারেনি। ওর মায়ের অবস্থা দেখে প্যানিক করে নিজেও অসুস্থ হয়ে পরে।

পরে কাকি নিজে কষ্ট করে আমাকে ফোন দেয়,আমি আবার গিয়ে হসপিটালে নিয়ে যাই,কাকাকে কল দেই।এই যাত্রায় কাকি সুস্থ হয়ে ওঠে। এখন আমি ছোট ভাইকে একটু বকা দিচ্ছিলাম,কারন ওর যথেস্ট বয়স হয়েছে ওর শেখা উচিৎ এগুলো।কারন আমি একটু ফাকা থাকি জন্য এগুলো তে আমাকে বারবার ডেকে আনা ঠিক না। আমি সেদিন আমার কিছু ব্যক্তিগত কাজ ফেলে গেছিলাম।যে কাজ গুলো করা খুবই জরুরী।তখন কাকি বলতেছে, হোক রে ও ছোট মানুষ এগুলা কাজ কি ও পারে। বড় হলেই শিখবে।

আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।একটা ক্লাস টেনের ছাত্র এতটাও ছোট নয় যে সে তার মা কে হসপিটালে নিয়ে যেতে পারবে না।এরপরে আবার যখন চেক আপ এর জন্য নিয়ে গেলাম কাকি কে,তখন ওকে বললাম আমার সাথে থাক। সব শিখে নে যাতে ইমারজেন্সীতে কারো আশায় বসে থাকতে না হয়। তখন কাকি বলে,বাইতে এত রোদ,ও বাসাতেই থাক তুই তো আছিসই।

আমি এবার আর চুপ থাকতে পারলাম না। আমি বলেই ফেললাম ওর গরম লাগে আর আমার গরম লাগে না নাকি? আর ওর শেখা লাগবে না? বার বার আমি আমার কাজ ফেলে আসব নাকি? এত বড় একটা ছেলে এগুলো ছোট খাট কাজ করতে না পারলে চলবে কিভাবে? শিখতে তো হবে নাকি? কিন্তু তারপরেও উনার একই কথা। আমি বললাম ঠিক আছে আজ ই শেষ এরপর থেকে আমি আর কাজ ফেলে আসতে পারব না।

এখন আপনার মনে হতে পারে আমি উপকার করে তার খোটা দিচ্ছি বা এই কথা গুলো বলা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।কিন্তু চিন্তা করুন এভাবে যদি ওর কাজ গুলো আমাকে করতে হয় তাহলে ও কিন্তু নিজে শিখছে না। ওকে পরনির্ভরশীল হয়ে থাকতে হচ্ছে। আজ আমার সময় আছে আমি যেতে পারছি,কিন্তু যখন আমি থাকব না? তখন সিচুয়েশন গুলো ওর একা মোকাবিলা করতে হবে। এখন যদি শিখে না রাখে তাহলে, দরকারের দিন ও ঠিকভাবে পারবে না। তাই এখন সব সময় ওর কাজ আমি করে দিয়ে বা ওর বাবা মা করে দিয়ে শেষ পর্যন্ত ওর ক্ষতিই হচ্ছে।
আর আমি এই ক্ষতিটা করতে চাইনা। ওর বাবা মা সন্তান স্নেহে অন্ধ হয়ে বাস্তবতা বুঝতে পারছে না।

সন্তান কে যন্তে রাখা,আগলে রাখা ভাল কিন্তু সেই আদরটা যেন এমন না হয় যে সন্তান পঙ্গু হয়ে যায়। মনে রাখবেন আপনি সারাজীবন সন্তানের সাথে থাকবেন না বা তার দায়িত্ব সারাজীবন নিজের কাধে তুলে নিতে পারবেন না।তাই তাকে এমন ভাবে গড়ে তুলুন যাতে সে নিজের পায়ে দাড়াতে পারে,নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারে। নইলে একসময় না একসময় সে নিজেই আপনাদের গালি দেবে অথবা অন্যের গলগ্রহ হয়ে বেচে থাকবে।

আজকের পোস্ট এপর্যন্তই। জানিনা কেমন লাগবে। সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ। শীঘ্রই আবার নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হব।ততক্ষণ পর্যন্ত ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

VOTE @bangla.witness as witness witness_proxy_vote.png OR
SET @rme as your proxy
witness_vote.png

banner-NEW.png
break2.jpg
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
break2.jpg

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59596.75
ETH 2659.83
USDT 1.00
SBD 2.45