নিবিড়ের সঙ্গে কিছু সময় || @shy-fox 10% beneficiary
খুব একটা বেশি সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় দেওয়ার সময় পাইনা । আসলে সোশ্যাল মিডিয়াটা আমার কাছে হয়ে গিয়েছে , অন কাইন্ড অব নিউজ দেখার মত। যদি কখনো সময় পাই, তাহলে একটু চোখ বুলিয়ে নেই শুধুমাত্র নিউজ দেখার জন্য। মানে যেহেতু ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি মোটামুটি সবাই যুক্ত আমার সোশ্যাল মিডিয়াতে, তাই চেষ্টা করি মাঝে মাঝে কার কি খবর যাচ্ছে সেই বিষয়টা মাঝেমাঝে একটু চোখ বুলিয়ে নেই ।
সন্ধ্যার দিকে খুব একটা বেশি কাজের চাপ ছিল না চেম্বারে। মোটামুটি ফাঁকা সময় পার করছিলাম। হঠাৎ করে যখন সোশ্যাল মিডিয়ার নিউজ ফিড ঘাঁটছিলাম, হুট করে তখন নিবিড়ের ছবিটা সামনে চলে আসে । নিবিড় আমার সম্পর্কে এলাকার ছোটভাই। সেই ছোট্টবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হয়েছি । আজ এলাকায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এলাকার ভিতরে অনেক বড় বড় বিল্ডিং হয়েছে আর যেহেতু আমিও কর্মজীবনে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছি, তাই মোটামুটি নিবিড়ের সঙ্গে অনেক আগেই একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তবে তার সঙ্গে আমার মাঝে মাঝেই সোশ্যাল মিডিয়াতে কথা হচ্ছিল।
যেহেতু একই এলাকায় ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছি, একসঙ্গে অনেক ক্রিকেট খেলেছি এবং ছোট বেলা থেকেই এলাকার বিভিন্ন সামাজিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করতাম । যার কারণে ওর সঙ্গে আমার একটা আলাদা সখ্যতা ছিল। বলতে পারেন , ও বয়সে ছোট হলেও আমার কাছে অনেকটা বন্ধুর মত ছিল । যাইহোক তবে বাস্তবতার জন্য অনেকটা দূরত্ব তৈরী হয়ে গিয়েছিল । আজ যখন হঠাৎ করে নিবিড়কে একটু অসহায়ের মতো অবস্থায় দেখলাম , তখন বিষয়টা আমার হৃদয়ে খুব নাড়া দিয়ে গিয়েছে।
নিজের কাছে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। একসময়কার কাছের ছোট ভাইটা মাস তিনেক আগে স্ট্রোক করে, অনেকটা পঙ্গু হয়ে গিয়েছে। মানে তার শরীরের বাম পাশটা অনেকটা অকেজো হয়েছে । কিন্তু তার কোনো খোঁজখবর আমি নিতে পারিনি । হুট করে যখন এই চিন্তাটা মাথায় ভিতরে ঢুকে গেল, তখন মুহূর্তেই আমার মনে আবেগের সঞ্চারণ হলো এবং নিজের কাছে নিজেকে খুব দোষী লাগছে যে, আমি কেন তাকে দেখতে যেতে পারিনি মাস তিনেক আগে । এইটা ভেবে খুব খারাপ লাগছিল আজ। হুট করে ব্যাপারটা এভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখতে হবে, এটা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না।
বাস্তবতা যে বড়ই নির্মম, সেটা আমি আবারো একবার প্রমাণ পেলাম। যার কারণে আমার একসময়কার কাছের পরিচিত মানুষদের সঙ্গে এমন দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছে যে, তাদের বিপদাপদের খোঁজখবর ও আমি নিতে পারিনি । যাইহোক কোনো কিছু না ভেবেই, ওর আগের নাম্বারে একটা ফোন করলাম । ফোনটা ধরল ওর আম্মু এবং আমি যখন ওর খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম, ওর আম্মু তখন মুহূর্তেই কেঁদে দিয়েছিল। ব্যাপারটা আমাকে আরো ভারাক্রান্ত করে ফেলেছিল । আমি নিবিড়ের সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারটা নিশ্চিত করার জন্য, ওর আম্মুর সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলার চেষ্টা করলাম এবং ওর আম্মু ভালোভাবেই আমাকে ওর সঙ্গে দেখা করার পারমিশন দিল।
যাইহোক গ্রামের চেম্বার থেকে কোনমতো উঠেই, একদম এই শীতের মধ্যেই আমি চলে গেলাম প্রথমে ফলের দোকানে । সেখানে গিয়ে কিছু ফল কিনে তারপর অবশেষে রওনা হলাম নিবিড়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে । ওর বাড়িতে যখন আমি পৌঁছালাম, তখন মোটামুটি বাড়িটা বেশ নিশ্চুপ। যাইহোক কোনো রকম দোতলায় উঠলাম এবং যখন ওকে আমি দেখলাম, ও বিছানায় শুয়ে আছে এবং আমার দিকে দেখছে। এবং আমাকে দেখে কথা বলার চেষ্টা করছে, তখন ব্যাপারটা আমাকে আরো বেশি আবেগপ্রবণ করে তুলেছে। কারণ যে মানুষটাকে আমি বছর দুয়েক আগেও সুস্থ-স্বাভাবিক দেখেছি, আজ তার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে এবং হাঁটা চলাফেরা খুব একটা ভালোভাবে করতে পারছেনা। ব্যাপারটা আমাকে খুবই দুঃখ দিয়েছে, সাময়িক সময়ের জন্য ।
যাই হোক অবশেষে নিজেকে শক্ত করে ওর চিকিৎসার ফাইলপত্র গুলো দেখলাম এবং কিভাবে চিকিৎসা চলছে, সেই গুলো একটু বোঝার চেষ্টা করলাম । যাইহোক আমি জানি তাকে যেভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, সেটা মোটামুটি ভালই চলছে কিন্তু এত অল্প বয়সে ওর যে স্ট্রোক হয়েছে, এটা আসলে কোনভাবেই কাম্য ছিল না । আসলে পৃথিবী কোন দিকে ঘুরছে এবং কিভাবে পৃথিবীর মানুষের জীবনযাপন চলছে, এটা নিয়ে চিন্তা করলে , অনেকটাই মাঝে মাঝে আমার কাছে অবাক লাগে কারণ সবকিছু উল্টাপাল্টা নিয়মকানুনে চলছে ।
ছাব্বিশ বছরের একটা টগবগে যুবকের যে,এই পরিনিতি এত অল্প বয়সে হবে, এটা আমি কখনো কল্পনাও করতে পারি নি । যাইহোক ওর সঙ্গে কিছুটা সময় কাটালাম এবং ওকে মানসিকভাবে সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। আসার সময় শুধু ওকে একটা কথাই বলে আসলাম, নিবিড় তোর জন্য শুভেচ্ছা রইল, তোর সুস্থতা খুবই জরুরী, কারণ একসঙ্গে এই পৃথিবীর বুকে আমরা আবারও বিচরণ করে বেড়াতে চাই, তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠ রে ভাই ।।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
ভাইয়া আপনার আজকের পোস্টটি পড়ে কেন জানি মনের অজান্তেই কষ্টের অনুভূতি তৈরি হয়ে গেল। যখন কাছের মানুষ গুলো সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে জীবনের গতি হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন দেখে খুবই খারাপ লাগে। হয়তো সৃষ্টিকর্তা তার ভাগ্যে এই কষ্টগুলো রেখেছিল। এত অল্প বয়সে অসুস্থতার কারণে তার জীবনের গতিপথ থেমে গেছে এটা ভেবেই চোখের কোনে জল চলে আসলো। আসলে এই বিষয়গুলো খুবই কষ্টকর। মাঝে মাঝে মেনে নেওয়া কষ্ট হয়ে যায়। সৃষ্টিকর্তা যেন এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন কাউকে না করে সেই কামনাই করি সব সময়। আল্লাহ যেন তাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ জীবনে ফিরে আসার তৌফিক দান করেন এই কামনাই করি।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
আসলেই ব্যাপারটা কেমন খারাপ লাগলো আমার কাছেও!এতো অল্প বয়সে এতো কঠিন রোগ আসলেই মেনে নেওয়ার মতো না ই।আমি শুধু ভাবছি যার এই বয়সে পুরো চারপাশ দাঁপিয়ে বেড়ানোর কথা তার আজকে হাঁটতেই কষ্ট হচ্ছে।দোয়া করি উনার জন্য।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
ভাইয়া আপনি ঠিকই বলেছেন আমাদের কর্ম ব্যস্ততার কারণে কাছের মানুষগুলো দূরে সরে যাচ্ছে। যারা খুবই আপনজন ছিল এবং একই সাথে আমরা বড় হয়েছি কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দূরত্ব আমাদের মধ্যে বেড়ে গেছে। কারণ সবাই কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে নিবিড় ভাইয়ের জন্য খারাপ লাগলো। কারণ এত অল্প বয়সে তার জীবনের উপর দুর্ভোগ নেমে এসেছে। সত্যি কথা বলতে রোগ কখনো বয়স মানে না। তবে আপনি যে আপনার এই কর্মব্যস্ততার জীবনেও একটুখানি সময় বের করে তার সাথে দেখা করতে গিয়েছেন এটা জেনে ভালো লাগলো। আমাদের সকলেরই উচিত আমাদের কাছের মানুষগুলোর বিপদে সব সময় পাশে দাঁড়ানো। হয়তোবা তাদের বিপদে পাশে দাঁড়ালে তারা মানসিকভাবে অনেক বেশি শক্তি পাবে। নিবিড় ভাইয়া এবং আপনার জন্য শুভকামনা রইলো।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
আসলে এটা খুবই দুঃখজনক একটি ব্যাপার এতো কম বয়সে এতো কঠিন রোগ হয়েছে সত্যিই কষ্টকর। আপনার মনটা অনেক বড় ভাইয়া আপনার চিন্তাভাবনা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। সত্যি আমরা সবাই যদি এরকম মানুষের পাশে দাঁড়াই তাহলে কিন্তু আমাদের সমাজ পরিবর্তন হয়ে যায়।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
আপনার পুরো পোস্টটা পড়ে আমার অনেক খারাপ লেগেছে। এত অল্প বয়সে সৃষ্টিকর্তা তাকে এত বড় একটি রোগ দিয়েছে এটা জেনে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। আসলে আমরা যারা সুস্থ আছি তারা বুঝি নাচে সুস্থতা কতটা নিয়ামত। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত সুস্থ থাকার জন্য শুকরিয়া আদায় করা। আপনার পোস্টটি পড়ে আমার খুবই মর্মাহত হয়েছি যে এত বড় রোগ সে এখন হাঁটতে পারছে না। আমরা তার জন্য দোয়া করি সে যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
ভাইয়া আপনার পোস্টটি পড়ে কেমন যেন ভারাক্রান্ত হয়ে গেলাম। আপনার পাড়ার ছোট ভাই এত অল্প বয়সে স্ট্রোক করেছে জেনে খুবই খারাপ লাগছে। এ বিষয়ে কি বলব বুঝতে পারছি না। আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করি, নিবিড় ভাই যেন খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। তার জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল।