কুসংস্কার
অনেকটা বাধ্য হয়েই আজ হাকিম ভাইয়ের অস্থিরতার কারণে দ্রুত ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে। যদিও আজকে ছুটির দিন, আমার এত তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার কথা না, তারপরেও ভদ্রলোক যেহেতু বাসায় এসে ডাকাডাকি করছিল, এজন্য মূলত উঠলাম।
ভাই বিদ্যুৎ বিলের কাগজটা গতকাল দিয়ে গিয়েছিলাম। যদি পয়সাটা এখন দিতেন, তাহলে সেটা আমার কাজে লাগতো। আমি তখন তাকে বলার চেষ্টা করলাম, আমি অবশ্যই আপনাকে বিকালে নিচতলায় নামলে পয়সাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। তবে ভদ্রলোক একদম নাছোড়বান্দা, সে বলছে ভাই আমার মেয়ের জন্য একটা মানত করেছিলাম, এজন্য খাসি কিনতে যাব। তাই কিছুটা পয়সার কমতি আছে, এজন্য আপনার কাছে আসা।
আমি এবার বুঝতে পারছি, ভদ্রলোক হয়তো বিদ্যুৎ বিল কয়েকটা দিন দেরিতে দেবে। তবে অগ্রীম সে আমার কাছ থেকে পয়সাটা চাচ্ছে।যখন খাসি কেনার কথা শুনেছি, তখন কৌতুহল বশত জানার চেষ্টা করলাম যে আসলে ঘটনাটা কি।
তবে যেটা শুনলাম, সেটা শুনে অনেকটাই আমি এই সকালবেলা চিন্তায় পড়ে গেলাম। এই সময়ে এসেও যে এমন কুসংস্কারে সে বিশ্বাস করছে এবং তা নিয়ে প্রতিনিয়ত সে দুশ্চিন্তায় ভুগছে,এটা ভাবতেই যেন আমি অনেকটা বিস্মিত হয়ে গিয়েছি।
তার মেয়ে আরাবি, আমার ছেলের থেকে দু মাসের ছোট হবে এবং এ বাসার সকলেই মেয়েটাকে বেশ ভালই আদর করে। কিছুদিন আগে হাকিম ভাইয়ের স্ত্রী নাকি তার বাবার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল, সেখান থেকে ফেরার পথে রাস্তায় কোথায় নাকি একটা মাজার দেখেছিল এবং সেখানে নাকি বলেছিল যে, তার মেয়ের অসুখ যদি ভালো হয়, তাহলে নাকি এখানে একটা খাসি দেবে।
আচ্ছা, এখানে আসলে তার মেয়ের অসুস্থতার সঙ্গে মাজারে খাসি দেওয়ার কি সম্পর্ক আছে, তা আমার কোনভাবেই মাথায় ঢুকছেনা। হাকিম ভাইকে বললাম, যে পয়সা খরচা করে খাসি কিনবেন, সেই পয়সা দিয়ে ভালো একটা শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়ে নেন এবং বাচ্চার যদি আসলেই কোন সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে সেটা আশা করা যায়, ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই ধরা পড়বে।
আমি বিশ্বাস করি, আপনার মেয়ে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমেই সুস্থ হয়ে উঠবে। আমার এসব কথা শোনার পরে হাকিম ভাই বললেন, ভাই সবই বুঝলাম তবে আমার স্ত্রীকে নাকি ঐ মাজার প্রায় রাতেই স্বপ্ন দেখায়, এজন্যই আমার স্ত্রী অনেকটা অস্থির হয়ে গিয়েছে।
আসলে এইরকম গোঁড়ামি নিতান্তই ব্যক্তিগত। সকাল সকাল এমন খবর আমাকে সত্যিই বেশ ব্যথিত করে ফেলেছে আর তাছাড়া আমি এইসব কুসংস্কার শুনে নিজেও কিছুটা বিব্রত বোধ করেছিলাম।
অতঃপর তাকে এক প্রকার বাধ্য হয়েই বিদ্যুৎ বিলের জন্য চাওয়া পয়সাটা দিয়ে দিলাম। এমতাবস্থায় আসলে তাকে কোন কিছু বলে কোন লাভ হবে না। যতদিন না তার এই গোঁড়ামি দূর হবে, সেরকম এইরকম কাজ করতেই থাকবে। তবে তার সঠিক চিন্তাধারার উদয় হোক, এমনটাই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আমরা যদি আধুনিক যুগে বাস করি তারপরও মানুষের মন-মানসিকতা সেই প্রাচীনকালের মতোই পড়ে আছে। আমরা এ যুগে বসবাস করি কুসংস্কারের ওপরে অনেকটাই বিশ্বাস রাখি আর এটা আমার অনেক সময় নিজের কাছে হতাশা মনে হয়। অনেক বিষয় আমি লক্ষ্য করে দেখেছি অনেক শিক্ষিত লোকও এর মধ্যে ডুবে আছে এখন পর্যন্ত। ছাগল মান্নত না করে সে যদি টাকাটা নিয়ে যদি একটা ভালো ডক্টর দেখে,তার মেয়েকে চিকিৎসা করায় তাহলে আমার মনে হয় সব থেকে বেশি ভালো হয়। প্রত্যেকটা মানুষকে বোঝার এবং সঠিকটা জানার হেদায়েত দান করুক আমিন।
মাজারে খাসি দেওয়া এটা একেবারে কুসংস্কার ভাই। সেরকম হলে সে তার সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য চাইতে পারে। তাই বলে এভাবে খাসি দিয়ে। তবে আমাদের গ্রামেও এইরকম কুসংস্কারের চল আছে। আমাদের মা চাচিরা বিশ্বাসও করে। হাকিম সাহেবও দেখছি একই কাজ করছে। কিন্তু এর মধ্যে কোনো কল্যাণই নেই। আপনি ঠিক বলেছেন ভাই এই টাকা দিয়ে সে তার মেয়েকে ভালো শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে পারত।
এই ধরনের আজগুবি কথা শুনলে বেশ হাসি পায় আমার।মানুষ এই যুগেও এসে মানুষ এমন কুসংস্কারে বিশ্বাস রাখে এটা ভাবতেই আমার হাসি পায়। আসলে আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার মানুষজন একটু বেশি ধর্মান্ধ যার ফলে এই মাজার ব্যাবসা গুলো একটু বেশিই চলে।
ভাই সম্পূর্ণ পোষ্ট টি পড়লাম হাকিম ভাই তার মেয়ের জন্য মাজারের নিকট খাসি জবাই দিবে ৷ আসলে এসব সংকৃতি গ্রামে এখনো বিদ্যমান ৷ তারা বিস্বাস করে এসব মানত পূর্ণতা পায় ৷ তবে ভাই এই বিষয়ে তেমন অভিমত দিতে পারবো না ৷ কারন গ্রামে এখনো এসব রিতীনিতী দেখি ৷
এখনো অনেক মানুষ আছে যারা এসব কুসংস্কার বিশ্বাস করে। হয়তো ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে মাজারের প্রতি অনেকের বিশ্বাস আছে। তবে মেয়ের অসুস্থতার সাথে খাসি কিনে মাজারে দেওয়ার কোন সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয় না। তবে হাকিম ভাইদের মত মানুষদের বোঝানো অনেক কঠিন। এই টাকা দিয়ে যদি সে মেয়ের চিকিৎসা করত তাহলে আরো বেশি ভালো হতো। যাই হোক আপনি নিজের জায়গা থেকে তাকে যতটুকু বোঝানোর চেষ্টা করেছেন এতে যদি সে বুঝতো তাহলে হয়তো ভালোই হতো। ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
এখনো আমাদের দেশে অনেক কুসংস্কার রয়েছে। আমরা সবাই শিক্ষিত হয়েছি কিন্তু এখনো আগেকার দিনের কুসংস্কার ছাড়তে পারিনি। যাইহোক আপনি আপনার মত করে বেশ ভালো বুদ্ধি দিয়েছেন ব্যক্তিটাকে কিন্তু সে যদি না বুঝে সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনার জন্য শুভকামনা রইল ভাই।
আসলে এই ব্যাপার গুলো আমার কাছেও কুসংস্কার মনে হয় ৷ তবে অনেকেই এগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন ৷ যার বিশ্বাস যেমন আর কি ৷ তবে খাসি কেনার বদলে ভালো ডাক্তার দেখানো টা বুদ্ধিমানের কাজ হবে ৷ যাই হোক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য ৷
বর্তমান বিজ্ঞান প্রযুক্তির যুগেও মানুষ এরকম কুসংস্কারের মধ্যে নিজেদেরকে আবদ্ধ করে রেখেছে এটা যা জেনে খুবই আশ্চর্য হয়ে গেলাম। আমরা সারাদিন যে বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করব সেটাই স্বপ্নে দেখা যায়। হয়তো ওই মেয়ের মা মাজার নিয়ে চিন্তা করে যার কারণে তিনি স্বপ্নে মাজার দেখেন। তবে মেয়ের রোগের সাথে মাজারের কোন সম্পর্ক নাই। আর মাজারে খাসি মানত করার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে ধর্মীয় গোড়ামী এবং কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই না। আমাদের সকলের এ ধরনের কুসংস্কার সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত।