নীড়ে ফেরা || @shy-fox 10% beneficiary

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

সেদিন মনেহয় বলেছিলাম, ইব্রাহিম মিয়ারা এই এলাকায় ধান কাটতে এসেছিল । যেহেতু সময়টা এখন ধান কাটার চলছিল, তাই মোটামুটি তাদের জীবিকার তাগিদে এসেছিল খালেক মিয়ার বাড়িতে । যদিও খালেক মিয়ার জটিলতাপূর্ন সময় যাচ্ছিল আর তারা যেহেতু বন্ধু, তাই তারা দুজন দুজনার সমস্যাকে ভাগ করে নিয়েছিল ।

20220530_182327-01.jpeg

দীর্ঘ এক সপ্তাহ টানা রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ইব্রাহিম মিয়ার দল খালেক মিয়ার সম্পূর্ণ জমির ধান গুলো কেটে দিয়েছে । খালেক মিয়া মোটামুটি চিন্তামুক্ত । অবশ্য বেশ অতিথি আপ্যায়নের মাঝেই ছিল ইব্রাহিম মিয়ার দল । তাদের জায়গা হয়েছিল ঐ বাড়ির গোলা ঘরের সামনে । সবাই পাটি বিছিয়ে লম্বা হয়ে ঘুমিয়ে যেত । প্রতিদিন সকালবেলা উঠে পান্তা ভাত , দুপুরবেলা হয়তো আলু ভর্তা দিয়ে ভাত আর রাত্রেবেলা কখনো মাছ বা ব্রয়লার মুরগির মাংস, তাতেই চলতো সবার পেট ভরে খাবার ।

20220530_182318-01.jpeg

সেই প্রখর রোদের মধ্যে মাঠে নিজের হাতে ধান কাটা কিন্তু কম কষ্টদায়ক ব্যাপার নয় । যারা হয়তো এমন কাজের সঙ্গে বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ত ছিল, তারা এই বিষয়টা একটু হলেও অনুধাবন করতে পারবে । সেই ধান কেটে কাঁধে করে বাড়িতে নিয়ে আসা আসলেই বেশ কষ্টসাধ্য ।

20220530_182224-01.jpeg

যদিও এই বন্ধুত্ব গুলো কর্মের বিনিময়ে হয়েছে । তাই মোটামুটি তাদের আপ্যায়ন ব্যবস্থাও যথেষ্ট করার চেষ্টা করেছে , খালেক মিয়া তার জায়গা থেকে । দেখতে দেখতে সাতটা দিন কিভাবে যে ফুরিয়ে গেল তা বোঝাই গেল না । অতঃপর মাঠের সব ধান এখন খালেক মিয়ার বাড়ির উঠোনে ।

20220530_182347-01.jpeg

কারো কারো হাতের আঙ্গুলে বা পায়ে কাস্তের টান পড়েছে ধান কাটার সময় । একটু কেটে ছিঁড়ে গিয়েছে ইব্রাহিম মিয়ার দলের মানুষের । এতে অবশ্য তেমন ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের । এমনটা হয় দীর্ঘ সময় মাঠে কাজ করলে । যেহেতু এটাই তাদের কর্ম , তাই হালকা কাটাছেঁড়া মেনে নেয় সবাই ।

কাঁচা টাকার গন্ধ একটু ভিন্ন রকম । সাতদিন টানা পরিশ্রম করার পরে অবশেষে ইব্রাহিম মিয়ার হাতে কাঁচা টাকা দিয়েছে খালেক মিয়া । সেগুলো আবার ইব্রাহিম মিয়া সবার মাঝে ভাগ ভাগ করে দিয়েছে । যে, যে যার মতো করে খুশি । কারো চোখে মুখে কি যে পরিমাণ, সেই আনন্দের ঝিলিক, তা ভাষায় প্রকাশ করা কিছুটা কষ্টসাধ্য । তারা আজ বাড়ি ফিরবে , সোনাইডাঙ্গার পথে । সেই যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে যাবে, নদীর ওপারে তাদের বউ-বাচ্চা অপেক্ষা করছে ।

20220530_182137-01.jpeg

দুপুরের দিকে ইব্রাহিম মিয়ার দলের লোকজন প্রস্থান করবে খালেক মিয়ার বাড়ি থেকে । ইব্রাহিম মিয়া বলছে দেখা হবে খালেক আবারো । খালেক মিয়া শেষ কুশল বিনিময় করে তাদের বিদায় দিচ্ছে । বিদায় বেলায় দুই বন্ধু, একটু কোলাকুলি করে নিল । এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কিছুটা ভিন্ন রকম । এখানে দুজনার প্রয়োজন কাজ করে , তাই দেখা হয় বারবার । অনেকটা বলতে পারেন প্রয়োজনের বন্ধুত্ব , তবে এমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গুলো টিকে আছে, এখন পর্যন্ত প্রতিনিয়ত ।

20220530_182300-01.jpeg

মজনু কাকার দোকানে যখন বসে চা খাচ্ছি, তখন দেখছি ইব্রাহিম মিয়ার দলের লোকজন রাস্তার পাশে বসে আছে, অনেকটা চাতক পাখির মতো । কখন একটা ফাঁকা গাড়ি আসবে আর সবাই ঝটপট উঠে পড়বে । নীড়ে ফিরবে তারা আপনজনের কাছে, তার জন্য আলাদা একটা টান কাজ করছে । যেমনটা আমার আপনার হয়, দূরে থাকলে ।

20220530_182312-01.jpeg

এই সহজ-সরল লোক গুলো সাবধানে নীড়ে ফিরে মিলিত হয়ে যাক আপনজনের মাঝে পুনরায়, এই কামনাই করি । ভালো থাকুক ইব্রাহিম মিয়া ও তার দল । আবারও দেখা হবে পরবর্তী সিজনে ।

Banner.png

ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  
 2 years ago 
ভাইয়া খুবই ভালো লাগলো ভালো থাকুক ইব্রাহিম ভাই ভালো থাকুক ইব্রাহিম ভাইয়ের দল কথাটি।আসলেই ইব্রাহিমিয়া কিংবা তার দল এরা এভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের নানাভাবে উপকার করে যাচ্ছে।বিশেষ করে প্রতি সিজনে ধান কাটার সময়।জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা ঘর ছেড়ে পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন।কিন্তু কাজ শেষে যখন প্রিয়জনদের টানে নীড়ে ফিরে।সেই অনুভূতিটা আসলেই ভিন্নতর।ভালো থাকুক ইব্রাহীমিয়া ভালো থাকুক তার দল।নীরর ফিরে আপনজনদের সাথে মিলে মিশে হোক একাকার

♥♥

 2 years ago 

হুম আপু । ভালো থাকুক সবাই তার , নিজ নিজ জায়গাই। বেশ ভালোই বলেছেন কথা গুলো আপু ।

 2 years ago 

এই চড়া রোদ মাঠে ধান কাটার কাজ সত্যিই খুবই কষ্টসাধ্য , ধান কাটা শেষে সেই ধানের আঁটি গুলো কাঁধে বোঝা বেঁধে বাসায় নিয়ে যাওয়া তো আরও কষ্টসাধ্য কাজ। যাই হোক ইব্রাহিম মিয়া ও তার দল ধান কাটার কাজ শেষ করে তাদের নিজ নিজ নীড়ে ফিরছে দেখে বেশ ভালো লাগলো। তাদের সকলের জন্য শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

একদম ঠিক কথা বলেছেন ভাই । আমি যেহেতু বেশ কয়েকদিন স্বচক্ষে দেখেছি , তাই সেটা একটু হলেও বুঝতে পেরেছি ।

 2 years ago 

নীড়ে ফিরবে তারা আপনজনের কাছে, তার জন্য আলাদা একটা টান কাজ করছে । যেমনটা আমার আপনার হয়, দূরে থাকলে ।

ইব্রাহিম মিয়া ও তার দলের লোকজন কাজ শেষে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে জেনে ভালো লাগলো। আসলে এই মানুষগুলো বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কাজ করে অন্যের উপকার করে। একদিকে যেমন তারা অর্থ উপার্জন করে অন্যদিকে অন্যের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত করে। আসলে অনেকদিন পর বাড়ি ফেরার মাঝে আলাদা রকমের অনুভূতি কাজ করে। আপন মানুষদের থেকে দূরে থাকলে এই অনুভূতি উপলব্ধি করা যায়। তবে যাই হোক দীর্ঘদিন পর সবাই তাদের আপন মানুষের কাছে ফিরছে জেনে ভালো লাগলো। সকলের জন্য শুভকামনা রইলো।💓💓

 2 years ago 

আসলে দীর্ঘদিনের জন্য অন্য একটা জায়গার তারা কাজের সন্ধানে এসেছিল , যখন বাড়ি ফিরছিল তখন অদ্ভুত একটা অনুভূতির ছাপ তাদের চোখে ছিল ।

 2 years ago 

সেই প্রখর রোদের মধ্যে মাঠে নিজের হাতে ধান কাটা কিন্তু কম কষ্টদায়ক ব্যাপার নয় । যারা হয়তো এমন কাজের সঙ্গে বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ত ছিল, তারা এই বিষয়টা একটু হলেও অনুধাবন করতে পারবে । সেই ধান কেটে কাঁধে করে বাড়িতে নিয়ে আসা আসলেই বেশ কষ্টসাধ্য ।

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের মানুষ কৃষির উপর নির্ভর করে জীবন যাপন করে। প্রখর রোদের মাঝে মাঠে কাজ করা সত্যিই অনেক কষ্টদায়ক। আমি গ্রামের ছেলে বাবার সাথে অনেকবারই মাঠে কাজ করেছি কি পরিমান কষ্ট হয় সেটা আমি জানি। কিন্তু একটা জিনিস বুঝিনা বাবাদের কোন কষ্ট নেই কেন তারা সারাদিন রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করে তার পরেও কখনো বলে না যে কাল থেকে আর মাঠে যাব না যেমনটি আমরা বলে থাকি।
দিনমজুরের কথাগুলো আপনি খুব সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন খুবই ভালো লাগলো আমার কাছে সুখে থাকুক ইব্রাহিম মিয়া এবং তার দলের লোকজন।

 2 years ago 

আপনার ব্যাপারটা জেনে ভালই লাগলো ভাই । আমি বিশ্বাস করি আপনি তাদের অনুভতি একটু হলেও অনুধাবন করতে পেরেছেন ।

 2 years ago 

ভাই অনেস্টলি যদি বলি, তাহলে বলতেই হয় আপনার প্রথম দিকের লেখার চাইতে এখন ম্যাচিউরিটি অনেক বেড়েছে। নিতান্তই সাধারণ আর তুচ্ছ ঘটনাকে বেশ ভালোভাবেই উপস্থাপন করতে শিখেছেন। মনে হচ্ছে লেখালেখিতে আসলেই আপনার হাত অনেকটাই পেকে উঠেছে। ইব্রাহিম মিয়া আর খালেক মিয়ার এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের গল্প প্রথম পর্ব পড়েছিলাম। জীবন ও জীবিকার তাগিদে কতভাবে মানুষের কত রকম সম্পর্ক গড়ে ওঠে এটা তারই একটা উদাহরণ। ভালোবাসা রইলো আপনার জন্য সব সময়।❤️👍

 2 years ago 

আমি আপনাকে নজরদারিতে রেখেছি, সেই দীর্ঘ সাত মাস আগে থেকে । আপনার প্রতিটি মন্তব্য আমাকে বারবার বেশ অনুপ্রেরণা যোগাতো, এটা আমি কোন ভাবেই অস্বীকার করতে পারব না। আমি কৃতজ্ঞ আপনার মত পাঠক পেয়ে । আমার পক্ষ থেকে আপনার কাছে ১১ ই জুন থাকবে , শুভেচ্ছা উপহার । ভালোবাসা রইলো । ❤🙏

 2 years ago 

❤️❤️❤️🙏

 2 years ago 

আসলে নারীর টান বলে একটা কথা আছে।কেউ দিন শেষ কেউ সপ্তাহে কিংবা মাস বা বছর।যাই হোক আসলে এই মানুষ গুলো জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কাজ করে।তাদের ও চাহিদা মিটে আবার অন্যদের ও উপকার হয়।ভালো লাগলো।ধন্যবাদ

 2 years ago 

হুম নাড়ীর টানে বাড়ির পানে , একদম ঠিক বলেছেন আপু । ভালো লাগলো আপনার মন্তব্যটা ।

 2 years ago (edited)

ছোটবেলায় দেখতাম নানুবাড়িতে ধান কাটার মৌসুম হলে এরকম ইব্রাহিম মিয়ার দল এসে হাজির হতো। ধান কাটা শেষ হলে তারা আবার চলে যেত। অনেকদিন পর আপনার ইব্রাহিম মিয়ার গল্প শুনে সেই দিনের কথা মনে পড়ে গেল। দীর্ঘদিন পরে আপনজনের কাছে ফিরে যাওয়ার কি যে আনন্দ যারা দূরে থাকে তারাই বুঝতে পারে। এই ইব্রাহিম মিয়ার দলের জন্য দোয়া করছি যেন সুস্থভাবে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারে।

 2 years ago 

এই লোকগুলো আসলে শ্রমজীবি মানুষ আপু ,এদের কথা চিন্তা করলেই অন্য রকম একটা শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হয় ।

 2 years ago 

ভাই এদের জীবনটাই এরকম।আমি এমন ধরনের মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখেছি।একদিন আমাদের ধান কাটতে কাটতে একজন আঙ্গুল কেটে গিয়েছিল,আমি ডিটল দিয়ে পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করার পর লোকটিকে বলছিলাম আজকে আপনার কাজ করার দরকার নাই।আপনি আজকে যান।লোকটি প্রতিউত্তরে আমাকে বলেছিল "বাবা রাত পোহাইলে কিস্তির জ্বালা,কাজ না করলে টাকা টা তোমার বাপেও দিবে না"।বিশ্বাস করেন আমি সেখানে আর কিছু বলার সাহস পাই নি।😢

জীবিকার তাগিদে মানুষকে কতকিছুই করতে হয়।ভাবতেই অনেকটা গা শিউরে উঠে,এই মানুষগুলো ভালো থাকুক সবসময় শুধু এই দোয়া করি।🖤

 2 years ago 

বেশ করুন অবস্থা ভাই । বেশ আবেগপ্রবণ ব্যাপার। জীবন যেখানে যেমন।

 2 years ago 

ভাইয়া, আপনার লেখা প্রাত্যহিক জীবনের বাস্তব গল্পগুলো আমার কাছে খুবই ভালো লাগে।একদম পাকা হাতের লেখকের মতোই আপনি শুরু করেন।প্রথম থেকেই জানার কিছু থাকে যেটি নীড়ে ফেরা গল্পটি।সুন্দর করে সাজিয়েছেন,আমার প্রার্থনা করি ঘরের মানুষ ঘরে ফিরুক সুস্থভাবে।ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

আপনাদের মতো পাঠক আছে বিধায় আমি বারবার লেখার উৎসাহ পাই আপু ।

 2 years ago 

খালেক মিয়ার ধান কাটার এই গল্পটি এর আগেও আপনি শেয়ার করেছিলেন। যাই হোক আজকে সম্পন্ন এবং শেষ গল্পটা পড়তে পেরে খুবই ভালো লাগলো। আসলে খালেক মিয়া ধান কাটা নিয়ে অনেক বিপদে পড়ে গিয়েছিলেন এবং ইব্রাহিম মিয়া তার এই বিপদের সময় এসে পাশে দাঁড়ায়। আসলে এটি অর্থের বিনিময়ে হলেও তার বিপদের সময় পাশে থাকা খুবই উপকার হয়েছে। যাই হোক টানা সাতদিন কাজ করার পরে খালেক মিয়ার ধানগুলো বাড়িতে তুলতে পেরেছে এবং ইব্রাহিম মিয়া ও তার দলের সবাই মনের সুখে টাকা নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছে। সত্যিই আজকে পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আসলে বিপদে আপদে পাশে থাকাটাই সব চাইতে বড় বন্ধুর পরিচয়। খুবই ভালো লাগলো, সকলের জন্য শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাই , যত্ন করে গল্পটা পড়ে মন্তব্য দেওয়ার জন্য। শুভেচ্ছা রইল।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 60202.34
ETH 2423.33
USDT 1.00
SBD 2.43