গল্প-স্বল্প || @shy-fox 10% beneficiary
সজীব আমার বাল্যবন্ধু । সবথেকে বড় ব্যাপার ওর সঙ্গে আমার প্রায়ই কথা হয় । সেই ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বেড়ে উঠেছি । হয়তো জীবনের ঘূর্ণিপাকে বাস্তবে একেক জনের কর্মক্ষেত্র একেক রকম হয়ে গিয়েছে । তবে তারপরও আমি মনে করি যে মানুষগুলোর সঙ্গে একটা সময় আমার পরিচয় ছিল, যাদের সঙ্গে আমার শৈশবকালের সময়টা কাটিয়েছি তাদের সঙ্গে যদি টুকটাক দেখা হয়েই যায় এবং সেখানে যদি কুশল বিনিময় করা যায়, তাহলে ভালোই লাগে ।
ওর রেস্টুরেন্টে আমি যে প্রথম গিয়েছে তেমনটা বললে বোধহয় ভুল হবে । সম্ভবত বেশ কয়েকবার গিয়েছিলাম । বেশ অনেকগুলো খাবার খাওয়ার চেষ্টা করেছি ওর রেস্টুরেন্টে । তবে প্রত্যেকটা বিষয়ের কিছু ভিন্নতা থাকে । যেমন ওর রেস্টুরেন্টের ফুচকার স্বাদ মুখে লেগে থাকার মতো । অন্যান্য খাবারগুলোর যে স্বাদ নেই তা কিন্তু না । তবে এখানকার ফুচকার স্বাদটাই যেন আলাদা ।
সজীব তো বেশ ভালোই কর্ম করছে । চেষ্টা করছে নিজেকে দাঁড় করানোর জন্য । আসলে সবাই এখন কাজেই ব্যস্ত । কে কোথায় কিভাবে কর্ম করছে এটা হয়তো শুধুমাত্র দেখা হলেই টুকটাক গল্প করে জানা যায় । তাছাড়া এখন তো আর সেই ভাবে দেখাও হয় না কারো সঙ্গে । এইজন্যই হয়তো অনেক কথা অজানাই থেকে যায় ।
এর আগের বার যখন ওখানে গিয়েছিলাম । তখন সেবার সম্ভবত ওখানকার ভুনা খিঁচুড়ি খেয়েছিলাম । ও আমাকে সেবার বলেছিল যে, একদিন সময় করে বিকেল বেলার দিকে আসার জন্য । বিকেলবেলা নাকি ওদের একটা আলাদা খাবারের মেনু থাকে । সেটা হচ্ছে মূলত স্পেশাল ফুচকা । যেহেতু এই তল্লাটে টিউশন মাস্টার অনেক বেশি তাই মোটামুটি ছেলে-মেয়েরা বিকেল বেলার দিকে এই পাশটাতে আসে মাস্টার মশাইদের কাছে প্রাইভেট পড়তে । তাই বিকেল বেলা একটু বাড়তি আয়োজন থাকে ওর রেস্টুরেন্টে । ফুচকা যেহেতু এমনিতেই লোভনীয় খাবার, তাই সবার আগ্রহটা বেশ কাজ করে ।
বিকেলের পরে বাবুকে কোনভাবেই ঘরের ভিতরে রাখা যায় না । অনেকটাই অস্থির হয়ে যায় বিশেষ করে ঘুম থেকে ওঠার পরে । আমার রুমে এসে বারবার আমার কাপড় ধরার চেষ্টা করে । আমি বুঝাতে পারি ও বাহিরে যেতে চায়, হোক সেটা ছাদে বা অন্যত্র ।
আমারও ভালোই লাগে, বিকেল বেলা করে বাসা থেকে বের হয়ে খুব স্বল্প পয়সায় রিক্সা ভাড়া করে নিয়ে এই শহরের বুকে বিচরণ করতে । নির্মল পরিবেশে যখন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াই তখন যেন আলাদা প্রশান্তি কাজ করে নিজের ভেতরে । আজকেও ঠিক তেমন চিন্তাভাবনা থেকেই বেরিয়ে পড়লাম গিন্নি ও বাপজান কে সঙ্গে নিয়েই ।
তখনো সন্ধ্যে হয়নি তবে বেলা শেষের দিকে । ঢুকে গেলাম সজীবের রেস্টুরেন্টে । ভিতরটা বেশ ঠান্ডা মানে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত । কম করে হলেও মাস তিনেক পরে দেখা । যদিও পাশাপাশি থাকি তারপরেও খুব একটা দেখা হয়ে ওঠে না । এটাই মনে হয় নিয়তি, যে মানুষগুলোর সঙ্গে এক সময় খুব করে সময় কাটিয়েছে এখন তাদের সঙ্গে চাইলেও আর সেভাবে দেখা করার মত সুযোগ হয়ে ওঠে না ।
ও বেশ খুশি হয়েছে আমাদের কে দেখে । আমি তো বলেই ফেললাম , আজ তোর ফুচকা খেতে চলে এসেছি । সেদিন যে বলেছিলি বিকেলের দিকে নাকি তোর এখানে ভালো ফুচকা পাওয়া যায় । তাই আমাদের আজ একটু ফুচকা খাওয়ার ইচ্ছা জেগেছে । ওতো ওর ডেলিভারি ম্যান কে ডেকে বলে দিল আমাদের ব্যাপারটি এবং বলল একটু স্পেশাল করে ফুচকা বানিয়ে দাও আমার বন্ধু বউয়ের জন্য আর আমার বন্ধুকে একটা কফি দেওয়ার ব্যবস্থা করো । দুই বন্ধু একসঙ্গে বসে একটু স্মৃতিচারণ করার চেষ্টা করলাম । ঐ ঘুরে ফিরে সেই একই কথা, সেই ফেলে আসা দিনের কথা ।
এমনটাই তো হয় বাস্তবে , অতীতের মানুষগুলোর সঙ্গে দেখা হলে হয়তো অনেক জমে থাকা কথা বলে বেশ হালকা হওয়া যায় । ভালোই লাগলো কফি খেতে খেতে সজীবের সঙ্গে গল্প করতে । যদিও মাঝে আমাকে হীরা বলেছিল তুমি একটু ফুচকা খেয়ে দেখো, ভালো লাগবে । আসলেই তোমার বন্ধুর কথায় যুক্তি আছে । ভাইয়ার রেস্টুরেন্টের ফুচকাটা আসলেই স্বাদযুক্ত ।
পৃথিবীর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা হচ্ছে, আপনি যদি মানুষের প্রশংসা করতে পারেন তাহলে নিজেও আপনি প্রশংসিত হবেন অন্যের কাছে । সজীব তো বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করলো আমার গিন্নির মন্তব্য । যদিও আমি এখানকার ফুচকার স্বাদটা গ্রহণ করতে পারিনি তবে যেহেতু হীরা বলল , তাই বুঝে নিলাম যে ফুচকার স্বাদটা আলাদা হবেই ।
হীরাকে বললাম, দীর্ঘদিন পরে বন্ধুর সঙ্গে দেখা । একটা ছবি তুলে দাও আমাদের । হয়তো রেখে দেবো ছবিটা স্মৃতির পাতায় । আবারো কবে দেখা হবে তা তো বলা যায় না । অতঃপর ছবি তুলে যখন বিল মিটাতে গেলাম তখন পয়সা নিতে চাইলো না । তবে তারপরেও বললাম এটা তোর ব্যবসা , পয়সাটা রেখে দে কাজে লাগবে । অন্য আরেক দিন আসবো, আজ একটু উঠি রে ।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
শৈশবের এই বন্ধু গুলোর সাথে সময় কাটালে শরীরে নতুন করে যেন একটা এনার্জি চলে আসে। মন খুলে কথা হয়তো সবাইকে বলা যায় না। তার জন্য যোগ্য মানুষটিকেই পাশে প্রয়োজন। ভালো লাগলো দুই বন্ধুকে এক সাথে দেখে। আরো বেশি ভালো লাগলো আমার নামের সাথে মিল দেখে 🥰। রেস্টুরেন্ট টা বেশ পরিপাটি লাগলো। আর আমি নরমালি ফুচকা খাই না,, তবে এবার এই স্পেশাল ফুচকার স্বাদ নিয়েই ফিরব 😀
অবশ্যই যখন খুশি তখন , দাওয়াত তোর জন্য সবসময়ই।
ছোটবেলার বন্ধুদের পেলে আসলে অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে। সময়ের ব্যস্ততার কারণে এখন আর পুরনো স্মৃতি মনে করার সময় কার? তারপরও পুরনো লোকদের পেলে একটু পুরোনো দিনে ফিরে যাওয়া যায় আর কি । আপনার বন্ধুর রেস্টুরেন্টে গিয়ে ভালোই করেছেন। বাচ্চার আবদারও পূরণ হয়েছে। আপনার ভালো সময় কেটেছে, আবার হীরা আপুরও ফুচকা খাওয়া হয়ে গেল। সব মিলিয়ে ভালোই সময় পার করেছেন।
হুম আসলেই আমাদের কাছে ঐদিনের সময়টা বেশ ভালোই ছিল আপু ।
দাদা পোস্টটি পড়ে ভালই লাগলো । শৈশবের বন্ধুদের কথা মনে পড়ে গেল। আরো ভালো লাগলে জন্য যে আপনি আপনার শৈশবকালের বন্ধুর দোকানে প্রায় যাওয়া-আসা করেন। আপনার ভুনা খিচুড়ি খাওয়া চা-কফি খাওয়া আর সেই সাথে আমার প্রিয় ফুচকা খাওয়া সেটাও কিন্তু আমার নজরে পড়েছে।
সজীব রেস্টুরেন্টে কাটানো সুন্দর মুহূর্তটুকু আমাদের সাথে অতি চমৎকারভাবে শেয়ার করেছেন। আসলে শৈশবের বন্ধুর সাথে কাটানোর সময়টুকু অত্যন্ত আনন্দের হয়। তবে ফুচকা খাওয়ার বিষয়টা সত্যি দারুন ছিল।
আসলে সত্যিই ভাইয়া শৈশবের বন্ধুদের সাথে দেখা হলে কথা যেন ফুরায় না। আপনার বন্ধু সজীব ভাই তাহলে রেস্টুরেন্টের মালিক হয়ে গেছে। নিজের পায়ে দাড়ানোর চেষ্টা করছে। ফুচকা খুবই লোভনীয় একটি খাবার। যে কোন বয়সের মানুষ সেটা পছন্দ করে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
এইটা ঠিক বলেছেন ভাই , শৈশবের বন্ধুদের কাছে পেলে যেন কথাই ফুরাতে চায় না ।
শৈশব জীবনটা সত্যি কখনো ভুলে যাওয়ার নয় ৷গ্রামের সকল ছেলে পেলে মিলে একসাথে বড় হওয়া ৷তারপর একটা পর্যায়ে জীবনের নতুন কিছুর আশায়৷ একেক জন ভিন্ন ভিন্ন পথে ৷ যদিও তেমন আর আগের দেখা কথা হয় না ৷তবে এখন শুধু মনে পড়ে ৷
তবে দাদা সামনে পুজো হয়তো বা সেই আগের বন্ধু গুলোকে দেখতে পারবো ৷
যাই হোক আপনার গল্প টা পড়ে আমার কথা বলে ফেললাম ৷আপনার বন্ধু রেস্টুরেন্ট দিয়েছে আর আপনি বেশ ভালো ই সেখানে যান ৷তার সাথে ফুচকা সেখানে ভালো মানের হয়৷
ভাল লাগলো ৷
ধন্যবাদ ভাই ৷
উৎসব মানেই তো আনন্দ আর পুরনো মানুষগুলোর সঙ্গে সাক্ষাত।
পুরনো মানুষগুলোর সাথে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে থাকে। অনেকদিন পর সেই মানুষগুলোর সাথে যখন দেখা হয় তখন মনের মাঝে জমা অনেক কথাগুলো বলে আমরা হালকা হওয়ার চেষ্টা করি। হয়তো সবাই নিজেদের কর্মে ব্যস্ত থাকে। তাই তো পাশাপাশি থেকেও দেখা করার কিংবা মন খুলে কথা বলার মত সময় হয় না আমাদের। আপনার বন্ধুর রেস্টুরেন্টে গিয়েছেন এবং তার সাথে গল্প করেছেন দেখে ভালো লাগলো ভাইয়া। যেহেতু হীরা আপু বলেছে ফুচকা খেতে দারুন ছিল তার মানে বুঝতে হবে অবশ্যই দারুন ছিল খেতে। এভাবেই বন্ধুত্ব বেঁচে থাক চির জীবন এই কামনা করি ভাইয়া।