আবারও দেখা হবে || @shy-fox 10% beneficiary
আজকাল সাধারণ মানুষ গুলোকে দেখলে বড্ড মাথা চুলকায় । মনে হয় নিজের মাথার চুলগুলো টেনেটেনে ছিঁড়ে ফেলি । এমন মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে কিছুই করতে পারি না । আবার ওদেরকে দেখলে চোখ বন্ধ করেও থাকতে পারি না । জীবন বড্ড অদ্ভুত হয়তো সেটা একেক জায়গায় একেক রকম ।
এইতো কয়েকদিন আগেই যখন চেম্বারে যাচ্ছিলাম, তপ্ত দুপুর বেলা বাসা থেকে বের হতেই মনে হচ্ছিল রোদে যেন গলে যাচ্ছিলাম । শরীরে দেওয়া পারফিউম এর গন্ধ যেন কিছুক্ষণ পরেই আমি আর পাচ্ছিলাম না । পাবোই বা কিভাবে, শরীর তো আমার ঘেমে শেষ । যে গরম পড়েছে, তাতে তো একদম টিকে থাকা অনেকটাই মুশকিল ব্যাপার ছিল ।
আজকে যখন হুট করে ফোন গ্যালারি ঘাঁটাঘাঁটি করছিলাম, তখন সেদিনের ছবিগুলো চোখে পড়লো । একটা বৃদ্ধ মানুষ এই তপ্ত রোদের মাঝে কিছু কাপড় হাতে করে নিয়ে বিক্রি করছে ফুটপাতের উপর । আপনার আমার দৃষ্টিভঙ্গি বা মতামত জায়গাভেদে সম্পূর্ণটাই আলাদা হতে পারে । হয়তো আপনার এই ব্যাপার গুলো দেখে ভুরু কুঁচকে যেতে পারে বা নাকে হাত চলে আসতে পারে । তবে আমার কিন্তু এমনটা মোটেও হয় না । আমি দেখছিলাম বসে থেকে ব্যাপারটা । তখনও সিএনজি যাত্রী ফুল হয়নি বিধায় ক্রমাগত দেখছিলাম ।
আমার কাছে বেশ ব্যাপার গুলো ভালই লাগে দেখতে । ঐ যে বললাম চোখ বন্ধ করে থাকতে পারি না । তাই দেখি, জীবন গুলোকে খুব কাছ থেকে । এখানে ওখানে এগিয়ে যাচ্ছে লোকজন ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে কাপড়গুলোকে । আসলে এই ধরনের পণ্যের ক্রেতা এই সাধারণ মানুষগুলোই । বয়স্ক লোকটাকে দেখে , আমি ইচ্ছা করেই কাপড় গুলোর দাম শুনছি আর বোঝার চেষ্টা করছি । যেহেতু অনেকটা সময় গাড়ির জন্য বসে ছিলাম, তাই আর কি সময় কাটাচ্ছি । মাঝে মাঝে মানুষকে হঠাৎ করে চমকে দিতে কার কেমন লাগে জানি না , তবে আমার বেশ ভালোই লাগে ।
এখানকার সিএনজি ড্রাইভার গুলো , সবাই আমার চেনা । রোজ কারো না কারো গাড়িতে আমি যাতায়াত করি । দীর্ঘ ৪০ কিলোমিটার পথ প্রতিনিয়ত যাতায়াত, তাই সকলকেই কমবেশি চিনি । কোরবান আলীর পা ভেঙে গিয়েছে এই গাড়ি চালাতে গিয়েই । সে এখন আর আগের মত ভালোভাবে ছোটাছুটি করে গাড়ি চালাতে পারে না । কোন এক দুর্ঘটনায়, তার বাম পায়ের উপর দিয়ে ছোট গাড়ি চলে গিয়েছিল আর তখন থেকেই সে পঙ্গু । যে সময় যাচ্ছে তাতে কি আর বাড়িতে বসে থাকলে পেটের ভাত হবে ।
ভিটের যে জমিটা ছিল তা বন্ধক রেখেছে কোরবান আলী । নিজেই একটা সিএনজি কিনেছে । ঐ লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটে তবে হাত দুটো একদম ঠিক আছে । বেশ দিব্যি ভালো সিএনজি চালায় । যদিও একটু উঠানামা করতে কষ্ট হয় ভাঙ্গা পা নিয়ে, তবে পেটের তাগিদে সব কাজ করতে পারে ।
আজ আমার যাত্রাটা কোরবান আলীর গাড়িতেই হবে । আমাকে দেখে বহুদিন পরে বলল, কিগো ডাক্তার বহুদিন পরে দেখা । আমি বললাম, আরে কোরবান ভাই আপনার সঙ্গে তো ঠিকঠাক মত দেখাই হয়ে ওঠেনা । যখন আমি যাই, তখন আপনি থাকেন না । আর যখন আমি আসি, তখন আপনি হয়তো অন্যত্র চলে যান ।
কাপড় গুলোর খুব যে দাম তা কিন্তু না , সর্বোচ্চ ১২০ টাকা । তাতেই যদি কিছু মানুষের মুখে হাসি ফোটে, তাহলে ক্ষতি কি । গাড়িতে ওঠার আগেই যখন আমি কাপড় গুলো নেড়েচেড়ে দেখছিলাম, কোরবান ভাই তখন দু একবার দেখছিল আর আমাকে ঠাট্টা করেই বলছি । ডাক্তার তুমি কি এই কাপড় কিনবে , এতে তো তোমার পোষাবে না । আসলে আশেপাশ থেকে কে কি বলছে, কি কি দেখছে, এসবে আমার খুব একটা বেশি নজর যায় না, আমি মানুষটা আমার মত ।
কোরবান ভাইকে ডাক দিয়ে বললাম , দেখতো কোরবান ভাই এটা তোমার গায়ে কেমন মানাবে । কোরবান ভাই অনেকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে । আমি বললাম আরে তুমি শুধু দেখো । খালেক মিয়া আর তোমার শরীর তো একই রকম । খালেক মিয়ার জন্য কিনব । কোরবান ভাই খালেক মিয়াকে চেনে । হয়তো মাঝে মাঝে আমার ডাক্তারী ব্যাগ নিয়ে আসা যাওয়া করতো , তাতেই অল্প অল্প করে পরিচয় তাদের মধ্যে । কোরবান ভাই এবার আমাকে বলল খালেক মিয়ার যেহেতু গায়ের রংটা একটু শ্যামলা, আপনি পারলে ঐ টিয়া কালারের ফতুয়াটা কিনতে পারেন, ওটা ভালই মানাবে খালেক মিয়াকে ।
কাঠফাটা দুপুরবেলা, কোন বেচা বিক্রি নেই । হুট করেই যখন ১২০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিলাম মুহূর্তেই যেন বয়স্ক লোকের মুখে, এক চিলতে হাসি । এই মুখগুলোর হাসি, খুব অল্প পয়সায় দেখা যায় । এরা অল্পতেই সন্তুষ্ট , এদের আসলে চাহিদা আকাশ সমান নয় । অতঃপর কোন রকমে গুছিয়ে দিল ব্যাগের ভিতরে ।
মিনিট বিশেক পরে যখন গাড়ি ছেড়ে দিল, তখন ফিরফির ঠান্ডা বাতাসে শরীরটা অনেকটাই শীতল হয়ে আসলো । এই বয়স্ক পঙ্গু কোরবান মিয়া প্রতিনিয়ত আমাকে চালিয়ে নিয়ে যায়, বেশ দক্ষতার সঙ্গে । এ মানুষটাকে যতবার দেখি, ঠিক ততো বারই মুগ্ধ হয়ে যাই । জীবিকার জন্য বড্ড পরিশ্রম করে প্রতিনিয়ত । সেই সকালবেলা বাড়িতে ঠিকমতো খেয়েছে কিনা তাও জানা নেই । হয়তো দুপুরবেলায় টঙের দোকানে বসে চা আর রুটি, তাতেই পেট ভরিয়ে নিয়েছে ।
পরনের কাপড় দেখে তো বোঝাই যাচ্ছে , গায়ে হাওয়া লাগানোর জন্য ফুটো করে রেখেছে । এ ফুটো কি আর এমনি হয়েছে নাকি কাপড় ক্ষয়ে হয়েছে তাও বলা মুশকিল । হাতে ৩৫ টাকা ভাড়া দিয়ে যখন নামতে ধরছি, তখন কোরবান ভাইকে বললাম, পিছন সিটে কিন্তু তোমার জন্য একটা ব্যাগ রাখা আছে । ওটা তুমি সংগ্রহ করে নিও ।
খালেক মিয়ার কখনো নগ্ন পিঠ আমাকে দেখতে হয় নি । তবে তোমার নগ্ন পিঠে বেশ ভালই হাওয়া লাগছিল তা কিন্তু আমি স্বচক্ষে দেখলাম, কাল থেকে নগ্ন পিঠটা ঢেকে রেখে রাখিও । কোরবান মিয়া আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে, হুট করে বলেই ফেলল । এমনটা করার কি দরকার । আমি বললাম, মাঝে মাঝে এমন করতে হয় । না হলে তোমার, ডাক্তার ভাইয়ের পাগলামি কমে না । আবারও দেখা হবে, ভালো থেকো কোরবান ভাই ।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
খুব মনোযোগ দিয়ে গল্পটা পড়লাম খুব সুন্দর গুছিয়ে লিখেছেন ভাই। সত্যি বলতে ১২০ টাকা আপনার কাছে কিছুই না। তবে কোরবান ভাইকে সারপ্রাইজ দেওয়ার ধরণটা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। অনেক সময় অল্প টাকা খরচ করেও হাজার টাকার হাসি দেখা যায়। আপনি আসলেই একজন ভালো মনের মানুষ। ভালোবাসা অবিরাম ভাই। ❣️❣️
লেখাটা পড়ে শুভ ভাই আপনার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসাটা বুঝি আর একটু বেড়েই গেল। আমরা ক'জন মানুষ আছি যারা এভাবে ভাবতে পারি! যাত্রা পথের মানুষজনকে কাছে টেনে নিতে পারি! শুধু একজনকে নয় পরপর দুইজনের মুখে আপনি হাসি ফুটিয়ে ফিরেছেন। কোরবান ভাই আর ঐ ফেরিওয়ালা। আমার মনে হয় ওই মুহূর্তে আপনি যে তৃপ্তি আর প্রশান্তি অনুভব করেছেন সেটা কারো পক্ষে অনুভব করা সম্ভব নয়। ভালো থাকবেন ভাই।
কোথায় থেকে যে কি হয়েছিল সেদিন বুঝে উঠতে পারি নি । তবে এইটা বুঝেছি হাসি গুলো চাইলেই খুব সহজেই দেখা যায় ।
ভাইয়া আপনার এই লেখাটি পড়ে কখন যে দু চোখের কোণে পানি চলে এসেছে বুঝতেই পারিনি। কোরবান মিয়ার মত অনেক মানুষ আছে যারা নিজের প্রয়োজনের কাপড় গুলো কেনার সামর্থ্য রাখেনা। হয়তো তাদের চাহিদা খুবই অল্প। কিন্তু পরিবারের বোঝা যখন মাথার উপর থাকে তখন সেই মানুষগুলো নিজের চাহিদা মেটাতে অনেকটা পিছিয়ে যায়। একদিকে যেমন কোরবান ভাইকে আপনি খুশি করেছেন অন্যদিকে সেই বয়স্ক লোকটি যার কাছ থেকে আপনি কাপড়টি কিনেছেন সেও অনেক সন্তুষ্ট হয়েছে। সত্যি ভাইয়া আপনার কোন তুলনা হয় না। আপনার কাছে অনেক কিছু শেখার আছে। আপনার জন্য শুভকামনা, ভালোবাসা এবং মন থেকে অনেক অনেক দোয়া রইলো ভাইয়া। ♥️♥️♥️
এমনটাই তো আজকাল দেখি রে ভাই চারিপাশে , একই জীবন তবে বেঁচে থাকার ধরনটা জায়গাভেদে অনেক আলাদা ।
ভাইয়া আপনার এই পোস্ট পড়ে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কিছু কিছু অনুভূতি আছে যেগুলো হয়তো বলে প্রকাশ করা যায় না। তবে এতোটুকুই বলতে পারি আপনার মত করে যদি সবাই ভাবতো তাহলে আমাদের চারপাশের মানুষগুলো আরো বেশি ভালো থাকতে পারতো। হয়তো একটু হলেও হাসি মাখা মুখ দেখতে পারতাম। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।
শুধুমাত্র চেষ্টা দরকার আপু তাহলেই ছোট ছোট কাজের মাঝেও সুখ খুঁজে নেওয়া যায় ।
এভাবেই মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে যান।আপনার মত করে আমরা সবাই ভাবতে শুরু করলেই একদিন আলো আসবে।আমিও চেষ্টা করি।
আপনি যে অনেক ভালো মনের মানুষ সেটা তো আগেই জানতাম। কিন্তু আজকের পোস্টটা পড়ার পর আপনার প্রতি শ্রদ্ধা অনেক বেড়ে গেল। মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারার প্রশান্তি লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না। মানবসেবার উজ্জল নক্ষত্র হয়ে মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে যান। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো ভাইয়া।
মানুষ এখন সামান্য অজুহাতে হাত পেতে ভিক্ষা করতেই বেশি সাচ্ছন্দবোধ করে। কোরবান আলীর মত লোক অসংখ্য দেখেছি রাস্তায় ভিক্ষা করতে। অথচ তিনি ভিটেবাড়ি বিক্রি করে সিএনজি কিনে জীবিকা নির্বাহ করছে। এই ধরনের লোকদের জন্য আসলে মন থেকে সম্মান বেরিয়ে আসে। আপনি সামান্য টুকু হলেও তার মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছেন জেনে খুব ভালো লাগলো। আপনার এই প্রচেষ্টাটুকুর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
গল্পটা পড়তে পড়তে কখন যে গল্পের ভিতরে ঢুকে গেলাম।মাঝে মধ্যে আপনার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করেছিলাম।যাইহোক খুব ভালো লাগলো ভাই।আর সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এই অল্প জিনিসই যথেষ্ট এরাই মনে রাখে চিরদিন।🖤
আমি কৃতজ্ঞ। ভালোবাসা রইল তোমার জন্য। ভালোবাসা ছড়িয়ে যাক সর্বত্র ।
আসলে পুরো বিষয়টি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। মানুষের জন্য সত্যিকার অর্থে মন থেকে কিছু করার মাধ্যমে অনেক আনন্দ পাওয়া যায়। অনেক সময় সুন্দর একটি কথা বলেও আপনি মানুষকে সান্ত্বনা দিতে পারবেন। টাকাটা বড় কথা না মানসিকতাটাই বড়। আমরা এসব ফেরিওয়ালা বা ছোট আয়ের মানুষগুলোকে অনেক অবহেলা করি কিন্তু তাদের সংগ্রামী জীবন থেকে আমাদের অনেক শিক্ষা নেওয়ার রয়েছে। আমরা সবাই যদি আপনার মত মাসে একদিন হলেও একজনের মুখে হাসি ফুটাতে চেষ্টা করি তাহলে বাংলাদেশটাও অনেক সুন্দর হবে।
এইটা একদম ঠিক বলেছেন ভাই , তাদের সংগ্রামী জীবন দেখে আসলেই আমাদের কিছু শেখার আছে । বেঁচে থাকার জন্য কতোই লড়াই ,ভাবা যায় ।
যখন আমি আপনার লেখা পড়ছিলাম,একদম মন ছুঁয়ে গিয়েছিল।কখন যে আমার চোখের কোনে পানি জমে গিয়েছিল টের পায় নি আসলে আমি মানুষের লেখাগুলো অনেক সময় নিয়ে মন থেকে চোখের সামনে ভাসিয়ে পড়ি এইজন্য হয়তো।অনেক ভালো কাজ করেছেন ভাইয়া, তাছাড়া দাম কম হলেও এইসব কাপড়গুলো বেশ ভালোই হয়।ধন্যবাদ ভাইয়া, শুভকামনা রইলো।
জীবন যেখানে যেমন রে আপু । চেষ্টা করেছি একটু হাসি ফোটানোর ,দেখি হয়েও গিয়েছে ।