মুক্ত মতামত
ইচ্ছে করেই সেদিন বয়সে প্রবীণ মানুষগুলোর সঙ্গে চা খেতে বসেছিলাম, যদিও এমন অভিজ্ঞতা আমার পূর্বে ছিল না। তবে সেদিন তাদের সঙ্গে চায়ের আড্ডায় বেশ ভালই খোশগল্প হয়ে গেল ।
মজার একটা ব্যাপার হচ্ছে, তারা এই বয়সে এসে যে কথাগুলো বলছিল সেটা শুনতে বেশ ভালই লাগছিল। তবে তাদের কথাগুলো নিয়ে যদি একটু পর্যালোচনা করা যায়, তখন যে উত্তর বেরিয়ে আসে তখন সেটা মেনে নিতে ও শুনতে দুজনের কাছেই কষ্টসাধ্য হয়ে যায় ।
এই মানুষগুলো তো আর রাতারাতি প্রবীণ হয়নি। তারাও একটা সময় হয়তো আমাদের মত নবীন ছিল। অনেক দায়িত্ব পালন করে হয়তো আজকে তারা প্রবীণের খাতায় নিজেদের নাম লিখিয়েছে । ধোঁয়া ওঠা চায়ের আড্ডায় এত বাহারি রকমের আলাপচারিতা হয়তো সেটা সমাজ-সামাজিকতা ও বাস্তবিক প্রেক্ষাপট নিয়ে। সবারই একটা কথা, কি হচ্ছে, কোন দিকে যাচ্ছে সবকিছু, এখান থেকে উত্তরণের পথ কি ।
আমি আসলে তরল ব্যক্তিত্বের মানুষ। এই কথাটা বিগত সময়েও বলেছি। চেষ্টা করি সব বয়সী মানুষজনের সঙ্গেই টুকটাক মিলেমিশে থাকার জন্য। চেষ্টা করি নিজের দেওয়া মতামত যেন অন্যদের কাছে একটু যুক্তিসম্পন্ন মনে হয়, সেভাবে কিছু কথা সময় পেলে মাঝে মাঝে যে কোন জায়গাতেই বলে ফেলি। হয়তো সেদিনও কিছু কথা বলেছিলাম প্রবীণ মানুষদের কাছে ।
আমার বেড়ে ওঠা থেকে কর্ম করা পর্যন্ত, সবকিছুতেই কমবেশি সাক্ষী ছিল এই মানুষগুলো। তারপরেও যখন আজ হুটহাট করে বলেই ফেলল, অবশেষে ডাক্তারি পেশাটা ছেড়েই দিলে, তোমাদের দিয়ে যে আরকি হবে, সেটা ভাবতেই কেমন জানি লাগে । এই মানুষগুলোর কথায় আমি মোটেও অবাক হই না। কারণ এরা শুধু বলেই যাবে। দিনশেষে নিজের কাজ নিজেকেই করতে হবে সুতরাং এদের কথায় কর্ণপাত করাটা নিতান্তই বোকামি ছাড়া আর কিছুই না ।
আমার নিজের কথা না হয় বাদই দিলাম। যখন তারা পারিপার্শ্বিক সমাজ ব্যবস্থা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলছে, তখন চেষ্টা করছিলাম সেই কথাগুলোর মাঝে নিজেকে প্রবেশ করার জন্য। দীর্ঘ সময় থেকে তাদের কথাগুলো শুনেই যাচ্ছি । একটা সময়ের পরে মনে হল, দুটো কথা তাদের সঙ্গে বলা উচিত ।
এই বয়সে প্রবীণ মানুষ গুলো, পেশায় কেউ ব্যাংকার, কেউ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নতুবা শিক্ষক নতুবা ব্যবসায়ী ছিলেন। আজ হয়তো বয়সের কারণে তারা তাদের আগের কর্মে আর নেই। তারপরেও যখন টুকটাক কথা বলছে পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিয়ে এবং হতাশ হয়ে একে অপরের দিকে মন্তব্য ছুড়ে দিচ্ছে, তখন বাধ্য হয়ে তাদেরকে বলেই ফেললাম ।
আপনাদের বেলায় আপনারা কি করেছেন। এই যে আজকের প্রজন্ম যা কিছু করছে বা যা শিখেছে, যেভাবে সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা জটিলতা সম্পন্ন করে ফেলেছে। এখন প্রশ্নটা যদি, আমি আপনাদের কাছেই রেখে দেই তাহলে কেমনটা লাগবে। আপনারাই বা তাদেরকে কি শিক্ষা দিয়েছেন যে, সেই শিক্ষার প্রভাবে তারা আজকে এরকম আচার আচরণ করছে ।
বড্ড ঝাঁঝালো কথা সম্ভবত বলে ফেলেছি, এবার সব প্রবীণ মানুষগুলোর মুখ একদম তালা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কারো মুখে কোন কথা নেই, কে কি বলবে সেটা নিয়ে যেন সন্ধিহান হয়ে গিয়েছে। আসলে সব কথার উত্তর দিতে নেই, তবে মাঝে মাঝে দুটো একটা যুক্তিসম্পন্ন কথা যদি তুলে ধরা যায়, তাহলে সব কথার উত্তর মনে হয় এক কথাতেই হয়ে যায় ।
বয়সে প্রবীণ মানুষদেরকে অবশ্যই আমি সম্মান ও শ্রদ্ধা করি, তবে জটিলতা সম্পন্ন কথা যে বয়সের মানুষই বলে থাকুক না কেন, সেখানে দুটো যুক্তি সম্পন্ন কথা বলতে আমি কিন্তু পিছপা হইনা । প্রবীণ মানুষগুলোর সঙ্গে আর কোনদিন চা খাওয়া হবে কিনা তা আমি জানিনা।
তবে আমি যদি বলি, সমাজের আজকের এই অবস্থার জন্য তাদেরও কিন্তু অনেকটাই প্রভাব ছিল। তারা আজ চায়ের আড্ডায় যে কথার ঝড় তুলেছিল,এমন অবস্থা যদি পূর্ব থেকেই করতো তাহলে হয়তো আজ সমাজের রূপরেখায় ভিন্ন চিত্র দেখা যেত।
তবে নবীনদের সকল কর্মকাণ্ডই যে ভিন্ন পথে যাচ্ছে তা কিন্তু না। হয়তো নবীনরাও চেষ্টা করছে তাদের মেধা ও বুদ্ধি দিয়ে যুগোপযোগী ভাবে সমানতালে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। হয়তো প্রবীনদের সেই একঘেয়েমি জীবনের স্বাদটা নবীনরা আপাতত হয়তো নিতে চাচ্ছে না। তারাও হয়তো দেখতে চাচ্ছে জীবনটাকে আর একটু উন্মুক্তভাবে এবং নিজেদেরকে আর একটু সর্বত্র প্রসার ঘটিয়ে ।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
মাঝে মাঝে বলতে হয় কিছু কথা! বয়সে প্রবীণ হলেও! যেহেতু তারা অনাকাঙ্কিত মন্তব্য করেই বসে! দুটো কথা যুক্তির সাথে বললে তারাও হয়তো বুঝতে পারে! এ প্রজন্মের জন্য তারাই বা কি করেছে! আমার যে কাজে স্বাধীনতা রয়েছে, আমি সে কাজটাই করবো! সমালোচক থাকবেই, তবে তাদেরকে তেমন পাত্তা দিলেও প্রবলেম! তবে মাঝে মাঝে বয়োবৃদ্ধদের অনেক মতামত আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে!
একদম ঠিক বলেছেন ভাই। যতোটুকু পারা সম্ভব ভারসাম্য বজায় রেখে চলা উচিত।
আমার মতে নবীন প্রবীন বলে কথা নয়। তবে বাড়তি কথা না বলাই ভাল। জীবন যার সিদ্ধান্তটাও তারই। এ নিয়ে কথা না বলাটাও ভাল। আর প্র্রবীনরা কিন্তু আমাদের কাছে অনেক সম্মানিত ব্যক্তি। তাদেরও উচিৎ বিবেচানা করে কথা বলা।
কে শোনে কার কথা আপু। জীবন চলছে জীবনের গতিতে।
ধন্যবাদ আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।
আসলে বিষয়টা নবীন আর প্রবীণ বলে কথা নয় ৷ সমাজে এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা কেমল অন্যের মন্তব্য করার জন্যই বসে থাকে ৷ আসলে এ সব মানুষের মুখের উপর দু-একটা সঠিক কথা বললে দোষের কিছু নেই ৷ নয়তো এ মানুষগুলোর মুখ তালা বদ্ধ হবে না ৷ যাই হোক ভালোই করেছে ৷ ভালোই লাগলো পোস্টটি ৷ ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য ৷
আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আশাকরি এই তীব্র শীতে নিজেকে সুরক্ষিত রেখে শীতকে উপভোগ করছেন।আপনার আজকের ব্লগটি মুক্ত মতামত।যাকে বলে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ। খুব ভাল লাগলো পড়ে। তবে আমার মনে হয় নবীন- প্রবীন বলে কিছু নেই সমালোচনার জন্য এমনিই কিছু মানুষ থাকে তারা সমালোচনা করবেই।আর প্রবীন কিছু আছে সমালোচনা করার জন্য ই,আর কিছু আছে নতুন কিছুকে মেনে নিতে ভয় তারই জন্য এ নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে সমালোচনা। তবে হে আপনি সম্মানের সাথে তাদের কিছু বলতে পেরেছেন জেনে ভাল লাগলো। কারন আমিও তেমনটাই করি। হয় তারা সবকিছু দেখে বুঝে কথা বলবে নয়ত চুপ থাকবে শেষটা দেখার। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
ওই যে একটা কথা বলে না ৷ বলা আর করা সেটা আকাশ জমি পার্থক্য ৷ ঠিক তেমনি ৷
আসল ঘটনা হলো যে মানুষ যেভাবে বুঝে সেটাই সঠিক তার কাছে ৷
হয়তো তাদের কাছে সে বিষয় যুগোপযোগী মনে হয়েছিল ৷
তবে এটা ঠিক বলেছেন সব কথার উত্তর দিতে হয় না ৷ দশ কথার এক কথা ৷ যদি পূর্বে এমন কিছু করতো তাহলে আজ এই সময়ে এসে এমন হতো না ৷
এই কারণেই তো বলে যে জেনারেশন গ্যাপ ব্যাপারটা থাকেই।আমাদের আগের প্রজন্মের কিছু কথা বা তাদের কিছু মতামত যেমন আমরা মেনে নিতে পারি না। তেমনই তারাও আমাদের মতামত এবং কথা মেনে নিতে পারেন না।অনেক কিছুই আলাদা হয়।চিন্তাভাবনা সময়ের সাথে সাথে আরো দ্রুত ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন পরে হয়তো দেখব আমাদের কথার সাথে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের বাচ্চা ছেলে মেয়েগুলোর কথার কোন মিল আমরা পাচ্ছি না। তখন আমরা সেই পিছিয়ে পড়ার দলে চলে যাব। যুগে যুগে এটাই হয়ে চলেছে। তবে প্রত্যেকেরই খোলা মনে মতামত দেওয়ার অধিকার ছিল, আছে এবং থাকবে ।