হস্তান্তর || @shy-fox 10% beneficiary
চঞ্চলের কথা মনে আছে আপনাদের , আমি হয়তো একটু হলেও বলেছিলাম তার কথা । ওকে কথা দিয়েছিলাম আমার চেম্বারের যে যন্ত্রপাতি গুলো আছে সেগুলো দিয়ে ওর ক্যারিয়ার শুরু করতে । মানুষ হিসেবে কতটুকু আমি পরিপক্ক হতে পেরেছি তা আমি জানিনা । তবে কারো উপকারে যদি কোন ভাবে একটু হলেও আসতে পারি, তখন হৃদয়ে বেশ প্রশান্তির হওয়া বয়ে যায় ।
গত দু রাত থেকে ঠিকমতো ঘুম হয়নি আর ঘুম না হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, আমি মূলত চেম্বারটা হস্তান্তর ঠিকমতো করতে চাচ্ছিলাম । যেহেতু এই মাসে চেম্বারের রুমটা ছেড়ে দেব আর তাই ডেন্টাল ইউনিট ও যন্ত্রপাতি গুলো ঠিকঠাক মতো চঞ্চলের হাতে পৌঁছে দিতে পারলেই আমি মোটামুটি অনেকটাই শান্তিতে থাকতে পারবো, এমনটাই ভাবছিলাম কদিন থেকে ।
গতরাতে এগারোটার দিকে ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছিল চঞ্চল । একদম ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে এসে নেমেছে আমাদের এলাকায় । এমনিতেই আমার নিজের লেখালেখি এবং অন্যান্য কাজ করতে করতে ভোররাত হয়ে যায় । তারপরে আর ঘুমাই নি । ভাবলাম যদি ঘুমিয়ে যাই, ও যদি গাড়ি থেকে নামার পরে আমাকে বারবার ফোন করে না পায় তাহলে অনেক কিছুই এলোমেলো ভাবতে পারে । মানুষের মন বলে কথা, ভাই কথা দিয়েছিল যদি কথা না রাখে , এমন চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক করতেই পারে , এটা নিতান্তই স্বাভাবিক । কারণ এত কষ্ট করে এত দূর থেকে জার্নি করে এসেছে । এসে যদি আমাকে ফোনে না পায় তাহলে ব্যাপারটা আসলেই এলোমেলো ভাবার মতোই ।
আরেকটি সকাল হওয়া দেখে ফেললাম । লেখালেখি শেষ করে যখন জানালার দিকে তাকিয়ে ছিলাম বেশ ভালোভাবে দেখতে পারলাম স্নিগ্ধ শীতল হাওয়ায় পুরো ভোর হওয়ার দৃশ্য । ভালই লাগছিল হিম শীতল বাতাসে । ঘড়িতে তখন সম্ভবত সাড়ে ছয়টার মত বাজে , হঠাৎ বেজে উঠলো মোবাইলটা । ফোনের ওপার প্রান্ত থেকে চঞ্চল বলল , ভাই আমি মোকামতলা পার হয়েছি আর বিশ মিনিটের মত লাগবে । আপনি যদি কষ্ট করে একটু মায়ামণি হোটেলের সামনে আসতেন, তাহলে আমি আপনাকে সহজেই খুঁজে নিতে পারতাম ।
তোর আসতে কোন সমস্যা হয়নি তো চঞ্চল । কতদিন পর দেখা ভাবতে পারিস । রাতে খেয়েছিস কিছু , চল একসঙ্গে দুই ভাই বসে আগে কিছুটা খেয়ে নেই । যদিও প্রথমে চঞ্চল না করছিল । তবে ওর চোখ দেখে বুঝেছি , ও ঠিকমত ঘুমোতে পারেনি । হয়তো ওর ঘুমোতে না পারার কারণটা ভিন্ন ছিল । তারপরে দুই ভাই মিলে হোটেলে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে, বসে দু প্লেট খিচুড়ি আর ডিম ভাজি পেট পুরে খেয়ে নিলাম ।
তুই যে যন্ত্রপাতি গুলো নিয়ে যাবি, তা ট্রাক ঠিক করেছিস কি । ভাই দুপুর বেলার দিকে বাবা ট্রাক নিয়ে আসবে আমরা ততক্ষণে জিনিসগুলো গুছিয়ে রেডি করে ফেলব । ঠিক আছে, তুই যেমনটা বলবি তেমনটাই হবে । দীর্ঘ দুমাস পরে এই সকালবেলা চেম্বারে যাচ্ছি । বহুদিন পরে যখন সেই পুরনো পথে যাচ্ছি, তখন মনের ভিতরে একটা ভিন্ন অনুভূতি কাজ করছিল ।
দীর্ঘ দুই বছর এই গ্রামীণ মানুষগুলোকে আমি দন্ত চিকিৎসা সেবা দিয়েছি । অনেকটাই ঋণী হয়ে গিয়েছে তাদের কাছে । তবে এই যাত্রায় আমি বেশ নিরুপায় । পরিবার ও বাবুকে ঠিকমতো সময় দিতে পারি না । যার কারণে মূলত চেম্বারটা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ।
সাড়ে সাতটা কি আটটার মধ্যেই সম্ভবত আমাদের সিএনজি এসে থামল, আমার সেই চেম্বারের সামনে । যদিও আমি আগে থেকেই খালেক মিয়াকে বলে রেখেছিলাম, শুধুমাত্র মেশিনারিজ জিনিস বাদে বাকি যে সকল ফার্নিচার ও অন্যান্য জিনিস আছে , সেগুলো যেন অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয় । এদিক থেকে খালেক মিয়া বেশ ভালোই ভূমিকা পালন করেছে । দীর্ঘ দুই বছর সে আমাকে দেখাশোনা করেছে, তার সঙ্গে আমার একটা আত্মার সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে । সে আমার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে । পুরো চেম্বারে এখন শুধুমাত্র ডেন্টাল ইউনিট আর সার্জিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট ও কিছু মেশিনারিজ জিনিসপত্র ছাড়া আর কিছুই নেই ।
চঞ্চল কে বললাম, এই নে তোর জীবিকার হাতিয়ার। যদি কিছু করতে পারিস নিজের মতো করে, তাহলে কিছু করে নিস । ওর চোখ অনেকটাই ছানাবড়া । অনেকটাই আত্মতৃপ্তিতে ভরে গিয়েছে । আমি বুঝতে পারছি , ও কি বলবে মুখে তা ও বুঝে উঠতে পারছে না । ওর পিঠে হাত দিয়ে বললাম , এগুলো তোর ।
ঘড়ির কাঁটায় কখন যে দুটো বেজে গিয়েছে, তা আর খেয়াল নেই । বেশ পরিশ্রম করেছে ছেলেটা । এমনিতেই যে গরম পড়েছে, সেখানে মোটামুটি এই গরমে ছেলেটা বেশ ভালোভাবেই কাজ করে যাচ্ছিল । মেশিনপত্রগুলো সব খুলে খুলে অন্যত্র রাখা তারপরে যখন তার বাবার ট্রাক নিয়ে এসেছে, সেগুলো আবার ট্রাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করা । সব মিলিয়ে ছেলেটা বেশ ভালোই পরিশ্রম করছে ক্রমাগত।
এই প্রথম চঞ্চলের বাবাকে দেখলাম । বেশ ভালোই কথা বলল, আমার দুটো হাত বারবার ধরার চেষ্টা করছিল । আমি বললাম হাত দুটো আমার মাথায় রেখে আশীর্বাদ করুন কাকু । চঞ্চল আমার ছোট ভাই ও এগিয়ে যাক , এমনটাই প্রত্যাশা আমিও করি ।
কি রে চঞ্চল এবার খুশি তো , সবকিছু নিজের মতো করে সেটআপ দিয়ে শুরু করে দিস নিজের প্র্যাকটিস । তোর জন্য শুভেচ্ছা রইল । আমার হাতে বড্ড সময় কম । গত দু রাত থেকে আমার ঠিকঠাক ঘুম হয়নি আবার রাতে নিজের কিছু কাজ আছে । তুই তোর মত করে গুছিয়ে নিয়ে যাস আর যদি কিছু লাগে তাহলে খালেক মিয়া আছে , তাকে বলে চেয়ে নিস । আমাকে ফিরতে হবে । যাই তাহলে ।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
সত্যিই ,একজন মানুষের পক্ষে এত কাজ সামলানো অনেক কষ্টের।তাই যেকোনো একদিকে ফোকাস করাই বেশি ভালো।যাইহোক ভালো লাগলো ভাইয়া,আপনার জিনিসপত্র আপনি একজনকে বুঝিয়ে দিয়েছেন দেখে।আপনার কাজকে সাধুবাদ জানাই, ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।
এইটা সত্য দিন দিন কর্ম ব্যস্ততা বেড়েই যাচ্ছে । তাছাড়াও চঞ্চলের একটা গতি হোক এমনটাই প্রত্যাশা করি আপু ।
ভাইয়া, আপনার মানবিক কাজ সমূহকে আমি সাধুবাদ জানাই এবং শ্রদ্ধা করি। আপনার মানবিকতা এবং আপনার সেবার কথা গ্রামের মানুষেরা নিশ্চয় চিরদিন মনে রাখবে এবং আপনাকে সম্মান করবে। আপনার চেম্বারটি যদি ভালোভাবে থাকতো এবং ভালোভাবে চলত তাহলে গ্রামের মানুষ আরো বেশি উপকারিতা হতো। আর চঞ্চল ভাই যে অনেক খুশি হয়েছে সেটা আপনার পোস্ট করে আমি ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছি। প্রিয় ভাইয়া আপনার প্রতি আমার সব সময় অকৃতিম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থাকবে।
সত্যি ভাইয়া আপনার মত একজন মানুষ যদি কারো পাশে থাকে তাহলে তার আর কোন চিন্তাই থাকে না। আপনি সব দিকেই অনেক বেশি খেয়াল রাখেন। যাইহোক চঞ্চল ভাইয়ার কথা এর আগেও আমরা শুনেছি। এবার তিনি নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আপনার কাছ থেকে পেয়েছে জেনে ভালো লাগলো। তার নতুন জীবনের পথ চলা সুন্দর হোক এবং পরিবার নিয়ে ভালো থাকুক এই কামনা করি। সেই সাথে আপনার জন্য মন থেকে দোয়া রইল ভাইয়া। আপনি এভাবেই একজন ভালো মানুষ হয়ে সবার উপকারে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন এই কামনা করি।
মানুষ হওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত সময় পার করছি আপু । যদিও মানুষ হওয়া সহজ নয় , তবে চেষ্টা করছি ।
একসাথে দুইটা কাজ সামলানো খুব কষ্টকর।নিজের কথা এবং পরিবারের কথা বিবেচনায় খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভাই।তবে যাইহোক আপনার দায়িত্বটা নাহয় এখন থেকে চঞ্চলই সামলাক আর আপনি একটু বিশ্রাম নিন।
আমার অনুভূতি বোঝার জন্য ধন্যবাদ ভাই ।
কি অপরিসীম দায়িত্ববোধ। একজন আসছে সে যদি ফোনে না পায় সেজন্য আর রাতে ঘুমাননি। চেম্বারটা তাহলে পার্মানেন্টলি বন্ধই করে দিলেন। সাথে খালেক মিয়াকেও ছেড়ে দিলেন? এতগুলো জিনিস পেয়ে চঞ্চল যে অনেক খুশি হয়েছে তা আপনার লেখাতেই বুঝতে পারছি। চঞ্চলের জন্য শুভকামনা রইল।
কথা দিয়েছিলাম ম্যাডাম , কি করবো বলেন । এইটা সত্য এখন খালেক মিয়ার জন্য মন পুড়াই । দেখি তার একটা গতি করা যায় কি না ।
লিখাটা পড়ে কি লিখবো বুঝতে পারছি না,সত্যি মহান আপনি।চঞ্চল ভাই সব কিছু ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারলে আপনার পুরোপুরি সার্থকতা। ভালো লাগলো।ভালো থাকবেন অনেক ভালো। মন থেকে দোয়া রইলো।
চঞ্চলের একটা গতি হোক এমনটাই আমিও প্রত্যাশা করছি আপু ।
গ্রামের মানুষদের দুটি বছর সেবা দিয়েছেন আপনি। গ্রামের মানুষজন আপনার সেবা কখনোই ভুলতে পারবেনা। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবারের পাশে থাকা জরুরি। চঞ্চল ভাই যে অনেক খুশি হয়েছে তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। নতুন জীবন শুরু করতে পারবে তাহলে। আপনার চেম্বারটা আর তেমন থাকছে এটা অবশ্য কষ্টের। তবে আপনার মানবিক কাজটাকে সাধুবাদ জানাই। আপনার জন্য দোয়া রইল ভাইয়া
পরিবারের জন্যই সব কিছু তাই ছেড়ে দিতে বাধ্য হলাম ভাই ।
আমার মনে আছে ভাই। আপনার পর্বটা পড়েছি আমি। অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে আপনার মানবতাকে। দোয়া করি এভাবেই যেন মানুষের পাশে থাকতে পারেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। সেই সাথে চঞ্চল ভাই কেউ দোয়া করি উনি যেন হাটি হাটি পা করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
জীবন জীবনের জন্য। বেঁচে থাকুক সবাই এমনটাই প্রত্যাশা করি সর্বদাই।
ভাইয়া আপনার মন-মানসিকতা মনে হচ্ছে দিন দিন অনেক নরম হয়ে যাচ্ছে। তবে এটা কিন্তু খুবই ভালো, এই সময় এমন মানুষ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আপনার পোস্ট পড়ে আমার সত্যিই অনেক বেশি ভালো লেগেছে, আপনার প্রতি সম্মান আরো বেড়ে গিয়েছে। সত্যি আমরা যদি এভাবে হাত বাড়িয়ে দিতাম তাহলে হয়তো সমাজের ছোট মানুষগুলো স্বপ্ন দেখতে পারতো। শুভকামনা রইল চঞ্চল সাহেবের জন্য।
আপনার মতো সহকর্মী কর্মস্থলে পাওয়া বেশ ভাগ্যের ব্যাপার আপু ।
ভাই গ্রামের মানুষদের দু'বছর সেবা দিয়েছেন। তারা হয়তো আপনার এই সেবাকে খুব মিস করবে এবং আপনাকে হয়তো অনেক মনে করবে। আসলে মানুষের সেবা করা পরম ধর্ম। যাই হোক আপনার কর্ম জীবনের ব্যস্ততার কারণে আপনি পরিবারকে সময় দিতে পারছেন না। আসলে পরিবারকে সময় দেওয়া উচিত। আপনি অবশ্য খুবই বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন। চঞ্চল ভাইয়ের জন্য অনেক বড় একটি পাওয়া। চঞ্চল ভাই বাবা আপনার হাত ধরতে চেয়েছিল। আপনি সেই হাতি মাথায় দিয়ে আশীর্বাদ চাইলেন। সত্যিই আপনার মতো এত বড় মন মানসিকতার মানুষ এ জগতে খুবই কমই আছে। আপনার সুস্থতা কামনা করছি ভাই এবং চঞ্চল ভাইয়ের জন্য শুভকামনা রইল।
গ্রামের মানুষ গুলোর কথা ভাবলে একটু কষ্ট হয় , তবে এই দিকে আবার আমার নিজের পরিবার আছে ভাই । ব্যাপারটা অনেকটাই জটিলতাপূর্ণ।