মোখলেস ভাই || @shy-fox 10% beneficiary
শহুরে জীবনে আসলে সবাই বেশ ব্যস্ত । এখানে কারো যেন কোন দম ফেলার সময় নেই । কেউ কারো সঙ্গে অযথা কথা বলে , কেউ সময় নষ্ট করতে চায় না । যাইহোক এ শহরে এসে বেশ ভালো কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে ।
মোখলেস ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় আমার অন্য ভাবে হয়ে গিয়েছে । বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ আমাদের সম্পর্ক । এক কথায় বলতে গেলে আমি তাকে বড় ভাইয়ের মত সম্মান করি । মাঝেমাঝেই দেখা হয় আমাদের। টুকটাক গল্প-স্বল্প হতে হতেই সম্পর্কটা দিনকে দিন বেশ দৃঢ় হয়ে গিয়েছে ।
আগে যখন গ্রামের চেম্বারে প্র্যাকটিস করতে যেতাম । তখন সেখানে অল্প পয়সায় যদি দু-একজনকে চা খাওয়ানো যেত তাহলে তাদের সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্পও করা যেত কিন্তু শহরে আসলে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল । এই যান্ত্রিক শহরে কারো সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা এবং চা খাওয়া ও আড্ডা মারার চিন্তাভাবনা করাটাই বোকামি । সবাই এখানে ছোটাছুটিতে ব্যস্ত । একেকটা জীবন যেন প্রতিনিয়ত যন্ত্রের মতো ঘুরপাক করছে ।
মোখলেস ভাইয়ের কাছে প্রতিমাসে বেশ কিছু পয়সা চলে যায় । তবে তা অবশ্য নিজের প্রয়োজন মেটানোর জন্যই । তবে এখানে কিছুটা পয়সা খরচা করে হলেও আমি বেশ শান্তি পাই । কারণ তার সঙ্গে দিনশেষে দুটো মন খুলে কথা বলতে পারি , এতেই তো বেশ প্রশান্তি কাজ করে । আসলে বাসার খুব কাছেই ফুটপাতের উপরে ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে থেকে পান সিগারেট বিক্রি করে মোখলেস ভাই ।
যে সূত্রেই সম্পর্কটা হোক না কেন , আমি মনেকরি তার সঙ্গে আমার কোন বৈষম্য থাকতে পারে না ।নিজেদের ভিতরের অভ্যন্তরীণ বৈষম্যভেদ আমি খুব একটা পছন্দ করি না । দিনশেষে আমি মানুষ, এটাই আমার প্রথম ও শেষ পরিচয় । এই যে মাঝে মাঝে যখন তার কাছে যাই , তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে ছুটে চলা মানুষ গুলোকে দেখি আর ফিসফিস করে নিজেরা কথা বলি তখন বেশ ভালোই কাটে সময় গুলো ।
এই শহুরে জীবনে যেখানে কারো দম ফেলার সময় নেই , পাশের বাসায় কি চলছে সেটা বোঝাই যেখানে খুবই মুশকিল , সেখানে যখন ছুটে চলা মানুষ গুলোকে নিয়ে আমার মতো ছন্নছড়া মানুষের গল্প কেউ যখন মনোযোগ সহকারে শোনে তখন সেটা আসলেই সুখকর মুহূর্তের মাঝে পরে।
সেদিন যখন হীরাকে টিকা দিয়ে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরছিলাম । হুট করেই মোখলেস ভাইকে দেখে হীরা বায়না ধরলো সে পান খাবে । যদিও মোখলেস ভাই পয়সা নিতে চায় নি , তো আমি বলেই ফেললাম তাহলে একদিন আসো আমার ফ্ল্যাটে । দুই ভাই মিলে জমিয়ে গল্প করবো । কথাটা শুনে হালকা সংকোচ করছিল মোখলেস ভাইয়ের , তবে আমি বললাম এসো কিন্তু নইলে মন খারাপ করবো ।
মোখলেস ভাই ঠিকই কথা রেখেছিল । উনি তো গত শুক্রবারেই এসেছিল দুপুরের পরে আমার বাসাতে কিন্তু আমাকে পায়নি । পাবেই বা কি করে , আমি তো সেদিন সকাল বেলায় শশুর বাড়ি চলে গিয়েছিলাম । হাকিম ভাইয়ের কাছ থেকে আমার নাম্বার নিয়ে ফোন করেছিল আমাকে । আমি বেশ লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম । কারণ যে মানুষটাকে আমি নিজে বাসায় আসতে বলেছি, সে এসেছে অথচ আমি নেই । আমি মিনতি করে বললাম, ভাই আমি তো শ্বশুর বাড়ি চলে এসেছি । আমি শহরে ফিরে অবশ্যই তোমার সঙ্গে দেখা করবো ।
ফোনটা কেটে দেওয়ার পরে বেশ লজ্জা লাগছিল নিজের কাছে । তবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, শহরে ফিরেই আগে মোখলেস ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করব । তারপরে মন খুলে কথা বলব এবং আবারও বাসায় ডাকবো । অতঃপর যেমন ভাবনা ঠিক তেমন কাজ । শহরে ফিরে এসেই বৃষ্টির ভিতরেই আমি তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তাকে তো বলেই ফেললাম, ভাই আমার ভুল হয়ে গিয়েছে , আমি আসলে লজ্জিত । মোখলেস ভাই অবশ্য বুঝতে পেরেছিল আমার ব্যাপারটা ।
অবশেষে মোখলেস ভাইকে বললাম, এই শুক্রবারে কিন্তু দুপুরবেলা অবশ্যই আমার বাসায় আসতেই হবে । যাইহোক এই শুক্রবারে নিজের থেকেই তাকে আমি ফোন দিয়েছিলাম । বললাম চলে এসো ভাই, এখন তো দুপুরবেলা লোকজন খুব একটা রাস্তায় নেই । বেচা-বিক্রিও কম,তার থেকে বাসায় আসো দুইভাই মিলে আড্ডা দেই ।
অবশেষে ঘন্টাখানেক পর , দুই ভাই মিলে সেইরকম আড্ডায় মেতে উঠেছিলাম । বেশ ভালোই গল্প হয়েছিল চা-নাস্তা খেতে খেতে । আমার অবশ্য এরকম মানুষগুলোকে বেশ ভালোই লাগে । এই মানুষগুলোর খুব আহামরি কোন চাহিদা থাকে না জীবনে, তেমন অধিক চিন্তাও থাকে না । নিজের মতো করে বাঁচতে পারলেই হলো । হয়তো তার এমন সাবলীল চিন্তা ভাবনাই আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে । হয়তো তার সঙ্গে আমার এমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হওয়ার পিছনে তার এমন উন্মুক্ত মানসিকতায় প্রথম সূত্রপাত ছিল ।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
বর্তমানের এই যান্ত্রিক জীবনে কারো বাসায় যাওয়ার আগে তাকে একবার ফোন করে যেতে হয় । না হলে গিয়ে দেখা যায় যে বাসায় পাওয়া যায় না । মোখলেস ভাই হয়তো এই বিষয়টি বুঝতে পারেনি। তাই সে বাসার সামনে গিয়ে ফোন দিয়েছে। আপনি পরবর্তীতে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরে তাকে বাসায় নেমন্তন জানিয়েছেন দেখে ভালো লাগলো। নিশ্চয়ই অনেক খুশি হয়েছিল বাসায় এসে। ভালো থাকুক আপনাদের বন্ধুত্ব। ভালো লাগলো।
এইটা ঠিক বলেছেন আপু । হুম বেশ ভালোই খুশি হয়েছিল উনিও এবং আমিও। সময়টা বেশ ভালোই কেটেছিল।
ভাইয়া যান্ত্রিক এই শহরে সবাই যেন যন্ত্রের মত ছুটে চলেছে। কেউ কারো সাথে খোশগল্প করার মত বিন্দুমাত্র সময় হাতে রাখে না। আর এরই মাঝে মোখলেস ভাইয়ের মত বন্ধু পাওয়া সত্যি খুব ভাগ্যের ব্যাপার। কেননা তার উন্মুক্ত মানসিকতার জন্যই তার সাথে আপনার এই সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে। মোখলেস ভাইয়ের সাথে চা নাস্তা খাওয়ার পাশাপাশি আড্ডায় মেতে অনেকটা সময় পার করার মুহূর্তটুকু দেখে খুবই ভালো লাগলো। দোয়া করি ভাইয়া, আপনারা দুই ভাই মিলে সব সময় যেন এরকম বন্ধুসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারেন। ধন্যবাদ
এটা ঠিক বলেছেন ভাইয়া শহরের জীবন আর গ্রামের জীবন কখনো এক রকম হয় না গ্রামে মানুষের সাথে মন খুলে কথা বলার একটা সুযোগ পাওয়া যায় কিন্তু শহরে সেই সুযোগটা নেই, আসলেই একই বাসায় থেকে পাশের ফ্ল্যাটে কি হচ্ছে সেটা জানার কোন সুযোগই নেই। মোখলেস ভাই পান সিগারেট বিক্রি করে তাতে কি হয়েছে সে তো একজন মানুষ মন খুলে কথা বলার একজন মানুষ পাওয়া বড় কথা। আর এ ধরনের লোকদেরকে হুট করে বাসায় ডেকে ফেললে তাদের মধ্যে তো সংকোচবোধ হবেই। বাহ ভাইয়া এই কাজটা তো আপনি অনেক ভালো করেছেন একদিন সে এসে ফিরে গিয়েছেন আর আপনি শহরে এসেই সাথে সাথে তাকে ডেকে এনে ভালো একটা আড্ডা দিয়েছেন খুব ভালো লাগলো ভাই আপনার মোখলেস ভাইকে নিয়ে লেখা পোস্টটি।
শহরের মানুষগুলো দিন দিন যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। নিজের প্রয়োজন ছাড়া কেউ কারো সাথে কথা বলে না। মন খুলে কথা বলার মত মানুষ পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। এরপরেও নিজের মনের খোরাক মিটানোর জন্য হলেও মোখলেস ভাইয়ের মত মানুষদের পাশে পাওয়া দরকার। যাদের সাথে মন খুলে কথা বলা যাবে। আপনার বাসায় সে এসেছিল এবং ফেরত গিয়েছে এটা আপনাকে কষ্ট দিয়েছে বুঝতে পারছি। তবে আপনি নিজের বাসায় ফিরে আবারো তাকে আপনার বাসায় নিয়ে এসেছেন জেনে ভালো লাগলো। এভাবেই একটি সুন্দর মধুর সম্পর্ক তৈরি হোক। এভাবেই একজন খোলা মনের মানুষ হয়ে সবার পাশে থাকুন এই কামনাই করি।
ভাইয়া আপনার এই ধরণের কার্যকলাপ আমার অনেক বেশি ভালো লাগে , আর সত্যি বলতে মানুষ এখন এতটাই ব্যাস্ততায় দিনকাটায় যে কারো খবর নেয়ার কথা কারো মনেই এ থাকে না। ভালো লাগলো আপনার এই পোস্ট পড়ে
মানুষ হওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত আছি ম্যাম । দেখি কি হয় সামনে ।
ঠিকই বলেছেন ভাইয়া গ্রাম যেরকম মানুষের মন খুলে সময় কাটানো কিংবা কথা বলা যায় শহরে এরকমটা পারা যায় না। কারণ শহরের সবাই শুধু নিজের কর্মের তাগিতে ছুটে। কিন্তু যে আপনার যে মোখলেস ভাইয়া সাথে অনেক সুন্দর একটা সম্পর্ক হয়েছে এটা দেখে ভালো লাগলো। আবার হীরা আপুকে পানও খাইয়েছে। যদিও আপনি বাসায় আসার দাওয়াত দিয়েছেন, কিন্তু উনি তো এসেও আপনাকে পেলেন না। কিন্তু শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে আবারো তাকে এত সুন্দর আপ্যায়ন করেছেন এবং গল্প করেছেন দেখে ভালো লাগলো। অনেক সুন্দর একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আসলেই এরকম মানুষের খুব বেশি চাহিদা থাকে না।
সবার প্রথমে আমি মোখলেস ভাইয়ের সুস্থতা কামনা করছি ৷তিনি যে আসলে সাবলিল চিন্তা ধারার মানুষ তাতে কোনো সন্দেহ নেই ৷আর এভাবেই ভালো থাকা যায়৷ মোখলেস ভাই দোকানের ব্যাবসা করছে ৷
ভাই আপনি ঠিক বলেছেন বর্তমান শহরে মানুষ যন্ত্রের চেও বেশি গতি তে চলছে ৷যদি দিন রাত একি হয় তাহলে আরো বেশি ভালো হতো ৷শুধু ছুটছে সুখ আর স্বাদ ছন্দে জীবন কাটানোর জন্য ৷কিন্তু আসলে কি সেই সুখ স্বাদ ছন্দে জীবন কাটাতে পারছে ৷সেই প্রশ্ন টা থেকেই গেলো৷
তবে আমার কাছে আপনার লেখা পড়ে যেটা মনে হচ্ছে ৷শহরের সব মানুষের চেয়ে মোখলেস ভাইয়ে অনেক সুখি মানুষ ৷যে কি না সাবলিল চিন্তা ধারার মাঝে বিরাজমান৷এতেই সুখী ৷
ভালো লাগলো মোখলেস ভাইয়ের গল্প শুনে ৷
এইটা ঠিক মোখলেস ভাই বেশ সুখী মানুষ একদিক থেকে কারণ তার আহামরি কোন চাহিদা নেই ।
শহরের লাইফটা একরকম আর গ্রামের লাইফটাই একরকম। এক কাপ চায়ের সাথে জমিয়ে আড্ডা দেয়া যেত গ্রামে আর দেখেন শহরে চা খাওয়ার সময় তো দূরে থাক, আড্ডা দেয়ার সময় কই! সবাই সবার কর্ম নিয়ে ব্যস্ত। কারো সাথে গল্প করারও টাইম নেই। তবে মোখলেস ভাইয়ের মতো লোক পাওয়া কষ্টের আসলে। সহজ সরল মানুষগুলো নীরবে লড়াই করে যায় শহরে এসে।
আপনি ঠিকই বলেছেন ভাই গ্রামের চায়ের দোকানে ৫ টাকার এক কাপ চা নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্পও করা যায়। আর মানুষ গুলো যেন গল্পটি জন্যই বসে থাকে। কিন্তু শহর যেন যান্ত্রিক শহরে। শহরে কথা বলার কোন সময় নাই। শুধু ব্যাস্ততা আর ব্যাস্ততা। সেখানে আপনি মোখলেস ভাইয়ের সাথে খুব ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেল। আসলে মোখলেস ভাইকে আপনি গত শুক্রবারে আপনার বাসায় আসতে বলেছিলেন। কিন্তু তখন আপনি শ্বশুরবাড়িতে ছিলে। আসলে এরকম বিষয়টা খুবই খারাপ লাগে। তারপরেও এই শহরে এসে আপনি সাথে কথা বলেছেন এবং পরে শুক্রবারে মোখলেস ভাইকে আপনি আগে থেকে ফোন দিয়ে বাসায় আনলেন।আসলে খুবই ভালো লাগলো। আসলে মোখলেস ভাইকে দেখে অনেক সহজ সরল মনে হচ্ছে। অনেক আনন্দময় মুহূর্ত পার করেছেন। আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার কাছেও তো ঠিক তেমনই মনেহয় ভাই । শহরের জীবন আসলেই বেশ যান্ত্রিক।