লোহানী || @shy-fox 10% beneficiary
এত মানুষের নাম তো আর মনে রাখা যায় না, কত মানুষকেই তো এই শহরে দেখি । হতেও পারে মান্নান মাস্টার কে আমি মুখে চিনতাম হয়তো নামে চিনতাম না । এই রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় হয়তো তাকে বহুবার দেখেছি । তবে তার যে নাম ছিল মান্নান মাস্টার, সেটা কিন্তু আমি জানতাম না ।
বড় ছেলে ঢাকা ঢাকা মেডিকেলে পড়ে আর ছোট ছেলে রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে এবার উচ্চমাধ্যমিক দিচ্ছে । কথাগুলো তখনও শুনছিলাম আমি তার মুখ থেকে । ভদ্রমহিলাকে আমি আগে কখনো দেখিনি । সন্ধ্যের পরে আজ যখন ক্যাফেতে বসে আমি আর বাবু খাওয়া-দাওয়া করছিলাম , হুট করেই ক্যাফের দরজাটা ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেলল আগন্তুক এক ভদ্রমহিলা ।
বয়স কত হবে , ৩৫ থেকে ৪০ এর ঘরে । অনেকটা বিনয়ের সুরে বলল, আচ্ছা এখানে কি হাফ প্লেট ফুসকা বিক্রি করেন আপনারা ।
পোষাক-আষাক দেখে তাকে বেশ ভদ্র ঘরের মানুষ মনে হলো । ওয়েটার তাকে সরাসরি জানিয়ে দিল , এখানে আসলে আমরা হাফ প্লেট বিক্রি করি না , নিলে ফুল প্লেট নিতে হবে । ভদ্রমহিলা এবার একটু অস্বস্তি বোধ করছে । আমি তাকে বিনয়ের সঙ্গে বললাম, আপনি বসুন আমি আপনাকে ফুচকা নিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি ।
আমি তো অতগুলো পয়সা নিয়ে আসিনি ভাই । আমি আসলে গার্লস স্কুলের মোড়ের ফুচকার দোকান থেকে ফুচকা কিনতে এসেছিলাম কিন্তু এসে দেখি সেই দোকানটা বন্ধ । তারপর এক প্রতিবেশী বলল যে, সামনের ক্যাফে তে ফুচকা বিক্রি করে । এজন্য এখানে অপ্রস্তুত ভাবে চলে এসেছি ।
এবার অবশ্য আমি হাসিমুখেই বললাম , এটা অবশ্য আমি আপনার বাচন ভঙ্গি দেখেই বুঝতে পেরেছি । আপনি বসতে পারেন , আমাদের সঙ্গে । আপনাকে পয়সা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না । এটা কি আপনার বাচ্চা , বাচ্চার মা আসেনি । আমি আসলে ওকে নিয়ে হাঁটতে বেড়িয়ে ছিলাম হুট করেই ক্যাফেতে ঢুকে গিয়েছি । এবার পাশের টেবিলে বসে পড়েছে ভদ্রমহিলা।
তখনো দেখছিলাম বারবার তার মুঠোফোনটা বেজে যাচ্ছিল। আমার ছেলে দুটো তো বাহিরে থাকে । ওদের বাবা বাসায় একাই আছে, তিনি ফুচকা খেতে চেয়েছে । কয়েকদিন থেকে কিছুটা অসুস্থবোধ করছে তাই নিজেই ফুচকা কিনতে এসেছি আর এসেই মূলত এই অবস্থায় পড়েছি ।
ইশারায় ওয়েটার কে বললাম যে, দ্রুত ফুচকার ব্যবস্থা করে দিন । বাকিটা আমি দেখব । আপনি কি এই এলাকায় নতুন । আমার আসলে চেহারার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে । যার কারণে আমাকে অনেকে দেখলেই সহজে চিনে উঠতে পারে না । আমি আসলে এই এলাকাতে ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছি এবং দীর্ঘ ছয় বছর এই এলাকাতেই ডাক্তারি প্র্যাকটিস করেছি ।
এখন কোথায় বসেন , আপনি । এবার আমি কিছুটা হেসেই বললাম , আমি আসলে ডাক্তারি প্রফেশনটা ছেড়ে দিয়েছি । কি করেন এখন , তেমন কিছুই করি না । খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম , মানুষ খোঁজার চেষ্টা করি । এবার ভদ্রমহিলা কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল । কিছু কথা গজগজ করে বলে দিলাম , মানুষ দেখি , ভাবি আর লিখি ।
লেখালেখি করেন, আমি এবার হেসে বললাম, আপনি ঠিকই ধরতে পেরেছেন । তো কোথায় লেখালেখি করেন । আমি এবার বলে ফেললাম, আমি কিন্তু সাংবাদিক না । আমি নিজের মতো করে লিখি । তাহলে ডাক্তারি কেন ছাড়লেন । বললাম, লেখালেখির জন্য ছেড়ে দিয়েছি । ডাক্তারি প্রফেশনটা আসলে আমার জন্য না, এজন্য ছেড়ে দিয়েছি ।
আমার বড় ছেলে ঢাকা মেডিকেলে পড়ে , ছোট ছেলে উচ্চমাধ্যমিক দেবে রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে । আমি মান্নান মাস্টারের বউ লোহানী । আপনার বড় ছেলেকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি । সে যখন মেডিকেল কোচিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল , তখন সে বেশ কয়েকবার আমার চেম্বারে এসেছিল ।
সে আবারও কৌতুহল বশত বলল , আপনি ডাক্তারি ছেড়ে দিলেন । আমি এবার তাকে বললাম , আপনার বড় ছেলে তো সম্ভবত ইন্টার্নী করছে ঠিক না, আপনার সঙ্গে কি আমার ছেলের যোগাযোগ হয় । আমি এবার তাকে বলেই ফেললাম , তার সঙ্গে আমার শেষ যেবার যোগাযোগ হয়েছিল , তখন সে সবেমাত্র ফার্স্ট ইয়ারে পড়তো , তারপর থেকে আর যোগাযোগ নেই ।
আপনি কি লেখা লেখেন । আমি এবার হেসে বললাম, আপনার ফুচকা তৈরি হয়ে গিয়েছে । আপনার না স্বামী অসুস্থ , আপনি বাড়ি যাবেন না । আমি ৪০ টাকা দিয়ে দিচ্ছি, বাকিটা আপনাকে পরে পরিশোধ করে দেবো । আপনার ফোন নাম্বারটা আমাকে দিন । আপনি বলেছেন, এতেই আমি খুশি হয়েছি । আপনাকে টাকাটা দিতে হবে না আর তাছাড়াও আমি টাকাটা নিতেও রাজি না । আপনি দ্রুত বাড়ি যান, আপনার স্বামী অসুস্থ ।
আসলে এ সকল ক্যাফে তে , এতো সহজে কেউ এসে সাবলীল ভাবে, এমন প্রস্তাবে খাবার অর্ডার করে না । আপনার ব্যাপারটা খুবই ভিন্ন ও গোছানো ছিল । তাছাড়াও আপনার বড় ছেলে আমার পূর্ব পরিচিত। আমার ছেলেকে আপনার কথা কিভাবে বলল । আসলে তেমন কিছুই বলার দরকার নেই । আর যদি বলতেই চান , তাহলে বলিয়েন , এখনকার শুভ নামে কোন দন্ত ডাক্তার কে সে চিনতো কিনা । এতোটুকু বললেই মনে হয়ে যাবে ।
আপনার সঙ্গে কি আমার আর কখনো দেখা হবে । আমার বাসা কিন্তু ঐ গার্লস স্কুলের পিছনেই । ওখানে গিয়ে যে কোন কাউকে , মান্নান মাস্টারের বাসা কোনটা বললেই , আমাদের বাসাটা আপনাকে দেখিয়ে দেবে ।
এবার ভদ্রমহিলার কথায় কিছুটা হেসেই উত্তর দিলাম । আপনার মনে হয়, বাসায় যেতে কিছুটা দেরি হয়ে যাচ্ছে । ঠিক আছে , যেহেতু এতো করে বললেন । একদিন না হয় , সময় করে চা খেয়ে আসবো ।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আমাদের দৈনন্দিন চলার পথে অনেক মানুষের সাথে দেখা হয় এবং পরিচয় হয়। আসলে মানুষের অসহায়ত্ব কখনো চেহারা দেখে বোঝা যায় না। উনি একজন ভালো পরিবারের মানুষ হয়েও নিজের অসুস্থ স্বামীর জন্য ফুচকা কিনতে এসে বিপদে পড়েছিলেন। আসলে সৃষ্টিকর্তা হয়তো সবসময় আমাদেরকে পরীক্ষা নেন। তবে যাই হোক এই পরিস্থিতি থেকে উনাকে রক্ষা করেছেন এবং উনার পাশে দাঁড়িয়েছেন জেনে সত্যিই অনেক ভালো লাগলো। ভাইয়া আপনার প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। সত্যি ভাইয়া আপনার মত করে যদি কখনো চিন্তা করতাম তাহলে হয়তো অন্যের পাশে দাঁড়াতে পারতাম।
ভালো লিখেছেন। পড়ে ভালো লাগল।
পাঠকের সন্তুষ্টি , লেখকের আত্মতৃপ্তির বহিঃপ্রকাশ।
সত্যি বলতে আমি জানিনা আপনার এই বিষয় গুলো কে বা কিভাবে নেয়, তবে আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগে ভাইয়া আপনার এই সব মনমানুষিকতার পোস্ট গুলো , আপনার কাছ থেকে শিক্ষার আছে অনেক কিছুই ,দোয়া রইলো আপনার জন্যে ,আল্লাহ আমাদের সকলকে তৌফিক দান করুক এমন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর।
সত্যি ভাইয়া আমাদের প্রতিদিনের চলার পথে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে দেখা হয়। কজনকেই বা আমরা চিনি ।আপনার আজকের গল্পটি আমার কাছে সত্যি ভীষণ ভালো লাগলো। আসলে অনেক সময় আমাদেরকে সামান্য কারণেই অসুবিধায় পড়ে যেতে হয়। আপনি সেই মুহূর্তটিতে তাকে সাহায্য করে সত্যিই দারুণ একটি কাজ করেছেন। বিষয়টি আমার কাছে বেশ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
আসলে ভদ্রমহিলা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার ছিল আপু ।
ভাই আপনার পোস্টটি পড়ে যেটা বুঝলাম আপনি একজন মহান মানুষ। মানুষের কতটা কাছে গেলে একজন মানুষ আরেকজন মানুষের চেহারা দেখলেই বুঝতে পারে যে সে কোন অবস্থায় আছে বা কোন বিপদে রয়েছে কিনা। আপনি কিন্তু ঠিক ওই অবস্থানে পৌঁছে গিয়েছেন এবং ঠিক ঠিক ওই মহিলার অবস্থা বুঝতে পেরে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে অনেক গুছিয়ে সাবলীল ভাবে তার প্রয়োজনটা মিটিয়ে দিলেন এজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
লোহানি নামের ভদ্রমহিলার এক ছেলে মেডিকেলে আছে এবং আরেক ছেলে রংপুর ক্যাডেটে পড়ছে, তার উপর উনার হাজবেন্ড একজন মাস্টার। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে উনার এতটা খারাপ অবস্থা কেন ভাইয়া যে এক প্লেট ফুচকা কেনার টাকাও নেই? ড্রেস আপ বা চালচলন দেখে মানুষের অবস্থা নির্ণয় করা মুশকিল। যাই হোক আপনি লোহানী নামের ভদ্রমহিলার হাজবেন্ডের একটি মনের ইচ্ছা (ফুচকা খাওয়া) পূরণ করেছেন, এটা সত্যিই একটি মহৎ কাজ। এক প্লেট ফুচকার দাম আর কতই, কিন্তু এটাই কয়জন এভাবে কিনে দেয়? আপনার এই মহৎ কাজগুলো পোস্টের মাধ্যমে পড়ে সত্যিই খুব ভাল লাগে। অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। আপনাকে আর শায়ান কে ভাল লাগছে ছবিতে দেখতে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভাইজান আপনার প্রশ্নের উত্তর চার নাম্বার প্যারায় আছে । ধন্যবাদ
চতুর্থ প্যারায় উনি বলেছেন অত পয়সা আনেনি। আমি ভেবেছি উনি হয়ত ফাইনান্সিয়ালি উইক এজন্য ৪০ টাকার বেশি আনেনি। ধন্যবাদ ভাইয়া।
প্রিয় শুভ ভাই আপনাকে আমার কেনো ভালো লাগে জানেন??
কারন আপনি খুব সহজে মানুষের সাথে মিশে যেতে পারেন ৷ এবং কি তার মনের অনুভুতি টা খুব তারাতারি বুঝে যান ৷ আপনার এমন মন মানসিকতা আমাকে আপনার একজন প্রিয় ভক্ত বানিয়ে দিয়েছে সত্যি ৷ আসলেই পৃথিবীতে এখনো গুটি কয়েক ভালো মানুষ আছে তার ঝলন্ত প্রদিব শিখা আপনি ৷
যা হোক সেই ভদ্র মহিলা শেষমেষ তার স্বামীর জন্য ভুচকা নিতে পেরেছে ৷ খুব ভালো লাগছে আপনি একটু হলেও সাহায্য করেছেন ৷
আর একদিন সেই মান্নান সাহেবের বাড়ি চলেই যান ৷
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই!!!
মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি ভাই । যদিও মানুষ হওয়া বেশ কঠিন।
ভাইয়া,আপনার এই বিষয়গুলো সত্যিই আমার কাছে খুবই ভালো লাগে 🤲আপনার মত এখনও ভালো মানুষ গুলো আছে বলেই আজও পৃথিবী এত সুন্দর। আজকাল মানুষ স্বার্থ ছাড়া কারো উপকার অথবা কাজে আসে না, কিন্তু ভাইয়া আমি যখনই আপনার পোস্টগুলো পড়ছি তখনই আমি মুগ্ধ হয়েছি।কারণ কোন স্বার্থ নাই কোন অর্থ নাই আপনি মানুষের উপকার করে যাচ্ছেন।আসলে ভাইয়া,চলার পথে হাজারো মানুষের সাথে আমাদের চেনা-জানা পরিচয় হয় কিন্তু কারো কথা মনে থাকে আবার কারো কথা মনে থাকে না।তেমনি হয়তোবা মান্নান মাস্টার সাথে আপনার দেখা হয়ে ছিল কিন্তু মনে নেই। ভাইয়া,আপনার লেখাটি পড়ে আমার খুবই খুবই ভালো লেগেছে।ধন্যবাদ 🤲
আমার আসলে মনে হয়েছিল, ভদ্রমহিলা অনিচ্ছাকৃত ঝামেলায় পড়েছিল তাই একটু সহযোগিতা করেছি ,জাস্ট এতটুকুই আপু ।