সেদিনের সেই দুপুরবেলায়
সেদিন যখন আনন্তপুরে ঘুরতে গিয়েছিলাম তখন আরো কিছু মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। এই যে যেমন জিন্না ভাই,সে মূলত দীর্ঘদিন যাবত থেকে এই পুরো প্রপার্টি দেখাশোনা করছে। বিনিময়ে সে কি পাচ্ছে, হয়তো এখানে থাকার জায়গাটা আর এই প্রপার্টি দেখাশোনার জন্য মাস শেষে কিছু পয়সা আর তাতেই বেশ হাসিখুশি ভাবেই তার দিন চলে যায় ।
সত্যি বলতে গেলে কি, এই মানুষগুলোর আকাশচুম্বি কোন চাহিদা নেই। ভীষণ সহজ-সরল এই জিন্না ভাই। সে যখন প্রথম এখানে এসে থাকা শুরু করেছিল এবং সংসার পেতেছিল, অবশেষে একটা সময়ের পরে তার পরিবার ধীরে ধীরে বড় হয়ে গিয়েছিল। যা এখানো ক্রমবর্ধমান।
শুরুতেই সংসার পেতে ছিল জিন্না ভাই আর আকলিমা ভাবি মিলে। আর আজ সেখান থেকে তার ছেলে-মেয়ে, একটা সময়ের পরে তাদের ছেলে-মেয়ের বিয়ের পরে এখন তাদেরও বাচ্চা-কাচ্চা হয়েছে। এক কথাই পরিবার এখন অনেক বড়। তবে মজার ব্যাপার, তারা সবাই একই দায়িত্বে নিযুক্ত আছে। এই পুরো প্রপার্টির দেখভালের দায়িত্বে ।
সেই অলস দুপুরে জলপাই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে যখন মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলছিলাম, তখন বেশ ভালোলাগা বোধ কাজ করছিল। এই মানুষ গুলোর ভিতর তেমন কোন উচ্চ আকাঙ্খা নেই। শুধু দিনশেষে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারলেই হলো।
আমার তো সেসময় মনে হচ্ছিল এই মানুষগুলোর সঙ্গে যদি মিশে গিয়ে কিছুটা সময় তাদের মতো করে কাটানো যায়, তাহলে আর যাইহোক হয়তো কিছুটা হলেও তাদের মতো করে জীবনে বাঁচার স্বাদটা একটু হলেও বোঝা যাবে।
আমি এমনিতেই খুবই সাধারণ একজন মানুষ। তবে সেই দুপুরবেলা যখন সকলের সঙ্গে গল্পে মজে গিয়েছিলাম এবং সকলের খোঁজ-খবর নিচ্ছিলাম, তারা অনেকটাই আগ্রহ করেই আমার সঙ্গে কথা বলছিল এবং বেশ সমাদর করেছিল। এদের আপ্যায়নে কোন বিলাসিতা নেই, তবে যেটা আছে, সেটা হচ্ছে আন্তরিকতা।
তাদেরকে শুধু আমি একটা কথাই জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনাদের আসলে মূল প্রাপ্তিটা কি। তারা একটা সময় গিয়ে বলেই ফেলল, জীবনের বেশিরভাগ সময় এখানেই কেটেছে, বাকিটা জীবন এখানে কেটে দিতে পারলেই হলো আর তাছাড়া তাদের পরিবারের লোকজন যেন এখানে পরবর্তীতে ভালোভাবে থাকতে পারে, এটাই তাদের প্রত্যাশা ।
আমি মানুষের কথা শুনি বা শোনার চেষ্টা করি, অনেকটা ইচ্ছা করেই, অনেকটা ভালোলাগার জায়গা থেকেই। যদিও আমার সঙ্গে আগে থেকে তাদের কোন পরিচয় নেই, তবে সেদিন অনন্তপুর গিয়ে বেশিরভাগ সময় তাদের সঙ্গে আমার গল্প করে কেটেছে। পুরো সময়টা তারা আমাকে ঘুরিয়ে নিয়ে দেখিয়েছে এই পুরো প্রপার্টিটা ।
একটা সময় তো আমি জিন্না ভাইকে বলেই ফেললাম, আচ্ছা ধরুন তো জিন্না ভাই এই পুরো প্রপার্টি দেখভালের জন্য যদি কোন লোক আপনাদের মাঝে আসে, তাহলে আপনাদের জন্য কেমন হবে বা সেই লোক যদি আপনাদের কে নিয়ে চেষ্টা করে আরও একটু ভালো জীবিকা নির্বাহের পথ দেখানোর জন্য এই প্রপার্টিকে কেন্দ্র করে, তাহলে আপনারা সেটা কিভাবে গ্রহণ করবেন ।
জিন্না ভাইয়ের একদম সহজ সরল উত্তর, সে যদি আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে এবং আমাদের কে দিয়ে যদি এই প্রপার্টির কাজ করিয়ে কোন উন্নয়ন করা হয় তাহলে অবশ্যই সেটা ভালো হবে এবং সেই উন্নয়নের অংশীদার হয়ে আমরা তখন অনেকটাই কৃতজ্ঞ থাকবো।
বন্ধু আতিফ কে ছবিগুলো পাঠিয়ে দিলাম এবং বললাম তোদের এখানে যে মানুষগুলো থাকে, তারা আসলেই ভীষণ সাদাসিধে ও সহজ-সরল আর তাছাড়া তোদের প্রপার্টি দেখভালের জন্য আমি মনে করি তারাই যথেষ্ট।
তবে এখানে নতুন করে বাহিরের কোন লোকজনের দরকার নেই। তবে তোরা যদি কখনো সময় সুযোগ পেয়ে যাস আর এটাকে যদি খামারবাড়ি করতে চাস, তাহলে আমি মনে করি তোদের নিজেদের কাউকে আসতে হবে আর এই লোকগুলোকে সঠিক কাজে লাগাতে হবে। তাহলে তোদের এই প্রপার্টি থেকে, ভালো কিছু আউটপুট তোরা পেতে পারিস ।
যেহেতু এই ইনভেস্টিগেশনের জন্য অনন্তপুরে এসেছিলাম এবং এই দীর্ঘ প্রপার্টিটা স্বল্প সময়ের জন্য দেখাশোনা করে ছিলাম এবং সেই সময়টাতে এই সহজ সরল মানুষগুলো আমাকে বেশ ভালোই সঙ্গ দিয়েছে। আমি তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে অনেকটা সময় থাকার চেষ্টা করেছি, তাদের কথা বোঝার চেষ্টা করেছি, সত্যি বলতে কি অনেকটা আত্মতৃপ্তি পেয়েছি।
দিনশেষে শহুরে মানুষজনের ভিতরে যতটা জ্যামিতিক হিসাব-নিকাশ থাকে। তবে এই মানুষগুলোর ভিতরে তার ছিটে-ফোঁটাও নেই। বলা যায় একদম মাটির মানুষ, বেশ ভালই লেগেছিল সেদিনের সেই দুপুরবেলায় তাদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাতে পেরে ।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আসলেই ভাইয়া সাধারণ মানুষের সুন্দরভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা ছাড়া এর বেশি কোন আশা নেই। দেখলাম তো জিন্না ভাই কিরকম একটা মানুষ। আপনার মাধ্যমে এরকম মানুষদেরকে দেখতে পেয়ে আরো ভীষণ ভালো লাগলো। আপনিও তো দেখছি অনেক সুন্দর একটা মুহূর্ত কাটিয়েছেন। তাছাড়া প্রপার্টিগুলো দেখভাল করার সাথে সাথে তারা খুব সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করছে। তবে আপনার বন্ধুকে খামারবাড়ি করার পরামর্শ দিয়ে ভালোই করেছেন। আমার কাছে ও ভীষণ ভালো লাগলো।
এইটা সত্য তাদের আপ্যায়নে আমি বেশ ভালোই খুশি হয়েছি এবং আমার সময়টাও বেশ ভালোই কেটেছে।
সত্যি ভাইয়া শহরের মানুষগুলোর ভেতরে যেমন জটিলতা থাকে গ্রামীন সহজ সরল মানুষগুলোর ভেতরে তেমনি মনমুগ্ধকর সরলতা থাকে। আসলে তাদের সরলতায় আমরা মুগ্ধ হয়ে যাই। তারা খুব সহজেই মানুষকে আপন করে নেয়। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে তারা একটুতেই সন্তুষ্ট থাকে। হয়তো তাদের চাহিদা খুবই অল্প। তাই তো তারা জীবনে অনেক ভালো আছে। হয়তো তাদের উপর এই প্রপার্টি দেখভালের দায়িত্ব আছে কিন্তু তাদেরকে সাহায্য করার জন্য যদি কেউ থাকে তাহলে সেই প্রোপার্টি থেকে আরো ভালো কিছু অর্জন করা সম্ভব হবে।
অল্প সময়ে যতটুকু বুঝেছি আপু, পৃথিবীতে যার চাহিদা যতো কম সে ততই সুখী।
জিলাপির প্যাচ ছাড়া এমন লোকগুলোর মাঝে বাচার ইচ্ছা আমার অনেক বেশি।এনারা বিলাসিতা না জানলেও আন্তরিকতা জানেন এলিট লেভেলের লোকগুলোর থেকেও ঢের বেশি।
ভালো থাকবেন।
সত্যি ভাইয়া সবচেয়ে বড় কথা হলো শহরের মানুষ গুলোর ভিতর অনেক জটিলতা কিন্ত গ্রামের এই মানুষ সত্যিই মাটির মানুষ। এই সহজ সরল মানুষ গুলো অতি সহজে মানুষকে আপন করে নেই। তারা প্রপার্টিগুলো দেখার সাথে সাথে সুন্দর জীবন যাপন করছে।আপনি আপনার বন্ধু আতিফ কে ঠিক বলেছেন খামারবাড়ি করতে চাইলে এরাই যথেষ্ট তাদের আসতে হবে না।আপনি গ্রামের এই মানুষ সাথে দারুণ একটি সময় অতিবাহিত করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
এইটা সত্য গ্রাম অঞ্চলের মানুষ গুলো একদম সহজ-সরল ও সাদা-সিধে। এদের মধ্যে কোন রকম বিলাসিতা নেই।
একটা মানুষের হাসি বলে দেয় সে ক্রূর নাকি সরল। এই মানুষগুলোর মধ্যে কোন রকম ক্রূরতা নেই তা তাদের হাসিতেই বোঝা যায়।অনন্তপুরের মানুষদের হৃদয়টাও যে অনন্ত তা বোঝাই যাচ্ছে।সময়টা এই মানুষগুলোর সাথে বেশ ভালোই কাটিয়েছেন দাদা। মাঝে মাঝে এদের দেখলে বোঝা যায় সত্যিই সাধারণভাবেও জীবন যাপন করা যায়। কোন লোভ লালসা ছাড়া গগনচুম্বি প্রত্যাশা ছাড়াও কিছু মানুষ যে শুধু শান্তিতে বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকতে পারে এদের দেখলেই বোঝা। যায়