জ্বর
গার্মেন্টসের ঐ বিশাল ভবনের ভিতরে দীর্ঘদিন থেকে গাদাগাদি পরিবেশে চাকরি করে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে সবুজ। এমনিতেই দৈনিক টানা আট ঘন্টার কর্ম । তার উপর আবার কিছুটা বাড়তি পয়সা ইনকামের জন্য মাঝে মাঝেই ওভার টাইম করে সে । ঠিকঠাক মত প্রতিদিন যে তার স্বাভাবিক ঘুম হয় ব্যাপারটা কিন্তু একদম তেমন না । মানে ঘুমের ঘাটতি থেকেই যায় তার।
এরকম একটা যান্ত্রিক জীবনের সঙ্গে, সে বেশ ভালই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। জীবিকার জন্যই যেহেতু এই নগরীতে আসা, তাই তার অন্যদিকে ফিরে তাকানোর সুযোগ নেই বললেই চলে। এমন ঘটনা যে শুধুমাত্র সবুজের একার, তা বললে ভুল হবে। এই নগরীতে প্রত্যেকেই ছুটছে, যে যার মতো করে, যে যার কর্মে।
এই যে প্রতিনিয়ত সচেতনতার জন্য পোস্টার, ফেস্টুন,ব্যানার মাইকিং এসব করাই হচ্ছে তারপরেও যেন কিছুই শোনার কারো সময় নেই। সবুজের সময় কাটে ঐ বিশাল ভবনের সেলাই মেশিন গুলোর সঙ্গে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে থাকতে থাকতে কখন যে নিজের শরীরটাও ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে, সেই খবরটাও ঠিক মতো রাখতে পারেনি সে। পরিবার-পরিজন বা আত্মীয়-স্বজন যা ছিল সবাই তো গ্রামে, এখানে তাকে আলাদা করে খোঁজ-খবর নেওয়ার কেইবা আছে।
সামান্য শরীরের তাপমাত্রা বাড়া, দুর্বল লাগা কিংবা সর্দি-কাশির মতো ব্যাপারগুলোকে সে খুব একটা পাত্তা দেয় না। তবে এবার হঠাৎ করেই সেদিন যখন অতিরিক্ত শারীরিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল, তখন বুঝতে পেরেছে ঘটনাটা আসলে অন্যদিকে গড়িয়ে যাচ্ছে।
সত্যিই এই যান্ত্রিক শহরে সবুজের মতো মানুষের আলাদা করে যত্নাদি করার কেউ নেই। ঐ যে জ্ঞান হারিয়ে যাওয়ার পরে সহকর্মীরা কিছুটা তড়িঘড়ি করে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়েছিল ঠিক এতটুকুই। কিছুটা সময় পরে যখন তার কাছে স্বাভাবিক বোধ মনে হয়েছিল, তখন ভেবেছিল আপাতত কিছুটা দিন বিশ্রাম দরকার।
মনের জোরে আর কতক্ষণ, শরীর ভেঙে পড়লে তো আর কিছুই ঠিক থাকে না। মেসে এসে কোনরকমে কাপড় গুলো ব্যাগে গুঁজে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা। যে তীব্র গরম পড়েছে, তারমাঝেও যেন তার শরীরে কাঁপুনি দিয়ে ক্রমাগত জ্বর আসছে। এই জ্বর একবার মুহূর্তেই কমছে আবার হঠাৎই ফিরে আসছে। বাসের ভিতরে জানালার পাশের সিটে বসে যখন বাহিরের দিকে তাকানোর চেষ্টা করছিল, তখন বারবার ভাবছিল বাড়ি আর কত দূর।
বিগত ২-৩ দিন আগে থেকে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল, তখন তার এমনটা শারীরিক যন্ত্রণা অনুভূত হয়নি। তবে আজ তার কেন এমন হচ্ছে। অনেকটা মাথা ঘুরছে, শরীরটা প্রচুর ঘামছে। হঠাৎই জানালা দিয়ে বাহিরে মাথা বের করে গলগল করে বমি করে দিল। বারবার গলা শুকিয়ে আসছে, নিজের ভিতরের অস্থিরতা ভাবটা যেন আরও বেশি প্রকাশ পেয়েছে।
পাশের সিটের লোকটা যেন ততক্ষণে বিরক্তিতে সুপারভাইজার কে ডেকে সবুজের অবস্থা দেখানোর চেষ্টা করল। ততক্ষণে সবুজের অবস্থা আরো বেগতিক। সুপারভাইজার এসে যখন সবুজ কে গায়ে হাত দিয়ে ডাকার চেষ্টা করল, তখন যেন ধপাস করে সবুজের দেহখানা বাসের সিটের ফাঁকে পড়ে গেল।
পুরো বাসের ভিতরের অবস্থা যেন ভিন্নরূপে পরিণত হলো। থামানো হলো বাস, তবে সবুজ কে আর নিয়ে যাওয়া হলো না। ভাগ্যিস মানবতার খাতিরে সবুজ যেখানে চলন্ত বাসে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল, সেই এলাকার হাসপাতালেই বাস কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি করিয়ে ছিল। যখন সবুজের জ্ঞান ফিরে আসলো, তখন বুঝতে পারলো সে আর বাসে নেই।
তবে যাদের কাছে যাওয়ার জন্য সে বাড়িতে যাচ্ছিল ততক্ষণে তার বাড়ির লোকজন খবর পেয়ে তার কাছেই ছুটে এসেছিল । হয়তো তা সম্ভব হয়েছে, তার পকেটে থাকা মুঠোফোন থেকে প্রাপ্ত নাম্বারের মাধ্যমে।
যদিও সবুজ এখন হাসপাতালের বিছানাতে তাও আবার মশারির ভিতরে। তবে ডাক্তার , সবুজের প্রাথমিক লক্ষণ দেখে বুঝতে পেরেছে, সে যেহেতু ব্যস্ত নগরী থেকে বাড়ি ফিরছিল আর অতিরিক্ত শারীরিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল এবং সঙ্গে ক্রমাগত বমির ব্যাপারটাও শুনেছিল, তখন আসলে ডাক্তার ধরেই নিয়েছিল, সবুজ ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছে। তারপরেও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছে হয়তো সেগুলো খানিকবাদেই করানো হবে আর তাতেই বোঝা যাবে, সবুজের আসল ঘটনাটা কি।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
OR
সবুজের মতো এমন অসংখ্য মানুষ রয়েছে, যারা কাজ কর্মে এতোটাই ব্যস্ত থাকে যে,নিজের খেয়াল রাখার সময় পায় না। আসলে দ্রব্যমূল্যের দাম এতো বাড়ছে যে, বাড়তি কাজ করা ছাড়া এই সমাজে টিকে থাকার কোনো উপায় নেই। ডেঙ্গু জ্বর সবদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। আমাদের এখানেও ২/৩ জন মানুষ মারা গিয়েছে ইতিমধ্যেই। যাইহোক সবুজের জন্য শুভকামনা রইল।
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1686660783206445057?t=5pxDN8C0FkEOoCLKrb6wWA&s=19
ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে সবুজের জন্য অনেক খারাপ লাগল। সত্যি ভাইয়া সবুজের মতো এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজলে অনেক পাওয়া যাবে।আসলে এই সকল লোকেরা নিজের জন্য কোন সময় দেয় না,শুধু কাজের ওপরে থাকে। আর এই ব্যস্ত নগরিতে দেখার মতো আসলে কেউ নেই। সবাই সবারই কাজে ব্যস্ত।যাইহোক অবশেষে তার পরিবারের লোকজন হাসপাতালে এসেছে জেনে অনেক ভালো লাগল। এখন দেখা যাক রিপোর্টে কি বলে। দোয়া রইল সবুজের জন্য তারাতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
সবুজের আসলে ডেঙ্গু হয়েছে, সে সুস্থ হোক এমনটা প্রত্যাশা আমিও করি।