শূন্য দা
কুঠিবাড়ি প্রাইমারি স্কুলের গেটের সঙ্গে লাগানো ঝুপড়ি ঘরের চায়ের যে দোকানটা আছে সেটা হচ্ছে শূন্য দার। বয়স কতই বা হবে বড়জোর ৪৫ । তাতেই মোটামুটি শূন্য দা জীবনের এপিঠ-ওপিঠ দুই পিঠই দেখে ফেলেছে। একসময় সবকিছুই ছিল, সেই পাকা বাড়িঘর, ভালো আয় রোজগার,তবে সঙ্গ দোষে সবকিছু হারিয়েছে। আর হেরে বসেছে এখন একদম রাস্তার পাশের ফুটপাতে।
জীবনে আসলে সঙ্গদোষ বলে কোন কিছু নেই। জীবনে ভারসাম্য বজায় রেখে চলাচল করাটাই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ, এ যাত্রায় কেউ এগিয়ে যায় আবার কেউ শূন্য দার মতো হারিয়ে যায়। ভালোমন্দর বিচারকার্য আসলে নিজের থেকেই শুরুতেই করতে হয় এবং অবস্থা বুঝে পিছিয়ে আসা বা নিজেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে যৌক্তিক ব্যাপার। তাছাড়া যে যেমন কর্ম করবে, সে তেমন ফল ভোগ করবে। এটাই তো স্বাভাবিক।
একটা মানুষ হয়ে আর একটা মানুষকে নিয়ে তেমন আসলে নাড়াচাড়া করে কথা বলাটা খুব একটা যৌক্তিক দেখায় না আর তাছাড়া বড় ব্যাপার হচ্ছে, আপনি যাদের সঙ্গে মিশছেন তাদের আচার-আচরণ কার্যকলাপ বাহির থেকে দেখলেই কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যায়, এখন আপনি জেনে শুনে তাদের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করেছেন এবং পরবর্তীতে তাদেরকে দোষারোপ করছেন, এক্ষেত্রে ব্যাপারটা খুব একটা যৌক্তিক না। কারণ আপনার স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাব আপনাকে সেদিকে ধাবিত করেছিল আর এখন যখন নিজেকে বুঝতে পেরেছেন, তখন আপনার অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। যাইহোক তাও হয়তো একটা সময়ের পরে বুঝতে পেরেছেন, এটাই তো অনেক কিছু।
মানুষকে দোষারোপ করার আগে বা সঙ্গ দোষ নিয়ে কথা বলার আগে নিজের ব্যাপার গুলো ভাবা উচিত আর তাছাড়া নিজে যদি এগিয়ে না যেতেন তাহলে তো এমন অবস্থায় শিকার হতেন না। হতাশ হয়ে লাভ নেই শূন্য দা, যা হারিয়ে গিয়েছে তা তোমার কর্মফলে গিয়েছে। এখন চেষ্টা করো নিজের কর্মে সঠিক থাকার জন্য হয়তো ভালো কিছু হতেও পারে তোমার পরবর্তীতে।
কিছু কিছু সময় মানুষের মুখের উপরেই তার বিগত কার্যকলাপ নিয়ে কথা বলতে হয়, তাতে হয়তো তার অতীত নিয়ে যদি কিছুটা হলেও অনুশোচনা হয়, তাহলে সেটা একদিক থেকে ভালই। কারণ তখন তার ভবিষ্যৎটা যেন আরো সুন্দর ও মসৃণ হয় আর সেভাবে যেন এগিয়ে চলার মানসিকতা নিজের থেকে তৈরি করতে পারে, এমন স্পৃহা তখন অনেকটাই অনেকের ভিতরে কাজ করে।
অনেকটা দিন পরে কুঠিবাড়ি এলাকাতে চা খেতে এসেছিলাম কিন্তু শূন্য দার এমন অবস্থা দেখে আমি কিছুটা ব্যথিত হয়েছি এবং মানসিকভাবে কষ্টই পেয়েছি। তার হতাশার কথাগুলো যখন আমাকে শোনাচ্ছিল তখন আসলে খারাপ লেগেছিল। তাকে বোঝানোর আসলে কোন ভাষা আমার এই মুহুর্তে জানা নেই। কারণ সে নিজেই যা বুঝতে পেরেছে, আমি মনেকরি সেটাই যথেষ্ট তার জন্য।
গতরাত সে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি। শেষ রাতের দিকে যখন ঝড় উঠেছিল, তাতে কোনরকম দুটো ছোট বাচ্চা নিয়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। আসলে তার পারিবারিক অবস্থা অনেকটাই নাজুক হয়ে গিয়েছে, তার নিজের কৃতকর্মের জন্য। তবে এখন সে নিজের অবস্থান বুঝতে পেরেছে এবং ক্রমাগত চেষ্টা করছে কর্মের দিকে নিজেকে কঠোরভাবে নিয়োজিত করার জন্য, তার এমন পরিবর্তনটা আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। মানুষ যে ধাক্কা খেয়ে পরিবর্তন হয়, তার বাস্তব উদাহরণ মনে হয় শূন্য দা।
তার এই ঝুপড়ি ঘর একদিন যেন আরো শক্তপোক্ত হয় এবং সেদিন যেন ঝড়ের ভয়ে অন্যত্র কোন জায়গায় পালিয়ে না যেতে হয় এবং নিজের অবস্থানে দাঁড়িয়ে যেন নিজের ব্যবসাটাকে আরো গুছিয়ে তুলতে পারে এবং পূর্বের থেকে যেন আরো নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে পারে এবং ধাক্কা খেয়ে জীবনে যা শিখেছে, তা যেন তার জীবন পরিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, এমনটাই প্রত্যাশা করছি এই সন্ধ্যা বেলাতে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1660215215471067137?t=3ryc-jqANSCyxQyR-s5L6A&s=19
শূন্য দার জীবনে হয়তো এক সময় সবকিছুই ছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সবকিছু হারিয়ে ফেলেছে। আসলে জীবন বড় অদ্ভুত। যখন তার জীবনের সবকিছু ছিল তখন হয়তো বন্ধু-বান্ধব সবাই ছিল। আর এখন যখন কিছু নেই তখন তার পাশে কেউ নেই। তবে তিনি তার কর্মের ফল বুঝতে পেরেছেন। প্রার্থনা করি সৃষ্টিকর্তা যেন আবারও উনাকে স্বাভাবিক জীবন দান করেন।
এমনটা প্রার্থনা আমিও করছি আপু, তার জন্য। আবারো তার সুদিন আসুক, সে আবারো ঘুরে দাঁড়াক।
মানুষ আঘাত থেকেই পরবর্তী জীবনের শিক্ষা লাভ করে। হয়তো আপনার এই শূন্যদাও ভবিষ্যতে তার পূর্ববর্তী কার্যকলাপের কথা মনে করে ভালো কিছুই করবে। শূন্যদার জন্য শুভকামনা রইলো। দারুন লিখেছেন ভাই।
এমনটা প্রত্যাশা আমিও কামনা করি ভাই, তবে এটা সত্য শূন্য দা চেষ্টা করছে, তার জীবনের স্বাভাবিক গতিপথে খুব করে ফেরার জন্য।