শীতলতা || @shy-fox 10% beneficiary
বাসা থেকে বের হওয়ার সময় হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ছিল । যদিও খুব একটা বেশি পাত্তা দেইনি । কারণ আমার গন্তব্যে আমাকে যেতে হবে প্রফেশনাল কাজের জন্য । যেহেতু আমি একজন মেডিকেল পার্সন । তাই আমার দায়িত্ব থাকে কিছুটা হলেও সাধারণ মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য । হয়তো এভাবেই নিজের কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি ।
আজ অবশ্য আবহাওয়ার অন্যান্য দিনের থেকে অনেকটাই মন খারাপ । পুরো আকাশ যেন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে । কখন যে আকাশ কেঁদে দেবে এইটা বলা মুশকিল । যাইহোক খানিকটা পথ যেতেই হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টির গতিবেগ কিছুটা বেড়ে গেল । ভাবলাম , আজ মনে হয় ভিজেই কর্মস্থলে যেতে হবে । তবে যাইহোক এই যাত্রায় কিছুটা হলেও বেঁচে গেলাম । কারণ কিছুটা দূর যেতেই বৃষ্টি থেমে গিয়েছিল।
অতঃপর যখন চেম্বারে গিয়ে পৌঁছলাম । তারপরে মোটামুটি নিজের কাজে বেশ ভালোই ব্যস্ত হয়ে গেলাম । কখন যে তিনটি ঘণ্টা সময় পার হয়ে গিয়েছে তা আর খেয়াল করিনি । কিন্তু যখন কর্মস্থল থেকে বের হয়েছি এবং আবারও পুনরায় বাসায় ফেরার জন্য, গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি । ঠিক তখনই আসলে ঝামেলাটা লেগে গিয়েছিল ।
যাইহোক আবারো আকাশ মন খারাপ করেছে । এবার বেশ ভালই জোরে জোরে কাঁদছে । মোটামুটি মুহূর্তেই যেন একদম পুরো এলাকা ভিজে একাকার । পাশের দোকানের ছাউনির নিচে কিছুটা সময়ের জন্য আশ্রয় নিয়েছিলাম । বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে আর এটা নিয়ে দোকানের বাবুর্চির কোন মাথাব্যথা নেই । তার আসলে যে কাজ মানে পরোটা বানানো, সে তার মত করেই পরোটা বানিয়ে যাচ্ছে ।
আমি বড্ড ভিন্ন স্বভাবের মানুষ , আশেপাশের অবস্থা দেখছি আর এই বৃষ্টিতে গরম পরোটা ভাজা দেখে যেন একটা ক্ষুধার্ত অনুভূতি নিজের কাজ করছিল । যাইহোক ভাবলাম পরোটা খেয়ে ফেলবো কিন্তু আবার ভাবছি যদি বৃষ্টি থামে যায় আর হুট করে গাড়ি চলে আসে । তাই এইসব ভেবে নিজের অনুভূতিকে কিছুক্ষণের জন্য একটু সংযত করে রাখলাম ।
অতঃপর খানিক বাদেই পুরো আকাশ আবারো পরিষ্কার । এখনকার সময়ের বৃষ্টির কোন ঠিক-ঠিকানা নেই । হুট করে চলে যায় , এই নামে তো এই শেষ । যাইহোক এভাবেই কিছুটা সময় চলতে থাকলো । আমি বারবার দেখছিলাম পরোটা বানানো । বাবুর্চির কাজের মুহূর্তটা অতঃপর আমার মুঠোফোনের ক্যামেরায় বন্দী করে ফেললাম। সে জিজ্ঞাসা করে বসল, এই গুলো তো আবার ফেসবুকে ছেড়ে দিবেন না ।
আমি হেসে বললাম , আমাকে পরোটা খেতে দিবি না । সে বলল ভাইজান বসতে পারেন , গরম গরম পরোটা খান সঙ্গে আলুর ডাল ফ্রী । এবার কিছুটা মুচকি হেসে বলেই ফেললাম, আজ আর হাতে সময় হবে নারে । বৃষ্টি থামলেই বাড়ি ফিরব, অন্য দিন খাব । মোটামুটি কিছুটা সময় পরেই বৃষ্টি থেমে গেল । কিছুটা সময় আগেও ভ্যপসা গরম ছিল তা এখন আর নেই। যে পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে , তাই মুহূর্তেই পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে ।
শীতল রাস্তার উপর মনে হচ্ছে, নগ্ন পায়ে হাঁটি । বহুদিন হলো নগ্ন পায়ে হাঁটা হয় না । তবে সেই শখটা আমার পূরণ হলো না । এমনিতেই যে পোশাক পরিধান করে আছি আবার তার ভিতরে এমনিতেই মানুষজনের প্রতিনিয়ত মন্তব্য আমাকে ভিন্নভিন্ন ভাবে আঁকড়িয়ে ধরে । তার ভিতরে এমন সময়, যদি এই ব্যাগপত্র রেখে নগ্ন পায়ে হাঁটা শুরু করে দেই, নিতান্তই আবারও এই হাট ভর্তি লোকজন এলোমেলো কিছু বলে বসবে । এমনিতেই পরিবেশ ঠান্ডা , তাই এখন আর কারো কথা শুনতে তেমন ইচ্ছা করছে না ।
ঘড়ির দিকে দেখছি আর ভাবছি কখন বাসায় ফিরব । মুহূর্তেই একটা লাল রংয়ের অটো চলে আসলো । টপ করে উঠে পড়লাম এবং বললাম জলদি যান । কারণ আবারও বৃষ্টি আসতে পারে । খানিক দূর এগোতেই, যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই । আবারও বৃষ্টি পড়া শুরু হালকাভাবে । আমি ইচ্ছা করেই মাথাটা বের করে দিলাম । দেখার চেষ্টা করলাম আশেপাশের পরিবেশটা ।
শীতল বাতাস সঙ্গে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি । এমন পরিবেশ কিন্তু মন্দ না । তবে এই বৃষ্টি কিন্তু সর্দি-জ্বর ধরানোর একমাত্র ওষুধ বলতে পারেন ।নিজেকে সংযত করে রেখে আবারও গাড়ির ভিতরে ভালোভাবে বসে পড়লাম এবং উপভোগ করার চেষ্টা করলাম সময়টাকে ঠিক নিজের মতো করে ।
এখনো মাঝেমাঝে মনে হয়, হুট করে যদি শৈশবে ফিরে যাওয়া যেত । সেই পুরনো দিনে, সেকি ছুঁটেচলা , সেকি দুরন্তপনা । বন্ধু-বান্ধবরা মিলে একদম হই-হুল্লোড় করে বৃষ্টির সময়টাকে নিজেদের মতো করে উপভোগ করা । এখন আর সেই দিন আসে না । বন্ধুরা যে কই হারিয়ে গেল তা আর বুঝে উঠতে পারিনা । জানিনা ওরা আমাকে মনে করে কিনা । তবে এমন বেলায় আসলে আমি ওদেরকে না মনে করে পেরে উঠতে পারলাম না । ওরা আমার শৈশব ছিল, ওদের নিয়ে বেশ ভালো সময় কাটিয়ে ছিলাম শৈশবের এরকম সময় গুলোতে ।
এই যে ছোট ব্যাগ সঙ্গে কিছু পেশাদারিত্বের কাগজপত্র নিয়ে প্রতিনিয়ত ছোটাছুটি করি , এত কিছুর মাঝেও ওদের কে মনে করার চেষ্টা করি । মাঝেমাঝে মনে হয় ওরা কি আমাকে নিয়ে ভাবে । যাইহোক সে কথা না হয় অন্য আরেকদিন বলবো । আজ আর ভালো লাগছে না । কারণ বারবার বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করছে । দেখতে ইচ্ছে করছে বাবুটা আমার কি করছে ।
হয়তো বাসায় ফিরে চার দেয়ালের মাঝে বন্দী হয়ে বাবুকে নিয়ে নিজের মতো করে খানিকটা সময় কাটাবো । যে সময়টাতে বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম । সেই সময়টাতে এখন পরিবারকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি । হয়তো বাবুকে দেখানোর চেষ্টা করব বৃষ্টি পড়লে প্রকৃতির সৌন্দর্য কেমন হয় । দুই বাপ-বেটা মিলে উপভোগ করব বাইরের পরিবেশটা । এই ভাবনায় তাড়াতাড়ি ছুটে চলা বাসার পথে ।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
এই সময় কার আবহাওয়াটাই এমন। এই দেখছি আকাশ পরিষ্কার অমনি চারপাশ অন্ধকার করে ঝুম বৃষ্টি নামা শুরু হলো। কোন উপায় নেই এর মাঝেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
ছোটবেলায় বৃষ্টির দিনের অনুভূতিগুলি ছিল অন্যরকম। দিনে কয়েকবার বৃষ্টিতে ভিজতাম আর মহল্লার সমবয়সীদের সঙ্গে দৌড়ে দৌড়ে আম কুড়াতম। আসলে অনেক মজার ছিল সেই দিনগুলি।
যাইহোক ভাইয়া শেষের দিকের কথাগুলো আমার খুব ভালো লেগেছে। আপনার মত আমারও কাজ শেষে এখন আর বাইরে সময় কাটাতে ইচ্ছে করে না। এই সময় গুলো যেন এখন আর বন্ধুদের নয় এগুলো বরাদ্দ ছেলে মেয়েদের জন্য। বাপ-বেটার সময় গুলো অনেক ভালো কাটুক এই প্রত্যাশা করি।
জি ভাই আসলেই অতীত বড়ই আবেগপ্রবণ। ইশ সময় গুলো যদি আবারও ফিরে পাওয়া যেত , তাহলে কতোই না ভাল হতো ।
শীতলতার মুহূর্তটা সত্যিই অনেক মধুর হয় । আসলেই বৃষ্টিময় দিনে র অনুভূতিগুলো খুবই সুন্দর। যাইহোক, আপনার ব্যস্ততার মাঝে কাজ শেষে পরোটা খাওয়ার গল্প এবং নগ্ন পায়ে হাঁটার অনুভূতি গুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
হাহাহা মাঝে মাঝেই মনে হয় হুটহাট মনের অপূর্ণ চাহিদা গুলোর দিকে একটু নজর দেই ।
আমাদের শৈশব অনেক সুন্দর ছিল। আমার এখনো মনে পড়ে বৃষ্টি ভেজা দিনে ঘাসের উপর দিয়ে হেঁটে বেড়ানোর সেই মুহূর্ত। সত্যি কথা বলতে সময়ের সাথে সাথে আমাদের জীবনের সব ইচ্ছে গুলোর পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন ইচ্ছে থাকলেও এই কাজগুলো আর করা হয়ে ওঠে না। তাই অপূর্ণ ইচ্ছে সব সময় অপূর্ণই রয়ে যায়। তবে যাই হোক ভাইয়া আপনি অনেক সুন্দর ভাবে আপনার অনুভূতি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আর আপনাদের বাবা-ছেলের কাটানো মুহূর্ত আমার কাছে সবসময় ভালো লাগে। আপনি নিশ্চয়ই বাসায় গিয়ে বাবা ছেলে দুজনে মিলে অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছেন। আপনার জন্য এবং আপনার পরিবারের জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো। ❤️❤️❤️
একদম ঠিক বলেছেন ভাই , মন কখন কি চায় বলা ও বোঝা খুবই মুশকিল। তবে এমন ভাবে হাঁটলে কিন্তু মন্দ হতো না ভাই ।
আমাদের এখানে যে কখন আকাশের মন খারাপ হবে আর কখন যে কান্না করবে সেই অপেক্ষায় আছি। গরমে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে পিটিয়ে আকাশের মন খারাপ বানিয়ে দেই।
এত গরম গরম পরোটা ভাজা দেখে আপনি কিভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করলেন তাই তো বুঝতে পারছি না। আমার নিজেই তো খেতে ইচ্ছা করছে। বৃষ্টি আসলে আমারও ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। কত বোনেরা মিলে বৃষ্টিতে ভিজেছি। আর এখন কে কোথায় রয়েছি। বুঝতে পেরেছি আমার ভাতিজার টানেই পরোটা খাওয়া হয়নি আপনার।
হাহাহা খুব মজা পেয়েছি আপনার মন্তব্য পড়ে আপু । আকাশকে বুঝান পিটানোর দরকার নেই ।
ঠিকই বলছেন ভাই, আমিও মাঝে মাঝে ভাবি যদি সেই সময়ে ফিরে যাওয়া যেতো যেখানে কোনো নিয়ম নেই আছে শুধু মজা আর মজা। কিছু সময় আমাদের সেই সোনালী অতীতকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যতেষ্ট। তবে আমি মনে করি আপনার বন্ধুরাও আপনার মতো হয়তো ভাবে। তবে বাস্তবতার ব্যস্ততায় হয়তো অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করা হয়ে উঠে না। কারণ সুন্দর সময় সবাই মনে রাখে।
জীবন থেকে যা চলে যায় , তা ভেতর আসে না রে ভাই । জীবন শুধুই বদলে যায় ।