বই পোকা
রায়হান ভাইয়ের সঙ্গে রোজ দেখা হয়, ঐ চৌরাস্তার মোড়ের ছাতার তলের চায়ের দোকানে। একই জায়গায় যখন একটা মানুষের সঙ্গে রোজ দেখা হয়, তার ব্যাপারে জানতে একটু আগ্রহ পোষণ হওয়াটা নিতান্তই স্বাভাবিক।
এমনটা যে শুধু আমার একার হয়েছে, তা বললে নেহাত ভুল হয়ে যাবে। হয়তো অপরপক্ষ থেকেও রায়হান ভাইয়ের আগ্রহ ছিল। আমি আসলে তেমন কিছুই করি না, রোজ মানুষ দেখার জন্য এখানে চা খেতে আসি। তবে রায়হান ভাই যে, বেশ মেধাবী ও রুচিশীল মানুষ। তা তার আচার-আচরণ দেখলেই বোঝা যায়। সর্বদাই কোট-টাই পড়নে দেখি। আজই জানতে পারলাম পেশায় সে সরকারি কর্মকর্তা।
মোখলেস ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা একটু ভিন্নভাবে হয়েছে । ছাতার তলের চায়ের দোকানে আমার যাতায়াত হয়তো চায়ের নেশাকে কেন্দ্র করে। তবে রায়হান ভাইয়ের যে একই রকমের নেশা আছে, তা হয়তো এখানে না আসলে অজানাই থেকে যেত।
তার কথা আমার কাছে বড্ড অদ্ভুত লেগেছে। মানুষ হতাশায় ভুগলে, কত কিছু করে। তবে তার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা, সে হতাশায় ভুগলে বেশি বেশি বই পড়ার চেষ্টা করে। তার ব্যাপারে জানার আগ্রহের সূত্রপাত হয়তো এই কথাকে কেন্দ্র করেই। আরেকটু গভীরভাবে জানার চেষ্টা করলাম। তবে যেটা জানলাম,সেটা একদম সত্যি। সে হতাশায় থাকুক বা অতি আনন্দে থাকুক, বই পড়া তার কাছে মারাত্মক নেশা।
যেহেতু এই পাড়াতেই থাকে সে, তাই একবার শখ করেই তার বাসায় উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। সে যে আমাকে কথাগুলো বলেছিল, এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এসেও, সে এখনো রোজ খবরের কাগজ পড়ে। ড্রয়িং রুমটাতে যত বড় বুক সেলফ দেখেছি এবং যত বইয়ের সমাহার, তাতে তার কথায় আমি একদম সহমত পোষণ করছি। সে যে বড্ড বই পোকা মানুষ, তা আমার বোঝা হয়ে গিয়েছে ।
তার কাছে আসলে জীবনের সংজ্ঞাটা হয়তো একটু ভিন্ন। মানুষ এখন চেষ্টা করছে তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সবকিছুর সমাধান ইন্টারনেটেই খুঁজে নেওয়ার জন্য। মুঠোফোন নতুবা ল্যাপটপের স্ক্রিনে পড়ার থেকে সে বাস্তবে বইয়ের পাতা নেড়েচেড়ে পড়তে বড্ড বেশি প্রশান্তি পায়। এমনও শুনেছি, তার পড়ার আগ্রহ এতটাই বেশি যে, মাঝে মাঝে নতুন বই কিনতে গিয়ে বেশ অর্থকষ্টে ভুগতে হয়।
যদিও আমি তাকে ইন্টারনেট কেন্দ্রিক কিছু বইয়ের পিডিএফ এর কথা বলেছিলাম, তবে আমার কথা শুনে তার বড্ড হাসি পেয়েছে । সে এক কথায় বলে ছিল, ঐভাবে পড়ে শান্তি পায় না।
আসলে যুগ অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে, যুগের সঙ্গে মানুষ অনেক কিছুই পরিবর্তন করে ফেলেছে। তবে তারপরেও যদি কিছু মানুষ তার পুরনো অভ্যেসে থেকেই যায়, তাহলে তো কোন অসুবিধা নেই।
জীবনটা সত্যি অদ্ভুত, তাই না। এই যে যেমন রায়হান ভাই, বই পড়া ও কেনার নেশায় নিজের সবকিছুই মাঝে মাঝে ভুলে যায়। সে একটা কথাই ভাবে, হয়তো বই না পড়লে সে অনেকটাই পিছিয়ে পড়বে।
কি যে বাবা, কে পিছিয়ে পড়বে বা কে এগিয়ে যাবে, এত কিছু এই মুহূর্তে আমি বুঝতে পারছি না। তবে তার আগ্রহটা কে আমি সম্মান জানাই।
কত রকমের স্বপ্ন নিয়ে মানুষ বেঁচে আছে, কারো বাড়ির চাহিদা, কারো গাড়ি বা কারো ধন-সম্পদের। সেখান থেকে ভদ্রলোকের চাহিদা বড্ড ব্যতিক্রম। বেশ ভালো একটা সময় কাটলো, আজ সন্ধ্যায় মোখলেস ভাইয়ের দোকানে, রায়হান ভাইয়ের সঙ্গে গল্প করে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। ভাইয়া রায়হান ভাইয়ার মত আমিও হয়ত এ যুগের থেকে পিছিয়ে আছি। আমিও বই পড়ি। তবে ইন্টারনেট থেকে পড়ে মজা পাই না। বই ভাঁজ ভাঁজ করে পড়ার মাঝে আনন্দ বেশি পাই। জীবনটা সত্যিই অদ্ভুত।যে যেভাবে জীবনকে জানে তার কাছে আসলে তেমন।অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
একদম ঠিক বলেছেন আপু, যে ভাবে আরকি জীবনটাকে উপভোগ করে।
কেমন আছেন ভাইয়া। বই পড়া আমারও একটা সখ। সময় পেলেই বই পড়ি। কিন্তু না সেটা কোন অনলাইনে না। আমি সব সময়ই শুয়ে শুয়ে বই পড়তে পছন্দ করি। এতে করে বেশ আনন্দ আর মজা পাওয়া যায়। তাইতো আপনার গল্পটি পড়ে মনে হচ্ছে আমিও রাইহান ভাইয়ের মত ব্যাকডেটেড নাকি? খুব সুন্দর করে গুছিয়ে গল্পটি আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ভাইয়া।
ব্যাকডেটেড বলে কিছু নাই জীবনে, যার জীবন তার কাছেই শ্রেষ্ঠ।
বই পড়লে আসলেই ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, এ কথা সত্যি। আর পিডিএফ আকারে ইন্টারনেটে বই পড়ার ভেতর আসলেই কোন মজা নেই, উনি ঠিকই বলেছেন শুভ দা।
হায় হায়...🤣
উঁকি দিয়ে তো বহু কিছু জানতে পেরেছিলাম রে ভাই, চতুর্দিকে শুধু বই আর বই।
স্কুলে থাকতে পড়েছিলাম, বই নাকি মানুষের সব থেকে ভালো বন্ধু। মানুষের জীবন থেকে সবকিছু চলে যেতে পারে কিন্তু বইয়ের শিক্ষা ও জ্ঞান কখনোই তাকে ছেড়ে যায় না। তবে বাস্তব জীবনে কজন তা মানে। তবে রায়হান ভাইয়ের বিষয়টি জানতে পেরে বুঝলাম হয়তো বইকে সে তার বন্ধু বানিয়ে নিয়েছে। তারা সম্পর্কে জেনে ভালো লাগলো। শুভকামনা রইল আপনার জন্য ভাইয়া।
বই প্রেমী মানুষরা সব সময় বই পড়তে পছন্দ করে। আসলে মোবাইলের স্ক্রিনে কিংবা ল্যাপটপের স্ক্রিনে হয়তো অনেক বই ডাউনলোড করে পড়া যায়। কিন্তু সরাসরি বই পড়ার মাঝে আলাদা রকমের প্রশান্তি পাওয়া যায়। তাই তো উনার বাসায় বুক সেলফ জুড়ে বিভিন্ন বইয়ের সমারোহ। রায়হান ভাইয়ের মতো একজন মানুষের সম্পর্কে জেনে ভালো লাগলো ভাইয়া।