প্রয়োজনে পাশে আছি
মাধ্যমিকে পড়ার সময় যখন ঝিলের পাড়ের আশেপাশে রোজ ঘোরাঘুরি করতাম, সেই সময় থেকেই জুয়েলের সঙ্গে পরিচয়। হয়তো তারও অনেক আগে থেকেই তাকে মুখে চিনতাম তবে সেভাবে কখনো আলাপচারিতা করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি।
সজীব যখন এলাকায় প্রথম মুদি দোকানের ব্যবসা শুরু করেছিল, সেই সময় তো সজীবের দোকানের রংয়ের কাজ থেকে শুরু করে আরও কিছু যাবতীয় কাজ সে নিজের থেকেই করে দিয়েছিল। রোজ চেম্বার শেষে সেই সময় প্রায়ই সজীবের দোকানে উঁকি দিয়ে আসতাম আর মাঝে মাঝেই তখন জুয়েলের সঙ্গে টুকটাক দেখা ও কথা হতো।
তারপরে তো দীর্ঘ অনেকটা বছরের বিরতি। সেভাবে আর ওর সঙ্গে দেখা হয়েই ওঠেনি। ঝিলের পাড়ের উপরে ছোট্ট টিনশেডের ঘরে ও থাকতো। ছোটবেলা থেকেই যেহেতু এই এলাকাতেই ও বড় হয়েছে, তাই কমবেশি সকলের সঙ্গেই ওর পরিচয় ছিল। তবে এখানকার মানুষগুলোর ভিতরে অনেকটাই অহমিকার বেড়াজাল ছিল বা এখনো আছে। তাই হয়তো সেখানে জুয়েলের মত মানুষদের ঠাঁই খুব কম হয়েছে।
এইতো বছর খানেক আগে কোন এক শীতের সন্ধ্যেতে হঠাৎই ওর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল বৈঠকখানা রেস্টুরেন্টে । ও আমাকে ঠিকই দেখেছিল তবে কথা বলতে সংকোচ করছিল। ভাগ্যিস ওকে আমি চিনতে পেরেছিলাম, ইচ্ছা করেই নিজের থেকেই ওর কাছে গিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কথার ফাঁকে ওকে তো বলেই ফেললাম, তোমার যদি কোন সমস্যা না থাকে তুমি আমাদের সঙ্গে বসতে পারো। ও আমার বাবুর গাল ছুঁয়ে বলেছিল পিচ্চি কিন্তু দেখতে তোমার মত হয়েছে।
এটা মানতেই হবে, ছুটে চলা জীবনে সময় বড্ড স্বল্প। তবে তারপরেও চেনা মানুষগুলোর সঙ্গে আগ-বাড়িয়েই হোক বা ইচ্ছে করেই হোক খোঁজখবর নেওয়াটা আমার মতে বড্ড জরুরী । কত ছোট ছোট স্বপ্ন ও ইচ্ছে নিয়ে কতজন এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে তার কোন হিসেব নেই।হয়তো এই স্বল্প চাওয়া গুলো অহমিকায় মোড়ানো মানুষগুলোর কাছে নিছক জঞ্জাল মনে হতে পারে। তারপরেও হয়তো সবকিছুকে মানিয়ে নিয়ে এতসবের মাঝেও জুয়েল থাকতে চেয়েছিল এখানেই।
অনেক কথা বড্ড গভীরে থাকে, তবে যেটা ভাসমান সেটা কিছুটা সকলের দৃষ্টিগোচর হয়। এই যে যেমন, সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরেই ও নাকি ভীষণ অসুস্থবোধ করছিল, শরীরের সুগারের মাত্রা নাকি কমে গিয়েছিল, অবস্থা বেগতিক দেখে এখানকার সরকারি হসপিটাল থেকে নাকি অন্যত্র রেফার করা হয়েছিল।
মূলত এই ব্যাপার গুলো সাদৃশ্য হয়তো তা ওর অবস্থার উপর ভিত্তি করে। তবে তারপরেও কিছু কথা থেকেই যায়, যেগুলো অনেকটা অব্যক্ত বা অজানা। কার মনের ভিতরে কি চলছে, কে কি পরিমাণ মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে, তা উপর থেকে দেখে বোঝা বড্ড মুশকিল। এই নীরব ঘাতক যাকে একবার ধরে বসেছে, তাকে একদম নিঃশেষ করে ফেলেছে। হয়তো জুয়েলের মৃত্যু তারই একটা প্রমাণ। নীরব ঘাতক ওকে আত্মতৃপ্তিতে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছে।
ছেলেটার জন্য একটু হলেও কষ্ট পাচ্ছি। বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে ওর মুখটা আর মাঝে মাঝেই কানে বাজছে ওর সেই কথাটা, তোমার পিচ্চিটা দেখতে একদম তোমার মতই হয়েছে।
জুয়েলের না ফেরা যেমন কষ্টদায়ক, তবে জুয়েলের মত করে অন্যরা যেন মানসিক যন্ত্রণায় ভুগে নীরব ঘাতকের শিকার না হয়, এই মুহূর্ত থেকে তেমনটাই আমি চাচ্ছি।
আমি উন্মুক্তভাবে বলছি, কেউ যদি কোন বিষয়ে মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন, দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই, আমি শরীফ শুভ আছি আপনার পাশে, শুনতে চাই আপনার কথা। আপনি মন খুলে আপনার হতাশার কথা আমার সঙ্গে নির্দ্বিধায় ভাগ করে নিতে পারেন। কথা দিচ্ছি ভুলেও কেউ কোন কিছু জানতে পারবে না। তবুও মানসিক যন্ত্রণার মত নীরব ঘাতক থেকে মুক্ত থাকুন, জীবনটাকে উপভোগ করুন।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1677282390014857217?t=AIzPwm0u5qph0TSBc39MvA&s=19
মানুষের যন্ত্রণার চেয়ে বড় আর কিছুই হতে পারে না। শারীরিক যন্ত্রণাটার উপর সবাই দৃষ্টি দিলেও যন্ত্রণাটা ভিতরে সবার অগোচরেই থাকে। কি নিয়ে জুয়েলের মানুষের চিন্তা ছিল সেটা জানতে ভীষণ ইচ্ছে করছিল যেটা তাকে মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছে। যাই হোক আপনার সাথে কথাটুকু আরেকটু বেশি ভালো লাগলো, মানসিক চিন্তার মানুষদের পাশে আছেন। অবশ্যই শেয়ার করব কিছু না কিছু।
এটাই আফসোস জুয়েলের মানসিক যন্ত্রণার ব্যাপারটা জানা হয়নি, তবে ওর মৃত্যু আমাকে অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ করে গিয়েছে।
দুশ্চিন্তা এমন একটি জিনিস যা নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়।আপনার বন্ধু জুয়েলের মৃত্যুর ঘটনা টি সত্যিই অনেক দুঃখজনক।চোখের সামনে এরকম মৃত্যু গুলো মেনে নেওয়া খুবই কঠিন হয়ে যায়।আপনি নিজো থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা নিঃসন্দেহে একটি মহৎ কাজ বলে আমি মনে করছি।এই যুগে কে কার সমস্যার সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দেয় বলেন!যাইহোক আপনার মহৎ উদ্দেশ্য সফল হোক এই প্রত্যাশা করি।অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই আপনাকে।🙏🙏🙏
আমি চাই সকলেই মানসিকভাবে সুস্থ থাকুক আর জীবনটাকে উপভোগ করুক।
মানসিক যন্ত্রণার মত নীরব ঘাতক থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সকলের উচিত নিজের মনের কথাগুলো মনে চেপে না রেখে খোলামেলা ভাবে নিজের সমস্যাগুলোকে কোন কাছের মানুষের কাছে শেয়ার করা। এই ব্যস্ততম জীবনে কার মনে কি চলছে, কে কি পরিমান মানুষিক যন্ত্রণায় রয়েছে তা আজকাল আমাদের জানার সময় হয়ে ওঠে না। তবে মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত আমাদের চেনাজানা মানুষগুলোর সাধ্যমত খোঁজখবর রাখার। হয়তো আমাদের একটু পাশে থাকাই তাদের অনেকটা স্বস্তির কারণ হতে পারে। আপনি নিজে থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটা জেনে খুবই খুশি হয়েছি ভাইয়া। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
আসলে আমার একার উদ্যোগে কিছু হবে না, সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।
আসলে ভাইয়া জুয়েলের মৃত্যুর কথাটা জেনে আমি খুবই ব্যথিত হয়ে গেলাম। তাই আমাদের সকলের উচিত মানসিক যন্ত্রণার মতো ঘাতকব্যাধিকে আপনার মতো উদার প্রকৃতির মানুষের নিকট প্রকাশ করে এ ধরনের ঘাতক ব্যাধিকে মন থেকে দূর করায় উত্তম।
আসলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই সমাধান, সেটা হচ্ছে নিজের মানসিক যন্ত্রণার ব্যাপারটা অন্য মানুষের সঙ্গে শেয়ার করা।