দীর্ঘদিন পরে আত্মীয়ের বাড়িতে
ঘটনাটা সম্ভবত ২-৩ দিন আগের। মূলত সেদিন আমি গিয়েছিলাম আমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে। দীর্ঘদিন আসলে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে তেমন যাওয়া হয়ে ওঠে না। আসলে সময় বের করে ঘুরতে যাওয়ার মতো সুযোগ ই হয়ে ওঠে না, এটাই সত্য কথা। আর তাছাড়াও যেহেতু শারীরিকভাবে এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠিনি, তাই দূরে কোথাও সেই ভাবে যাওয়া হয় না। ঐ বাসার আশেপাশের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেই একটু, সময় সুযোগ পেলে যাওয়ার চেষ্টা করি ।
বিবাহ বন্ধনের পর থেকে আত্মীয়ের সংখ্যাটাও অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। আসলে আত্মার যেখানে মিল হয়, সেখানেই তো আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। যাইহোক যে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম, সেটা আমার সহধর্মিনীর খালার বাড়ি।
চার বছর পরে সম্ভবত এবারই প্রথম গেলাম তাদের বাড়িতে। যদিও ঘরোয়া একটা অনুষ্ঠান ছিল, সেটাকে কেন্দ্র করেই দাওয়াত দিয়েছিল আমাদের। বিগত সময়েও বহুবার তাদের বাড়িতে আমাদেরকে দাওয়াত দিয়েছিল। তবে আমার ব্যস্ততার কারণে আসলে কখনোই যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে সেদিন বাসায় এসে আমার খালা শ্বাশুড়ি বেশ ভালোভাবেই বলে গিয়েছে, এবার যে করেই হোক তাদের বাড়িতে যেতেই হবে ।
আমার গিন্নি আগে থেকেই চাচ্ছিল তার খালার বাড়িতে গিয়ে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য। তবে আমি তাকে অনুরোধ করেছি, সেখানে গিয়ে দয়াকরে আমাকে রাত্রিবেলা থাকার কথা বলবা না। কারণ আমি মোটামুটি দিনের বেলা গিয়ে সন্ধ্যার ভিতরেই ফেরত আসতে চাই। যেহেতু আমাদের বাসা থেকে ২০ কিলোমিটারের মাঝেই তাদের বাড়ির দূরত্ব, তাই আমি তাকে আগেই বলেছি যেহেতু সেখানে নেটওয়ার্কের সমস্যা আছে সুতরাং সেখানে গিয়ে থাকার কথা আমাকে মোটেও যেন জোর না করা হয়। যদি এই শর্তে রাজি থাকো, তাহলে আমি যেতে চাই ।
আমার সহধর্মিনী অবশ্য এই ব্যাপারে আমাকে বেশ ভালই মানসিকভাবে আশ্বস্ত করেছে। অবশেষে গত শুক্রবারে সেই ভোরবেলা গিন্নি আমাকে ডাক দিয়েছে, যদিও আগের দিন অনেক রাত্রিবেলায় ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। তবে যেহেতু গিন্নিকে কথা দিয়েছি, তাই মূলত ভোরবেলায় উঠেই রেডি হয়ে যেতে বাধ্য হয়ে গেলাম।
শহর থেকে খানিক দূরে হলেও এই গ্রামটা বেশ ভালোই নিরিবিলি ও ছিমছাম এবং ভালোই সবুজে ঘেরা । আমরা ঠিক সকাল নয়টার ভিতরেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলাম আর গিয়েই মূলত আমি সকাল বেলা নাস্তা করে সেখানে গিয়ে একটু ঘুমিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম আর আমার গিন্নি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল, সেখানকার আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ।
দীর্ঘদিন পরে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে ঘুমোতে চাইলেই কি আর সহজে ঘুমানো যায়। ভাবলাম একটু বিশ্রাম নেব, তা আর হয়ে উঠল না। সবাই মূলত এক এক করে এসে দেখা সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করলো, আসলে যেভাবে ভেবেছিলাম সেভাবে আর হয়ে উঠল না। বাধ্য হয়ে সকলের সঙ্গেই কমবেশি কুশল বিনিময় করলাম ।
পারিবারিক অনুষ্ঠান বলতে, ব্যাপারটা এমন যে আমার খালা শ্বাশুড়ির ছোট মেয়েকে বিবাহ দিয়েছে অনেক আগেই কিন্তু সেই সময় তারা অনুষ্ঠানটি করেনি। তাই এখন সেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে তাদের বাড়িতে। আর এই উপলক্ষেই তারা আমাদের দাওয়াত দিয়েছে ।
যাইহোক সেখানে মূলত আমরা যে একাই নতুন আত্মীয় তেমনটা কিন্তু না। মোটামুটি আমাদের মত আরো অনেক নতুন মানুষ এসেছে, যাদের সঙ্গে আমার খালা শ্বাশুড়ির নতুন করে আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আমিও চেষ্টা করলাম, সাবলীলভাবেই তাদের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার জন্য ।
একটা বিষয় আমাকে বেশ ভালোভাবেই ভাবিয়ে তোলে, সেটা হচ্ছে মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়ে থাকলে ক্ষতি নেই বরং কখন যে কে কার কোন উপকারে আসবে, তা তো বলা যায় না। তাই মোটামুটি কমবেশি সকলের সঙ্গেই পরিচয় হয়ে থাকা ভালো । সেই দিকটা বিবেচনা করেই আমি সকলের সঙ্গে কম-বেশি মেশার চেষ্টা করেছি আর তাছাড়াও মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়ে ওঠাটা এবং তাদের গল্প শোনাটা, আমার অনেকটাই নেশার মতো হয়ে গিয়েছে ।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, সারাটা দিন সেখানে থেকেছি। যদিও গতরাতে ঠিকঠাক মতো ঘুম হয়নি তারপরেও নতুন নতুন মানুষ গুলোর সঙ্গে পরিচয় হয়ে ভালোই লাগছিল। কোন রকম যেন ক্লান্তিবোধ শরীরে আসছিল না। যাইহোক আমি এ যাত্রায় অনেকটাই সৌভাগ্যবান কারণ অনেকগুলো নতুন মানুষের সঙ্গে মিশতে পেরেছি এবং চেষ্টা করেছি তাদের কথাগুলো খুব মনোযোগ সহকারে শোনার জন্য ।
যেহেতু আমি গল্পের মানুষ, তাই সবার কথাই কমবেশি কানে রাখার চেষ্টা করি। কখন কোন চরিত্রটা আমার গল্পের মাঝে এসে ঢুকে পড়বে তা তো বলা মুশকিল। তাই কমবেশি ছোট মস্তিষ্কে সব কথাই ভর্তি করে রাখি। যখন যেটা দরকার হয়, তখন সেটা সেখান থেকে নিয়ে, ব্লগের পাতায় লিখে ফেলি ।
সত্যি বলতে কি, দীর্ঘদিন পরে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে এক ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে আর তারপরেও আমার গিন্নি ও আমার বাবু বেশ ভালই সময় কাটিয়েছে। কারণ অনেক লোকের সমাগম ছিল এবং তারাও বেশ অতিথি পরায়ণ ছিল, সর্বোপরি সেদিনের সেই শুক্রবারের দিনটা আমার কাছে, অনেকটাই স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যত দীর্ঘ সময় পড়ে যাওয়া যায় এবং তাদের সঙ্গে যত দূরত্ব বজায় রেখে যোগাযোগটা ভালো রাখা যায়, এক্ষেত্রে একরকম উষ্ণ অভ্যর্থনা পাওয়া যায়, যখন তাদের কাছে দীর্ঘদিন পরে যাওয়া যায়, ঠিক সেই সময়ে। যেমনটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে এই যাত্রায়।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
এটা ভেবেই অবাক হচ্ছি যে চার বছরের মধ্যে এই প্রথম সেই আত্মীয়ের বাড়িতে ঘুরতে যাচ্ছেন, ভাই আপনি পারেনও বটে, প্রচুর ধৈর্য আপনার। আমি হলে চার বছরের মধ্যে কয়েকবার ঘুরে আসলাম সেই বাড়ি থেকে হাহাহা যেহেতু ভাবির খালার বাড়ি। যাইহোক অনুষ্ঠানের সূত্র ধরে সেখানে গিয়েছেন এবং খুবই সুন্দর একটি মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমি মনে করি আত্মীয়দের বাড়িতে বেশি বেশি যাওয়া উচিত এতে আত্মীয়তার বন্ধন চিরঅটল থাকে এবং মজাদার মজাদার খাবারও খাওয়া যায় হা হা হা। যাইহোক ভাইয়া আপনার সুন্দর মুহূর্তটা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
আসলে সেই ভাবে বিগত সময়ে সময় পাই নি ভাই, তাই সে ভাবে যাওয়া হয়ে ওঠে নি। তবে এবারের ভ্রমণটা ভালোই ছিল আমাদের কাছে।
একটি কথা উপস্থাপন করেছেন এই পোস্টের মাধ্যমে। আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যতো কম যাওয়া যায় ততই নিজের সম্মান থাকে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ভালো থাকে। আপনার খালা শাশুড়ির মেয়ের বিয়েতে আপনি গিয়েছিলেন তাও আবার দীর্ঘদিন পর। তবে বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান টা দেখে আমার খুব বিয়ের খাবার খেতে মন চাচ্ছে ভাইয়া।
আমার কাছে ঠিক তেমনটাই মনে হয় আপু। যতো দূরত্ব থাকবে সম্পর্ক গুলোতে, ততোই দৃঢ় হয় সম্পর্ক গুলো।
শহরে কংক্রিটের বাইরে এই ধরনের পরিবেশে গিয়ে কোন একটা বিয়ে বাড়ি, কোন একটা অনুষ্ঠানের অজুহাতে অন্তত সকলের সাথে সাক্ষাৎটা হয়ে যায়।আর গ্রাম্য পরিবেশটাও উপভোগ করা হয়ে যায়।আপনার শালিকাকে বিবাহিত জীবনের অনেক শুভেচ্ছা রইল। এভাবে গ্রামের বিয়ে বাড়ি গুলোতে আয়োজন দেখে বেশ ভালই লাগছে।শহরে তো এখন সবটাই থিমের ব্যাপার। বিয়েটাও একটা থিম। কে কত ভালো থিম তৈরি করে বিয়ে করতে পারে। ঠিক পুজোর প্যান্ডেলের মত।তার মাঝেও এই ধরনের সাবেকিয়ানাগুলো দেখলে মনটা জুড়িয়ে যায়।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া, নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হলে বেশ ভালই লাগে। চার বছর বিয়ে হয়েছে অথচ ব্যর্থতার কারণে খালা শাশুড়ির বাসায় যেতে পারেননি। ভালোই হয়েছে এখন গিয়েছেন। যদিও যাওয়ার আগে আপুকে শর্ত দিয়ে দিয়েছেন যে বিকেলে চলে আসবেন। আসলে এরকম বিয়ে বাড়ির মুহূর্তে অনেক লোকজন থাকে। তাদের সাথে পরিচিত হতে কিংবা কথা বলতে বেশি ভালই লাগে। অনেক সুন্দর একটা মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন।
আসলে আপনি ঠিকই বলেছেন বিবাহের পর আত্মীয়ের সংখ্যা আরো অনেক বৃদ্ধি পায়। আপনি তো দেখছি আপনার খালা শ্বশুরের বাড়ি বিয়ের দাওয়াতের উদ্দেশ্যে গিয়ে ভালো একটা সময় কাটিয়েছেন। আরো অনেক নতুন নতুন আত্মীয়দের সাথেও পরিচিত হয়েছেন জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
আত্মার সম্পর্ক যেখানে আছে সেখাই তো আত্মীয়তা হয় এই কথাটা একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া। মনের মিল না থাকলে কখনো আত্মীয়তা করা যায় না। বিয়ের পর আত্মীয় অনেক বেড়ে যায় তার কারন হলো তখন ভাবির পরিবারের সবাই আপনার পরিবারের লোক হয়ে যায় আর সবার সাথে নিজের সম্পর্ক টা বজায় রাখা একটা দায়িত্ববোধের মধ্যে পড়ে। সারাদিন রাত কাজ করার পর কোন আত্মীয়র বাড়িতে যাওয়া আপনার পক্ষে সত্যি অনেক কষ্টদায়ক হয়ে যায়, তারপরও আপনি ভোর ভোর ঘুম থেকে উঠে ভাবির সাথে তার খালার বাড়িতে গেছেন এটা দেখে খুব ভালো লাগলো। এতে করে আপানাদের দুজনের মূল্যবোধটা অনেকাংশে বেড়ে গেছে সকলের কাছে। বিয়ে বাড়ি মানেই আনন্দের জায়গা তাই সেখানে গিয়ে ঘুমানো কোনভাবেই সম্ভব না। আপনাদের তিনজনকেই খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। সুন্দর পরিবেশ ও সুন্দর কিছু মুহুর্ত শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভকামনা রইল। 🙏
আত্মা সাথে সম্পর্কেই আত্নীয় বলে।দীর্ঘ চার বছর পর সবার সাথে দেখা হয়ে গল্প শুনতেই ভালোই লেগেছে।আসলে এখন কোথাও গেলে রাতে ভার্চুয়াল কাজের জন্য বাসায় থাকতেই হয়।যাই হোক খালা শাশুড়ীর মেয়ে মানে সম্পর্কে আপনার শালীর বিয়ে।আপনি দুলাভাই বলে কথা,অনেক দায়িত্ব আছে বলে কথা😉😉।
আত্মার সাথে সম্পর্ক তাইতো আত্মীয়তা। আপনি প্রায় অনেকদিন পর আত্মীয়ের সাথে দেখা, গল্প আর অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছেন। খালা শ্বাশুড়ির মেয়ের বিয়ে খুব আনন্দ হয়েছে। সব আত্মীয়দের সাথে এই সুযোগে দেখা হয়ে খুব ভাল লেগেছে আশাকরি। কারন কোন অনুষ্ঠানেই সব আত্নীয়ের সাথে দেখা হয়ে যায়।খুব সুন্দর সময় কাটিয়েছেন দেখে অনেক ভাল লাগলো। ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনাদের জন্য রইলো অনেক শুভকামনা।
নতুন জামাইকে কেউ একটি ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দিলো না এইটা তো মেনে নেওয়া যায় না😁।
আর আপনাকে কিন্তু ফরমাল পোশাকে সেই লাগছে ভাই,পুরায় হিরো😌।আর মাঝে মাঝে ভাই আত্মীয় স্বজনের বাসায় একটু যাবেন বেড়াতে ঘুরাও হবে খাওয়াও হবে হাহা😁।আর শেষের কথাগুলো কিন্তু চরম সত্যি😊।
নতুন জামাই কই হইলাম বিয়ের চার বছর হয়ে গেল রে ভাই। তবে তারা প্রথম যাওয়াতে বেশ ভালোই আপ্যায়ন করেছিল।
ওই জন্যেই ত বললাম ,এর আগে তো আর সেখানে যান নি।সেই হিসেবে নতুন এই ধরা চলে😁
যদি সত্যি কথা বলি তাহলে আমি খুব একটা বেশি আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় যাই না কারণটা আমি নিজেও জানি না । শুধুমাত্র বিশেষ কিছু কারণ যদি না থাকে তাহলে আমি কখনোই কারো বাসা যাই না। তবে বিয়েতে বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেয়ে থাকি ঠিক আপনাদের মতোই। গ্রামের পরিবেশ অনেকদিন পরে দেখলাম। দেখে অনেক ভালো লাগলো। চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছেন বিষয়গুলো।