গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি

in আমার বাংলা ব্লগlast year

bokeh-lights-2592859_1280.jpg
source

সন্ধ্যার একটু পরেই বড় রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করার চেষ্টা করছিলাম। অনেকটা দিন পরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মাঝে একাকী হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম তবে তা ইচ্ছে করেই। শেষ কবে এভাবে বৃষ্টিতে ভিজেছি তা মনে নেই।

যেহেতু আমাদের আদি বাড়িটা একদম বড় রাস্তা সংলগ্ন ছিল এবং বাড়ির খুব কাছেই বাস স্ট্যান্ড হওয়াতে, সেই ছোট বেলা থেকেই জহির কাকুকে চিনতাম। ভদ্রলোক সেই সময় থেকেই মূলত যে সকল লোক বড় রাস্তায় এসে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বাস খুঁজতো, তাদের কে বাস খুঁজে দেওয়া এবং সিট পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতো সে।

প্রায়ই বিকেলে মার সঙ্গে এদিকটাতে হাঁটতে আসতাম। তখনই সুযোগ পেলেই জহির কাকু আমাকে কোলে তুলে নিয়ে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াতো। মা তেমন কিছুই বলতো না, কারণ বাস স্ট্যান্ডের স্থানীয় লোকজন আমাদেরকে এমনিতেই প্রচুর স্নেহ করতো।

যখন আমি কলেজে পড়তাম, সেই সময়েও জহির কাকু মাঝে মাঝেই আমাকে বাসে উঠিয়ে দিত এবং বাসের হেলপার কে বলতো ভাতিজাকে ঠিকমতো যেন কলেজের গেটে নামিয়ে দেওয়া হয়। তার আসলে রুজি রোজগারের ব্যবস্থা হতো মূলত এইভাবেই যাত্রীদের গাড়িতে উঠিয়ে দেওয়ার মাধ্যমেই। বাসের হেলপাররা কিছু বকশিস দিতো, তাতেই তার দিন চলে যেত।

কলেজ জীবনের পর থেকে দীর্ঘ সময় কেটে গিয়েছে, তবে জহির কাকুর সঙ্গে সেভাবে আর দেখা হয়নি। তাছাড়া দেখা হওয়ার কথাও না, কারণ আমার নিজের জীবনের গতিপথই তো পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। আজ যখন সন্ধ্যা বেলা বড় রাস্তার পাশে ছাতার নিচের দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম তখন হঠাৎই পিছন থেকে কে যেন আমার নাম ধরে ডাকছিল।

বেশ পরিচিত মুখ, কাছে এগিয়ে যেতেই দেখলাম, সে আর অন্য কেউ না, সে আমার জহির কাকু। চেহারাতে বয়সের যে ছাপ পড়েছে, তা ভালভাবেই বোঝা যাচ্ছে। ভদ্রলোক এতো দিনেও যে আমাকে মনে রেখেছে এটাই তো অনেক। পাশে দাঁড়িয়ে যখন কথা বলছিলাম আর চা খাচ্ছিলাম,তখন কৌতূহলের জায়গা থেকেই তার খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করলাম। ভদ্রলোক কে শুরুতেই চা খাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম, যদিও প্রথমে ইতস্তত বোধ করেছিল, পরে অবশ্য রাজি হয়ে গিয়েছিল।

অনেকটা ভালোবেসেই এই বাসস্ট্যান্ডে প্রতিনিয়ত আসে সে। যদিও শরীর এখন আর তার আগের মতো সায় দেয় না, হয়তো সেটা তার বয়সের কারণে। তারপরেও যেহেতু দীর্ঘ সময় এই পেশায় সে নিযুক্ত ছিল,তাই সেই দুর্বলতা থেকেই সে এদিকটাতে ঘোরাফেরা করে। আর হুটহাট যখন আমার মত পরিচিত মানুষজনের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, তখন বড্ড খোশগল্পে মেতে ওঠে।

তার আসলে জীবন নিয়ে তেমন কোন আফসোস নেই। দুটো ছেলে ছিল, দুটোকেই বিয়ে দিয়েছে। তারাও এখন অন্য কর্মে নিযুক্ত আছে, তারাই এখন সংসারের হাল ধরেছে, তাই সে এখন পূর্ণ স্বাধীন। না আছে তার পিছুটান, না আছে চিন্তাভাবনা, রোজ ঘুরে বেড়ানো আর নিজের মতো করে সময় কাটানোই যেন তার মুখ্য বিষয় ।

আজ ইচ্ছে করেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির পানি গায়ে মাখালাম। অনেকটা দিন পর একটা স্বাধীন মানুষকে দেখলাম, আমিও তো এমনটাই স্বাধীন হতে চাই, যেখানে শুধু আমি আমার মাঝেই বিচরণ করে বেড়াবো। অনেকটা নিজের মতো করে, চিন্তাহীন ভাবে।

Banner-15.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 last year (edited)

ভাইয়া আপনি দেখছি আজকে খুব উপভোগ করেছেন ঘুড়ি ঘুড়ি বৃষ্টি। আসলেই ভাইয়া বৃষ্টিতে ভিজতে অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করে যদিও সময় বা অবস্থা টা হয়ে উঠে না।যাই হোক বৃষ্টি ভিজার আনন্দের সাথে সেই ছোট বেলার কাকুর সাথেও দেখা হয়ে গেলেও।তবে সব সময় আমাদের সেই স্বাধীন ভাবে চলাফেরা হয়ে উঠে না।যাইহোক ভাইয়া দুআ করি আপনার জীবনে এমন আনন্দের সময় আরও আসুক। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল।

 last year 

আসলে কাকুর মতো স্বাধীন হতে চাইলেই তো আর হতে পারবো না আপু, তবে তার ব্যক্তিত্ব আমার বেশ ভালো লেগেছে।

 last year 

আপনি বৃষ্টিতে ভিজে জীবনটাকে উপভোগ করলেন।আর আমি আপনার লেখাগুলো পড়ে খুব ভালো লাগা মনে জায়গা করে নিলাম।ঘটনা ছোট জহির কাকুকে নিয়ে কিন্তু লেখনী লেগেছে অসাধারণ। অন্য রকম এক ভালো লাগা মনে জায়গা করে নিয়েছে।অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে।

 last year 

বৃষ্টির পানি শরীরে মাখিয়ে আপাতত ঠান্ডা লেগে গেছে। তবে এটা সত্য যে, মুহূর্তটা বেশ উপভোগ করেছি।

 last year 

আসলে ভাইয়া বৃষ্টির পানিতে ভেজার মজাই আলাদা। আর যখন অতীত জীবনের খুব কাছের মানুষের সাথে দেখা হয় ঠিক তখনকার অনুভূতিটা আরো বেশি মধুর এবং আনন্দের হয়। চা পান করার সময় জহির কাকুর সাথে আপনার দেখা হওয়ার মুহূর্তটুকু নিশ্চয় খুবই আনন্দের ছিল। আসলে আপন মানুষগুলো কখনোই পর হয় না। যাহোক, খুবই সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 last year 

এটা সত্য যে তার সঙ্গে দীর্ঘদিন পরে দেখা হয়ে, বেশ ভালো লাগা কাজ করেছে নিজের মাঝে।

 last year 

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে হাঁটতে আমারও ভীষণ ভালো লাগে ভাইয়া। আপনার জহির কাকুর মতো এমন মানুষ সত্যিই খুব কম আছে পৃথিবীতে। কারণ তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন ভাবে না। তারা ভাবে যেভাবে চলছে চলুক। এই ধরনের স্বাধীনচেতা মানুষেরা বেশ পরোপকারী হয়। তারা যদি অন্যের কোন উপকার করতে পারে তাহলে বেশ আনন্দ পায়। আপনার জহির কাকুর মতো মানুষদেরকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যাইহোক এমন চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

 last year 

এই ধরনের স্বাধীনচেতা মানুষেরা বেশ পরোপকারী হয়।

একদম সত্যি কথা বলেছেন ভাই। ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.17
JST 0.031
BTC 88619.11
ETH 3331.99
USDT 1.00
SBD 2.95