জাদু মামা
ঐ যে সে দিন সম্ভবত বলেছিলাম, আমি খাই-দাই ঘুরি-ফিরি আর নিজের মতো করে মানুষ দেখি। এটা যদিও নতুন কিছু না। তবে ছুটে চলা মানুষগুলোকে যখন খুব কাছ থেকে দেখি তখন যেন বুঝি জায়গাভেদে জীবন গুলো সত্যিই ভিন্ন রকম ও আলাদা। এই যে জাদু মামা, আজ হয়তো তার জীবন নিয়ে কিছু কথা লিখে ফেলবো ।
ব্যস্ত শহরের চৌরাস্তার মোড়ে ফলের দোকান গুলোর পাশেই তার ছোট্ট পানের দোকান। জীবন জীবিকা সংসার তার সব কিছুই যেন চলছে তার এটাকে কেন্দ্র করে। অনেকটা বলা যায়, তার পুরো পরিবারটা চলে তার এই আয়ের উপর দিয়েই ।
আমার থেকে তার জীবনটাকেই আরও বেশি সংগ্রামী মনে হয় । তার জীবনটা বাস্তবিক অর্থেই ভীষন সংগ্রামে ভরপুর। জাদু মামার সারাটা দিন কাটে শুধু ছুটে চলা মানুষগুলোর সঙ্গে কুশল বিনিময় ও পান-সিগারেট বিক্রি করেই।
দিনশেষে এই ঊর্ধ্বগতির দ্রব্যমূল্যের বাজারে, বড় একটা পরিবারের সে কর্তা হয়েও, সবাইকে নিয়ে হেসে-খেলে দিব্যি দিন কাটিয়ে দিচ্ছে এটাই তো অনেক কিছু। মজার ব্যাপার হচ্ছে জাদু মামাকে কিন্তু দিনের বেলাতেই শুধুমাত্র পাওয়া যায় আর রাত্রি বেলায় তার দোকানটা চলে যায় তার ছেলের দখলে।
আসলে দোকান বন্ধ হওয়ার কোন অবস্থা এখানে নেই। ঐ যে বললাম, চৌরাস্তার মোড়ে ব্যস্ত রাস্তার ধারে তার দোকান। তাই ক্রমাগত এখানে লোকজন প্রতিনিয়তই আসে। হোক সেটা দিন কি'বা রাত । চৌরাস্তার মোড়েই তো সব বাসের কাউন্টার, বড় বড় মার্কেট এবং সব রকম খাবার হোটেল গুলো অবস্থিত। তাই বলা যায় এখানে দিনরাত একই কথা ও একই রকম অবস্থা ।
দোকানটা দেখতে ছোট হলেও এর তাৎপর্য বলা যায় অনেক। শুধুমাত্র পান সিগারেট বিক্রি করেই এখনো তারা বেশ শক্ত ভাবে টিকে আছে। দিনের বেলাতে জাদু মামা আর রাত্রি বেলা তার ছেলে। শুধু মাত্র পান আর সিগারেট বিক্রি করেই তারা যেন হুশ ফেলতে পারে না ।
তাদের ক্রেতা হচ্ছে রাস্তায় ছুটে চলা মানুষগুলো। তাদের কোন স্থায়ী ক্রেতা নেই বললেই চলে। একেক ক্রেতার গন্তব্য একেক দিকে। এই চার রাস্তার মোড়ে গাড়িতে উঠা আর নামা যাত্রীরাই মূলত তারা তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে ফেলে জাদু মামার দোকান থেকে।
সেদিন যখন বাহির থেকে দাওয়াত খেয়ে বাসায় ফিরে আসছিলাম। হীরা তখন বলল যে, জাদু মামার দোকানের পান খাবে। সেই সূত্রেই জাদু মামার কাছে যাওয়া। হীরা যে একাই পান নিয়েছে তা কিন্তু না। বাসায় যেহেতু আমার শাশুড়ি ছিল আর দোতলায় বৌদি আছে, তাই তাদের জন্যও পান বানিয়ে নিয়ে ছিল ।
পান বানানোর সেই ফাঁকেই, দুটো কথা হয়ে গেল জাদু আমার সঙ্গে। তার কাছ শুনলাম, আমার বাবাও নাকি তার দোকানের কাস্টমার। এখনো নাকি মাঝে মাঝেই তার দোকানে এসে পান কিনে খায়। ব্যাপারটা শুনে একটু চমকপ্রদ লাগলো । যাইহোক চেষ্টা করলাম, এই সময়ে এসে তার ব্যবসা কেমন চলছে, সেই বিষয় গুলো জানার জন্য ।
ঘুরেফিরে আবারো সেই দীর্ঘশ্বাস। সে আসলে ইচ্ছা করেই পানের দাম ও অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়ায় নি। সে অনেকটা বাধ্য হয়েছে বেঁচে থাকার তাগিদে তার ব্যবসায়িক পণ্যের দাম বাড়াতে । বেশ মন খুলেই কথা গুলো বললো। তার পানের ভিতরে কি আছে তা আমি জানিনা। তবে লোকজন তার পানের বেশ ভালোই ভক্ত।
সত্যিই তো, আমরা থাকতেই সেই মুহূর্তেই যেন আরো অনেক লোকজন আসলো এবং তারাও এসে তার কাছে মিষ্টি পান বানানোর জন্য অনুরোধ করল। বড্ড ব্যস্ত সময় যাচ্ছে তার, এখন তার সঙ্গে গল্প না করাই শ্রেয়।
আসলে মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলে, যে কোন কাজ দিয়েই মানুষের মনে স্থান করে নেওয়া যায়। যার সাদৃশ্য প্রমাণ হয়তো জাদু মামাকে কাছ থেকে দেখেই বুঝতে পারলাম।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
ঊর্ধ্বগতির দ্রব্যমূল্যের বাজারে জাদু মামার মত মানুষদের টিকে থাকা সত্যিই কষ্টসাধ্য। আসলেই মানুষগুলো অক্লান্ত পরিশ্রম করে পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জন করে। তারা তাদের ব্যবহারের মাধ্যমে সবার কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। ছোট দোকানের মাধ্যমে তারা নিজের পরিবার চালায়। ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়ে।
আসলে মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করলে যেকোন কাজ দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায়।রাস্তার মোড়ে দোকান থাকায়, ছুটে চলা মানুষের অভাব নেই। অনেক ছোট জিনিসে যে অনেক কিছু আছে তা আমরা ভুলে যায়।যেমন জাদু মামার দোকানটা ছোট হলেও তাৎপর্য অনেক। আপনার বাবা ও নাকি জাদু মামার দোকানে পান খাই।ছোট দোকানে মধ্যে তারা ভালো ভাবে বেঁচে আছে এটাই অনেক। ধন্যবাদ ভাইয়া ভালো লিখেছেন।
এই মানুষগুলোর জীবনের গল্প কিন্তু খুবই ইন্টারেস্টিং হয়। কতটা কষ্টের মাধ্যমে তাদের জীবনও জীবিকা চালিয়ে যেতে হয় সেটা শুধুমাত্র তাদের সাথে কথা বললেই বোঝা যায়। আপনার শেয়ার করা গল্পটা খুব মনোযোগ সহকারে পড়লাম। খুব ভালো লেগেছে আমার কাছে শুভ দা। তবে ওনার কিন্তু একটা স্থায়ী কাস্টমার আছে, সেটা হল আপনার বাবা। 😁
ভাই একদম ঠিক খেটে খাওয়া মানুষদের একেবারে কাছ থেকে না দেখলে তাদের সম্বন্ধে ভালো করে জানা যায় না। আমাদের আশেপাশে জাদু মামার মত এরকম অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছে যারা তাদের ছোট ব্যবসা দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করে। সবকিছুই আল্লাহর রহমত, তা না হলে এর চেয়ে অনেক বেশি পুঁজি নিয়েও অনেকে হা করে বসে আছে। যাইহোক এরকম খেটে খাওয়া মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা সবসময় থাকবে।
খুব ভালো লাগলো আপনার লেখাগুলো পড়ে।
শুভকামনা রইল আপনার জন্য।