দীর্ঘদিন পরে মজনু চাচার সঙ্গে
মজনু চাচাকে নিয়ে সম্ভবত একবার লিখেছিলাম । তখন সম্ভবত রমজান মাস চলছিল । একটা বছর সময় যে কোন দিক দিয়ে চলে গেল তা বুঝে উঠতেই পারলাম না । আসলে সময় এরকমই, কখন কিভাবে চলে যায় , তা আসলে বোঝা বেশ কঠিন হয়ে যায় ।
সেবার যখন মজনু চাচাকে নিয়ে লিখেছিলাম, তখন মজনু চাচার বেশ ভালই কঠিন সময় যাচ্ছিল । এমনিতেই রমজান মাস, তার উপরে চা বিক্রি হতো না বললেই চলে । তখন তো মজনু চাচা বাধ্য হয়ে , পাশে যে নতুন ব্রিজটার কাজ হচ্ছিল সেখানে মাটি কাটার কাজ নিয়েছিল । আমার মনে হয় সেই গল্পটা এখনো অনেকের কাছেই জানা । বিশেষ করে সেই সময় যারা আমার গল্পটা পড়েছিল, তারা কমবেশি সকলেই জানতো ।
বিগত কয়েকদিন আগে গ্রামে গিয়েছিলাম । আমি আসলে ইচ্ছে করেই মানুষের কাছে যেতে পছন্দ করি । হয়তো আমরা ভালো লাগে বিধায় , সেই জন্যই । এখন তো মজনু চাচার ব্যবসাটা বেশ ভালোই জমে উঠেছে , আগের মত সেই কঠিন সময় আর তার নেই । দোকানটাও আগের থেকে বেশ ভালোই বড় হয়েছে । বেশ ভালোই লোকজন প্রতিনিয়ত তার দোকানে চা খেতে আসে । আমিও ঠিক দীর্ঘদিন পরে , সেদিন তার দোকানে চা খেতে গিয়েছিলাম ।
যেহেতু এই গ্রামের বাজারেই একটা সময় ডাক্তারি করতাম তাও আবার স্বল্প সময়ের জন্য ।তারপরেও তার দোকানে একটা সময়ে গিয়ে চা খেতে যেতাম হয়তো সেখান থেকেই পরিচয়ের সূত্রপাতটা । যদিও সময়ের পরিক্রমায় পরবর্তীতে সমস্ত চেম্বার গুলো বন্ধ করে ফেলেছি । যাইহোক এখন আর ডাক্তারি পেশার সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নেই। তারপরেও সেদিন যখন আমাকে দীর্ঘদিন পরে মজনু চাচা নতুন করে দেখলো,তখন আমাকে দেখেই বলল , কিগো ডাক্তার বাবু , কি করা হচ্ছে এখন ।
আমি এক গাল হেসে বলেই দিলাম , এখন আর কিছুই করি না । এই যে খাই-দাই আর ঘুমাই । তোমার কাছে আসলাম চা খাওয়ার জন্য । সত্যি বলতে কি, এই দোকানটার টিনের চালের ফুটো অংশ দিয়ে বহুবার আকাশ দেখেছি । বেশ রসিকতা করে কথা বলে মজনু চাচা , সেগুলো শুনতে ভালই লাগতো সেই সময় । আগে একাই আসতাম আর আজ এসেছি বাবুকে সঙ্গে নিয়ে ।
সত্যিই বেশ ভালো লাগছে, এই টেবিল চেয়ার গুলোতেই দীর্ঘসময় বসে গল্প করতাম মজনু চাচার সঙ্গে । সে সময় তো বেশ ভালোই আড্ডা জমতো । তবে আজ মজনু চাচার বেশ তাড়াহুড়ো , সে যে ভালোই ব্যস্ততা পূর্ণ সময় কাটায় এখন তা সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে । তার হাতে যেন গল্প করার সময়টা এখন নেই । অনেকটা মাছির মত কাস্টমার ছুটে আসছে প্রতিনিয়ত । যেহেতু আজকে হাটের দিন , তাই মূলত লোকজনের সমাগম এখানে বেশ বেশি ।
এই যে মজনু চাচা , তোমার নাতিকে নিয়ে আজ চলে এসেছি , আমাদের দুজনকেই কিন্তু চা খাওয়াতে হবে । মজনু চাচা হেসে বলল , বসে যা টেবিলে তোরা । আজকে তোদের বাপ-বেটা দুজনকেই দুধ চা খাওয়াবো ।
আমি ইচ্ছে করেই এই সহজ-সরল মানুষগুলোর সঙ্গে মেশার চেষ্টা করি । তাদের কথাগুলো শোনার চেষ্টা করি । কারণ এই লোকটার খুব কঠিন সময়েও আমি তার পাশে থাকার চেষ্টা করেছি আর আজকে তার খুব ভালো সময়েও তাকে একবার এসে দেখার চেষ্টা করলাম, এতেই যেন আলাদা প্রশান্তি পাচ্ছি ।
যদিও খুব একটা বেশি দেরি করতে পারিনি কারণ সেখানে বেশ ভালই ভিড় ছিল । সেই ভিড়ের মাঝেও এক কাপ দুধ চা নিয়ে বেশ তৃপ্তি সহকারে খেলাম । সেই চিরচেনা স্বাদ যেন মুহূর্তেই পেয়ে গেলাম।
আচ্ছা , শুধু কি মজনু চাচার কথাই বলব । আমি মনে করি , এরকম যারা সহজ-সরল মানুষ আছে এবং যারা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছে এই উর্ধগতির দ্রব্যমূল্যের বাজারেও নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখার জন্য , আমি মন থেকেই তাদের জন্য আশীর্বাদ করছি , তারাও যেন বেশ ভালোভাবেই বেঁচে থাকে এই সমাজে, আমাদের সঙ্গেই।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
মজনু চাচার আগের সে পোস্টটি আমি দেখিনি ভাইয়া। কিন্তু এই পোস্টটি দেখে খুবই ভালো লাগলো। আপনি ঠিক বলেছেন ভাইয়া এই ধরনের মানুষগুলো কষ্ট জীবন যাপন করলেও বেশ ভালো এবং আন্তরিক মনে হয়। তবে সব সময় দেখেছি আপনি এ ধরনের মানুষকে নিয়ে পোস্ট করতে বেশি পছন্দ করেন এবং তাদের সাথে মিশতেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এই ব্যাপারটি আমার বেশ ভালো লাগে।
সত্যি ভাইয়া আপনি অনেক ভালো মানুষ ,,মজনু চাচার বিপদে আপনি তাকে সাহায্য করেছিলেন।এগুলো আসলে সবার দ্বারা সম্ভব না।আর মজনু চাচার দোকানে ভিড়ের কারণে বেশি সময় থাকতে পারেননি।আপনি আপনার ছেলে।মজনু চাচাকে নিয়ে আপনার আগের পোস্টটি পড়তে পারিনি।তবে আপনি সব সময় মজনু চাচার মত এই সকল সহজ সরল মানুষদের সাথে মিশতে পছন্দ করেন এটা অনেক ভালো দিক আসলেই।ধন্যবাদ ভালো লেগেছে ভাইয়া আপনার পোস্টটি।
ভাই আমার কিন্তু মনে আছে মজনু চাচা কে নিয়ে আপনার সেই লেখা। মজনু চাচা এখন তার আগের ব্যবসায় মোটামুটি ভালোভাবেই সেট হয়ে গেছেন শুনে ভালো লাগলো। তবে সব গরীব মানুষই কিন্তু মজনু চাচার মত সহজ সরল না। আমার পরিচিত একজন চা বিক্রতা আছে আপনি ধারনাই করতে পারবেনা তার পেটের মধ্যে কত প্যাচ। আপনার মত আমিও চাই ভালো থাকুক ভালো মানুষগুলো।
আমারও মনে আছে ভাই , সেই সময় আপনি আমার লেখাটা পড়েছিলেন । আসলেই সময় গুলো কত দ্রুত চলে যায় , তবে সত্য সব জায়গাতেই কমবেশি ভালো খারাপ লোক বিদ্যমান।
প্রথম পর্ব লিখেছিলাম সম্ভবত গত রমজান মাসের সময় ভাই ।আসলেই মানুষটা বেশ ভালোই সহজ সরল।
মজনু চাচার এখন দিন মোটামুটি ভালোই চলছে জেনে খুবই খুশি হলাম। এই মানুষ গুলোর ব্যবসা যদি ঠিকঠাক মতো না চলে তাহলে তাদের কত যে কষ্ট হয় দু'বেলা দুমুঠো ভাত খেতে তা শুধু তারাই জানেন। মজনু চাচা তার চির চেনা ডাক্তারবাবু কে কাছে পেয়ে বেশ খুশিই হয়েছে তা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মজনু চাচার চা খেতে গিয়ে আপনি ও শায়ান বাবু খুব ভালো সময় কাটিয়েছেন। মজনু চাচার মতো একজন সাধারণ মানুষ কে নিয়ে অসাধারণ গল্প লিখে শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই ভাইয়া।
ঠিকই বলেছেন ভাই এই মানুষ গুলো চেষ্টা করছে এই বেশি দ্রব্যমূল্যের বাজারে টিকে থাকার জন্য। মজনু চাচাকে নিয়ে করা আপনার প্রথম পোস্ট টা হয়তো মিস করে গেছি। অনেকদিন পর আবার সেই চেনা নীড়ে ফিরে যাওয়া। চেনা মানুষগুলোর সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক জাগিয়ে তোলা। ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।।
কে না চায় একটু ভালো থাকতে , কে না চায় সকলের সঙ্গে মিলে মিশে বাঁচতে । সকলেরই তো বাঁচার অধিকার আছে ভাই ।
আসলে মানুষের সময়, সব সময় এক যায় না। খারাপ সময় এবং ভালো সময় সবকিছু মিলে তো মানুষের জীবন।এসব মানুষ গুলো অনেক সহজ সরল হয়।মজনু চাচার চা দেখে বোঝা যাচ্ছে অনেক মজা হবে। তবে আপনারা তো বাবা ছেলে দুজনে মিলে বেশ মজা করে চা খেলে।আপনার আর মজনু চাচার গল্পটা পড়ে বেশ ভালো লাগলো।
আসলে এই মানুষগুলো কষ্টে থাকলেও ভীষণ আন্তরিক হয়।আর এই আন্তরিকতার জন্যেই হয়তো আসলে এরা উপরে উঠতে পারেনা।কিন্তু তাও তাদের জায়গাটা থাকে মন জুড়ে।
দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে যারা এখনো সম্মান নিয়ে টিকে থাকার জন্য শুধুমাত্র নিজের শ্রমকে পুঁজি করে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের জন্য স্যালুট। আপনার খেটে খাওয়া মানুষদের খুব কাছাকাছি গিয়ে তাদের খোঁজ খবর নেয়ার ব্যপারটি আমার খুব ভালো লাগে। মজনু চাচার পরিশ্রমের ফল এই চায়ের ব্যবসা এখন অনেক জমজমাট হয়েছে এটাও খুব ভালো খবর। আমার মনে হয় মজনু চাচা আপনাদের চা খাওয়াতে পেরে বেশ আনন্দিত। দোয়া করি তার ব্যবসা যেন আরো সফলভাবে এগিয়ে যায়। ভালো থাকবেন ভাই, শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলো বরাবরই কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করলেও, তারা খুব আন্তরিক হয়। টাকা পয়সার প্রতি তাদের অতটা লোভ থাকে না। অল্পতেই খুব খুশি হয় তারা। মজনু চাচার গল্প আগে তো আমি শুনিনি, তবে তার বর্তমানে আর্থিক উন্নতি হয়েছে কিছুটা, এটা শুনে বেশ ভালো লাগলো। তবে একটা জিনিস শুনে খুব অবাক হলাম শুভদা, তুমি ডাক্তারি ছেড়ে দিয়েছো এটা আমি আজ জানলাম।
ডাক্তারি ছেড়ে দিয়েছি তাও তো ভাই, কয়েক মাস আগেই। এখন লেখালেখি করতেই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি ভাই ।