বন্ধ থাকুক || @shy-fox 10% beneficiary

কয়েকদিন টানা অসুস্থ থাকার পরে, সেদিন গিয়েছিলাম চেম্বারে । যদিও আমার খুব একটা এখন আর মন চায় না চেম্বারে যেতে । কারণ দিনশেষে শরীর সায় দেয় না । কারণ প্রতিদিন ২০- ২০, ৪০ কিলোমিটার রাস্তা যাতায়াত এটা আসলেই বেশ কষ্টকর হয়ে যায় আমার জন্য । শহরের চেম্বারটা অনেক আগেই বন্ধ করে দিয়েছি ।

তারপরও শুধুমাত্র নিজের বাস্তব জীবনের পেশা টিকে রাখার জন্য, আরেকটা চেম্বার গ্রামে দিয়েছিলাম । সেটাও দেখতে দেখতে দুই বছর হয়ে গেল । তাছাড়াও এই চেম্বার থেকে যে খুব যে বেশি লাভবান হতাম তা কিন্তু না । অনেকটা ফ্রিতেই রোগী দেখতাম। ভাবতাম দিনশেষে কিছু গরিব মানুষের উপকার হতো ঠিক এতটুকুই ।

এমনিতেই অনেক আগে থেকেই আমি উচ্চ রক্তচাপ ও মানসিক অস্থিরতার রোগী । এটা আমি আগেও বলেছিলাম , দীর্ঘ ৮ থেকে ১০ বছর হচ্ছে প্রেসারের ওষুধ খাচ্ছি ও মানসিক ঝামেলা গুলোকে ঔষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রেখেছি ।তাছাড়াও দীর্ঘ সময় এখানে কাজ করতে হয়, একটা সময়ের পরে গিয়ে শরীর শুধুমাত্র বিশ্রাম চায় ।

হয়তো এবার অসুস্থ না হলে , এমন সিদ্ধান্ত নিতে আরো অনেক সময় লেগে যেত । একদিক থেকে আমি অসুস্থতাকে ভালোই বলবো । কারণ অসুস্থ হওয়ার কারণেই হয়তো এরকম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি । শরীরের উপর আর যাইহোক এত টর্চার করলে হয় না । অনেক ভেবেচিন্তে ভাবলাম গ্রামের চেম্বারটাও বন্ধ করে ফেলব । আপাতত কতদিন বন্ধ থাকবে, তা বলতে পারছি না । তবে চেম্বার বন্ধ রেখেও যদি শরীরের উপর একটু যত্নশীল হওয়া যায় , তাহলে ভালোই হয় ।

দীর্ঘসময় তো হচ্ছে ডাক্তারি পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছি । সারাটা জীবন যে, একই পেশায় থাকতে হবে তার তো কোনো মানে নেই । আর আমি আসলে ভিন্ন রকম স্বাদ গ্রহণের মানুষ । যখন যেরকম অবস্থা চলে, তখন সে রকম রূপভেদ ধরতে আমি পছন্দ করি । অনেকটা বলতে গেলে জীবন যেখানে যেমন । আমি মনেকরি ডাক্তারি করলে সরাসরি মানুষের উপকারে আসা যায় । তবে এখন যে বাজার দর চলছে, এতে আসলে সব পেশার অবস্থায় খুব নাজুক । যাইহোক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আর না বলি । কারণ এটা অনেকটাই এখন ব্যবসা ক্ষেত্র হয়ে গিয়েছে ।

বেশ কয়েকদিন জ্বরে ভোগার পরে, শরীরটা একদম নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে । এখন যদি আমি এই চেম্বারটা খুলতে চাই আবারও আগের মত করে । তাহলে হয়তো আমাকে এই দিকেই কোন জায়গায় বাসা নিতে হবে । তবে সেটা আমার জন্য খুবই কষ্টদায়ক । কারণ গ্রামীন এলাকায় নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা একদম ভালো না । যার কারণে মূলত আমাকে শহরে থাকতে হয় ।

আর ব্যাপারটা এতটাই আমার কাছে জটিলতা সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে যে , একদিকে আমার লেখালেখি আর অন্যদিকে চেম্বার । লেখালেখির প্রতি আমার আগ্রহ অনেক আগে থেকেই এবং এই কাজ করেই এই দ্রব্যমূল্যের বাজারেও পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ ভালোভাবেই তো টিকে থাকতে পারছি , এটাই বা কম কিসের ।

আজ খালেক মিয়া বাসায় এসেছিল । তাদের পুরো পরিবারকে দাওয়াত দিয়ে ছিলাম । মূলত তারা এসেছিল আমাকে দেখার জন্য । এই উছিলায় তাদের জন্য বেশ ভালই রান্না করা হয়েছিল । আমারও খাওয়া হয়েছিল , তাদেরও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল । খালেক মিয়াকে বুঝিয়ে দিলাম তার পাওনা এবং চেম্বারের যত বকেয়া বিল ছিল সবগুলো পরিশোধ করে দিলাম এবং বললাম চাবিটা তুমি আমার শাশুড়ির হাতে দিয়ে দিও ।

আমি সামনের মাস পুরোটা চেম্বার যাব না । আমার একটু বিশ্রাম দরকার । তারপর পুনরায় যদি আমি চেম্বার করি , তাহলে তোমাকে ডেকে নেব । তবে এ যাত্রায় আমার কিছুই করার নেই । কারণ আমার বিশ্রামটা খুবই জরুরি । আমার শরীরের উপর ইদানিং খুবই চাপ যাচ্ছে । মাফ করো খালেক মিয়া আমাকে ।

তারপরেও যেহেতু আমি বাবা । আমার নিজের সন্তানের প্রতি একটা দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে । ইদানিং যে পরিমাণ কর্মব্যস্ততা পূর্ণ সময় যাচ্ছে, তাতে দেখা যায় যে আমি আর পরিবারকে ঠিকমত সময় দিয়ে উঠতে পারছি না । হয়তো এই সিদ্ধান্ত থেকেও , এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার চিন্তা আমি নিয়েছি । কারণ দিনশেষে বাবুকে একটু হলেও সময় দিতে হবে । যা থেকে বাবু প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে । হয়তো এরকম আরো হাজারটা কারণ আমি দেখাতে পারি ।

তবে আমাকে এ যাত্রায় মাফ করে দিও ঐ এলাকার সাধারণ মানুষ । আমি তোমাদের পাশে আর থাকতে পারছি না । তোমাদের দন্ত অসুবিধা হলে , তোমরা অন্যত্র দেখিয়ে নিও । তোমাদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী । সত্যিই আমি বেশ হাঁপিয়ে উঠেছি , আমার একটু বিশ্রাম দরকার ।

ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht

|| Join the Discord Server for more Details ||