অষ্টম শ্রেণী
আবহাওয়ার পরিবর্তনে আমার নিজের শারীরিক অবস্থার গতিবিধি যে খুব একটা ভালো ঠেকছে তা কিন্তু নয়। নিজের কাছে চাইলেই অজুহাত দেওয়া যায়, তবে বন্ধুত্ব নিয়ে যখন স্মৃতিচারণ করা যায়, তখন আসলে অজুহাত বড্ড বেমানান।
আমার জীবনের সবথেকে সুখ স্মৃতি মনে হয় অষ্টম শ্রেণীতেই জড়িয়ে ছিল। যা এখনো চোখের সামনেই সাদৃশ্য । সময় কত দ্রুত গড়িয়ে গিয়েছে তবে এখনো অক্ষত আছে স্মৃতিগুলো। আজ যখন ঘুণে ধরা মস্তিষ্কের উপর আলতো করে হাত নাড়ছিলাম, তখন যেন স্মৃতিগুলো আবারও চেঁচিয়ে জানান দিল, আমরা এখনো জীবিত আছি ।
বইয়ের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখা, সময়ে-অসময়ে ছন্দের বহিঃপ্রকাশ আর গুছিয়ে লেখার প্রবণতা মিমির এখন যেমন দেখছি, তার আগে কখনো এই স্বভাব ছিল কিনা তা সঠিক আমার জানা নেই। জানার কথাও না, শুধু তো মিমি একা ছিল না,ছিল ১২০ জন। হিসেব করে দেখা যায় প্রতিটি শাখাতে কমপক্ষে ৪০ জন করে ছাত্র-ছাত্রী।
বলছি, খোলাহাটি ক্যান্ট পাবলিক স্কুলের আমার শৈশব জীবনের স্মৃতি মধুর ঘটনা।
সপ্তম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে ওঠার সময় কোনরকম প্রথম ৪০ জনের মধ্যে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছিলাম। ক শাখায় যে ৪০ জন ছাত্রছাত্রী ছিল তাদের এক কথায় বলা যায় তুখোড় মেধাবী। মাস দুয়েক সময় গড়াতে না গড়াতেই আমাকে সরাসরি শ্রেণী শিক্ষক জানিয়ে দেয়, তোমার অবস্থান এখানে নয় বরং খ শাখাতে। সত্যিই আমার সেদিন বিন্দুমাত্র মন খারাপ হয়নি।
কারণ আমি মানতাম, আমাকে মোটেও তুখোড় মেধাবীদের তালিকায় রাখা ঠিক হবে না। যদিও শ্রেণী শিক্ষক আমাকে পুনরায় সুযোগ দিয়েছিল প্রথম সাময়িক পরীক্ষা পর্যন্ত, তবে আমি ইচ্ছে করেই সেই সুযোগ কাজে লাগাই নি। বরং যে কয় মাস ক শাখায় ছিলাম, সেই ৩৯ জনকে টুকটাক জানার চেষ্টা করেছিলাম। আমার এখনো মনে হয়, তাদের নাম গুলো ইচ্ছে করলেই আমি গড়গড় করে বলে দিতে পারবো। ঐ প্রথম বেঞ্চে কাকে রোজ দেখতাম আর শেষ বেঞ্চে কে জায়গা করে নিত, তা যেন ছিল আমার অনেকটাই মুখস্ত ।
প্রথম সাময়িকের পরে নিজের ফলাফল অনুযায়ী আমাকে অবশেষে খ শাখাতে চলে আসতে হলো। এই শাখার পরিবেশটাও ছিল বেশ প্রতিযোগিতা পূর্ণ । মানে ব্যাপারটা এমন, যারা ক শাখায় খারাপ করেছে তাদেরকে খ শাখায় পাঠিয়ে দেওয়া হতো, আর যারা খ শাখায় ভালো করেছে, তাদেরকে ক শাখায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছিল । খ শাখার সকলের সঙ্গে অনায়াসেই চারটে মাস কাটিয়ে দিলাম। সবার সঙ্গেই ছিল আমার সুসম্পর্ক। ওরা তো এখনো অনেকেই আছে আমার সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধু তালিকায়।
দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার পরে আমার উন্নতির থেকে বরং অবনতিটাই দৃশ্যমান ছিল। শুরু হলো আমার নতুন ঠিকানা গ শাখায়। আমাদের মাঝে মাঝেই শ্রেণী শিক্ষক বলতো, তোমরা যারা নবম শ্রেণীতে উঠে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতে চাও,তারা এখন একটু ভালোভাবে পড়াশোনায় মনোযোগী হও। হয়তো একটু কষ্ট করলেই বিজ্ঞান বিভাগে টিকে যেতে পারবে। আর তো অল্প কয়েকটা দিন।
আমি খোলাহাটি ক্যান্ট পাবলিক স্কুলের শিক্ষা জীবনের ইতি টেনে ছিলাম অষ্টম শ্রেণীতেই। মানে নবম শ্রেণীতে ওঠার আগেই আমি লাপাত্তা। আমাকে দিয়ে আসলে এখানে আর হবে না। এসব প্রতিযোগিতা আমার জন্য না।
১২০ জন হাতের আঙ্গুলে গুনে দেখলে, অনেকটাই সময় লাগবে। তবে সবার নাম আমার বেশ ভালোই মনে আছে। তবে সংক্ষিপ্ত করে বলছি, ঐ তো পার্বতীপুর-খোলাহাটি-বদরগঞ্জ, আশেপাশ থেকে কিছুজন আর আমার মত দূর-দুরান্ত থেকে কিছুজন এসে মেসে বা স্কুল হোস্টেলে থাকতো। এইসব মিলেই ১২০ জন।
আমার জীবনের সবথেকে পাওয়া বড় প্রাপ্তি হচ্ছে, আমাদের ব্যাচের অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত যারা যে শাখাতেই ছিল না কেন, তাদের সকলের সঙ্গেই আমার টুকটাক ভালো সম্পর্ক ছিল। অনেকের সঙ্গেই বহু আগে থেকেই আমার সোশ্যাল মিডিয়াতে কথোপকথন হচ্ছিল, যা এখনো চলমান আছে। আবার অনেককে তো আতশ কাঁচ দিয়ে খুঁজতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছি। অপরপক্ষে তারা আমাকে মনে রাখার চেষ্টা করেছিল কিনা তা আমার জানা নেই।
এইতো সেদিন মিমিকে খুঁজে পেয়েছিলাম বহুকষ্টে। কয়লা খনি থেকে আমার এক বান্ধবী রোজ সেসময় স্কুলে আসতো । তার নামটা এখন আর আমি বলতে ইচ্ছুক না। তার বাবা যখন অসুস্থতায় ভুগছিল, সেসময় গ শাখার আমার এক বন্ধুর সোশ্যাল মিডিয়ার টাইমলাইনে, সেই বান্ধবীর আবেগঘন স্ট্যাটাস দেখেছিলাম। পরে যখন আমার সেই ক শাখার বান্ধবীর মূল স্ট্যাটাসটা আমি ভালোভাবে ঘুরে দেখার চেষ্টা করি, তখন অনেকটাই ব্যথিত হয়ে যাই।
সেই স্ট্যাটাসে আমার অনেক ক শাখার বন্ধু-বান্ধবীদের প্রতিক্রিয়া দেখতে পাই। অনেককেই আমি সেসময় ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ছিলাম । কেউ আমাকে একসেপ্ট করেছে আবার কেউ ঝুলিয়ে রেখেছে । এক্ষেত্রে অবশ্য আমি কারো উপর কোন মান-অভিমান রাখিনি। সময় যেমন তাদেরকে পরিবর্তন করেছে হয়তো সেক্ষেত্রে সময় আমাকেও ব্যস্ত করে তুলেছে। যদিও পরবর্তীতে যতদূর জানতে পেরেছি, সেই বান্ধবীর বাবা এখন আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ আছে।
মিমির দর্শন অবশ্য আমি সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণেই পেয়েছিলাম। মিমির প্রতি জানার আগ্রহ বাড়ার একটাই কারণ, হয়তো সেটা তার সাহিত্যের প্রতি দুর্বলতা থাকার কারণে। মিমি নিজেও বেশ বহুদিন পরেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছিল। এক্ষেত্রে আমার ভাগ্য ভালো যে,ওকে বহু কষ্টে আমি বোঝাতে পেরেছি, আমি সেই শুভ, যে তোমাদের সঙ্গে অষ্টম শ্রেণীতে ক শাখায় স্বল্প সময়ের জন্য পড়েছিলাম।
তবে এখনো ক,খ ও গ শাখার অনেকের সঙ্গেই আমার যোগাযোগ নেই বললেই চলে। তবে আমার দিক থেকে আমি একদম মুখিয়ে আছি, যদি এই সময়ে ১২০ জনকেই আমার সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধু তালিকায় যুক্ত করতে পারতাম আবারো তাদের সঙ্গে যদি আমার যোগাযোগটা ঠিকঠাক থাকতো, তাহলে হয়তো বাস্তবিকভাবে না হলেও ভার্চুয়ালি কিছুটা প্রশান্তি পেতাম।
কারণ এখানে তো আর স্কুলের শ্রেণীকক্ষের মতো কোন প্রতিযোগিতা থাকতো না। না থাকতো কোনো বৈষম্য, না থাকতো এগিয়ে যাওয়ার দাম্ভিকতা বা পিছিয়ে পড়ার হীনমন্যতা , যেখানে শুধুই প্রাধান্য পেত বন্ধুত্বের প্রকৃত সংজ্ঞা।
যদিও আমার চিন্তা একটু আকাশ কুসুম,
তবে বাস্তব হয়ে গেলে, মন্দ হতো না ।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1656622000520183814?t=q2uq7dX67bQl4gUjvv5m0Q&s=19
ভাইয়া আপনার অস্টম শ্রেণির পড়া গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগল। সত্যি ভাইয়া আমার মনে হয় অস্টম শ্রেণি সব ক্লাসের ব্যটার ক্লাস। এটা সত্যি বলেছেন এক সময় রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলেন যারা রাখে নি তার আজ আপনাকে খুঁজবে।আসলে সময় পরিবর্তনশীল। আর স্যোশাল মিডিয়ায় যুক্ত হলে আপনার কাছে অনেক ভালো লাগত।যাইহোক কিছু তো যুক্ত আছে,ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর লিখেছেন।
আমার কাছে আসলে প্রতিটি ক্লাসই ছিল গুরুত্বপূর্ণ, তবে অষ্টম শ্রেণীতে ১২০ জনের সঙ্গেই পড়তে পেরেছিলাম তো, তাই সেটা বেশি মনে রাখার হতো। ধন্যবাদ আপু 🙏
আসলেই স্কুল জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত ৷ এই মুহূর্ত গুলো এই স্মৃতি গুলো কখনোই ভোলার মতো নয় ৷ বিশেষ করে অষ্টম এবং নবম দশম শ্রেনীর স্মৃতি গুলো একটু বেশিই আনন্দের ছিলো ৷ সেই বন্ধু গুলো তাদের সাথে কাটানো মুহূর্তের স্মৃতি গুলো হয়তো এভাবেই সারা জীবন অক্ষত থেকে যাবে ৷ যদিও সময়ের সাথে সাথে অনেক বন্ধু হারিয়ে গেছে ৷ তবে সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধু তালিকায় তাদের আবার ফিরে পেলে আসলেই বেশ ভালোই হতো ৷
ধন্যবাদ ভাই আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।
ভাইয়া আপনিতো আমার শ্বশুর বাড়ির কাছেই স্কুলে পড়েছেন। যাই হোক স্কুল জীবনের স্মৃতি মনে হয় সবার কাছেই প্রিয়। কেউ ভুলতে পারে না। সোশ্যাল মিডিয়ার একটি ভালো দিক হলো পুরোনো বন্ধুদের খুজে পাওয়া। আপনার পোস্টটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো ভাইয়া। অনেক ধন্যবাদ সুন্দর কিছু অনুভুতি শেয়ার করার জন্য।
আপনার শ্বশুরবাড়ি এলাকায়, আমার জীবনের কমপক্ষে তিনটি বছর কেটেছিল আপু।
এখানেও সেই স্কুল জীবন। সেই স্কুল জীবনকে কি আর ভুলা যায়। না কখনো কেউ ভুলতে পেরেেছ। যেমনটা পারেননি আপনি। এখন সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা সবাই আমাদের আগের বন্ধুদেরকে খুঁজে বের করে নিয়েছি।
আমিও চেষ্টা করছি আপু, আমার ফেলে আসা জীবনের বন্ধুদের কে ক্রমাগত খোঁজার জন্য।
ভাইয়া, আপনার উদার মন মানসিকতা সবসময় আমাকে আকৃষ্ট করে। আজ আপনার পোষ্ট পড়ে আবারো সেই উদার মন মানসিকতার পরিচয় পেলাম। অষ্টম শ্রেণীতে পরাকালীন সময় আপনি যে ১২০ জন বন্ধু পেয়েছিলেন, সেই বন্ধুদের সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। এরকম চিন্তাভাবনা কজনেই বা করে। হয়তো অনেকেই গুটিকয়েক বন্ধুর কথা মনে রাখে এবং তাদের সাথেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। অথচ আপনি অষ্টম শ্রেণীর ১২০ জনের সাথেই যুক্ত হতে পারলে, বাস্তবিক না হোক ভার্চুয়ালিভাবে মনের প্রশান্তি পেতেন। ভাইয়া আপনার চিন্তাভাবনা এবং আপনার মন মানসিকতাকে আমি খুব শ্রদ্ধা করি। তাই আমি প্রত্যাশা করছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা আপনাকে এখনো একসেপ্ট করেনি তারা যেন খুব দ্রুতই আপনাকে একসেপ্ট করে নেয়। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
আসলে সবার মাঝেই, আমি থাকতে চাই। ধন্যবাদ ভাই, আমার অনুভূতি বুঝতে পারার জন্য। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
ভাইয়া আপনি চেষ্টা করলে, মিমির মত আপনার সেই অষ্টম শ্রেণীর ১২০ জন বন্ধুকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পুনরায় বন্ধুত্বের তালিকায় ফিরিয়ে আনতে পারবেন। ভাইয়া আপনার অষ্টম শ্রেণীতে লেখাপড়া করা অবস্থার খুবই সুন্দর সুন্দর মুহূর্তের কথাগুলো জানতে পেরে বেশ ভালো লেগেছে আমার। খুবই চমৎকার একটি স্মৃতিচারণ আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপনি।
ভাই, একদিক থেকে সৌভাগ্যই আমি। কারণ ১২০ সঙ্গেই আমি পড়তে পেরেছিলাম।
জানেন তো ভাই আমাদের জীবনের সবথেকে শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত ছিল হয়তো স্কুল লাইফে কাটানো সময়টুকুই। এই বন্ধুগুলোর জায়গা হয়তো আর কেউ মেটাতে পারেনি পরবর্তীতে। তবে এটা ঠিক সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের দূরত্বটা অনেক বেড়ে যায়। এখন হয়তো সবাইকে সোশ্যাল মিডিয়াতে খুঁজলেও পাওয়া সম্ভব নয়। তবে চেষ্টা করলে একটা কানেকশন খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। আপনার ইচ্ছা শক্তিটা মনে আরো একবার দাগ কেটে দিল ভাই।
তুই চেষ্টা করে দেখতে পারিস, তোর ছেলে বেলার বন্ধুদের সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত করতে, হয়তো আগের মতো সেই অনুভূতি পাবিনা, তবে যতটুকু প্রশান্তি পাবি সেটাও হয়তো কম না। 🙏